এক গ্রামে ছিলো এক গরীব কৃষক। তার জমি জমা তেমন বিশেষ কিছু ছিলো না। অল্প যা কিছু জমি জমা ছিলো, সেগুলো চাষাবাদ করে কোনমতে তার দুবেলা দুমুঠো দিন চলতো। তার ছিলো একটি গরু আর দুটি ছাগল। এই একটি গরু আর দুটি ছাগলের দুধ বিক্রি করে সে তার ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা করাতো।
একদিন তার গরু আর ছাগল দুটি পাশের বাড়ির মাতবরের জমির ধান খাওয়াতে মাতবর খুব রাগ করে গরু আর ছাগল দুটি ধরে প্রথমে খোঁয়াড়ে দেয়। পরে খোঁয়াড় মালিকের সাথে আঁতাত করে হাটে বিক্রি করে দেয়। গরু আর ছাগল বিক্রির টাকা মাতবর আর খোঁয়াড় মালিক ভাগাভাগি করে নেয়।
অসহায় গরীব কৃষক কোনো উপায়ান্তর না দেখে ঐ মাতবর আর খোঁয়াড় মালিকের বিরুদ্ধে গ্রামের চেয়ারম্যানের কাছে নালিশ করে, বিচার দেয়। কিন্তু চেয়ারম্যানও তলে তলে মাতবর আর খোঁয়াড় মালিকের সাথে আঁতাত করে বিচারের নামে ঐ গরীব অসহায় কৃষককে দিনের পর দিন ঘোরাতে থাকে।
ঐ গ্রামে ছিলো এক চালাক মুহুরি। সে শহরের কোর্টে এক অতিচালাক উকিলের মুহুরির কাজ করতো। ঐ অতিচালাক উকিল তার ঐ মুহুরিকে মামলা মোকদ্দমা নিষ্পত্তির জন্য মক্কেল ধরে আনার দায়িত্ব দিয়েছিলো।
ঐ চালাক মুহুরি চেয়ারম্যান ও মাতবরের সাথে যোগসাজশ করে অসহায় কৃষকের বিরুদ্ধে মাতবরের জমির ধান কেটে নেওয়ার কেস সাজায়। সেই কেসে অসহায় কৃষকের বিরুদ্ধে অতিচালাক উকিলকে দিয়ে ওয়ারেন্ট জারী করায়। পরে অসহায় কৃষককে দিয়ে আবার ঐ চালাক মুহুরি চেয়ারম্যান ও মাতবরের বিরুদ্ধে উল্টো কোর্টে গরু চুরির কেস দেওয়ায়।
সেই কেসের দায়িত্ব নেয় আবার অতিচালাক ঐ উকিল। তো কোর্টে যখন মাতবরের জমির ধান কেটে নেওয়ার কেস উঠবে তখন অতিচালাক ঐ উকিল অসহায় কৃষককে শিখিয়ে দিয়েছে যে বিচারকের সামনে তাকে যা প্রশ্ন করা হবে সব প্রশ্নের উত্তরে সে যেন গরুর মতো “হাম্বা” ডাক দেয়।
তাহলে বিচারকের কাছে তাকে পাগল প্রমাণ করে কেস জিতিয়ে আনবে সেই অতিচালাক উকিল। আর কোনো উপায়ান্তর না দেখে অসহায় কৃষক অতিচালাক উকিলের কথায় বিচারকের সামনে “হাম্বা” ডাকতে রাজি হয়। তারপর কোর্টে যখন মাতবরের জমির ধান কেটে নেওয়ার কেস উঠেছে তখন বিচারক কৃষককে জিজ্ঞেস করলেন, আপনি কি মাতবরের জমির ধান কেটেছেন? কৃষক তখন অতিচালাক উকিলের শিখিয়ে দেয়া কথামতো বলে উঠলো, হাম্বা!
বিচারক হতভম্ব হয়ে জিজ্ঞেস করলেন, কি বললেন? কৃষক আবারও বলে ওঠে, হাম্বা! এরপর তাকে যত কিছুই জিজ্ঞেস করা হয়, সব কিছুর উত্তরেই সে বলে, হাম্বা! বিচারককে তখন সেই অতিচালাক উকিল বলে, বিজ্ঞ আদালত, আমার মক্কেল এই সহজ সরল কৃষক শোকে-দুঃক্ষে পাগল হয়ে গেছে। আমার মক্কেল এই সহজ সরল কৃষককে এই কেস থেকে খালাস দেওয়ার জন্য আবেদন জানাই।
বিচারক সাথে সাথে ঐ কৃষককে খালাস দিয়ে দিলেন। কোর্টের বাইরে এসে অতিচালাক উকিল কৃষককে বললো, আমি তো কেস জিতিয়ে আপনারে খালাস করে আনলাম, এখন আমার ফি বাবদ দশ হাজার টাকা দিয়ে দেন। কৃষক তখন সাথে সাথে বললো, হাম্বা! অতিচালাক উকিলের আক্কেল গুড়ুম হয়ে গেল!!
সাইফুল হক : লেখক, সম্পাদক, গবেষক।