আসল আকিক পাথর চেনার উপায়

আজকাল বাজারে নানা রকম রত্ন বা পাথর পাওয়া যায়। এই রত্ন বা পাথর নিয়ে হাজারো মানুষের কাছে নানা ধরনের কৌতুহল রয়েছে। ভারতের জ্যোতিষীরা বলে থাকেন যে, এই পাথর পল্লী ভাগ্য বদলায়। আমার অনেকেই ইসলাম ধর্মের অনুসারীরা এই পাথর ব্যবহার করা গুনাহ বা শিরক বলে থাকে। কিন্তু এই দাবিগুলো কতটা সত্য ? প্রিয় পাঠক, আজকে আমি জানাবো, এই পাথর কি ? আসল আকিক পাথর চেনার উপায় এবং এর উপকারিতা কি কি বিস্তারিত আলোচনা করবো।

রত্ন বা পাথর কি ?

রত্ন পাথর হলো চকচকে নীল, সবুজ, কালো ও লাল রঙের বিশেষ মূল্যবান পাথর। এই পাথর থেকে খনিজ ক্রিস্টাল কেটে পালিশ করে অলংকার তৈরিতে ব্যবহার করা হয়। অধিকাংশই রত্নপাথর কঠিন প্রকৃতির। কিন্তু এটি আসলে নরম খনিজ অলংকারের ব্যবহার করা হয়। কারণ এটি ব্যবহার করার ফলে এক ধরনের দীপ্ত এবং নান্দনিক বৈশিষ্ট্য ফুটিয়ে তোলে। আগের আগেরকার যুগের মানুষেরা অলংকার ব্যবহার করত না তারা অলংকারের বদলে এই বিশেষ রত্ন পাথর ব্যবহার করতো। এছাড়াও বিভিন্ন নকশায় এবং দামী ভাস্কর্যে এই পাথর ব্যবহার করে আসছে।

আসল রত্ন পাথরের প্রকারভেদ

জ্যোতিষ শাস্ত্রের মতে নবগ্রহের অমঙ্গলের থেকে মুক্তির জন্য নয়টি রত্নপাথর নির্দেশিত। সেগুলো হলো- মুক্তা, রুবি, হলুদ সেফায়ার, পান্না, নীল সেফায়ার, রক্ত প্রবাল, হীরা, ক্যাটস আই এবং গোমেদ। চলুন এই নয়টি পাথরের গুনাগুন সম্পর্কে জেনে নেই।

রুবি : এই পাথর সাধারণত নাম হলুদ এবং গোলাপি রঙের হয়ে থাকে। জানা যায় অন্যান্য রঙের থেকেই গোলাপি রঙের পাথরটি বেশি উপকারী। এটি সূর্যের কুপ্রভাব অমঙ্গল প্রতিহত করতে ব্যবহার করা হয়। তাছাড়া এই পাথর ব্যবসার সাফল্য,শত্রু মুক্তি,রোগ মুক্তি, দীর্ঘায়ূ জীবনের জন্য এই পাথর বিশেষ উপকারী আছে বলে জ্যোতিষীরা জানান।

                সাইকো বরের রোমান্টিক অত্যাচার

মুক্তা : মুক্তা বা পার্ল এই পাথর চন্দ্রের কুপ্রভাব প্রতিহত করতে সাহায্য করে। এটিও অনেক রঙের হয়ে থাকে তবে এই পাথর সাদা গোলাকার মুক্তা সর্বোত্তম উপকারী। এই পাথর ব্যবহার করলে মানুষের জীবন যাপনে আবেগ নিয়ন্ত্রণ করে, সৌভাগ্য, সুনাম, কর্ম উদ্দীপনা ইত্যাদি বাড়ায়।

ইয়েলো স্যাফায়ার : ইয়েলো স্যাফায়ার (পোখরাজ) এই পাথরটি বৃহস্পতি কু,প্রভাব থেকে নিজেকে রক্ষা করে। এই বিশেষ পাথর হলুদ বা সোনালী বর্নের হয়ে থাকে। এই পাথর ব্যবহার করলে মেধাবী, দানশীল, ধার্মিক ও নিজেকে সমাজে সম্মানিত মানুষ হিসেবে পরিনত করবে। কর্মক্ষেত্রে সুখ, অর্থ সম্পদ, সাফল্য এবং সুনাম এনে দেবে। শিক্ষাক্ষেত্রে বাধা, অহেতুক টাকা পয়সা অপচয় হাত থেকে নিজেকে রক্ষা করবে ।

