আমি পাজি এখন নামাজি (মোটিভেশনাল)

  1. ফার্স্ট ইয়ারে প্রমোশন পেয়ে যখন কলেজে উঠি, নিজের ভেতর একটা বড়ভাই বড়ভাই ভাব চলে এসেছিলো। প্রথমদিন ওরিয়েন্টেশন ক্লাস ছিলো। সবাই খুব মনোযোগ দিয়ে স্যারদের কথা শুনছিলো; কোন স্যারের বক্তব্য কেমন। আর আমি ফার্স্ট ইয়ারে সদ্য ওঠা আগুনপল্লবী মেয়েগুলোর রূপ যাচাই করছিলাম।

বন্ধুদের মধ্যে একটু পাংখু স্বভাবের যারা ছিলো, তাদেরকে ভাইল দিয়ে দিয়ে ছোটখাটো জিনিস আদায় করা ছিলো আমার স্বভাব। সেরকমই, একদিন ফারহান খান (বাবার দেওয়া নাম “ফরহাদ হাওলাদার” তার মোটেও ভালো লাগতো না) কলেজে এলো রোলেক্সের ঘড়ি পড়ে। সাথে তার পকেটের স্যামসাং এ ফিফটি সেটটি জোস লাগছিলো। তাতে আমার কি! তবে কিছু হাতিয়ে নিতে পারলে ভালো হতো। তার ঘড়ি আর মোবাইলের তেল-সুনাম করে সুনামি তুলে দিলাম তার ভেতর। এখন সে তার ব্যাংকের সব টাকা আমাকে দিয়ে দিতে পারবে। আমি অতকিছু করলামনা, শুধুমাত্র ট্রিটটা নিয়ে নিলাম কায়দা করে।

আমার সবচেয়ে বড় দুঃখ একটাই। আমি রাত জাগতে পারিনা। কলেজের এক মেয়েকে পটিয়ে নিয়েছিলাম কিছুদিনের মধ্যে। তারও বড় দুঃখ, আমি রাত জাগিনা। তাকে বিভিন্ন রকমের বাহানা দিয়ে ভুলিয়ে রাখতাম তাকে। কারণ, ঘুম আমার বেশি প্রিয়। দিনের বেলা কম ঘুমাতাম। রাতের বেলা বেশি। কারো সাথে সর্বদা কথা বলার সময় কই আর পাই বলুন..

এসব ভাবছিলাম আর কফি খাচ্ছিলাম। একটু আগেই ঘুম থেকো উঠে ফ্রেশ হয়েছি। এখন রাত ১১টা। দুনিয়াটা কেন জানি আমার মনে হচ্ছিলো। মনে হচ্ছিলো যেন আমি দুনিয়ার রাজা। আর দুনিয়ার রং লাল। এমন সময় হঠাৎ ফোন এলো মিথিলার। কিন্তু এটা তো অসময়…

– কেমন আছো?
– এইতো বেশ আছি। তোমার কি খবর?
– জিজ্ঞেস করতে হবেনা আর।
– কেন? এই সময়ে কখনো তুমি ফোন করোনা। আজ কিছু তো একটা হয়েছেই। বলো..
– কি বলতাম? বলার অধিকার নেই আমার।
– কেন?
– আমার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে কবির।
– কি?
– হুম।
– আচ্ছা। ভালো। তো, কবিরের বিয়েতে কি কি করার প্ল্যান করছো?
– আজব!
– কেন?
– আমার বিয়ে হয়ে যাবে বলছি, আর তোমার এটা কোন ধরণের রিয়েকশন!
– কি? তোমার বিয়ে? কি বলো?
– আচ্ছা আগে বলো কি হয়েছে তোমার? মাথা ঠিক আছে?
– হ্যাঁ। তা তো আছেই। কেন?
– তুমি আমাকে ভালোবাসোনা কবির?
– একটা প্রশ্ন ছিলো মিথিলা..
– এখন প্রশ্ন করার সময় নেই। তুমি কিছু একটা করো কবির। আমার খুব কষ্ট হবে অন্যকারো হাত ধরতে..
– ও! বুঝলাম। কিন্তু আগে বলো তো মিথিলা.. কবিরটা আবার কে?
– (সঙ্গে সঙ্গে কল কেটে দেয় মিথিলা)

পরক্ষণেই খেয়াল করলাম, কবির তো আমি নিজেই!
নেশায় বুঁদ হয়ে গিয়েছিলাম। আরেকটু খেয়াল করে দেখি, কফির কাপে মদের গন্ধ। তাহলে কি আমি এতক্ষণ মদ খাচ্ছিলাম! ভাববার বিষয়.. মদ এলো কোত্থেকে! আশে পাশে দেখতে থাকি মদের বোতল খুঁজে পাই কিনা..

