আমি তুহিন।
[[এই কয়েকদিন যাবত অসুস্থ হয়ে বিছানায় পড়ে আছি, কেউ খোঁজ নেয়না। নিবেই বা কেন। এরকম মাঝেমধ্যেই আমি অসুস্থ হয়ে পড়ি আজকাল। আমার এসব অবনতি দেখতে দেখতে সবাই পানশা হয়ে গিয়েছে আমার প্রতি। এখন আর নিজেকে মানুষের মতো মানুষ বলে মনে হয়না। লোকে কি বলবে, তার আগে আমিই আমাকে বোঝা মনে করি।]]
ব্যাস.. ইন্সপেক্টর খালেদ জামান এতটুকুই পেলেন তুহিনের রুম থেকে। তুহিনের পোস্টমর্টেম রিপোর্ট বলছিলো, মাত্রাতিরিক্ত পরিমাণ ঘুমের ট্যাবলোট খেয়ে সে সুইসাইডই করেছিল। সেটা মার্ডার নয়। তবুও মার্ডার কিনা সেটার প্রমাণ খোঁজার জন্য ইন্সপেক্টর খালেদ সাহেব তৎপর হয়ে আছেন। তুহিনের বাল্যকালের বন্ধু ছিলেন তিনি।
অতঃপর তুহিনের রুমে আরো একটি ছোট ডাইরীর সন্ধান মেলে। প্রথম পাতায় একটা মেয়ের ছবি লাগানো। সম্ভবত তার প্রিয়তমা। সেই পাতা উল্টিয়ে দেখেন,
[[দিনকতক আগে বন্ধুদের আড্ডায় শামিল হতে গিয়েছিলাম। তিন রাস্তার মোড়ের ওই বিখ্যাত টঙের দোকানে। তবে আগের মতো মানুষের আনাগোনা নেই। সবাই নিজের কাজ নিয়ে ব্যস্ত। কিছু লোক উপস্থিত ছিলো যদিও। তাদের কেউই আমার বয়সী ছিলোনা। বাদ দিলাম আমার শৈশবের বন্ধুদের কথা।
ফেসবুক ম্যাসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপ, ইমোতে আমি প্রায়ই চেক করি; আজও কি তিনি আমায় ব্লকলিস্টে রেখেছেন কিনা। প্রিয়তমা আমার বড্ড দেমাগী। সেই যে রাগ করে সবকিছু থেকে আমাকে ব্লক করলো, আজ প্রায় ২ বছর হতে চলেছে। চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে আমাদের আগের ম্যাসেজগুলো পড়ছি, আর হাসছি।
এস.এস.সি -তে বিজনেস স্টাডিজ গ্রুপ থেকে গোল্ডেন এ+ তুলেছিলাম। সেই সুবাদে সরকারী কলেজে সহজেই চান্স পেয়েছিলাম। কলেজ লাইফে আমার ক্রাশ ছিলো সুমাইয়া। সে আর আমি উভয়ই মেধাবী ছিলাম বিধায় বন্ধুত্বটা তাড়াতাড়ি হয়ে যায়। ধীরে ধীরে আমাদের সম্পর্কটা একটা গতি পেতে থাকে। আর একসময় প্রেমে জড়িয়ে পড়ি; যেটা ভুল ছিলো আমার।
এইচ.এস.সি পাশ করতে না করতেই ভার্সিটি কোচিং শুরু হয় আমার। এ যেন এক নতুন যুদ্ধের সূচনা। সে যুদ্ধে জয়লাভও করে ফেলি আমি। সুযোগ হয় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংলিশ নিয়ে পড়ার।
মধ্যবিত্ত পরিবারের বড় ছেলে হওয়ায় পরিবারের অন্যদের প্রতি আমার দায়িত্বটা একটু বেশি। ইতোমধ্যে আমার উপর চাপও আসতে থাকে পরিবারের হাল ধরার। ছুটে চলি চাকরীর বাজারে।
আজকাল তো বাজারে মেধা যাচাই কটা হয়না। রাজনীতির মামা/খালু আর টাকার পাহাড় থাকলেই চাকরী পাওয়া সহজলভ্য হয়। এগুলোর কোনটিই আমার যথেষ্ট পরিমানে ছিলোনা। অনেকদিন হচ্ছে চেষ্টা করছি। কিন্তু কিছুই হচ্ছেনা।
বেকার হয়ে ঘুরতে থাকি রাস্তায় রাস্তায়, শহরে বন্দরে। ওইসময়গুলোতে যোগ্যমতো একটা বন্ধুও পাইনি আমি। টঙের দোকানে বসে থাকতাম আর ফেসবুকে চ্যাটিং করতাম প্রিয়তমার সাথে। ভালোবাসার কথার চাইতে হিট দেওয়া কথা চলতো বেশি। তাই চিন্তা করলাম একটু দূর থেকেই ভালোবাসবো তাকে।
