এক হৃদয় বিদারক ভ্রমন কাহিনী, এক নারীর কাঙ্খিত ভ্রমণ পথে পেয়েছিলো, কিছু ভয়ানক, কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত, কিছু পাকৃতিক প্রেম, কারো জীবনে ঘটে যাওয়া বাস্তব ঘটনা।

★★এক মর্মান্তিক ভ্রমণ কাহিনী ★★
নাহার সুলতানা ময়না

কিছু কিছু মুহূর্ত আছে যা হৃদয়ের ফ্রেমে আজন্ম কাল বন্দী থাকে।
তেমনি একটা ভ্রমণ আমার জীবনে এসেছিলো। যা থেকে আজও বের হয়ে আসতে পারিনি, হৃদয়ের গভীরে ক্ষতের সৃষ্টি করে।
একদিন হঠাৎ কল এলো হেরে সেনু  কেমন আছিস?
সলাম দিলাম, বললাম ভালো আছি, তুমি কেমন আছো?
বড় ভাই বলল ভালো আছি,
সেনু:- ভাই এই সময় কল দিলে যে কিছু বলবে?
বড় ভাই: হুম, তোর বর কোথায়রে?
সেনু: বাইরে গেলো, কেন কিছু হয়েছে?
বড় ভাই: আচ্ছা শুন আজ রাতে আমার বিয়ে, হটাৎই সিদ্ধান্ত হয়ে গেলো, তোর বরকে চলে আসতে বলবি। আচ্ছা আমি কল দিয়ে বলে দিচ্ছি ওকে।
সেনু: আমি অবাক, যার বিয়ে নিয়ে এতো কল্পনা জল্পনা, যার গায়ে হলুদ নিয়ে এতো ভাবনা ছিলো,
ছেলেরা পড়বে হলুদ পান্জাবী, মেয়েরা পড়বে লাল হলুদে কম্বিনেশন শাড়ী। বড়ীর সামনে পুকুর তার উপর গায়ে হলুদের  মনোমুগ্ধকর স্টেজ সাজানো  হবে।

আমরা যাবো মেয়ের বাড়ী গায়ে হলুদের তত্ত্ব,  মাছ,মিষ্টি আর মেয়ের যাবতীয় সাজার উপকরন নিয়ে, ওরা আসবে
অনেক খাওয়া দাওয়া আনন্দ, উল্লাস, মুভমেন্ট বুঝে বুঝে বাজবে গান, নাচ হবে মেহদি হবে কত কি ভাবনা,
সব নস্যাৎ করে দিয়ে হঠাৎ বলে বসলো আজ বিয়ে, এটা একটা কথা হলো?
মনটা ভার হয়ে গেলো, আমি কি তাহলে স্বপ্ন দেখছি? নিজেকে একটা চিমটি কাটি না এটা বাস্তব ।
সাহেবকে বললাম ওনিতো শুনে রেগে আগুন, রাতে বিয়ে এখন বলছে এটা কি যাবার জন্য বলা নাকি দুষ ফুরানো?
না যাবনা, যাবার জন্য হলে আগেই বলতো।
সাহেবের মনটা খুব ভারাক্রান্ত হয়ে গেলো, মনে মনে কি যেন ভাবছে  আর বির বির করছে।
সাহেব যায়নি, ওদের বিয়ে হয়ে গেছে, বড় দুলাভাই, ছোট দুলাভাই ওরা গেলো ফিরে এসে সেই প্রশংসা বউকে নিয়ে, শুনতে ভালোই লাগছে, দেখার আগ্রহ টা প্রবল মনে অভিমানের পাহাড় জমেছে, তাই মুখ ফোটে বলিনি।
ভাই বুঝতে পারলো আমাদের মন ভালো নেই, তাই সিদ্ধান্ত নিলো আমাদের সবাইকে নিয়ে বরিশাল যাবে, তার শশুড়বাড়ি, মহা খুশি সবাই বেড়াতে যাবো, এতো দুর কখনও ভ্রমণ করা হয়ে উঠেনি।

