আপনিকি ব্যক্তিত্বসম্পন্ন হতে চান? তাহলে এটি আপনার জন্য

জ্ঞান দেয়া আমার স্বভাব না তবে আমার বক্তব্য যদি আপনার জ্ঞানগর্ভ মনে হয় তবে সেটা ভিন্ন কথা। আমি আপনাদের কথার সঙ্গে একমত পোষণ করেই আমার বক্তব্য এখানে পেশ করবো। হ্যাঁ, আজ আমার ফলোয়ার নেই, আমার দৈহিক গঠন, পোশাক-আশাকে চমৎকারিত্ব নেই, আমার বিদ্যার দৌড়ও খুব না- সুতরাং আমি হাই পার্সোনালিটি সম্পন্নও না। তাসত্ত্বেও আমার কিছু কথা যুক্ত করার থাকে, আপনার বক্তব্যের সঙ্গে। আমি ঠিক সেগুলোর কথাই এখানে সংক্ষেপে বলবো।

বর্তমান যুগে একজন ছেলে বা মেয়েকে অনেক কিছুই অর্জন করতে হয়। তার যেমন শিক্ষাদীক্ষা, সাধারণ জ্ঞান প্রয়োজন, তেমনি প্রয়োজন শারীরিক ফিটনেস, সৌন্দর্য। ফেসবুক প্রোফাইলে অন্তত কয়েক হাজার ফলোয়ার, ইন্সট্রাগ্রামে হাজার হাজার ফলোয়ার প্রয়োজন। ছেলে বা মেয়েটি কিন্তু এভাবেই তাকে ব্যক্তিত্বসম্পন্ন হয়ে ওঠা বোঝে।

তাহলে আসুন প্রথমে কয়েকটি শব্দকে বেছে নেই এবং সেগুলোর যথাযথ অর্থ বোঝার চেষ্টা করি। যেমন ধরেন- পার্সোনালিটি, আইডেনটিটি ও আইডেনটিটি ক্রাইসিস, হাই-প্রোফাইল, গ্লামার ইত্যাদি। শব্দগুলোর বাংলা অর্থটি না লিখে ইংরেজিকে বাংলা করে লিখলাম আপনাদের বোঝার সুবিধার জন্য। পার্সোনালিটি মানে ব্যক্তিত্ব। আপনার চলনভঙ্গি, বাচনভঙ্গি, আদর্শ, পোশাক-পরিচ্ছদ, রুচি, নীতিরীতির সেই সকল স্বাতন্ত্র্যসূচক বৈশিষ্ট্য যেগুলো আপনাকে অন্যদের থেকে আলাদা করে, আপনি যে আপনি এবং আপনার যে একটা নিজস্বতা আছে তাকেই বলা যেতে পারে ব্যক্তিত্ব। যেমন ধরেন বিরাট কোহলি কিংবা আনুস্কা শর্মা, দুজনেই ব্যক্তিত্বসম্পন্ন, কীভাবে? তাদের আচার-আচরণ এবং কর্মক্ষেত্রে তাদের পারফরমেন্স। কিন্তু তারা কি আসলেই ব্যক্তিত্বসম্পন্ন- সেটা কীভাবে বুঝবেন আপনি? বলতে পারেন ভাই, আপনারে কয়জন চেনে, আপনি যাদের কথা বলছেন তাদের ফ্যান আছে লক্ষ লক্ষ। জ্বি ভাই, সেটা আমি জানি এবং সেজন্যই আমার বক্তব্যের শুরুতে ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে প্রচলিত ধারনার ব্যাখ্যাটা আমি দিয়ে নিয়েছি।

বার ধরেন আইডেনটিটি ও আইডেনটিটি ক্রাইসিস এর কথা। এটা কিন্তু একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বর্তমান সময়ে আত্মহত্যার বড় একটি কারণ আইডেনটিটি ক্রাইসিস। আইডেনটিটি বিষয়টা অস্তিত্বের সঙ্গে সম্পর্কিত। ধরেন আপনি কোনো একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো একটা বিভাগের ও ব্যাচের শিক্ষার্থী। এখন ধরেন আপনাকে কেউই চিনে না বা কোনো না কোনো কারণে পাত্তা দেয় না। এর মানে ঐখানে আপনার অস্তিত্ব নাই। আপনার আইডেনটিটি ক্রাইসিস ওখানে। এর সঙ্গে আবার ঐ ব্যক্তিত্ব ব্যাপারটা জড়িত। আপনাকে কেউ চেনে না বা পাত্তা দেয় না কেন? কারণ, আপনার তেমন কোনো বিশেষত্ব নেই। আর বিশেষত্ব নেই মানে আপনার পার্সোনালিটি নেই। ব্যাপারটা কিন্তু খুব সোজা। আপনার বিশেষত্ব আসবে কিবা? একে হতে হবে আপনাকে চরম মেধাবী নতুবা সুদর্শন, প্রচলিত অর্থে স্মার্ট। তবুও আপনার ফলোয়ার তত হবে না। একমাত্র স্মার্ট ও মেধাবী হয়েই আপনি ক্লাসে গ্লামার হতে পারবেন, আপনার হাই-প্রোফাইল তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা  দেখা দেবে এবং আপনার বিশাল একটা ফ্যান শ্রেণি তৈরি হবে। সত্যি বলতে এমনটাই হয়ে আসছে দীর্ঘদিন ধরে।

