অবশেষে তুমি আর আমি

সবকিছু আছে আদাতের লাইফে! সবকিছু বলতে সচরাচর যা বুঝায়- টাকা-পয়সা, বাড়ি-গাড়ি, মা-বাবা, ভাই-বোন, বেশ বড়-সড়, হাসি-খুশি একটা ফ্যামিলি। এতকিছুর পরেও আদাত স্যাটিসফাইড না।

আদাতের একটা ছোট বোন আছে। আদাত আর তার এক ভাইয়ের মধ্যে বোন একটাই। একটা বোন হলে যা হয়, প্রচুর আদর পেতো এবং পায়। স্পেশালি আদাত একটু বেশিই আদর করতো এবং করে। অর্পি, অর্পি ছিল ওর নাম। হঠাৎ একটা এক্সিডেন্ট হয়, অর্পি রেপড হয়। হাসি-খুশি ফ্যামিলিটা অন্ধকারাবৃত হয়ে যায়। আদাত ছেলেটা ফ্যামিলিকে মাতিয়ে রাখতো। সেই ছেলেটার দিকে তাকানো যায়না। ফ্যামিলির প্রত্যেকটা মেম্বার কেমন যেন হয়ে গেছে। আদাত প্লান বানাতে থাকে, কী করলে রেপড করা ছেলেটাকে শাস্তি দিতে পারবে। আদাত রাফির (ছেলেটার নাম) ব্যপারে খোঁজ লাগায়, সব ইনফরমেশন কালেক্ট করে।

বাট, দ্য মোস্ট ইমপর্টেন্ট ইনফরমেশন ইজ ওই ছেলেটার একটা বোন আছে। আদাত ওই মেয়েটার পিছু নেয়। প্রিয়ন্তী ছিলো মেয়েটার নাম। আদাত নিজের সর্বোচ্চটা দিয়ে চেষ্টা করে প্রিয়ন্তিকে ইমপ্রেস করার। আদাত এমন কিছু করছে যাতে  প্রিয়ন্তির চোঁখে ও ছ্যাঁচড়া প্রমানিত না হয়। এক পর্যায়ে আদাতের প্লান সাক্সেসফুল হয়। আদাত আর প্রিয়ন্তি রিলেশানে যায়। প্রিয়ন্তির সাইড থেকে ওর আর আদাতের দুজনেই ভালোবাসাই পিউর। কিন্তু, প্রিয়ন্তি আদাতের হাইডেন সিনের ব্যপারে জানতোনা। অন্য রিলেশন গুলোর মতোই চলতে থাকে খুনসুটি, অভিমান, রাগ ভাঙানো ইত্যাদি ইত্যাদি। বাট, বিহাইন্ড দ্য সিন আদাতও প্রিয়ন্তির মায়ায় আটকে গেছিল, প্রচন্ড রকমের ভালোবেসে ফেলেছিল প্রিয়ন্তিকে।

আদাত যখনই তার সত্যিকারের ভালোবাসাটুকুর ফিল নিয়ে প্রিয়ন্তির সাথে খুনসুটি করতে চাই, তখনি অর্পির কান্নাটা কানে বেজে উঠে। শুরু করে দেয় প্লান অনুযায়ী কাজ। প্রায় অনেকদিন হয়ে যাচ্ছে ওদের রিলেশনের। আদাত দিন দিন প্রিয়ন্তির প্রতি বেশিই উইক হয়ে যাচ্ছে। এটা সে বুঝতে পেরেছে। একদিন রাতে, আদাতের ফোন থেকে প্রিয়ন্তির ফোনে কল আসে–হ্যালো! আপনি কি আদাতের কেউ হোন?

–জ্বী, এটা তো আদাতের কন্টাক্ট! কী হয়েছে আদাতের? কোথায় ও? –আপনি এখনি “^^^^^^” এই এড্রেসে চলে আসুন, আদাতের অবস্থা ভালো না। ফোনের লাইন কাটতে দেরি হয়েছে, প্রিয়ন্তির বের হতে দেরি হয়নি, সারা শরীর কাঁপছে ওর, চোঁখের পানিতে সারা শরীর ভিজে যাচ্ছে। আদাতকে একটু বেশিই ভালোবেসে ফেলেছে। এড্রেস অনুযায়ী গিয়ে দেখে কিছু ছেলে দাড়িয়ে।

প্রিয়ন্তি: আদাত? আমার আদাত? আপনারা কেউ….

–আদাত ওই বাসায় আছে।

প্রিয়ন্তি দৌড়ে বাসার ভিতরে যায়, গিয়ে দেখে আদাত সুফার উপর বসে টী-টেবিলে পা দিয়ে আছে।

চোঁখ-মুখ ফুলে আছে, লাল হয়ে আছে আদাতের। ঝগড়ায় মাঝেমধ্যে প্রিয়ন্তির জন্য কান্না করলে আদাতের চোঁখ-মুখ এমন থাকতো।

-আদাত?? কী হয়েছে তোমার???? বলো আমাকে?? আমি আছি তো?? কে কী বলেছে তোমায়??

