আত্মহত্যা কে না বলুন!

“হাজারো স্বপ্নের মৃত্যু হয় সিলিং ফ্যানের ওই দড়িতে। দাগটা গলায় থাকলেও চাপটা মাথায় ছিল”। “সিলিং এ ঝুলে গেল সত্বা, নাম দিলে তার আত্মহত্যা”। I quit. আজকের জেনারেশনের মধ্যে একটা কমন টেনডেনসি দেখা যায় মৃত্যুর আগে সোশ্যাল মিডিয়ায় ওপরের সব কথা স্ট্যাটাস দিয়ে চিরতরে পাড়ি জমায় না ফেরার দেশে।

মাঝে মাঝে শোনা যায় অমুক ইউনিভার্সিটির মেধাবী স্টুডেন্ট আত্মহত্যা করেছে। আত্মহত্যা করার পিছনের কারন কি?খোজঁ নিলে জানা যায় তার পিছনে একমাত্র কারন ছিল প্রেমে ব্যর্থতা।
ভাবতেও অবাক লাগে সামান্য কারনে নিজের জীবন দিতেও দ্বিধা করে না ওই মানুষটার জন্য যে কি না তার সাথে প্রতারনা করেছে।

গাধারাম,তোকে কে মেধাবী বলে?তুই তো আসল বোকা।স্বার্থপর কারো জন্য তুই নিজের জীবন দিবি কেন?
তুই এত সহজে কোন রকম কষ্ট ছাড়াই আত্মহত্যা করে মরলি কেন?
গাধাঁ তোরে বুড়িগঙ্গা নদীর পচাঁ পানিতে কয়েক ঘন্টা ডুবিয়ে রাখা উচিৎ ছিলো।তারপর যদি তোর মরার সখ মিটে না যেত তাহলে আমাকে বলতি।

মূর্খের দল কোথাকার!

আশ্চর্য হওয়ার বিষয় যেখানে মানুষ শুধুমাত্র বেচেঁ থাকার উদ্দেশ্যে দু বেলা দু মুঠো ভাত খাওয়ার প্রয়োজনে দিনের পর দিন অমানবিক পরিশ্রম আর সংগ্রাম করে যাচ্ছে আর সেখানে কি না i quit লিখে খুব সহজেই চোরের মতো পালিয়ে জীবন থেকে অবসর নেয় চিরদিনের জন্য।
যেন জীবনটা তাদের কাছে নিছক পুতুল খেলা।

এর পিছনের কারন কি?
কেনইবা তারা আত্মহত্যা করছে?
কারা তাদের প্ররোচিত করছে?
কোথা থেকে আত্মহত্যা করার অনুপ্ররেণা পাচ্ছে?
জীবনটা এদের কাছে এত সস্তা কেন?
আত্মহত্যা করার সাহস তারা কোথায় পাচ্ছে?

যে প্রেম ভালোবাসা ছিল একসময় লজ্জার,লুকিয়ে রাখার বস্তু সেটা এখন দম্ভ করে জাহির করার বিষয় হয়ে দাড়িয়েছে।আর এর জন্য সগৌরবে জীবন বলি দান করতেও বিন্দুমাত্র দ্বিধা করে না।

এর পিছনে কারা কাজ করছে?

এর পিছনে একটাই কারন সহজলভ্য মিডিয়ার বস্তা পচাঁ সস্তা সিনেমা গুলো আর সহজলভ্য ইন্টারনেট।

ছোট ছোট বাচ্চা থেকে সবাই যখন হাতের কাছে খুব সহজেই মুঠোফোন ভর্তি সস্তা প্রেমের কনটেন্ট পেয়ে যাচ্ছে তখন সেগুলো তাদের মস্তিষ্ক,মনের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলে।

“পোড়ামন”ছবিতে আমরা কি দেখতে পাই? প্রিয় মানুষকে না পেয়ে গলায় ফাসি দিয়ে নায়িকার আত্মহত্যা।
মিডিয়া জগৎ এইসব সিনেমার মধ্যে দিয়ে আমাদের কি ম্যাসেজ দিচ্ছে?

