একজন অন্যরকম মানুষের দিনলিপি

সাইফুদ্দিন সাহেব বড় ভাল লোক ছিলেন। তিনি মানুষ দেখলেই সালাম দিতেন। কারো সাথে দেখা হলেই বলতেন, কোথায় যাস? তিনি মানুষের উপকার না করে থাকতে পারতেননা। কেউ তাকে না বললে তিনি তাকে হ্যাঁ বলে দিতেন। তিনি যদি দেখতেন কেউ না খেয়ে আছে তিনি তাকে খাবার দিয়ে আসতেন। একদিন তো এক লোক বলেই ফেলল, আপনি যদি না খাওয়াতেন আমি মরে যেতাম। কেউ আশ্রয় বিহীন থাকলে তিনি তাকে আশ্রয় দিতেন।

একদিন এক ভিক্ষুকে তিনি নিজ খাটে শুতে দিয়েছিলেন। তিনি যদি দেখতেন কেউ কাউকে কষ্ট দিচ্ছে তিনি বলতেন, ‘তুমি তাকে কষ্ট দাও কেন? কাউকে কষ্ট দিলে আল্লাহ কষ্ট পায়’। তিনি কখনও না খেয়ে থাকতেননা। তিনি একবেলা না খেলে পরের দিন দু’বেলা খেতেন। একদিন একটি কাক এসে তার দ্বারে কা কা করছে তিনি বললেন, ‘এ কাকটি তিন বেলা খায়নি একে বেশি করে খাবার দাও’।

তিনি যখন হাটতে যেতেন কেউ তাকে সালাম দিলে বলতেন, তুমি আগে সালাম দাও কেন! আমি আগে সালাম দেব’। তিনি কখনও অনাথের সেবা না করতে থাকতে পারতেননা। তিনি তার বাড়ির ধারে তিনটি অনাথ আশ্রম করেছিলেন। তিনি কখনও আকাশের দিকে তাকাতেননা। তিনি বলতেন, ‘আকাশের দিকে তাকালে বৃষ্টি হতে পারে। আর বৃষ্টি হলে মানুষ কিভাবে হাঁটবে!’

সেই সাইফুদ্দিন সাহেব আজ মারা গেছে। তার মৃত্যুতে ব্যাপক শোক বয়ে যাচ্ছে। সবাই বলছে, এমন লোক আর হবেনা!

তার মৃত্যুতে মানুষ দিশেহারা। সবাই বলে, এমন লোক কোথায় পাওয়া যাবে!

তার মৃত্যুতে নাকি মাইলকে মাইল দূর থেকে লোক আসতেছে। সবাই বলে, এত লোক জীবনেও দেখিনি। তিনি নাকি একটি খাম্বা লালন করতেন। সেটি তার লাশের পাশে দাঁড়া করিয়ে রাখা হয়েছে।

একটু পরে তার মা আসবেন। তিনি পুত্রশোকে কিছু কথা শোনাবেন।

আমরা দাঁড়িয়ে আছি তার লাশের পাশে। একটু পরে জানাজা হবে। সবাই আল্লাহু আল্লাহ রব তুলবে।

সবার একটাই কামনা এ লোকটি যাতে কবরে শান্তিতে থাকে। কারন, এমন লোক শান্তিতে না থাকলে কেউ শান্তিতে থাকবেনা।

“আল্লাহ তুমি তাকে ক্ষমা কর। তুমি যদি ক্ষমা না কর কেউ ক্ষমা করতে পারবেনা। তুমি মালিক, তুমি সাঁই, তুমিই ক্ষমার আধিকারী। ”

‘এই সবাই সর, সর, খাট আসতেছে! সবাই কলেমা শাহাদাৎ পড়্। ‘
‘কালেমাএ শাহাদাৎ আশহাদু আল লাইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াশহাদু আন্না মোহাম্মদান আব্দুহু ওয়া রাসুলুহু’।

‘লাশ কবরে আসতে রাখিস! যাদের মাটি দেওয়া হয়েছে তারা আসতে চলে যা!’

‘আজ কেউ বাড়িতে মোমবাতি জ্বালাইসনা! কারন মোমবাতি জ্বালাইলে লাশের আত্মা কষ্ট পেতে পারে!’

‘মাওলানা মোৌলভী যারা আছেন আপনারা সবাই ওখানে বসেন খাস্ নিয়তে দোয়া হবে!’

‘আল্লাহুমা সাল্লিওয়ালা……………….। ‘

এই সবাই চুপ থাক্, হুজুর এখন দোয়া করবেন ‘

‘আস্তাগফেরুল্লাহা রাব্বি হীম মিন কুল্লে……..। হে আল্লাহ আমরা আজ এক নালায়েকের জন্য তোমার কাছে হাত পেতেছি, তুমি তাকে ক্ষমা কর তিনি যদি নিজের অজান্তে কোন অপরাধ করে থাকেন তাকে ক্ষমা কর। তিনি কখনও মানুষকে কষ্ট দিতেননা তারপরও তিনি যদি নিজের অজান্তে কাউকে কষ্ট দিয়ে থাকেন তাকে ক্ষমা কর। তিনি কখনও তোমার রাসূলের প্রতি কোন অবমাননা প্রদর্শন করেননি। তারপরও তার মধ্যে যদি কোন গীবত থেকে থাকে তাকে ক্ষমা কর।

তিনি কখনও মানুষের অধিকারের প্রতি অশ্রদ্ধা প্রদর্শন করেননি। তারপরও যদি ভুলে কোন একটি কাজ করে থাকেন তাকে ক্ষমা কর। হে আল্লাহ আমরা যারা আছি তুমি তাদেরকেও ক্ষমা কর। এমন ভাল লোক চলে গিয়েছেন, আমরা তো কখন চলে যাব তার ঠিক ঠিক নাই। কাজেই আমাদেরকেও ক্ষমা কর। সবশেষ ফরিয়াদ আমাদেরকে তার মত জীবন গড়ার তওফিক দান কর। আমিন। ”

‘আজ কেউ কোন গান বাজনায় মত্ত হইসনা। আজ সবাই একটু নীরব থাকিস। আর তোর মাকে কইস তার জন্য একটু দোয়া করতে। কারন, তোর মা অনেক ভাল মানুষ। ‘

Related Posts

14 Comments

মন্তব্য করুন