দেশে যথাস্থানে যথালোক কাজ পায় না!

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, প্রতিদিন মাথাপিছু অন্তত ২৮০টি বিড়ি, স্যরি ২৮০ মিলিলিটার দুধ গ্রহণ করা উচিৎ। সেখানে আমরা গ্রহণ করছি মাত্র ১২৫.৫৯ মিলিলিটার! তবুও এতো কথা!

আমাদের সবাই সব বিষয়ে অভিজ্ঞ। শুধুমাত্র সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে যারা দিন-রাত পরিশ্রম করেন তারা ব্যতিত।

একটা পোস্ট দেখলাম মোটামুটি এমন…. বুয়েট থেকে পাশ করা মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার এখন দেশসেরা ব্যাংকার, ডিএমসি থেকে পাশ করা মেয়েটি এখন কাজ করছে অ্যাম্বাসিতে। অর্থাৎ পোস্টটির সারমর্ম হচ্ছে আপনি ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ছেন মানে ব্যাংকার হতে পারবেন না এমন না। আর এভাবে ১৫-২০ টা উদাহরণ টেনে মোটিভেশন দিচ্ছিলেন।

এই মোটিভেশনাল পোস্ট একটা গ্রুপে একদিন আমার নজরে পড়ল। ৫ সেকেন্ডে লাইক, কমেন্ট দেই মামা স্টাইলে কমেন্ট করলাম, যথাস্থানে যথালোক কাজ পায় না বলেই ব্যাংক হ্যাক হয়ে যায় তবু বলতেও পারে না। এরপর দেখি বাকিরাও আমার স্টাইলে কমেন্টস শুরু দিল। ফলে পোস্ট এক সময় ডিলিট করে দিল! মানে মোটিভেশন ডাউন। 😀

আজ একটা নিউজ নজরে পড়ল। সিজারের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিট করছে। রিট করছে কে? কোনো ডাক্তার? না ডাক্তার নয়। ঐ যে যথাস্থানে যথালোক কাজও পায় না, কথাও বলে না।

হ্যাঁ, আমারও মনে হয় দেশে আশঙ্কাজনক হারে সিজারিয়ান অপারেশনের সংখ্যা বাড়ছে। এর অসংখ্য কারণও আছে। অন্যতম একটা কারণ মনে হয় মায়েদের ট্রেন্ডস।

কিন্তু কথা হলো যদি সিজার করতেই হয়? আর কার সিজার করতে হবে, কার হবে না তা ঐ হাইকোর্ট জানবে কি করে? ওখানকার জর্জ-ব্যারিস্টাররা কি ডাক্তার?

মাঝে মাঝে ভ্রাম্যমান আদালত হোটেল-রেস্টুরেন্টে যায়, মাংসের দোকানে যায়। জরিমানা করে। যদি বলি যথাস্থানে যথালোক কাজ পায় না তবে কি ভুল হবে?

দেশে প্রতি বছর অনেক ফুড স্পেশালিস্ট বের হয়, ভেটেরিনারিয়ানদের মিট ইন্সপেকশন নিয়ে পড়াশোনা করতে হয়। কিন্তু এদের দিয়ে না ফুড ইন্সপেকশন করানো হয়, না মাংস ইন্সপেকশন করানো হয়। যারা যায় তাদের এডুকেশনাল ব্যাকগ্রাউন্ড কি আর কাজ করে কি!

ঢাকা শহরে কারা লাইসেন্স ছাড়া দুধ সাপ্লাই করে তা বিএসটিআইকে দেখে রিপোর্ট করতে বলছে হাইকোর্ট। বিএসটিআই বলছে সেটাতো আমরা দেখব না, দেখবে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় (https://bit.ly/2xeEcrE )।

দু’দিন আগে বিএসটিআই জানালো তারা ৩০৫ টি দুধ ও দইয়ের নমুনার মধ্যে সমস্যা পেয়েছে মাত্র ২ টিতে। আমার মনে হয় মাত্র ২টি মিডিয়া এ নিয়ে নিউজ করছিল। বাকিরা চুপ। আজ যেই ঢাবির গবেষক কয়েকটা কোম্পানির দুধের সমস্যা বলছে সাথে সাথে পঙ্গপালের মতো সব নিউজ করতে ছুটছে। 😀

কথা হলো দুধের পরীক্ষা ঢাবিতে হতে হবে কেন? দেশে ভেটেরিনারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যে ডেইরি সায়েন্স অনুষদ আছে, ল্যাব আছে, আর যেখানে শুধু দুধ নিয়েই কাজ-কর্ম চলে সেখানে করা যাবে না? ওহ্ নোওও, তখনতো আবার যথাস্থানে যথালোক কাজ পাবে।

বিশ্বাস করেন আর না করেন সেটা আপনাদের ব্যাপার, তবে বলি। দেশের একশ্রেণীর টাকাওয়ালা আছে যারা দুধ, ডিম, মাংস আমদানীর জন্য প্রতিনিয়ত সুযোগ খুঁজছে। তাদেরই আছে বড় বড় মিডিয়া। আর তারা একটু সুযোগ পেলেই কয়েক পাতার কলাম লেখা আর নিউজ দেখানো শুরু করে। আর বাকি যেগুলা ছোটখাট মিডিয়া আছে সেগুলা তাদের অনুসরণ করে মাত্র।

এখন যদি সমস্যা থাকে। তবে সমস্যার কারণ উৎঘাটন করুন। যথাস্থানে যথালোককে বসান। পুরো উপজেলা জুড়ে দিয়েছে মাত্র ১-২ জন ভেট। আবার অনেক উপজেলায় কোনো ভেটই নাই। মিডিয়াগুলা এসব নিয়ে কোনো নিউজ করে না। কিন্তু দুগ্ধশিল্পকে কিভাবে আমদানী নির্ভর করা যাবে তা খুঁজে বেড়ায়। এসব মিডিয়া যদি দেশের আর দেশি শিল্পের ভালই চাইতো, তাহলে প্রতি উপজেলায় ঘুরে ঘুরে এই সেক্টরের সমস্যা ও তা সমাধানের উপায় নিয়ে যথাস্থানে যথালোকের সাথে কথা বলে কাজ করত।

Related Posts

2 Comments

মন্তব্য করুন