ম্যাসেজ একটাই ভালোবাসার মানুষকে না পেলে আত্মহত্যা।আর সেই মতাদর্শ ছড়িয়ে যাচ্ছে প্রতিটি ছেলে মেয়ের ভাবনার জগতে।নিজের ভাবনার সাথে তারা তাদের ভাবাদর্শকে একাত্ব করে ফেলে এবং নিজেদের হিরো বা হিরোইনের স্থানে তারা কল্পনা করে বিচরন করতে থাকে কাল্পনিক জগতে।

অতঃপর সামান্য কষ্টে সোশ্যাল মিডিয়ায় i quit লিখে আত্মহত্যা করে।সেই পোস্ট অন্যরা শেয়ার দেয়।সেটা আবার অন্যদের মস্তিষ্ক,মননে প্রতিফলিত হয়।
আর এভাবেই চলতে থাকে মৃত্যুর তান্ডব লীলা।

মূর্খের দল,

অনেক হয়েছে এবার থাম।

নিজেকে হিরো হিরোইন ভাবা বন্ধ করে দেন।

পৃথিবী নামক গ্রহে আপনি অন্যের কাছে এক ফোটা শিশিরতুল্য জল মাত্র কিন্তু আপনার পরিবারের কাছে আপনি তাদের মহাসমুদ্র।

কেউ ছেড়ে গেছে?কষ্টে বুক ফেটে যাচ্ছে?মরে যেতে ইচ্ছে করছে?ফেসবুকে দু:খের পোস্টের বন্যা ভাসিয়ে দিচ্ছেন?পৃথিবী টা অসহ্য মনে হচ্ছে?

অতঃপর বিদায় বলে পাড়ি জমালেন না ফেরার দেশেে।
লুজার এর থেকে আর বেশি কি করার আছে আপনার?

আপনি তো নিজেকেই ভালোবাসেন না আর অন্যরা আপনাকে ভালোবাসবে কি জন্য?

পৃথিবীতে লুজারদের কোন স্থান নেই।পৃথিবীটা কোন কাপুরুষদের স্থান নয় এটা যোগ্যতম দের যোগ্য স্থান।

প্রিয়জন ছেড়ে গেছে বলে বিনা সংগ্রামে মরে যেতে ইচ্ছে করছে ?

অথচ দু বেলা দু মুঠো ভাত খেয়ে বেচে থাকার জন্য কত লোক অমানবিক সংগ্রাম করে যাচ্ছে।

রাস্তায় বৃদ্ধ রিকশাওয়ালাগুলোর দিকে তাকান।এই পঞ্চাশ ষাট বছরের বুড়োগুলো রাস্তায় রিকশা নিয়ে বের হয়েছে কেন জানেন?শুধুমাত্র দু বেলা দু মুঠো ভাত খেয়ে বেচেঁ থাকার জন্য।
অথচ আপনার কাছে জীবন মানে কাঁচের গ্লাস।ফেলে দিলেন,ভেঙে গেল ব্যাস।
আপনার নূন্যতম বিবেকবোধ থাকা উচিৎ।

সামান্য হতাশায় কষ্টে মরে যাওয়ার দৃঢ় সংকল্প নিয়ে আপনি যখন মাথায় চিন্তার ঝড় বইয়ে দিচ্ছেন তখন এই হতাশা নামক মহাসাগরে সাতার কেটে হাবুডুবু খেয়ে নিজে গন্তব্যে পৌছার জন্য রোজ কত মানুষ নিজের শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে বেচে থাকার সংগ্রাম করে
যাচ্ছে।
আপনার লজ্জা হওয়া উচিৎ।

সামান্য কারনে বেচে থাকার ইচ্ছে নেই বলার আগে মৃত্যু পথযাত্রী ক্যান্সার রোগীর নিকট থেকে একটুখানি ঘুরে আসুন।দেখবেন বাচার আকুতি নিয়ে শেষ নিঃশ্বাস থাকা পর্যন্ত কিভাবে আহাজারি করছে?
আর আপনি কি না জীবনটাকে খেলনা পুতুলের মতো সস্তা ভাবেন!ধিক্কার আপনাকে!