আদাত?? বলো? কেউ বকেছে? বাবা বকেছে? অর্পির সাথে ঝগড়া হয়েছে? বলো আমাকে???

প্রিয়ন্তি প্রচন্ড রকমের কান্না করছে।

ঝগড়া শেষে যেমন প্রিয়ন্তিকে জড়িয়ে ধরে বলতো “প্রিয়ন্তি থাকতে আদাতের আবার কী হবে?” এখন ঠিক সেটায় করতে ইচ্ছে করছে ।

কিন্তু…..

অর্পির কান্না আর চেহারা ভেসে উঠে।

রুমের দরজা লক করে দেয়।

তারপর?….

তারপর আর কী?..

অর্পির সাথে প্রিয়ন্তির ভাই যেটা করেছিলো আদাত আজ প্রিয়ন্তির সাথে সেটাই করেছে!!!

প্রিয়ন্তি বার বার বলছিলো,” আদাত, প্লীজ স্টপ। আমি তোমারি, তোমাকে ভালোবাসি। আদাত, এরপর স্যরি বললে কিন্তু আমি তোমায় ক্ষমা করবোনা, কান ধরলেও না। আদাত? তুমি ভুল করছো, আদাত আমি তোমাকে এভাবে চাইনি। আদাত আমি তোমাকে সত্যিই ভালোবেসে ছিলাম।”

সেইসাথে প্রিয়ন্তি নিজেকে ছাড়ানোর অনেক চেষ্টা করছিলো, আর ৮-১০টা রেপড হওয়া মেয়ের মতোই।  J।

কিন্তু কোনো লাভ হয়নি।

আদাত অর্পির কাছে যায়। পাগলের মতো হাসছে আদাত।

আদাতঃ অর্পি? এই অর্পি!!!! প্রি-প্রিয়ন্তি, একটা মেয়ে…………বুঝছিস? প্রিয়ন্তির ভাই ঐ ছেলেটা। ঐ যে ছেলেটা…………প্রিয়ন্তিকে আমি রেপড করেছি। (আদাত পাগলের মতো কথাগুলো বলছে আর হাসছে।)তুই খুশি তো? খুশি না?

 অর্পিঃ ভাইয়া? কী বলছিস তুই??? আদাত ভাইয়া???? তুই এরকমটা করেছিস??? (অর্পির বিশ্বাস হচ্ছিলনা কারণ আদাত রীতিমতোই যথেষ্ট ভদ্র ছেলে।)

অর্পিঃ ভাইয়া তুই জানিস না? রাফির সাথে আমার বিয়ে ঠিক হয়েছে।

আদাতঃ হোয়্যাট? কী বলছিস এইসব? বাড়িতে এমন বড় বড় ডিছিশান নেয়া হয়, অথচ আমাকে কিছু জানানো হয় না? বাট হোয়্যাই? ( আদাত চেঁচামেচি করছে, এমনিতেই ওর মাথা ঠিক নেই! মাথা আরও খারাপ হচ্ছে)

অর্পিঃ তুই বাড়িতে থাকিস? রাফি আমাকে ক্লাস থ্রী থেকে পছন্দ করে। ক্লাস সেভেন থেকে টিল নাও প্রপুজ করে যাচ্ছে কিন্তু আমি রিজেক্ট করি বারবার। ওর পাগলামি বেড়ে যায়, ওর নাকি আমাকে লাগবেই। একপর্যায়ে ওর থেকে বাঁচতে আমি বলি যে আমার বিয়ে ঠিক হয়েছে।

পরে ও প্ল্যান করে আমাকে………… তাহলে নাকি ওর সাথে ছাড়া কারো সাথে আমার বিয়ে হবেনা। সত্যি বলতে আমিও রাফিকে ভালবাসতাম, কিন্তু বাবা আর তোদের ভয়ে……………………………………

আদাত প্রচুর রেগে যায়, কাছে থাকা জিনিসগুলো ভেঙে দেয়। চেঁচামেচি করতে থাকে। সবাই এসে জড়ো হয়।

আদাতঃ আমি অর্পির সাথে একা কথা বলতে চাচ্ছি।

সবাই চলে যায়।

আদাতঃ আমি রাফির বোন প্রিয়ন্তির সাথে ফেইক রিলেশনে যায়। প্রিয়ন্তি আমাকে প্রচন্ড ভালোবাসতো। আমিও বাসতাম। কিন্তু আমার ভালোবাসাটা ফেইক ছিল। এক পর্যায়ে আমি ওর প্রতি উইক হয়ে পড়ি, ভালোবেসে ফেলি, ভালোবাসা বাড়তেই থাকলো। তারপরে তোর প্রতিশোধ নেয়ার জন্য একটু আগে আমি প্রিয়ন্তিকে…………………………এইটা বলে আদাত হাটু গেড়ে বসে কান্না শুরু করে দেয়।

অর্পিঃ ভাইয়া? আমি প্রিয়ন্তি আপুর সাথে কথা বলবো। তুই কোনো টেনশান নিসনা।

অর্পি প্রিয়ন্তিকে ফোন দেয়!!!

