শিক্ষাবিস্তারে কম্পিউটার ও ইন্টারনেটের প্রয়োজনীয়তা ও তার ব্যবহার

বিজ্ঞানের অব্যাহত জয়যাত্রার একটি বৃহত্তম অবদান কম্পিউটার। বিজ্ঞান যন্ত্রবিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিদ্যার নিত্যনতুন দ্বার খুলে দিয়েছে। কম্পিউটার এখন এমনই এক মানব যন্ত্র, যা মানুষের কর্মময় জীবনকে এখন অনেক সহজ করে তুলেছে, এবং অনেক কিছু হাতের মুঠোয় করে দিতে সম্ভব হয়েছে। তাই বলা যায়, বিশ শতকের শ্রেষ্ঠ আবিষ্কার হলো কম্পিউটার।

কম্পিউটার বলতে এমন একটি ইলেকট্রনিক যন্ত্রকে বোঝায়, যা অগণিত তথ্য বা উপাত্ত গ্রহণ করে স্বয়ংক্রিয়ভাবে বিশ্লেষণ করে অতি দ্রুত সিদ্ধান্ত দিতে পারে। কম্পিউটার আভিধানিক অর্থে এক ধরনের গণকযন্ত্র। কম্পিউটার নির্ভুলভাবে তথ্যের সংরক্ষন, গণনা, বিশ্লেষণ করে খুব দ্রুত সিদ্ধান্ত বা ধারণা দেয়। ব্রিটিশ গণিতবিদ চার্লস ব্যাবেজ আধুনিক কম্পিউটারের জনক। তিনিই প্রথম পাঁচটি ভাগে পুরো আধুনিক কম্পিউটারের গঠনতন্ত্র আবিষ্কার করেন। ব্যাবেজের আবিষ্কৃত কম্পিউটারের গঠনতন্ত্রের পাঁচটি অংশ রয়েছে।

তা হলোঃ (১) স্টোর বা ভান্ডার, (২) মিল, (৩) কন্ট্রোল, (৪) ইনপুট, (৫) আউটপুট। তাঁর পরিকল্পিত গণকযন্ত্রই পরবর্তীকালে কম্পিউটার নির্মাণের প্রেরণা যুগিয়েছে। আঠারো শতকের দ্বিতীয় দশকে তিনি কম্পিউটারের ধারণা দেন। মানবজীবনে কম্পিউটারের বিশেষ অবদান ও কার্যকারিতা রয়েছে। এটি এক ধরনের যন্ত্র মস্তিষ্ক। তাছাড়া কম্পিউটারের তিনটি অংশ রয়েছে। এগুলো হলোঃ (১) সেন্ট্রাল প্রসেসিং ইউনিট, (২) ইনপুট, (৩) আউটপুট। সেন্ট্রাল প্রসেসিং ইউনিট কাজ করে সমস্যা-সংক্রান্ত সব রকম তথ্য নিয়ে।

তথ্য-সংবলিত নির্দেশ প্রদান করে ইনপুট। আর আউটপুট প্রকাশ করে গণনা-সংবলিত ফলাফল। বাংলাদেশে প্রাথমিকভাবে ক্ষুদ্র পরিসরে কম্পিউটারের পদচারণা শুরু হয় ১৯৬৪ সালে। আনবিক শক্তি কেন্দ্রে আইবিএম ১৬২০ সিরিজের একটি কম্পিউটার আনা হয়। আশির দশকের আগে এ দেশে খুবই সীমিত পরিসরে কম্পিউটার ব্যবহৃত হতো। কম্পিউটার বিষয়ে শিক্ষারও কোনো সুযোগ তখন ছিল না। বাংলাদেশে কম্পিউটার বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ও প্রাতিষ্ঠানিকভাবে শিক্ষা শুরু হয় নব্বইয়ের দশকে। এ ধারা অব্যাহত রয়েছে এবং বর্তমানে কম্পিউটার শিক্ষা ও ব্যবহারের প্রসার লাভ করেছে। এ বিষয়ে শিক্ষা লাভ করে অনেকেই আন্তর্জাতিক মানের সফটওয়্যার তৈরি করে খ্যাতি অর্জন করছে

বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশেও কম্পিউটার ব্যবহারের ব্যাপক প্রসার ঘটেছে। মানুষের গৃহ থেকে শুরু করে রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্র পর্যন্ত কম্পিউটারের ব্যবহার চলছে। বাংলাদেশের অফিস-আদালতে সব ধরনের কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে কম্পিউটার। কম্পিউটারের সাহায্যে খুব দ্রুত-নির্ভুল তথ্য প্রদান করা হচ্ছে। আধুনিক যুগে মানুষের পরম বন্ধু হয়েছে কম্পিউটার।

ব্যাংকে কোটি কোটি টাকার অংক মিলিয়ে মানুষকে নিশ্চিত করছে কম্পিউটার। বড় বড় কল-কারখানায় উৎপাদনের পরিকল্পনা ও নিয়ন্ত্রণের খবরদারি করছে। বিভিন্ন বিজ্ঞাপন প্রচার করা, পুরানো মামলার নথিপত্র খুঁজে বের করা, পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ, যেকোনো গণনা কাজ ইত্যাদিতে কম্পিউটার ব্যবহৃত হচ্ছে।

সর্বশেষে বলা যায়, কম্পিউটার বর্তমান বিশ্বের আর্শীবাদ।সেক্ষেত্রে বাংলাদেশের জন্যও আর্শীবাদ। বাংলাদেশের বিভিন্ন কাজে কম্পিউটার ব্যবহৃত হচ্ছে। বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষকে কম্পিউটার শিক্ষা দিতে হবে। প্রতি ঘরে ঘরে কম্পিউটার পৌছানোর ব্যবস্থা করতে হবে। আধুনিক প্রযুক্তির যুগে কম্পিউটারের ব্যাপক ব্যবহার নিশ্চিত করতে না পারলে দেশের উন্নয়ন সম্ভব হবে না। সুতারাং, পরিশেষে বলা যায়, কম্পিউটারের ব্যাপক ব্যবহার আমাদের মানবজীবনে অত্যন্ত অপরিসীম। এবং এর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আমাদের মানবজীবনে অধিক তাৎপর্যপূর্ণ ও অনস্বীকার্য।

Related Posts

19 Comments

মন্তব্য করুন