একটা মিষ্টি ভালবাসার গল্প।

ভালবাসা হলো অমৃতের মতো। ভালবাসা ছাড়া এই জগতে কোনো কিছু ই সম্ভব না। ভালবাসা ছাড়া জীবন মূল্যহীন। আমি আজ তেমনি একটি ভালবাসার গল্প জানাবো তোমাদের সবাইকে।  ভালবাসার গল্প আমরা সবাই পছন্দ করি। আজ আমি একটা ভালবাসার ৷গল্প লিখব। একটা মিষ্টি ভালবাসার গল্প । তো চল বেশি সময় নষ্ট না করে শুরু করি আমার গল্পটি। জানি না কার কেমন লাগবে গল্পটা কিন্তু আমার ভালো লাগে। আর এই গল্পটা আমার নিজের মনের কল্পনা। যদিও আগে অনেক গল্পই ভাবতাম কিন্তু এখন অবধি একটা গল্পও লিখে শেষ করি নি।

আমার আজকের গল্পের নায়ক রাহুল আর নায়িকা জেসমিন। ভীষণ ভালবাসে তারা একে অপরকে। কখনো এক মুহুর্তের জন্যও একে অন্যের থেকে দূরে থাকতে  পারে না। ওদের ভালবাসা সকলকেই মুগ্ধ করে । ভালবাসার এক অনন্য অসাধারণ উদাহরণ ওরা। কিন্তু তাদের এই ভালবাসাকে অনেক বাধা বিপদের মুখোমুখি হতে হয়েছে। কিন্তু ভালবাসার সামনে কোনো বাধা বিপদই টিকে থাকতে পারে না। কোনো বিপদই কখনো ওদের আলাদা করতে পারে নি। নিশ্চয়ই সবার জানতে৷ ইচ্ছে করছে কিভাবে শুরু হলো ওদের ভালবাসার গল্প? কোথা থেকে শুরু হলো আর কি কি বিপদের মুখোমুখি হতে হয়েছে ওদের? জেসমিন খুব সুখেই ছিলো ওর বাবা -মা আর আদরের ভাইয়ের সাথে। কিন্তু ছোটবেলার একটা ঘটনা ওর জীবনটা পুরপুরি বদলে দিলো। কেড়ে নিলো ওর সব আনন্দ। ওকে ওর বাবা -মাকে ছেড়ে দূরে চলে যেতে৷ হলো। তো চল জেনে নেয়া যাক কি এমন হয়েছিলো যার কারণে ওর জীবনটা বদলে গেলো। যখন জেসমিন খুব ছোট ছিলো তখন ওদের বাড়িতে ওর দাদা-দাদি বেড়াতে আসেন। ওরা সবাই তো খুব খুশি ছিলো। বিশেষ করে জেসমিন। বেশ আনন্দে হেসে খেলে ই ওর দিনগুলো কাটছিলো। কিন্তু হঠাৎ একদিন জেসমিনের বাবা- মা এক জায়গায় ঘুরতে যায়। আর বাড়িতে জেসমিন আর ওর দাদা-দাদি ছিলো। আর হঠাৎ কিছু গুন্ডা এসে ওদের উপর আক্রমণ করে ওর দাদা-দাদিকে মেরে ফেলে। ওরা জেসমিনকেও মেরে ফেলতে চেয়েছিল কিন্তু ও বেচে যায়। ওর কিছু ই হয় নি। কিন্তু চোখের সামনে ওর দাদা-দাদির মৃত্যু ও সহ্য করতে পারে নি।আর ভীষণ ভয় প্র‍্যে যায় ও। সারাক্ষণ শুধু ওই কথাগুলো ই ভাবতে থাকে। কেও সামলাতে পারছিলো না ওকে। ডাক্তার বলেছিলো ওকে অন্যকোথাও নিয়ে যেতে কারণ এখানে থাকলে ওর চোখের সামনে সব সময় ওই ঘটনাই ভাসতে থাকবে আর এতে ওর অনেক ক্ষতি হবে।কিন্তু সবাই সেখান থেকে সব ছেড়ে যেতেও পারছিলো না।আর এদিকে জেসমিনের এই অবস্থা। তাই বুকে পাথর বেধে ওর বাবা মা তাদের আদরের মেয়েকে তার মামার কাছে ইন্ডিয়া রেখে যান। এখানে এসে ধীরে ধীরে সব কিছু ভুলে যেতে লাগলো জেসমিন আর ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়ে উঠলো। আর ফিরে যায় নি লন্ডন সে।