অর্পিঃ আপু!! আমি সব জানি। তুমি টেনশান নিও না। আদাত ভাইয়ার সাথে তোমার বি……

অর্পির কথা শেষ না হতেই

প্রিয়ন্তিঃ অর্পি প্লীজ, তুমি জাস্ট এই ঘটনাটা কাউকে বলনা। তাহলে আদাতের ক্ষতি হবে। আমি আদাতকে অনেক ভালোবাসি। কিন্তু আজকের ঘটনার জন্য আমি ওকে কোনোদিন ক্ষমা করবোনা।

এই বলে প্রিয়ন্তি ফোন কেটে দেয়।

কিছুদিন পর!

প্রিয়ন্তি তার আর আদাতের ব্যপারটা কাউকে জানাইনি। শুধু মুখের হাসিটুকু মুছে ফেলেছে।

অর্পি আর রাফির বিয়ে হয়ে যায়। বিয়েতে আদাত ছিলনা। আদাত প্রিয়ন্তির সামনে যেতে পারবেনা।

প্রিয়ন্তিকে আদাত প্রচন্ড মিস করতে থাকে। ওর সাথে কাটানো সময়গুলো, দুষ্টুমি, ঝগড়া এইগুলো আদাতকে শেষ করে দিচ্ছে। আদাত পাগলের মতো হয়ে যাচ্ছে। প্রিয়ন্তিকে না দেখে থাকতেই পারছেনা। ওর দম বন্ধ হয়ে আসছে। প্রিয়ন্তির চোখগুলোকে আরও বেশি মিস করছে।

প্রিয়ন্তি!!! প্রিয়ন্তি!!! প্রিয়ন্তি!!!

আদাত সোজা বাইক নিয়ে প্রিয়ন্তির বাসায় চলে যায়।

অর্পিঃ ভাইয়া তুই?

রাফিঃ আরে আদাত ভাইয়া! আপনার সাথে তো……।।

আদাতঃ আমি প্রিয়ন্তির সাথে দুমিনিট কথা বলতে চাই।

রাফিঃ ঠিকাছে, কিন্তু ভাইয়া কেমন আছেন?

অর্পিঃ প্রিয়ন্তি আপু ছাদে আছে, চল নিয়ে যাচ্ছি।

অর্পি আদাতকে ছাদে দিয়ে চলে আসে।

প্রিয়ন্তি আকাশের দিকে মুখ করে তাকিয়ে আছে।

আদাত কান্না আটকে রাখতে পারছেনা। আদাত কীভাবে প্রিয়ন্তির সামনে যাবে? আদাত তো একটা বাজে ছেলে।

আদাতঃ প্রিয়ন্তি?

প্রিয়ন্তি পিছনে ফিরে তাকায়! দুজন মুখোমুখি…… কেউ কোনো কথা বলছেনা!

তবে ৪টি চোখ অনেক কিছুই বলছে।

কিছুক্ষণ পর প্রিয়ন্তি আদাতের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে আকাশের দিকে তাকায়।

আদাতঃ স্যরি বললেও ক্ষমা করবেনা? কান ধরলেওনা?

…………………

আদাতঃ এই যে দেখো আদাতের মন খারাপ, আদাত ভালো নেই। প্রিয়ন্তি কি আদাতের মন ভালো করবেনা???

…………………

আদাতঃ আদাত একটুও ভালো নেই! প্রিয়ন্তি কি জানেনা?

……………

আদাতঃ আদাত ষ্টুপিড, এই যে আদাত কান ধরতেছে…

………

আদাতঃ প্রিয়ন্তি? এই প্রিয়ন্তি?

প্রিয়ন্তি নিজেকে সামলাতে পারছেনা। অনেক ভালোবাসে যে আদাতকে।

প্রিয়ন্তি আদাতের দিকে তাকায়…

আদাত কান ধরে হাটু গেড়ে বসে আছে…প্রিয়ন্তিও আদাতের সামনে বসে।

আদাতঃ স্যরি বললেও মাফ করবেনা?

প্রিয়ন্তিঃ না।

আদাতঃ কান ধরলেও নয়া?

প্রিয়ন্তিঃ না।

আদাত কথা বলতে পারছেনা, ওর চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করছে! প্রিয়ন্তির সাথে কীভাবে সে এত বড় অন্যায়টা করতে পারলো?

প্রিয়ন্তিঃ কী হয়েছে তোমার আদাত? -আদাত?? কী হয়েছে তোমার???? বলো আমাকে?? আমি আছি তো?? কে কী বলেছে তোমায়??

আদাত?? বলো? কেউ বকেছে? বাবা বকেছে? অর্পির সাথে ঝগড়া হয়েছে? বলো আমাকে???

প্রিয়ন্তি প্রচন্ড রকমের কান্না করছে।

আদাতঃ প্রিয়ন্তি থাকতে আদাতের আবার কী হবে?

কান্না ছাড়া আর কী?

শেষমেষ, দুজনের বিয়ে হয়!

Related Posts

19 Comments

মন্তব্য করুন