হঠাৎ একটা আর্তচিৎকারে ঘুমটা ভেঙে যায় আমার!

বাহ্! আমি আজকাল ঘুমকে এতই ভালোবাসি যে ঘুমের মধ্যে স্বপ্ন দেখি, আর সেই স্বপ্নের মধ্যেও আমি ঘুমাই!
মনের মধ্যে একজন সফল ব্যাংকার হওয়ার আশা ও সেই সাথে ক্ষুদ্র প্রয়াসও ছিলো আমার। কিন্তু জীবনটা বড্ড অগোছালো ছিলো। কখন কি করি খেয়াল থাকেনা। ভালো কিছু করলে প্রশংসা পাই ঠিকই, কিন্তু ভুল করলে যথাযথ পরিমাণ শাস্তি বা দিকনির্দেশনা আমাকে দেওয়া হয়না। কারণ, আমি বাবা-মায়ের আদরের একমাত্র ছেলে। এখন কলেজ জীবন পাড়ি দিচ্ছি। পরিবারের ছোটরা আমাকে সম্মান করে, আর বড়রা করে স্নেহ। আর তাদের সেসব আদরগুলো ধরে রাখতে আমি শুধু ঘুমাই। কারণ ঘুমালে কোন খারাপ কাজে জড়িত হওয়া যায়না। মানুষ অসৎ হয়না। অলস হয়তো হয়ে যায়; সেটা জানা নেই আমার।

বাবা অফিসে ছিলেন বিধায় একদিন বাজার করতে গেলাম বাজারে। বাজারগুলো মোটামুটি করেই ফিরছিলাম, এমন সময় পেছন থেকে ডাক আসে..
– ভাই। আসসালামু আলাইকুম।
– ওয়ালাইকুম সালাম ভাই। বলুন।
(দেখে মনে হলো তাবলীগের লোক)
– ভাইজান, কেমন আছেন আপনি?
– আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। আমার প্রতি কোন প্রয়োজন ছিলো আপনার?
– জ্বি ভাই। আজ বিকেলে আপনাদের মসজিদে মানিষের ইমান আর ইসলাম নিয়ে কিছু কথা বলা হবে। আপনার দাওয়াত রইলো। দয়া করে চলে আসবেন।
– ইনশাআল্লাহ ভাইয়া চেষ্টা করবো।
– সবকিছুই আপনার নিয়তের উপর নির্ভরশীল ভাইয়া। আসি। আল্লাহ হাফেজ।

এদিকে তো আমি বড্ড ঘুমপাগল। জানিনা বসতে পারবো কিনা। তবে উমার ওরকম ভাই সম্বোন্ধনীয় ব্যবহারে খুব ভালো লাগলো আমার। তাই ঠিক করলাম যাবো। গেলামও।

আজ আমি ব্যাংকার নয়, একজন ভালো মোহাদ্দেস হতে চাই। অসৎ আর অবৈধ কাজকর্ম থেকে বাঁচতে এখন ঘুম নয়, আমি নামাজকে বেছে নিয়েছি। আর যৌবনের ঢালস্বরূপ রোজা রাখি। সত্যিই যদি সেদিন না যেতাম, তাহলে হয়তো ইসলাম ও ইতিহাস ঘেঁটে দেখার আগ্রহটা আমার মধ্যে তৈরি হতোনা। ধন্যবাদ সেসব তাবলীগি ভাইদের, যাঁরা পথভ্রষ্ট মানুষদের ইসলামের দাওয়াত দিয়ে শান্তির পতাকা তলে নিয়ে আসার চেষ্টা করেন। আজ আমি গর্বিত, সেদিনের পাজি আজ আমি নামাজি।

Related Posts

3 Comments

মন্তব্য করুন