অ্যজমা কি এবং তা নিয়ন্ত্রণের উপায়-

হাঁপানি বা অ্যাজমা বলতে কি বুঝায়?
হাঁপানি বা অ্যাজমা হল ফুসফুসের একটি রোগ যা সব বয়সের মানুষের হতে পারে। যাদের হাঁপানি আছে তাদের ফুসফুস ও শ্বাসনালী সাধারণ লোকজনের শ্বাসনালীর তুলনায় অনেক বেশি স্পর্শকাতর অর্থাৎ সামান্য কারণে শ্বাসনালির খিঁচুনি হয়।

অ্যাজমা সম্পর্কে মানুষের কিছু ভুল ধারনা আছে যা আসলে সত্যি নয়
<>অ্যাজমা কখনোই ছোঁয়াচে বা সংক্রামক রোগ নয়।
<> অ্যাজমা রোগের কোন চিকিৎসা নেই তা সত্যি নয় বরং চিকিৎসার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
<>অ্যাজমার ওষুধ গুলো তে (যেমন: ইনহেলার) মানুষ অভ্যস্ত হয়ে যায় না।
<>ইনহেলার নিলে অন্য কোন ওষুধ কাজ করবে না এটি সম্পূর্ণ ভুল ধারণা।
বি দ্রঃ ইনহেলার এজমার প্রাথমিক সর্বাপেক্ষা কার্যকরী ও নিরাপদ চিকিৎসা।
অ্যাজমার কারণঃ
অ্যাজমার কারণ এখনো অস্পষ্ট। বিভিন্ন কারণে অ্যাজমা হতে পারে-
•বংশগত
•পরিবেশগত
•বাচ্চা বয়সে ব্রংকিওলাইটিস ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হওয়া।
[]আপনি কিভাবে বুঝবেন আপনার অ্যাজমা আছে?
(১)যদি দীর্ঘমেয়াদি কাশি থাকে।

(২)শ্বাসকষ্ট থাকে। 

(৩)বুকে চাপ অনুভব করা।

(৪) বুকের ভেতর বাঁশির মতো সাঁ সাঁ করে শব্দ হওয়া।
[]যে সব জিনিস অ্যাজমার আক্রমনকে বাড়িয়ে দেয়-
যে সকল জিনিস অ্যাজমা আক্রমনকে ত্বরান্বিত করে তাদের অ্যাজমা ট্রিগার বলা হয়।অ্যাজমার ট্রিগারগুলো বিভিন্ন হতে পারে।সাধারন ট্রিগারগুলো নিম্নরুপঃ-
• ধুলায় বসবাসকারী কীট ‘মাইট’
•অ্যারোসল বা স্প্রে
•পশুর পশম
• ধূলাবালি
•ঠান্ডার আক্রমন
• ফুলের পরাগরেণু
•সিগারেটের ধোঁয়া
•ম্যাট বা কার্পেট
•কিছু ঔষুধ(অ্যাসপিরিন বা উচ্চরক্তচাপের ঔষধ)
•মানসিক দুশ্চিন্তা
•আবহাওয়ার তাপমাত্রার তারতম্য
•কিছু খাবার(চিংড়ি, ইলিশ, গরুর মাংস)
•অতিরিক্ত শারীরিক পরিশ্রম
•ধোঁয়া
•স্যাঁতস্যাঁতে আবহাওয়া

এজমা হলে করণীয়ঃ-
• বাড়িঘর পরিষ্কার রাখুন।

•বিছানার চাদর বালিশ কড়া রোদে শুকিয়ে ব্যবহার করুন।

•ডাক্তারের ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী নিয়মিত ওষুধ সেবন করুন এবং পরামর্শ মেনে চলুন। 

•নিয়মিত চেকআপ করুন।

•মানসিকভাবে শান্ত থাকুন এবং নিয়ম মেনে চলুন।
• স্বাস্থ্যসম্মত ও পুষ্টিকর খাবার খান।