ক্যআটস আই : এই পাথর কেতুর কুপ্রভাব থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারে। এই পাথর দু, ধরনের হয়ে থাকে হলুদাভ ও কালো রঙের। এই পাথরের বিশেষ গুন হচ্ছে এটি হারানো জিনিস ফিরে পাওয়া, দারিদ্র্য ও রোগ থেকে মুক্তি,শত্রু বিনাশ করতে সাহায্য করে। এই পাথর মনকে শান্ত করে আত্মিক উন্নতি ঘটায় এবং ক্রোধ পানি করে তোলে। পরিবারের মঙ্গল বয়ে আনে।

ব্লু স্যআফআয়আর বা নীলা : এই পাথরটি শনির কুপ্রভাব থেকে প্রতিহত করতে ব্যবহার করা হয়। এ পাথরগুলো হালকা নীল ও কালো বর্জনের হয়ে থাকে। তবে এই পাথরটি সকল মানুষ ব্যবহআর করতে পারবে না। তার কারণ হচ্ছে, এটি এক দিক থেকে যেমন উপকারী তেমনি সব রাশি মানুষের সাথে উপযুক্ত নয়। রাশির সাথে না মিলে এই আংটি পড়লে তাদের জীবন দুর্বিষহ করে তোলে। তাই জ্যোতিষদের সাথে পরামর্শ করে এই পাথর ব্যবহার করা উচিত। ইতি সকল পাথরের থেকে সবচেয়ে শক্তিশালী এবং দামি পাথর।

গোমেদ : এই পাথরটি রাহুর দশা থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারে। এই পাথরের রং মধুর মত, ধোঁয়াতে এবং লাল রঙের হয়ে থাকে। এই আন্টি ব্যবহার করলে জীবনের সুখ শান্তি এবং সমৃদ্ধি দান করে।

রক্ত প্রবাল : রক্ত প্রবাল বা রেড কোরাল এটি মঙ্গলের কুপ্রভাব প্রতিহত করতে সাহায্য করে। এই পাথর শুধুমাত্র লাল রঙের হয়ে থাকে। এটি নেতৃত্বগুণ প্রদান,উন্নতি,উৎসাহ প্রদান, শারীরিক সক্ষমতা, কারিগরি শিক্ষার সাফল্য ও সম্পদ অর্জনের সাফল্য প্রদান করে।

ডায়মন্ড হীরা : এই পাথর শুক্রর কুপ্রভাব বিনাশ করে। এই পাথর সাধারণত সাদা,নীল,কালো,লাল রঙের হয়ে থাকে। এই পাথর ব্যবহার করলে জীবনের দীর্ঘায়ূ,সমৃদ্ধি, সুনাম, বুদ্ধি,যশ,খ্যাতি ও বিবাহিত জীবনে সুখ প্রদান করে।

এমারেল্ড : এমারেল্ড বা পান্না এই বউদের কুপ্রভাব থেকে প্রতিহত করে। এই দামী পাথরগুলো সবুজ রঙের হয়ে থাকে। এটি সুখ শান্তি ও সুনাম অর্জনের জন্য মানুষ ব্যবহার করে থাকে।