সে আমাকে ছেড়ে গেছে আমি খুব একা এটা বলার আগে একবার বৃদ্ধাশ্রম থেকে ঘুরে আসুন।দেখবেন সারাজীবন মাথার ঘাম পায়ে ফেলে নিজের সর্বোচ্চ দিয়ে সন্তানকে মানুষ করার পর সেই সন্তান তাদের বোঝা মনে করে বৃদ্ধাশ্রম নামক জেলখানায় একা রেখে আসে।তারপরেও তারা মৃত্যুর কথা চিন্তা করে না আর আপনি অতি আদরে সোনার চামচ মুখে নিয়ে বড় হওয়ার পর সামান্য একটু কষ্টেই চির বিদায় নিয়ে পরপারে পাড়ি জমান।
শত ধিক আপনাকে !

বিরহের আগুনে অন্তরটা পুড়ে যাচ্ছে বলার আগে, আগুনে পুড়ে যাওয়া কোন ব্যক্তির কাছ থেকে ঘুরে আসুন দেখবেন তার বুকফাটা আর্তনাদ আর বাচার আকুতি আপনাকে বাচার প্রেরনা যোগাবে।

তাকে হারিয়ে আমি নিঃস্ব এটা বলার আগে নদী আর সমুদ্রকুলবর্তী লোকজনের কাছ থেকে ঘুরে আসুন দেখবেন নদী ভাঙন,সুনামি কিংবা টর্নেডোর ভয়াল আঘাতে বাড়িঘর,আপনজন হারিয়ে মানুষগুলো কেমন পুনরায় বেচেঁ থাকার লড়াই করে যাচ্ছে।আর আপনি কি না সামান্য আঘাতেই ভেঙে যান।

প্রেমে বিচ্ছেদের পর পরিবারের লোকজনের সাথে অহেতুক পাগলামি করার আগে ঘুরে আসুন কোন মেন্টাল হসপিটাল থেকে দেখবেন পাগলামি করার ইচ্ছাই চলে যাবে।

আপনার মৃত্যুর পর আপনার পরিবারের কি অবস্থা হবে তা জানার জন্য এখনই চলে যান তার বাড়ি যে সড়ক দূর্ঘটনায় তার প্রানপ্রিয় সন্তানকে হারিয়েছে।প্রিয়জন হারানোর করুন আহাজারি আর ফিরে পাওয়ার বুকফাটা আর্তনাদ কতটা ভয়ানক হতে পারে অনুভব করুন।

রাস্তার পাশে থেকে খুব সামান্য টাকা দিয়ে খুব সহজেই আপনি কিছু ফুল কিনে আনলেন।আপনি চাচ্ছেন ফুলগুলো কয়েকদিন সুবাস ছড়াক কিন্তু কিছুক্ষণ পর দেখলেন শুকিয়ে গেছে।কিছুই আপনার মনমতো হচ্ছে না।
কিন্তু আপনি যদি একটু পরিশ্রম করে ফুল গাছ লাগান তাহলে সেখানে হাজার হাজার ফুল ফুটবে এবং এগুলোর স্থায়ীত্বকালও থাকবে কয়েক দিন কিংবা মাস। এবং সুবাস ছড়াতেই থাকবে।

ঠিক তেমনি শুকিয়ে যাওয়া ফুলের মতোই কেউ কেউ আপনার জীবনে এসে সাময়িক শোভাবর্ধন করে হারিয়ে যাবে আপনি চাইবেন তাদের আগলে রাখতে কিন্তু পারবেন না।