দেখতে দেখতে সেই কাংখিত দিন  এসে গেলো। আমার পরিবার, বড় আপা ও ছোট আপার পরিবার, ছোট আপার মেয়ের পরিক্ষা ছিলো তাই আমাদের সাথে যেতে পারেনি। ছোট ভাই ও তার পরিবার বড় ভাবী ও তার দুই মেয়ে, সবাই রেডি।
গাড়ি এলো সবাই উঠলাম, তখন বেলা ১ টা বাজে,
আল্লাহর নাম নিয়ে গাড়ী ছাড়লো কটিয়াদি পর্যন্ত আসতেই ছোট ভাই গাড়ি থামালো, ওর শশুড়বাড়ি ওখান থেকে কতগুলো কাঁঠাল নিলো, কিছুটা সময় কাটলো এখানে।
আবার যাত্রা শুরু গাজীপুরের কাছাকাছি আসতেই, ছোট ভাইয়ের ছেলে মাহিন বলে উঠলো, আব্বু পলিথিন লাগবে বমি বমি ভাব, ব্যাগের ভেতর পলিথিন  বের করার উপায় নেই, অন্য ব্যাগের নীচে পরে গেছে।
তাই গাড়ি থামালো, পলিথিন কিনলো।
আবার যাত্রা শুরু  গাজীপুরে যেতেই গাড়ী চাকা নষ্ট হয়ে গেলো, সবাই নামলাম একটা নিরিবিলি জায়গা, চার দিকটা ঘন ঘাসে আবৃত, প্রচন্ড রোদে দারুণ শীতল হাওয়া আসছে, সামনে একটা মসজিদ ওখান থেকে পানি নিলাম হাত, পা ধৌত করলাম, পরিবেশ টা এতো সুন্দর লাগছিলো কিছুক্ষণ হাটলাম, বেশ ভালো লাগছে, রোদ আর হাওয়া কেমন একটা ভাব জমেছে, কয়েকটা সেলফি নিলাম, ওদের মিতালীর সাক্ষী হয়ে।

প্রায় ঘন্টা খানেক লেগে গেলো, চাকা লাগানো হলো, গাড়ীতে সবাই উঠলাম, আবার যাত্রা শুরু হলো, বেশ কিছুটা পথ যেতেই মাহিন বমি করে সর্বনাশ করে ফেলে,
মাহিনের আম্মুর নতুন দামী শাড়ীটা বমিতে নষ্ট হয়ে গেলো বড় দুলাভাইয়ের এতো সুন্দর দামী জুতোতেও বমি পড়লো, কমপ্লিট সেট পড়েছিলো ওটাতে বমি পড়লো বড় ভাবীর শাড়ীতেও ছিটেফোটা পড়লো।
সামনে একটা পুকুরছিলো ওখানে গাড়ি থামালো।
পুকুর থেকে পানি নিয়ে সব পরিষ্কার করছে,
কতগুলো হাঁস ঝাঁক বেঁধে পানিতে ভেসে বেড়াচ্ছে, একটু দূরে দুটো রাজা হাঁস ঠোঁটে ঠোঁটে ঘষে ওদের মনের ভাব প্রকাশ করছে। মনে হচ্ছে ওরা যেন আর জনমের হংস মিথুন, পুর্ব জনম থেকে ভেসে বেড়াচ্ছে, বাড়ী ফেরার কোন তাড়া নেই। কয়েকটা পিক তুললাম ওদের প্রেমের সাক্ষী হয়ে, আপ্লুোড দিবো।
এখানেও অনেকটা সময় লেগে গেলো, বড় দুলাভাই বেচারর জুতো গুলো ভিজে কেমন যেন  হয়ে গেছে।
যাক আবার যাত্রা শুরু হলো, ঢাকার কাছাকাছি আসতেই বড় ভাইয়ের মেয়ে গুলির বমি বমি ভাব হচ্ছে, এক সময় পলিথিনে বমি করলো, কারো গায়ে পড়েনি, বাঁচা গেলো বাবা।
ওদের আসলে  গাড়ীতে এডজাস্ট হয়না।
থামালো গাড়ী বাচ্চাদের পেট খালি কিছু খাবার কিনতে হবে,
একটা কনফেকশনারি দোকান সব জিনিসই মুটামুটি পাওয়া যায়, ভিতরে গেলাম খাবারের জিনিস গুলো পেকিং করছে, দোকানদার লোকটা দেখতে এমন অদ্ভুত চেহারার, যেন একটা হুতুম পেঁচা এসে ঘারের উপর বসেছে, এতো বিশ্রী দেখতে কি বলবো। যাক সেটাতো আল্লাহই সৃষ্টি করেছেন , নিজেদের হাতে ক্ষমতা থাকলে ছেলেরা হতো শাহরুখ খান আর সব মেয়েরা হতো মাধুরী, কারিনা, কারিশমা।

