আত্মহত্যার ইতিকথা কারন ও তার প্রতিকার (পর্ব-২)

ঘটনা -(৩)
শ্রাবন্তী ও টুটুল ভালবেসে বিয়ে করে, টুটুলের মায়ের শত আপত্তি কানে নেয়নি টুটুল। টুটুলের বাবা না থাকাতে ব্যবসার পুরোটা টুটুল একাই দেখাশোনা করে, ছোট ভাইটা স্টুডেন্ট। সে থাকে পড়াশোনা নিয়ে। টুটুলের মা বেশ অহংকারী আর জেদি মহিলা। টুটুলের পছন্দ শ্রাবন্তীদের আর্থিক ও সামাজিক অবস্থান টুটুলদের থেকে নিম্ন হওয়ায় শ্রাবন্তীকে তার পছন্দ নয়। টুটুল জেদ করে বিয়ে করে।

শ্রাবন্তী বেশ শান্ত ও ভদ্র বিধায় টুটুলের মায়ের শত শত লাঞ্চনামূলক আচরণ ও তীক্ষ্ণ কথার তীর তাকে বিদ্ধ করলেও ক্ষত করতে পারে না। টুটুলের জন্য সে সব কিছু মেনে নেয়। এভাবেই কেটে যায় দিন। টুটুল সারাদিন ব্যস্ত থাকে ব্যবসা নিয়ে। শ্রাবন্তীর দিনগুলোও সংসারের কাজে কাজেই কেটে যায়। এভাবে বছর পাঁচেক কেটে যায়। শ্রাবন্তী একসময় আবিষ্কার করে সে মা হতে পারবে না। অক্ষমতা শ্রাবন্তীর। শ্রাবন্তী ভেঙে পরে।
শ্বাশুড়ির কথার অত্যাচার বাড়তে থাকে। টুটুলের ভালবাসাও সেই সাথে বাড়তেই থাকে। টুটুল মায়ের অত্যাচার থেকে শ্রাবন্তীকে আড়াল করার সর্বাত্মক চেষ্টা করে। টাকার অভাব না থাকলেও শ্রাবন্তীকে কিন্ডার গার্ডেন স্কুলে জব করতে পাঠায় শুধু মাত্র সময় কাটানোর জন্য। তাতেও বাঁধা হয় শ্রাবন্তীর শ্বাশুড়ি।

তবু হাল ছাড়ে না। টুটুলের সমর্থনে সে কাটিয়ে দেয় দিনগুলি। তবে প্রায় প্রতিদিনই মা ছেলের ঝগড়া চলে বাড়িতে। ব্যবসাতে সেবার একটু লোকসান হলো। টুটুলের মা সকল রাগ ঝাড়লেন শ্রাবন্তীর উপর। শ্রাবন্তীর মত কুলক্ষনার জন্য তার সংসারের উন্নতি আজ হুমকীর মুখে। শ্রাবন্তী আর সইতে পারে না। বাবার বাড়ী চলে আসে। টুটুল অসহায় হয়ে পরে। কার কাছে যাবে সে, কাকে বোঝাবে তার মনের অসহায়ত্ব। শ্রাবন্তীই টুটুলের জন্য আবার ফিরে আসে। এভাবে তাদের বিয়ের 10টি বছর কেটে যায়। তবে কোনর পরিবর্তন নাই সংসারের।

মায়ের দৌরাত্ন দিনকে দিন বেড়েই চলেছে। শ্রাবন্তী তার চক্ষুসূল আজও তেমনই। তবে ভাইটি এখন বড় হয়েছে। একদিন টুটুলের ভাই জানতে পারল টুটুল শ্রাবন্তীর নামে একটা ফ্লাট কিনেছে। টুটুলের মা আরও ক্ষিপ্ত হয়। ব্যবসাতে ছোট ভাইটারও হক আছে তবে কেন সে নিজের বউ এর নামে ফ্লাট কিনল এ নিয়ে রোজ চলতে থাকল বাড়ীতে যুদ্ধ। টুটুল বলে আমার পারিশ্রমিক থেকে আমি কিনেছি। কিন্তু ওর মা সেটা মানতে নারাজ। যে বউ উত্তরাধীকারী দিতে অক্ষম তাকে নিয়ে কেন আদিক্ষেতা? এক সময় টুটুলের মা টুটুলকে আরেকটি বিয়ে করতে জোড় করে। টুটুল রাজী হয় না।বিয়ে না করলে মা নিজে আত্মহত্যা করবে বলে টুটুলকে হুমকি দেয়। রোজ রোজ বাড়ীতে মায়ের সাথে অশান্তি আর শ্রাবন্তীকেও বোঝাতে হয় যেন সে সহ্য করে। এভাবেই চলতে থাকে।

সেদিন রবিবার ছিল। শ্রাবন্তী বিকেলে কোচিং ক্লাসে পড়াতে গেছে। শ্রাবন্তীর কাছে বিকাল 4.30 নাগাদ ফোন আসে টুটুলের। ‘‘শ্রাবন্তী আমাকে ক্ষমা করো, আমি তোমাকে জীবনে সুখ দিতে পারলাম না।’’ শ্রাবন্তী হন্তদন্ত হয়ে বাড়ী ছুটে আসে। টুটুলকে দরজায় পরে থাকতে দেখে। ছুটোছুটি করে হাসপাতালে নিয়ে যায়।

ডাক্তার টুটুলকে মৃত ঘোষনা দেয়। তার পেটে পাওয়া যায় পয়জন গ্যাস।
আমার মন্তব্য-
ঘটনা-1 : সন্তানের সাথে বন্ধুত্ব করুন। সন্তানকে বিপথ থেকে আগলে রাখতে পারবেন।

ঘটনা-2 : সন্তানকে না শব্দটা শুনতে অভ্যস্থ করছেন তো ? যদি সেটা না পারেন তো নিজের অহংকার নিজের কাছেই রাখেন।
আপনার অহংকার আপনাকে সন্তান থেকে দুর ঠেলে দিচ্ছে নাতো? যদি নিজেকে কন্ট্রাল করতে না পারেন তো সন্তানকে কিভাবে পারবেন।
সামাজিক স্ট্যাটাস না কি সন্তান কোনটা আপনার বেশী প্রিয় আগে সেটা বুঝুন তারপর সন্তান জন্ম দিবেন।
ঘটনা-3 : ভালবাসা কখনো কখনো জীবনের চেয়ে দামী।
—————————————- (সত্য ঘটনা অবলম্বনে)
——————————————- (রাখী দোজা)

Related Posts

24 Comments

মন্তব্য করুন