তাই একটু কষ্ট করে নিজেকে ডেভলব করুন,
নিজের পারসোনালিটি তৈরী করুন।ক্যারিয়ার তৈরতে মনযোগী হোন।।দেখবেন বাগানের হাজার হাজার ফুলের মতোই অনেকে আপনার জন্য সুবাস ছড়াতে ছুটে আসবে।
বইয়ের সাথে প্রেম করুন আপনাকে কোনদিন ঠকাবে না।

আপনার প্রিয়জন যদি তুমি আমার যোগ্য না বলে ছেড়ে চলে যায়,তাহলে নিজেকে এমন এক উচ্চতায় নিয়ে যান যেন তার সব দাম্ভিকতার লেভেলকে ক্রস করে আর ওই উচ্চতা বেয়ে আপনার কাছে পৌছাতে যেন তার পাহাড় সম লিফটের প্রয়োজন হয়।

শরীরে ক্ষত হলে রোগ সারাতে জানতে হয় শরীর কেটে ফেলার প্রয়োজন হয় না ঠিক তেমনি আপনার জীবনে কেউ আপনাকে ছেড়ে গেলে আত্মহত্যা করে জীবন শেষ না করে ওভারকাম করার চেষ্টা করুন।

আপনার বুঝতে হবে কেউ গায়ে কাদাঁ ছুড়লে যেমন তা গায়ে লেগে থাকে না গোসল করলেই সব ধুয়ে যায় ঠিক তেমনি কেউ আপনাকে কষ্ট দিলে সেটাকে মুছে ফেলুন,জীবনকে মুছে ফেলার কোন প্রয়োজন নেই।আপনাকে আপনার জন্যই বাচঁতে হবে।মৃত্যু কোন সমাধান নয়।

আপনি নিজেকে বিকশিত করুন।জীবনযুদ্ধে হেরে যাবেন না।কাপুরুষেরা জীবনের ময়দান থেকে পালায় না বরং দৃঢ়পনে যুদ্ধ করে।

নিজেকে ঝিনুকের ন্যায় তৈরী করুন আর আপনার ভেতরের মুক্তোর উপস্থিতিকে সবাইকে জানিয়ে দিন দেখবেন সবাই আপনাকে খোজার জন্য উদগ্রীব হবে।

আপনাকে কেউ যদি তুচ্ছ বীজ মনে করে মাটিতে ছুড়ে ফেলে দেয় আপনি চারাগাছ হয়ে বৃদ্ধি পেয়ে চারদিকে শোভাবর্ধন করুন।
দেখবেন আপনার ছায়ায় আশ্রয় নেওয়ার জন্য হাজার হাজার লোক বসে আছে।তাই যে আপনাকে ছেড়ে চলে গেছে তার জন্য মৃত্যুকে আলিঙ্গন করা বন্ধ করে দিন।

I quit বলে জীবন থেকে কাপুরুষদের মতো চিরদিনের জন্য জীবন থেকে বিদায় নেওয়া খুব সহজ।কিন্তু I’ll overwrite history বলে জীবনযুদ্ধে লড়াই করে বেচে থাকাই হচ্ছে প্রকৃত বীরত্ব।

কেউ যদি আপনাকে you don’t deserve me বলে তার মনের দরজা চিরতরে বন্ধ করে ভেতরে তালা লাগিয়ে দেয় তাহলে আপনিও দরজার পিছনে ছিটকিনি লাগিয়ে তালাবন্ধ করে বলে দিন i will make myself better to deserve you.

আর মুখের ওপর জবাব দিন আমার আল্লাহর আমার জন্য বরাদ্দকৃত প্রশ্নপত্রে আমিই accurate answer.আমার চেয়ে বেটার কোন অপশন হতে পারে না।কখনো না।আমি আমাকে নিয়েই সন্তুষ্ট।

Related Posts

14 Comments

মন্তব্য করুন