এজমা হলে বর্জনীয়ঃ-
• এজমার ট্রিগারগুলো (যা অ্যাজমা আক্রমনকে বাড়ায়) এড়িয়ে চলুন।
•ধূমপান থেকে বিরত থাকুন।
•ম্যাট্রস বা কার্পেট জাতীয় জিনিস এড়িয়ে চলুন।
•ঠান্ডা স্যাঁতস্যাঁতে আবহাওয়া এড়িয়ে চলুন।
•অ্যাজমা কে অবহেলা করবেন না

অ্যাজমার চিকিৎসা:
অ্যাজমার চিকিৎসা প্রধানত দুই ধরনের ওষুধ ব্যবহার হয়ে থাকে।

[]উপশমকারী ওষুধ-
এই ওষুধগুলো শ্বাসনালি প্রসারক ওষুধ বলে। এরা সংকুচিত হয়ে যাওয়া শ্বাসনালিকে দ্রুত প্রসারিত করে এবং শ্বাস প্রশ্বাসের অসুবিধা দূর করে স্বাভাবিক শ্বাস নিতে সাহায্য করে।
[]বাধাদানকারী বা প্রতিরোধক ঔষধ-
এ সকল ঔষধ অ্যাজমার ট্রিগার গুলোর প্রতি শ্বাসনালির সংবেদনশীলতা কমানোর জন্য প্রতিদিন ব্যবহার করতে হয়।

বি দ্রঃ বাধাদানকারী বা প্রতিরোধক ওষুধের নিয়মিত ব্যাবহা হাঁপানি নিয়ন্ত্রণের মূল চাবিকাঠি।

আপনাদের অনেকেরই মনে একটা প্রশ্ন জাগে অ্যাজমা কি কখনো ভালো হয়?
বর্তমানে অ্যাজমা সম্পূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণ রাখা সম্ভব। নিয়মিত পর্যাপ্ত পরিমাণ ওষুধ দেওয়ার পর রোগীর উপসর্গ দেখা যায় না বললেই চলে। রাতে শ্বাসকষ্টের কারনে ঘুম ভাঙ্গে না।রোগী প্রায় স্বাভাবিক জীবনযাপন করে।

অ্যাজমা নিয়ন্ত্রণে না থাকলে কি বিপদ হতে পারে?
•যে কোন সময় মারাত্মক জটিল অ্যাজমা হতে পারে।
•অক্সিজেন কম থাকায় সবসময় অবসাদগ্রস্ত হতে পারে।
•অক্সিজেনের অভাবে স্মৃতিশক্তি কমে যেতে পারে।

[]অ্যাজমা নিয়ন্ত্রণে আছে কিনা কিভাবে বুঝবেন?
<>অ্যাজমা নিয়ন্ত্রণে আছে (যখন ভালো থাকেন)
• দিনে এবং রাতে কাশি শ্বাসকষ্ট বুকে শব্দ বুক চেপে আসা থাকে না
•স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হয় না
•ইদানিং কোন এজমার টান উঠেনি
•উপশমকারী ওষুধের প্রয়োজন হয় না
<>অ্যাজমা নিয়ন্ত্রণ হারাচ্ছে (যখন ভালো নেই)
•দিনে এবং রাতে কাশি শ্বাসকষ্ট বুকে শব্দ বুক চেপে আসে
• স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে
•অ্যজমার টান উঠেছিলো
• প্রায় উপশমকারী ওষুধের প্রয়োজন হয়
<>এ্যাজমা আক্রমণ হচ্ছে (যখন বেশি অসুস্থ)
•ওষুধ বাড়ানোর পরও অ্যজমা দ্রুত বেড়ে যাচ্ছে
• উপশমকারী ওষুধ ব্যবহারে পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে
<> অ্যজমার মারাত্মক আকার ধারণ করেছে (বিপদজনক লেন)

•অ্যজমার লক্ষনগুলো দ্রুত বেড়ে যাচ্ছে
•উপশমকারী ওষুধ 2 ঘণ্টার মধ্যে আবার দিতে হচ্ছে

Related Posts

9 Comments

মন্তব্য করুন