বৈশাখের নববর্ষে বাংলাদেশের অর্থনীতি

 

আর কিছুদিনের মধ্যেই শুরু হতে যাচ্ছে বাঙ্গালীর সব থেকে বড় উৎসব পহেলা বৈশাখ। তখন দেশ মাতবে নব্বর্ষ ১৪২৬ সনকে বরণ করে নেয়ার উৎসবে। আগের থেকে এখন অনেকাংশই ধুমধাম করেই পালন করে এই ‘পহেলা বৈশাখ’। আর এর অন্যতম কারন বর্তমান দেশের মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি। ফলে এই উৎসবে বছরের অন্যান্য সময়ের তুলনায় আর্থিক লেনদেন অনেক বেড়ে যায়। বাজারে টাকার লেনদেন বাড়ার কারনে চাঙ্গা হয়ে উঠে অর্থনীতি।

আর তাই এ সময়টাতে বাংলাদেশ ব্যাংক দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে  বাজারে অর্থের সরবরাহ বাড়িয়ে থাকে। বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের ক্রেডিট কার্ড, এটিএম বুথ, ইন্টারনেটভিত্তিক ব্যবস্থায় পর্যাপ্ত অর্থের মজুদ রাখে। এরই মধ্যে বিভিন্ন বিপনিবিতান, শোরুম ও মার্কেট প্লেসের দুকানগুলো ক্রেতা আকর্ষনের জন্য বিশেষ ছাড়ের অফার দিয়েছে। একই সাথে আর্থিক সেবাদান প্রতিষ্ঠান বিকাশ বিভিন্ন ব্র্যান্ডের পণ্যে ২০% পর্যন্ত ক্যাশব্যাক অফার দিয়েছে, এই সেবা পাওয়া যাবে সাড়া দেশের ২,০০০টি দুকানে । সাথে সাথে দেশের বিভিন্ন ব্যাংক-ও ১০ থেকে ৭৫ শতাংশ পর্যন্ত ক্যাশব্যাক ও ছাড়ের অফার দিয়েছে। বিভিন্ন নামিদামি হোটেল ও রেস্তোরাতে বাই ওয়ান, গেট ওয়ান অফার দিয়েছে বিভিন্ন ব্যাংক।

বছরের এই উৎসবকে ঘীরে কি পরিমান আর্থিক লেনদেন হয় তা এখনো পর্যন্ত সরকারী বা বেসরকারি কোন সংগঠন বা সংস্থা নির্দিষ্ঠ করে বলতে পারে না। তবে কিছু সূত্র অনুমান করে জানিয়েছে, বৈশাখের এই সময়টাতে সারা দেশে আনুমানিক ৩০ হাজার কোটি টাকার বানিজ্য হয়ে থাকে।

কিছু বছর ধরে ধারাবাহিক ভাবে বাড়ছে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার, যার ফলে দেশের মানুষের মাথাপিছু আয়ও বেড়েছে। আর মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পাওয়াই মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই এখন আগের তুলনায় মানুষ বিভিন্ন উৎসবে কেনাকাটায় আগ্রহী হয়ে উঠেছে।  এমনটাই মনে করছেন সংশ্লিষ্ট খাতের বিশ্লেষকরা।

বৈশাখকে কেন্দ্র করে প্রতিবছরই বাজারে নগদ অর্থের চাহিদা ও যোগান বাড়ছে। ‘পহেলা বৈশাখ অর্থনীতির তাৎপর্য’ শিরোনামে বাংলাদেশ অর্থনিতি সমিতির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৪ সালে বাংলা নববর্ষে সারা দেশে প্রায় ২৩ হাজার কোটি টাকার বানিজ্য হয়েছে। কিন্তু এর পর অর্থাৎ চার বছর পর বর্তমানে বাংলাদেশের ‘বাংলা নববর্ষে আর্থিক বাজিন্য প্রায় ৩০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে বলে মনে করেন অর্থনীতি সমিতির সভাপতি আবুল বারকাত। এমনটাই জানা যায় তার দেয়া কালেন কন্ঠের এক প্রতিবেদনে।

জানা যায় বর্তমান সরকারী কর্মচারী-কর্মকর্তাদের ২০ শতাংশ হারে যে বৈশাখি ভাতা চালু রয়েছে তা এই উৎসবে বাড়তি মাত্রা যোগ করেছে। যার পরিমান প্রায় ৫শ কোটি টাকা। এ সপ্তাহেই এই টাকা পেয়ে যাবেন সরকারী চাকরিজীবীরা । শুধু সরকারী চাকরিজীবীই নয় বর্তমানে কিছু কিছু বেসরকারি প্রতিষ্ঠানেও এই নিয়ম চালু রয়েছে।

বৈশাখের এ সময়টাতে ব্যবসা বানিজ্যের প্রাসার ঘটে ও দেশি পন্যের চাহিদা বেড়ে যায় অনেক গুন। স্বাভাবিকের তুলনায় এ সময় অর্থনীতির গতি অনেকটাই বৃদ্ধি পায়। বর্তমানে মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে প্রতিদিন হাজার কোটি টাকার লেনদেন হচ্ছে বৈশাখ উপলক্ষ্যে। এছড়া বাজারে নগদ আর্থিক লেনদেন বজায় রাখার জন্য বিভিন্ন ব্যাংকগুলোকে অর্থ ধার দিচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বিশেষ সুত্রে জানা যায়, রোপোর আওতায় থাকা ১৩টি প্রাইমারি ডিলার ব্যাংক ২৯০ কোটি টাকা ধার নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক-এর কাছ থেকে।

Related Posts