আর এখানে খুব ভালো ই আছে জেসমিন। ওর মামার কোনো সন্তান নেই আর তার জন্য সব আদর জেসমিন ই পায়। তারা তাকে একদম নিজের মেয়ের মতো ই ভালবাসেন।তখন থেকে জেসমিন ওর মামার বাড়িতে থাকে। বাবা মায়ের থেকে দুরে আর তার জন্য একটু কষ্ট ওর হয়। ওর অনেক মনে পড়ে ওর বাবা মায়ের কথা কিন্তু ওর মামা ওকে অনেক ভালবাসে।কখনো একটা আঁচড়ও লাগতে দেয় না ওর গায়ে।সব সময় আগলে রাখে।
আর জেসমিন ভীষণ মিষ্টি একটা মেয়ে।সকলের খুব প্রিয়। সবার যেমন খুব ই মেধাবী তেমনি খুব ভালো আর কোমল হৃদয়ের একটা মেয়ে।কখনো কারো কোনো কষ্ট ওর সহ্য হয় না। নিজের আগে সব সময় অন্যের কথা ভাবে ও। নতুন বছরের প্রথম দিন।আজ কলেজের রেজাল্ট বের হবে।কিন্তু তা নিয়ে জেসমিনের কোনো মাথা ব্যথা নেই কারণ সে প্রতিবারই প্রথম হয়।এবার ও তাই হবে কোনো তা নিয়ে কারো কোনো সন্দেহ নেই।
আজ সে তার বন্ধুদের সাথে সারাদিন ঘুরে বেড়াবে আর আনন্দ করবে।প্রতিবার এভাবে ই সারাদিন আনন্দ হুল্লোড় -পার্টি এসব দিয়ে ই শেষ হয়। কিন্তু সে জানতো না আজ এই নতুন বছরের প্রথম দিনটা তার জন্য অন্যরকম হতে চলেছে। আজ এমন কিছু ঘটবে যা তার জীবনটা বদলে দেবে একদম। সারাটা দিন আনন্দে কাটবে ভেবেছিলো কিন্তু সন্ধেবেলা পার্টিতে যাওয়ার সময় ঘটলো এক বিপদ। জেসমিনের গাড়িটা মাঝ পথে খারাপ হয়ে গেলো। এখন এই অসময়ে সে কি করবে ভেবে পাচ্ছিলো না।সে গাড়ী থেকে নেমে রাস্তায় দাঁড়িয়ে বার বার ড্রাইভারকে ফোন করছে কিন্তু কেও ফোন তুলছে ই না। ঠিক সে সময় সে দেখলো কেও একজন গাড়ী নিয়ে আসছে। সে কি তার কাছে একটু সাহায্য চাইবে? কিন্তু সে তাকে সাহায্য কেন করবে? কিচ্ছু ভেবে পাচ্ছিলো না সে।শেষে নিরুপায় হয়ে সেই গাড়ির সামনে হাত তুলে সাহায্য চাইলো। সেই গাড়িটা থামলো এবং তাকে ড্রপ করে দিতে রাজিও হয়ে গেলো।
জেসমিনঃ আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ। আমি যে কি করবো বুঝতে ই পারছিলাম না। আসলে গাড়িটা যে এভাবে খারাপ হয়ে যাবে বুঝতে ই পারি নি।
অচেনা লোকঃ না না ধন্যবাদ দেয়ার কিছু নেই।আমি আপনাকে পৌঁছে দিচ্ছি।আর মানুষের জীবন ই তো ঠিক থাকে না আর এটা তো একটা গাড়ী মাত্র।খারাপ হতে ই পারে।আপনি মন খারাপ করবেন না।
জেসমিনঃ হুম…
অচেনা লোকঃ আর আমি কিন্তু আপনাকে করুণা করছি না।ধরুন না যে আমরা একসাথে কোথাও ঘুরতে যাচ্ছি।ওহ হো আপনি কোথায় যাবেন সেটাই তো জানা হলো না।
কোথায় যাবেন আপনি?
জেসমিনঃ আমি পাটায়া ভবনে যাবো।ওইখানেই আমাদের পার্টিটা হচ্ছে।
অচেনা লোকঃ ওইখানে? আমিও তো সেখানে ই যাচ্ছি। এবার তো মিলেই গেলো। আমরা একসাথে একই জায়গায় যাচ্ছি।
জেসমিনঃ হুম।
