এক কাপ ধোঁয়া ওঠা গরম চা

পানির পরে পৃথিবীতে মানুষের সব থেকে প্রিয় পানীয় হয়তো এক কাপ ধোঁয়া ওঠা গরম চা

সৌভাগ্যবান এই পানীয় আবিষ্কার করেন ২৭৩৭ খ্রিষ্টপূর্বে মহান চৈনিক শাসক শেন নাং ( বা শেনাং)। শেন তার সাম্রাজ্যে এই বলে ডিক্রি করেন যে তার প্রজাদের সবাইকে জল পানের পূর্বে অবশ্যই সেটা ফুঁটিয়ে নিতে হবে। তিনি নিজেই সবসময় ফোটানো পানি পান করতেন। একদিনের কথা শেন তখন চীনের জুন্নান প্রদেশ অবস্থান করছিলেন। যাত্রাপথে এক বনানীর নিচে যাত্রা বিরতি করা হলো।

খোলা প্রান্তরে গাছের ছায়ায় বসে আছে সবাই। কেউ বিশ্রাম করছে, কেউ খাবারের ব্যবস্থা করছে। পানি পাত্রে পানি ফোটানো হচ্ছে। হঠাৎ বাতাসে পাশের ঝোপ থেকে কিছু পাতা উড়ে এসে ফুটন্ত পানির ভিতরে পড়ল। পাতাটাকে তুলে ফেলার চেষ্টা করার আগেই সেটি পানিতে দ্রবীভূত হয়ে গেল। পানির রং বদলে গেল। কৃষি এবং ভেষজ চিকিৎসায় শেনের ব্যাপক আগ্রহ ছিল। শেন কৌতুহলী হয়ে পানির ঘ্রাণ শুঁকে দেখলেন অন্যরকম এক মাদকতা ছড়ানো গন্ধ। তিনি এটার স্বাদ নিলেন। এই প্রথম মানুষ চায়ের স্বাদ নিল।

তারপর তো রীতিমতো চা এর প্রেমে পড়ে গেল। টি – এর বাংলা হিসেবে আমরা যা ব্যবহার করি। কিন্তু চা বাংলা শব্দ না। চা চীনা শব্দ। শাং শাসনামলে (১৫০০-১০৪৬ খ্রিষ্টপূর্বে) চা পাতার রস ঔষধি পানীয় হিসেবে সেবন করা হতো। সিচুয়ান প্রদেশের লোকেরা প্রথম চা পাতা সেদ্ধ করে ঘন লিকার তৈরি করা শেখে। ১৬১০ সালের দিকে ইউরোপে চায়ের প্রবেশ ঘটে পর্তুগীজদের হাত ধরে। শীতের দেশে উষ্ণ চায়ের কাপ প্রাণে স্ফুর্তির জোয়ার নিয়ে এলো।

আজ থেকে আনুমানিক আড়াইশ বছর পূর্বে এশিয়ার অনেক দেশে চা পাতার তৈরি ইট মুদ্রার বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা হতো। এ থেকে সহজেই বোঝা যায় তৎকালীন সময়ে চায়ের কদর। ১৭০০ সালের দিকে ব্রিটেনে চা জনপ্রিয় হয়। ইংরেজদের হাত ধরে চা ভারতীয় উপমহাদেশে প্রবেশ করে। তারা ভারতের আসাম রাজ্যে চায়ের চাষ শুরু করে। চা উৎপাদনে চীনের একক আধিপত্যকে খর্ব করতে বিলাতিরা ভারতে চা চাষ শুরু। প্রথম দিকে অ্যাংলো ইন্ডিয়ানরা চা ব্যবসা শুরু করে পরে ভারত স্বাধীনতা লাভ করার পর চা শিল্প দেশীয়দের হাতে বিকাশিত হয়।

আসাম থেকে ছড়িয়ে পড়ে দার্জিলিং,কেরেলা ও বাংলায়। এখন ভারত হচ্ছে পৃথিবীর প্রধান চা উৎপাদনকারী দেশ। বাংলাদেশের সিলেট অঞ্চলে আছে নয়নাভিরাম চা বাগান। পৃথিবীর অধিকাংশ বৃষ্টিবহুল দেশে এখন চা উৎপন্ন করা হয়। ইরানের নাম মনে আসলে আমাদের অবশ্যই চোখের সামনে মরু উদ্যানের কথা ভেসে উঠবে। সেই ইরানের গিলান প্রদেশ আছে শ্যামল চায়ের মা বাগান।

Related Posts

12 Comments

মন্তব্য করুন