আসসালামু আলাইকুম। প্রিয় পাঠকবৃন্দ, আশা করি সবাই ভালো আছেন। সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছায় আমিও ভালো আছি। আজকে আপনাদের সামনে উপস্থাপন করার চেষ্টা করব শুক্রাণু তৈরি হতে কতদিন সময় লাগে ? কিভাবে বাড়ানো যায়? আশা করি আপনাদের অনেক ভাল লাগবে।
শুক্রাণু কি?
শুক্রাণু হলো পুংজননকোষ যা যৌ-ন-জননের আ্যনাইসোগ্যামি হিসেবে দেখা যায়। আ্যনাইসোগ্যামি অর্থ হচ্ছে পুংজনন কোষ স্ত্রীজননকোষের তুলনায় আকারে ছোট কিন্তু সক্রিয় অপরদিকে স্ত্রীজননকোষ আকারে বড় কিন্তু নিষ্ক্রিয়। শুক্রাণু শব্দটির ইংরেজি হচ্ছে Sperm যা গ্রিক শব্দ ‘স্পার্মা’ থেকে এসেছে যার অর্থ হচ্ছে বীজ। শুক্রাণু পুরুষ দেহের অ-ন্ড-কোষ/শুক্রাণু নামক স্থানে তৈরি হয়। প্রাণীরা স্পার্মাটোজোয়া নামক চলনশীল শুক্রাণু তৈরি করে। শুক্রাণুর দুটি অংশ থাকে মস্তক ও লেজ। শুক্রাণুর সম্মুখ ভাগের উপবৃত্তাকার অংশকে মাথা বা মস্তক বলে আর লেজটিকে বলা হয় ফ্ল্যাজেলামা।
শুক্রাণুর মূল কাজ হলো ডিম্বাণু পর্যন্ত পৌঁছানো ও এটির সাথে নিষিক্ত হওয়া। এটি নিষিক্তকরণের সময় ডিম্বাণু শুক্রাণুর সাথে মিলিত হয়ে নতুন জীবের সৃষ্টি করে। মানব শুক্রাণুতে ২৩ টি ক্রোমোজম থাকে যা ডিম্বাণুর ২৩টি ক্রোমোজোমের সাথে মিলিত হয়ে ৪৬টি ক্রোমোজোম বিশিষ্ট ডিপ্লয়েড কোষ গঠন করে৷ মানুষ ও অন্যান্য স্তন্যপায়ী প্রাণীদের ক্ষেত্রে এটি এপিডিমিসে সঞ্চিত থাকে ও শিশ্ন থেকে বী-র্য নামক তরলের সাথে নির্গত হয়।
শুক্রাণু তৈরি হতে কতদিন সময় লাগে
মানব ও অন্যান্য প্রাণীর শরীরে শুক্রাণু স্বয়ংক্রিয়ভাবে তৈরি হয়। একজন পুরুষ যখন বয়ঃসন্ধিতে পৌঁছায় অর্থাৎ ১২ থেকে ১৩ বছর বয়স তখন থেকেই তাদের শুক্রাণু তৈরি হওয়া শুরু হয়। এই প্রক্রিয়া যৌবনকাল থাকা পর্যন্ত চলতে থাকে। শুক্রাণু পুরুষ অন্ডকোষে মিয়োসিস বিভাজনের মাধ্যমে স্পার্মাটোজেনেসিসের দ্বারা উৎপাদিত হয়। প্রাথমিক ক্ষেত্রে এ প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হতে ৭০ দিনের মতো লাগতে পারে৷
কিছুক্ষেত্রে এর চেয়েও বেশিও লাগতে পারে। আবার একটি শুক্রাণুর লেজ গঠন ও অন্যান্য পূর্ণতা লাভ করতে আরও ৬০ দিন পর্যন্ত লেগে যেতে পারে। কিন্তু পুরুষের দেহে প্রতিনিয়তই শুক্রাণু তৈরি হচ্ছে। অর্থাৎ একটি চক্র শেষ হলো, আরেকটি শুরু হলো আবার কালকে একটি চক্র শেষ হলো এরকমভাবে। গড়ে পুরুষ প্রতি সেকেন্ডে ১০০০ এর মতো শুক্রাণু কোষের জন্ম দিতে সক্ষম। যদিও এই শুক্রাণুর সংখ্যা তাপমাত্রার উপরও কিছুটা নির্ভরশীল।
শুক্রাণু কতদিন বাঁচে?
শুক্রাণু পুরুষের শরীরের মধ্যে ৭০ থেকে ৭৪ দিন পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে৷ যদি শুক্রাণু এই ৭০ থেকে ৭৪ দিনের মধ্যে শরীর থেকে নির্গত বা বের না হয় তবে তা আবার শরীর দ্বারা শোষিত হবে। দে-হ থেকে নির্গত হওয়ার ক্ষেত্রে এটি বী-র্যের সাথে বের হয়। শরীরের বাহিরে শুক্রাণু ২০ মিনিট থেকে ১ ঘণ্টা পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে। এই সময় অনেকাংশই আশেপাশের পরিবেশের উপর নির্ভর করে৷ না-রী-র শ-রী-রের এটি অনেক সময় বেঁচে থাকতে পারে। এমনকি ৪ থেকে ৫ দিন পর্যন্ত বাঁচতে পারে৷
কি খেলে শুক্রাণু বাড়ে?