রাস্তায় তাদের আর তেমন কোনো কথা হয় নি।রাহুল চুপচাপ গাড়ী চালাচ্ছিল আর জেসমিন চুপ করে বসে ছিলো সারা রাস্তা।
তারপর তারা পার্টিতে পৌঁছে গেলো আর যার যার বন্ধুর সাথে গল্প করতে লাগলো। পার্টিতে তাদের আর তেমন একটা দেখাও হয় নি আর কথাও হয় নি।কিন্তু নাচের সময় এক অদ্ভুত ঘটনা ঘটলো। পার্টির নিয়ম ছিলো তারা একটা কাগজে নিজেদের নাম লিখে রেখে দেবে আর তারপর অন্য জায়গা থেকে আরেকটা কাগজ তুলে নেবে সবাই।যে যার কাগজে যার নাম লেখা থাকবে তাকে তার সাথে ই নাচতে হবে। আর এটা নাকি স্রষ্টা নিজে ঠিক করে দেন কার সাথে কে নাচবে।জেসমিনের জন্য স্রষ্টা রাহুলকে ই রেখেছিলেন হয়তো আর তাই জেসমিনের কাগজে সে রাহুল নাম দেখতে পেলো।কিন্তু সমস্যাটা হলো সে রাহুলকে চেনে না আর রাহুলেরও একই অবস্থা। জেসমিন কে সে কোথায় খুজবে? কে জেসমিন সে তো সেটাই জানে না।তো তারা কাগজ হাতে নিয়ে ভাবছে ই আর এদিকে অন্যরা নিজেদের সঙ্গীর সাথে নাচতে শুরু করে দিয়েছে। আর তখনি তারা দেখতে পায় একে অপরকে কাগজ হাতে দাঁড়িয়ে থাকতে।তখন রাহুল জেসমিনের কাছে আসতে ই দেখতে পায় তাদের হাতের কাগজে একে অপরের নাম। আর ঠিক তখনই তাদের মুখে আলো এসে পড়ে আর তারা একে অপরকে দেখতে পায়।
রাহুলঃ অসাধারণ। এতো সুন্দর কেও কি করে হতে পারে? ঠিক যেনো একটা পরী।
জেসমিনঃ কে আপনি? আমি তো আপনাকে চিনিও না আর আগে কখনো দেখিও নি তাকে স্রষ্টা আপনার সাথেই কেন মিলিয়ে দিলো আমায়?
সত্যি ওদের দুজনকে একসাথে অনেক সুন্দর লাগছিলো।যেনো স্রষ্টা নিজের হাতে ওদের গল্প লিখে রেখেছেন আর ওদের একে অপরের ভাগ্যে লিখে দিয়েছেন। এমন এক ভালবাসা যা কখনো কেও কাওকে বাসতে পারে না। ও
ওরা একসাথে নাচতে শুরু করে আর সবাই মুগ্ধ দৃষ্টিতে ওদের দেখতে থাকে। যেনো তারা সব কিছু ভুলে গেছে।সারারাত শুধু নাচ ই দেখতে পারবে একে অপরের।
রাহুল অপলক দৃষ্টিতে জেসমিনকে দেখছিলো। একটা কথাও বলে নি ওরা। নিজেদের মাঝে ই হারিয়ে গেছিলো ওরা।
তারা তখনও জানতো না কি আছে তাদের ভাগ্যে। তাদের সেই রাতের সাক্ষাৎ সারাজীবন একসূত্রে বেধে দিয়েছে তাদের।স্রষ্টা শুধু তাদের নাচের জন্য একে অপরের সঙ্গী হিসেবে নির্বাচন করেন নি। বরং সারাজীবনের জন্য ওদের একসাথে বেধে দিয়েছেন।
যাইহোক নাচ শেষে সবাই যে যার মতো আনন্দ করতে লাগলো। তখনও তারা কেও কাওকে চিনতো না। মানে নাম ছাড়া আর কিছু ই জানতো না। পার্টি শেষে যে যার বাড়িতে ফিরে গেলো। জেসমিন আর রাহুলও। কিন্তু বাড়ি ফিরে গেলেও কারো ই ঘুম হয় নি রাতে একটুও। কেন জানি না বার বার শুধু একে অপরের কথাই ভাবছিলো তারা। পরের দিন কলেজে যেতে একটু দেরী হয়ে যায় জেসমিনের।
চলবে……

<

Related Posts

11 Comments

মন্তব্য করুন