ছোট বোনটা বড় হচ্ছিলো। বেশি হলে বছর দুয়েক পর্যন্ত সে আমাদের সাথে আছে। এরপর বিয়েরও একটা ব্যাপার আছে। অথচ এখনও আমি চাকরীর সন্ধান করতে পারিনি।
পাবলিক ভাসিটি পড়ুয়া একটা ছেলে যখন হন্যে হয়ে ছোট একটা চাকরীর খোঁজে বাতাস কেটে দৌড়াশ, বাস্তবতা তখন তার কঠিন রূপ ধারণ করে। আর ছেলেটা মধ্যবিত্ত হলে তো কথাই নেই।
আমার প্রিয়তমা আবার বড্ড মেজাজী। চাকরী নেই বলে আমাকে ব্লক দিয়ে দিয়েছে সবকিছু থেকে। কষ্ট পাইনি। পরে তার এক বান্ধবীর কাছ থেকে শুনি, বাবার পছন্দ করা বিসিএস ক্যাডার ছেলেটার সাথে বিয়ে হয় তার। টাকার প্রেমে পড়ে যায় সে। আসলে, দশ টাকার বাদামে কারো সাথ কেউ কেন থাকবে!
বাবাও দেখি অসুস্থ হয়ে গেছেন। মনে হয়না সংসারের হালটা আর ধরুক তিনি। আমাকে কিছু একটা করতে হবে। বারবার ব্যর্থ হয়ে শেষমেশ সিদ্ধান্ত নিই কায়িকশ্রমে যোগ দেব। হঠাৎ একটা কোম্পানি থেকে ফোন আসে,
“স্যার, কোম্পানির সুপারভাইজার পদে আপনাকে সিলেক্ট করা হলো। দয়া করে ইমেইল চেক করে সবকিছু বুঝে নিবেন এবং সামনের মাসের এক তারিখ থেকে অফিসে জয়েন করবেন। ধন্যবাদ।”
খুশিতে একটা বৈদ্যুতিক শক অনুভব করি আমি। ওই মুহুর্তের খুশি আমি কখনো ভুলবোনা…
তড়িঘড়ি করে আধা কেজি মিষ্টি কিনে বাসায় যাই। মাকে ডাক দেই। মা জবাব দেননা। খুব উৎফুল্ল চিত্তে বাসায় প্রবেশ করি। করতে না করতেই ছোটবোন দৌড়ে এসে আমার চোখে হাত দিয়ে বলে, “ভাইয়া, ধীরে ধীরে আসো ভিতরে।”
মাঝের রুমে ঢুকতেই সে আমার চোখ থেকে হাত সরিয়ে নেয় এবং ওই মুহূর্তে আমি আরো একটা শক খেয়ে যাই..
ওইদিন ধুমধামের সাথে আমার জন্মদিন উদযাপন করা হয়েছিলো..]]
এরপর আর কিছু পাওয়া যায়নি। শুধু কয়েকটি শুকনো গোলাপে ভরা ছিলো একটি পাতা।
একটা জিনিস বোঝা গেলোনা। এত হাসি-খুশির মধ্যে থেকেও কেন তুহিন সুইসাইড করলো। এটা মেনে নেওয়া যায়না। তদন্ত চলতেই থাকে… যতদিন না পর্যন্ত সুমাইয়ার খোঁজ পাওয়া গেল।
Nice
ধন্যবাদ আপু। কমেন্টে আপনাদের রিয়েকশন/মতামত/পরামর্শ জানিয়ে পাশে থাকবেন।
আকর্ষন করার ক্ষমতা টা দারুন, চালিয়ে যান
ধন্যবাদ প্রিয়ভাই, আপনার মূল্যবান মন্তব্যের জন্য। এভাবেই উৎসাহপ্রদান করুন আমাদের মতো ক্ষুদে লেখকদের। ❤️
ভাল লাগলো গল্পটা
ধন্যবাদ ভাই। সাথেই থাকুন
সামনে আরও কিছু অপেক্ষা করছে আপনাদের জন্য
আমি সবার লেখা পড়ি, আর পড়তে ভালোবাসি
ধন্যবাদ ভাইয়া
tnx
valo post
আসসালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহু
Please support me🙂
Youtube Channel: https://www.youtube.com/channel/UCcrbrQxUzsavUjfXMgrsM6Q
Facebook page: https://www.facebook.com/107324621876693/posts/107963605146128/?app=fbl
❤️