শুক্রাণু নানা কারণে কমতে পারে। মানবশরীরে প্রতি মিলিতে ১৫ কোটির চেয়ে কম শুক্রাণু থাকলে তাকে কম হিসেবে বিবেচন্স করা হয়। একে বলে অলিগোস্পামিয়া। অপর্যাপ্ত শুক্রাণু উৎপাদন পুরুষের বন্ধ্যাত্বের অন্যতম সাধারণ একটি কারণ। অনেক সময় শরীরে অভ্যন্তরে কোনো সমস্যা হলে শুক্রাণুর সংখ্যা কমে যায়। আবার অনেক ক্ষেত্রে অনিয়মিত জীবনধারা যেমন অতিরিক্ত ধূমপান ও মদ্যপানও শুক্রাণুর পরিমাণ কমাতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে হরমোন হ্রাস বা বৃদ্ধির কারণেও শুক্রাণুর সংখ্যা কমতে পারে।
শুক্রাণুর উৎপাদন তাপমাত্রার উপর নির্ভর করে৷ তো অন্ডকোষের আশেপাশের তাপমাত্রা যদি তুলনামূলক বেশি হয় সেক্ষেত্রে এতে সমস্যা হতে পারে। ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক ফ্রিকোয়েন্সী বা রেডিও ফ্রিকোয়েন্সী তরঙ্গও শুক্রাণুর সংখ্যা কম করতে পারে। শুক্রাণু বৃদ্ধিতে অবশ্যই একটি নিয়মিত ও স্বাস্থ্যকর জীবনধারা মানতে হবে। অতিরিক্ত মদ্যপান কিংবা ধূমপান করা যাবে না। দৈনিক পর্যাপ্ত পরিমাণ ব্যায়াম করতে হবে। এছাড়াও অর্শ্বগন্ধা, মাকা রুট, রসুন ইত্যাদি আয়ুর্বেদিম ওষুধ ব্যবহার করা যেতে পারে। এর কোনো কিছুতেই কোনো কাজ না হলে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
শুক্রাণু কি খালি চোখে দেখা যায়?
সাধারণত না। এটি দেখতে অণুবীক্ষণযন্ত্রের প্রয়োজন হয়। শুক্রাণু সাধারণত অত্যন্ত ক্ষুদ্র হয়ে থাকে। মানুষের শুক্রাণুর ব্যাস ২.৫ মাইক্রন ও এর দৈর্ঘ্য প্রায় ৫০ থেকে ৭০ মাইক্রন পর্যন্ত হতে পারে। যা একটি ডিম্বাণুর তুলনায় অনেক ছোট। ডিম্বাণুর ব্যাস ১২০ থেকে ১৫০ মাইক্রন পর্যন্ত হতে পারে। তো স্বাভাবিকভাবেই এটি খালি চোখে দেখা অসম্ভব।
শুক্রাণুর জীবনকাল, শুক্রাণু তৈরি হতে কতদিন সময় লাগে
একসাথে প্রতি চক্রে কোটি কোটি শুক্রাণুর সৃষ্টি হয়। এর মধ্যে অনেক শুক্রাণুই রয়েছে যা ত্রুটিযুক্ত বা বি-ক-লাঙ্গ। শুক্রাণু তৈরি হওয়ার ৭০ থেকে ৭৪ দিনের মধ্যে নির্গত না হলে তা শরীরে শোষিত হয়ে যায়। প্রতিবার বী-র্য-পা-তনে ৪ থেকে প্রায় ১০০ কোটির মতো শুক্রাণু নির্গত হয়। এগুলোর প্রতিটির লক্ষ্য থাকে ডিম্বাণুতে পৌঁছানো ও সেটিকে নিষিক্ত করা৷ ডিম্বাণু পর্যন্ত পৌঁছানোর জন্য শুক্রাণু সাধারণত লেজ দিয়ে সাতার কাটতে থাকে। অনেক শুক্রাণু পথিমধ্যেই মারা যায়। শুধু একটি শুক্রাণুই ডিম্বাণুতে পৌঁছে সেটিকে নিষেক করএ জাইগোট গঠন করতে পারবে। যা পরবর্তী মানুষে বা অন্য প্রাণীতে পরিণত হবে।
পোস্টটি কেমন লাগলো দয়া করে কমেন্টে জানাবেন, যদি ভাল লেগে থাকে তাহলে অবশ্যয় শেয়ার করবেন, পোস্টটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ। এমন সব দারুন দারুন পোস্ট পেতে Grathor এর সাথেই থাকুন এবং গ্রাথোর ফেসবুক পেইজ ও ফেসবুক গ্রুপ এ যুক্ত থাকুন, আল্লাহ হাফেজ।
দারুন লিখেছেন।
Good
দারুণ হয়েছে
দারুণ