কথায় কথায় হাই-প্রোফাইল কিংবা গ্লামার ব্যাপারটাও খানিকটা বলে ফেলেছি। মাল্টি-ট্যালেন্ট ও শারীরিক সৌন্দর্য যুক্ত হলে হাই-প্রোফাইল গড়ে ওঠে একজন ব্যক্তির এবং তখনই তার ভেতর গ্লামার ব্যাপারটা দেখা দেয়।

এই সবের সঙ্গে দ্বিমত করার জায়গা আমার নেই। যা সর্বজন স্বীকৃত, তাকে অস্বীকার করা যায়? তবে একটু গভীর ভাবে দেখা কিংবা ভাবারও আমাদের অবকাশ নেওয়া প্রয়োজন। জীবনকে চাকচিক্য আর অপরের কাছে গ্রহণযোগ্যতার মাপকাঠিতে না মেপে বরং আত্মতুষ্টি ও সুখের দাঁড়িপাল্লায় বসিয়ে দেওয়া উত্তম।

ব্যক্তিত্ব গড়ে ওঠে ব্যক্তির চরিত্রের, স্বভাবের, চলন-চালনের বিশিষ্টতা কিংবা ভিন্নতার উপর ভিত্তি করে কিন্তু সেটা বাহ্যিক গুণগুলো থেকে না বরং আত্মগত বৈশিষ্ট্য থেকে। আপনি খুবই ব্যতিক্রম একটা হেয়ার কাট দিলেন অথবা মাথায় খুব সুন্দর ও ভিন্নরকমের টুপি পরলেন অথবা আপনার সানগ্লাসটা একদম আলাদা- এসব দিয়ে আপনার সত্যিকার ব্যক্তিত্ব গড়ে ওঠে না। আবার আপনি বাংলা-ইংরেজি মিশিয়ে একটু অন্যভাবে কথা বললেন কিংবা চা খাওয়ার সময় কাপে চুমুকটা আলাদাভাবে দিলেন তাতেও আপনার ব্যক্তিত্ব প্রতিষ্ঠা পায় না। বরং আপনি আপনার দেয়া কথা ঠিকমতো রাখলেন, আপনি বিশ্বস্ত হলেন, আপনি আদর্শ কিংবা নীতিগতভাবে দৃঢ়চেতা হলেন, আপনার আচরণ মার্জিত এবং শোভনীয় করলেন, আপনার ব্যক্তিত্ব তাতেই আকার লাভ করবে। ঠিক তেমনিভাবে ঐ ব্যক্তিত্বই আপনার আইডেনটিটিও করে দেবে। মানুষের কাছে সস্তা পাত্তা পাওয়ার থেকে বরং আপনার আচার-আচরণ ও ব্যবহার দিয়ে তাদের মনে জায়গা করে নেওয়াটা বেশি মূল্যবান। তারপর যেহেতু আপনার স্বভাব চরিত্রে ব্যক্তিত্বের ছাপ আছে সেহেতু আপনার আইডেনটিটি ক্রাইসিসও নেই। আর তার সঙ্গে যদি আপনার মেধা ও সৃজনীশক্তির মিশ্রণ ঘটাতে পারেন তবে তো হাই-প্রোফাইল এমনিতেই হয়ে যাবে। গ্লামারটা নিয়ে ভাববেন না, ওটা ঠিক মেধার নয়, একধরণের লিঙ্গগত আসক্তির ব্যাপার। ওখানে মনস্তত্ত্ব খেলা করে, আদি প্রবৃত্তির হাতছানি আছে। ওটা না হয় বাদ-ই দেন।

<

এতসব পরে বলবেন শিরোনামে কী বললেন, আর কী লিখলেন, আগামাথা তো বোঝাই গেলো না। ব্যক্তিত্বসম্পন্ন হওয়ার জন্য কোন বিষয়টা অর্জনের কথা আপনি বলছেন? ভাই, একদম সহজ ব্যাপার। সেটা হলো ‘পরিমিতি বোধ’। পরিমিতি বোধ মানে পরিমাপের জ্ঞান। না, জায়গা-জমি কিংবা দৈর্ঘ্য-প্রস্থ মাপামাপির কথা বলছি না। আপনি কোথায়, কতটুকু বলবেন, করবেন, প্রকাশ করবেন তার বোধকে পরিমিতি বোধ বলে। নেতা হিসেবে আপনি অনেক বক্তৃতা দিবেন, আপনার বক্তব্যে পরিমিতি থাকতে হবে, নায়ক-নায়িকা হিসেবে সোস্যাল মিডিয়ায় অনেক অনেক ছবি পোস্ট করবেন কিন্তু সেখানে প্রকাশের পরিমিতি জ্ঞান থাকতে হবে এমনিভাবে একজন সাধারণ মানুষ হিসেবে আপনার ব্যক্তিজীবনে কোথায় কতটুকু মনের ভাব কিংবা চিন্তা অথবা আচার-আচরণ ব্যক্ত করবেন তার একটা পরিমিতি থাকতে হবে তবেই আপনার ব্যক্তিত্ব বিকাশ লাভ করবে আর তার সঙ্গে সঙ্গে বাদবাকি ব্যাপারগুলোর ব্যবস্থাও হয়ে যাবে।

Related Posts

12 Comments

মন্তব্য করুন