লোকটা আমায় দেখে কেমন দাঁত কিলিয়ে হাসছে। দাঁত গুলো যেন তরমুজের বিচি, জীবনে ব্রাশ করেছে বলে মনে হয় না। জাম ছাড়া আঁখ বোধহয় খায়নি কোনদিন।
কেমন করে তাকিয়ে আছে যেন জীবনে মেয়ে মানুষ দেখেনি। খুব বিরক্ত লাগছে তারাহুরা করে গাড়িতে উঠে গেলাম।
আবার যাত্রা শুরু ঢাকা পৌঁছাতে পৌঁছাতে রাত ৮ প্রায় বেঁজে গেলো, এতো জ্যাম রাস্তায় গাড়িটা এগুতেই পারছেনা ।
এমন সময় ভাই কল দিলো এখনও সদর ঘাটে এসে পৌঁছাসনি?
সারে আটটায় লঞ্চ ছেড়ে দিবে, ভাই আর বড় আপার মেয়ে ওরা ঢাকাতেই থাকে, তাই আগেই লঞ্চে বসেছিলো।
লঞ্চের দুতলা কেবিন পুরুটাই নেওয়া হয়েছে সময় মতো না পৌঁছাতে পারলে সর্বনাশ।
কিন্তু কি করবো একটু এগুতেই জ্যাম। মাত্র ২০ মিনিট সময় বাকী সবাই টেনশনে পরে গেলাম।
কি যে একটা বাজে অবস্থার মাঝে পড়েছি। শীতের রাতেও ঘামছি।
ছোট ভাই বলল, এখান থেকে সদর ঘাট ৫ মিনিটের রাস্তা। যে যানজট  ১০টা বাজলেও পৌঁছাতে পারবোনা, চলুন পায়ে হেঁটে চলে যাই, তাহলেই সম্ভব কাছাকাছি খুব একটা দুর নয়।
সবাই তারাহুরা করে নামতে গিয়ে আমার ব্যাগ টা ছিড়ে গেলো আমি হাত দিয়ে ধরে দিলাম দৌড় বড় দুলাভাই নামতে গিয়ে গাড়িতে একজুতা আটকে গেলো, এক পায়ে জুতা এক পা খালি দৌড়, বড় আপা বিছানা থেকে নামতেই লাগে ১০ মিনিট ওহ আহ করতে করতে, আর সেই আপাও ব্যাগ নিয়ে দৌড়, কেহ রিকশায় কেউ হেঁটে যে যেভাবে পারছে। আমার পায়ে ব্যথা করছে এতো হাঁটছি তবুও সদর ঘাট পৌঁছাতে পারছিনা এতো দূরে লাগছে।
একটা রিকশা নিলাম, চাচা তারাতারি চলেন সময় কম।
রিকশা ওয়ালা চাচা বৃদ্ধ, আর কোন রিকশা তখন ছিলোনা, তাই বৃদ্ধ চাচার রিকশায় উঠলাম।
চাচার পা চলেতো চলেনা, কি হলো চাচা এতো আস্তে চালাচ্ছেন কেন?
চাচা বলল মাগো আমার শীীরটা ভালো না, কিন্তু কি করবো পেট তো চালাতে হবে।
চাচা আপনার কোন সন্তান নেই?
মাগো আমার এক ছেলে, ২ মেয়ে, মেয়েদের বিয়ে দিয়ে ফেলেছি। ছেলেকে অনেক কষ্ট করে রিকশা চালিয়ে বি এ পাশ করাইছি, কিন্তু কোন চাকরি হয়না। তাই জমি জামা বেঁচে  ছেলেকে বিদেশ পাঠাইছি। টাকা পয়সা ভালোই কামাইছে গাজীপুরে একটা ২ তলা বাড়ি করেছে। বিয়ে করেছে নাতীও হয়ছে।