রত্ন  পাথরের দাম

চলুন জেনে নিন বিভিন্ন রত্ন পাথরের দাম ।

প্রতি রতি
১. গোমেদ :৫০০ থেকে ১৫০০ টাকা
২. গার্নেট -৮০০ থেকে ১৭০০ টাকা
৩. একোয়ামারিন – ৬০০ থেকে ১৪০০ টাকা
৪. Sardonix ৪০০ থেকে ১২০০ টাকা
৫. নীলা :৭০০০ থেকে ২০০০০ টাকা
৬. পোখরাজ:৮০০০ থেকে ২২০০০ টাকা
৭. পান্না :৫০০০ থেকে ১২০০০ টাকা
৮. এমিথিস্ট :২০০ থেকে ১০০০ টাকা
৯. টোপাজ : ৫০০ থেকে ১২০০ টাকা
১০. সাদা টোপাজ :৭০০ থেকে ১৫০০ টাকা
১১. নীল টোপাজ: ৬০০ থেকে ১৪০০ টাকা
১২. সাদা জারকন : ৮০০ থেকে ২০০০ টাকা
১৩. নীল জারকন:৯০০ থেকে ২৪০০ টাকা
১৪. ক্যাটসআই: ৭০০ থেকে ১৫০০ টাকা
১৫. চুনী:১০০০ থেকে ১৫০০০ টাকা
১৬. পেরিডট :৮০০ থেকে ২৩০০ টাকা
১৭. তুরমলিন :১০০০ থেকে ৩০০০ টাকা
১৮. মুনস্টোন : ১২০০ থেকে ৩২০০ টাকা
১৯. কালো মুক্তো -৭০০ থেকে ২০০০ টাকা
২০. হীরা -১২০০ থেকে ৩৫০০ টাকা
২১. ম্যাসনাইট -৫০০০ থেকে ২০০০০ টাকা
২২. স্পানিয়াল -২০০০ খেকে ১৩০০০ টাকা
২৩. প্রবাল :১০০০ থেকে ৩০০০ টাকা
২৪ মুক্তো : ৮০০ থেকে ২৪০০
২৫. হীরা : ৫০০০ থেকে ৩০০০০ টাকা

আসল আকিক পাথর চেনার উপায়

আজকাল বাজারে অনেক রকমের রত্ন- পাথর পাওয়া যায়। তাদের রং আর উজ্জল বর্ণচ্ছটার আভা দেখলে চোখ ধাঁধিয়ে যায়। কিন্তু এত সব ঝকঝকে রত্ন পাথরের ভিড়ে কি করে চেনা যাবে কোনটা আসল,কোনটা নকল? আসলে একজন সাধারন মানুষের পক্ষে বোঝা অসম্ভব। রত্ন- পাথর (Gem stone) আসল কি নকল বুঝার জন্য অভিজ্ঞ মানুষ দরকার। আজকে আমি আসল আকিক পাথর চেনার উপায় তার একটি ধারনা দেবো আশা করি উপকারে আসবে। প্রথমত,আসল রত্ন-পাথর চিনতে হলে আকৃতি, রঙ, স্বচ্ছতা ও এর ভেতর সুক্ষ্ণ যে সব অবাঞ্চিত পদার্থ থাকে, তার বিন্যাস দেখে প্রাথমিক অনুমান করে নিতে হবে।

খালি চোখে এটি সহজে অনুমান করা যাবেনা,আসল না নকল এ ব্যাপারে সঠিক ধারণা পেতে হলে আপনাকে অনুবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্য নিতে হবে। তবে আসল রত্ন পাথর চিনার জন্য সব চেয়ে ভাল উপায় হল রত্ন-পাথরের প্রতিসরণাংক (Refractive Index) যাচাই করা। রত্ন-পাথরের প্রতিসরণাংক জানা থাকলে তালিকার সঙ্গে মিলিয়ে রত্ন-পাথরের সঠিক তথ্য পাওয়া সম্ভব। কারণ আসল রত্ন-পাথরের প্রতিসরণাংক নির্দিষ্ট-এর হেরফের বিশেষ দেখা যায় না। যেমন হীরার প্রতিসরণাংক-২.৪১৭। এ ছাড়া বিচ্ছুরণ (Dispersion) ধর্ম যাচাই করেও রত্ন-পাথর আসল কিংবা নকল তা যাচাই করা সম্ভব। তাছাড়া নকল ও আসল রত্ন-পাথর সহজে চেনার উপায় যায় রত্ন পাথরের কাঠিন্যতা (hardness), আপেক্ষিকগুরুত্ব (Specific gravity) ইত্যাদি ধর্ম যাচাই করা।  আজকে এই পর্যন্ত। যদি আরো বিস্তারিত জানতে চান তাহলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানান। এমন সব দারুন দারুন পোস্ট পেতে Grathor এর সাথেই থাকুন এবং গ্রাথোর ফেসবুক পেইজ ও ফেসবুক গ্রুপ এ যুক্ত থাকুন, আল্লাহ হাফেজ।

 

 

Related Posts

7 Comments

মন্তব্য করুন