আয়ের বুনন নকশি কাঁথায়……..

প্রতিদিনের জীবনে চাহিদার শেষ নেই। আজ এটা হয় তো কাল ওটা লাগে। তাই একজনের আয়ের পাশাপাশি বাড়তি রোজগারে কিছুটা হলেও জীবন ধারনটা অনেক খানি সহজ আর সুন্দর করা যায়।
ছেলেমেয়েদের সখ আহ্লাদ  কিংবা  রোজকার প্রয়োজনটাতো না মিটিয়ে উপায় নেই। খাতা কলম এটা সেটা লেখাপড়া শিখাতে গেলে কত কিছুই প্রয়োজন আজকাল।

বর্তমান সময়ে  চাকুরী হলো সোনার হরিন। দৌড় প্রতিযোগিতার মত । কার আগে কে ছুটতে পারে।

আর পুঁজি যখন  কিছুই নেই। অথচ কিছু একটা করা দরকার। সাধারণ জীবন যাপনের টানাপোড়নে যুদ্ধরত অনেকেরই ভাবনা।

এই রেশ  নিয়ে লিখছি একটি ভিন্ন আঙ্গিকের আয়ের উৎসের বাস্তব গল্প।
“পেটে ক্ষিধে মুখে লাজ” নিয়ে কোন কিছুর  সমাধান খোঁজা নিতান্তই বোকামি। কারো করুনা না নিয়ে নিজ কর্ম উদ্যোগ এ ক্ষেত্রে অনেক বেশি প্রশংসনীয়।
বাচ্চাদের স্কুলে দিয়ে পুরো তিন ঘন্টা অভিভাবক ওয়েটিং রুমে অলস সময় পার করতে হতো মনোয়ারা বেগমকে।  কদিন যেতে না যেতে লম্বা সময়টাকে কাজে লাগিয়ে কিছু করার কথা ভাবলো সে।
নিজের পুরনো শাড়ি, রঙ চটে যাওয়া বিছানার চাদর দিয়ে তৈরি করা কাঁথাগুলো হাল্কা ব্যাগে বা পলিথিনে মুড়িয়ে দিব্যি সংগে নিয়ে যাওয়া আসা শুরু করলো ঐ অপেক্ষমান অবসর সময়ের জন্য।  মনোয়ারা ফুল পাখি কিংবা বিভিন্ন নকশা কেটে রঙিন সুতোর ফোঁড়ে ফোঁড়ে ফুটিয়ে তুলতে লাগলো কাঁথার বুকে আকর্ষনীয়  ডিজাইন।
পাশে বসা বাচ্চার অপেক্ষায় অপেক্ষমান অনেক  অভিভাবকেরই কৌতুহলি দৃষ্টি ছুঁয়ে দিলো মনোয়ারার হাতের কারুকাজে।
ধীরে ধীরে ওদের কৌতুহল আগ্রহী করে তুললো সংযুক্ত হতে। শুরু হলো চাহিদা।  নিজ নিজ ঘরের অব্যবহারযোগ্য অতিরিক্ত পোষাক, কাপড় নিয়ে মনোয়ারার দ্বারস্হ হলো অতি আগ্রহীরা। ধীরে ধীরে কর্মকান্ড ছড়িয়ে পড়লো এক ঘর থেকে আরেক ঘর, এবাড়ি থেকে অন্য বাড়ি, এক পাড়া থেকে আরেক পাড়া। সময়ে কুলিয়ে ওঠতে না পেরে সংসারে সাহায্যকারী অভাবী মহিলাটিও হাত লাগাতে শুরু করলো। শ্রমের বিনিময়ও হলো। একটু একটু করে পারিশ্রমিক আসতে থাকলো।

সময়ের সাথে সাথে  আরও চমৎকার সাজে বাহারী ডিজাইনে নজর কাড়া কাঁথার মুল্য নির্ধারিত হলো।
মনোয়ারা আজকাল হাত লাগাবার সময় পান না। বাচ্চারাও প্রাইমারি  থেকে হাইস্কুলে পৌঁচেছে। অপেক্ষায় থাকতে হয় না ওদেরকে সাথে নিয়ে ফেরার।
ব্যস্ত থাকেন  নিজের বাড়ির লাগেয়া ছোট্ট দোকান ঘরে। সেখানে শুধু নকশি কাটা কাঁথাই নয়,ওগুলোর পাশাপাশি সাজানো রয়েছে নব জাতক ছোট্ট সোনামনিদের হরেক রঙের নরম নরম ছোট্ট কাঁথাও। এপাড়া ও পাড়ার কাঁথা কারিগররা আসে, অর্ডারের দেয়া নেয়া চলে। মনোয়ারার হাতের ছোঁয়ায় বোনা শিল্পকর্ম এখন মনের মাধুরি মেশানো  কারুকাজ।
নিত্য নতুন রঙ আার ডিজাইনের সমাহারে চাহিদা বাড়তেই থাকে প্রতিদিন।

মনোয়ারার এ গল্প  শুধু ঘরে থাকা গৃহিনী মা বোনদের জন্য। আমরা যারা উচ্চ শিক্ষা থেকে বঞ্চিত পরিস্হিতির কারনে, তারাই সন্তানের উচ্চশিক্ষার পথটি প্রশস্ত করতে পারি মনোয়ারার মত হাতের নাগালের সামগ্রীর সদ্বব্যবহার করে, হাতে কিছুটা সঞ্চয় রেখে। হোক না তা অতি ক্ষুদ্র আর অকেজো। আমাদের দৈনন্দিন জীবনে শেষ নেই প্রয়োজনের। এমনি কোন প্রয়োজনকে কেন্দ্র করে আমরা ভাবতে পারি হেঁসেল ঘরেরই কোন উপাদানকে, যা নিত্য প্রয়োজনীয়।  হোক না তা হাড়ি পাতিল ধরা “ধরনী”কিংবা পাপোস। ছোট্ট একটা চিন্তাধারাকে লক্ষ্য করে এগুতে চাইলেই আরও যোগ হবে চারপাশে ছড়ানো অনেক সমাধান। প্রথম প্রথম হয়তো হতাশা বা নিরাশা ঘিরে ধরবে। আশানুরূপ হবে না। প্রতিকুলতাও আসতে পারে ঘরে বাইরে সব দিক থেকেই। নিজেকে না গুটিয়ে প্রকাশিত করতে থাকুন দ্বিগুন কর্ম উদ্দীপনায়।  সাফল্য রাতারাতি আসে না, সময়তো একটু দিতেই হয়। “ধৈর্য্যের ফল মিষ্টি” এটাতো আমরা জেনেই আসছি।

ধৈর্য্যের এই অসহনীয় সময়টুকুতেই হয়তো আপনার সৃষ্টিশীল মন খুঁজে পেতে পারে আরও উপাদান যা সাধারণ সময়ে দৃষ্টিগোচর  হয় নি।
নিজের অবস্হার পরিবর্তন করতে চাইলে যেমন ইচ্ছাশক্তির দৃঢ়তা প্রয়োজন,তেমনি প্রয়োজন অসীম ধৈর্য্য।
ঐ যে কথায় আছে না, “ছেড়ে দিলেনতো হেরে গেলেন।”

না আমরা হেরে যাব না। কারন লক্ষ্যে পৌঁছুবার হাজার নিযুত কোটি মনোবল আমাদের অতীতে ছিল, এখনও আছে। থাকবে ভবিষ্যতেও।

Related Posts

6 Comments

মন্তব্য করুন