আমি হার্টের রুগী রিং পড়াতে হবে ছেলের বাড়ীতে গেলাম, বৌমা বলল এখানে কেন আসছেন যান যান।
ছেলেকে কল দিলাম ছেলে বলল, আমি কি করবো।
তার পর মোবাইল থেকে ছেলের নাম্বারটা ডিলিট করে ফেলেছি, আর ভুলে গেছি, ওরা আমার কেউ হয়।
কথা বলতে এসে গেছি সদর ঘাট। লঞ্চ পারাবাত ১১ তে উঠলাম, এসে শুনি ৯ টায় ছাড়বে লঞ্চ।
ভাই হাতে ৩০ মিনিট রেখে আমাদের তাগাদা করে গেছে একটু পর পর।
বাঙালি তো ৮ টায় বললে ৯ টায়ও পৌঁছাতে পারেনা, তাই এমন করলো।
মাইক্রো, রিকশা, হাঁটা সবশেষে এসে উঠলাম লঞ্চে।
সারাদিন কিশোরগঞ্জ টু ঢাকা ভ্রমণ করে ক্লান্ত।
লঞ্চের ভিতর এতো সুন্দর আলিশান ব্যবস্থা যেন একটা রাজ বাড়ী। হাত মুখ ধৌত করলাম, কাপড় চেঞ্জ করলাম।
প্রচন্ড মাথা ব্যাথা করছে।
ভাই বলল এক কাপ চা চলবে?
বললাম মন্দনা হয়ে যাক ক্লান্তি দূর হবে, একটা নাপা + খেলাম। একটু ঘুমিয়ে নিলাম।
ঘন্টা খানেক পর উঠলাম আরাম লাগছে, লঞ্চের ভিতরেই ডাইনিং সবাই মিলে বুনা খিচুড়ি আর গরুর মাংস, সাথে ঝাল মুরগী, আর চাটনি ও আছে। ভাগ্নিটা রান্না করে নিয়ে এসেছে সবার জন্য, সবাই মিলে আনন্দ করে খেলাম।
খাওয়া শেষ যার যার ভাবে রেস্ট নিচ্ছে। কেউ ঘুমাচ্ছে, কেউ মোবাইল টিপছে কেউ আবার টিভি দেখছে।
আমি চুপচাপ, রাত ১২ টা প্রায়, ঠান্ডা টা ক্রমশই বাড়ছে,
ভিতরের রুমে আমি বড় আপা ও ছোট আপা ডুকলাম।

হা হায় এতো ফল, অনেক প্রকার মিষ্ট,    এতো খাবারের আয়টেম। পেট ভর্তি খেতে পারছিনা, একটা কমলা খেলাম।
কিছুক্ষণ গল্প করি, পরে আপারা ঘুমিয়ে পড়ে, রাত ২ টা বাজে আমার ঘুম আসছে না, সবাই গভীর গুমে মগ্ন।
পৃথিবীটা কেমন যেন নিস্তব্ধ, আমার খুব ইচ্ছে করছে বাহিরে যেতে একটু ঘুরে দেখতে, কয়েকজন কে বললাম উঠো চলো ঘুরে দেখি গভীর রাতের প্রকৃতি  কেউ উঠলোনা।
ঘুমতো আছে প্রতি দিনই আজ না হয় ঘুমালামনা, রাত জেগে কাটিয়ে দিবো,  বাহির হলাম কেমন ভয়ানক নিরব, গা ছম ছম করছে নিরবতায় ছেয়ে আছে,পৃথিব,   আস্তে  আস্তে এগুচ্ছি ভয় ভয় করছে যাবো নাকি রুমেই থাকবো ভাবছি, আবার সাহস নিয়ে এগুচ্ছি, লঞ্চ টা অনেক বড় এক মাথা থেকে আরেক মাথা অস্পষ্ট।
দূরের  শেষ মাতায় কি যেন একটা ভয়ঙ্কর কিছু দেখা যাচ্ছে , একটু একটু আলো ছায়াটাই বেশী, আবার দূয়েক ফুটা বৃষ্টি ও পড়ছে, আকাশ টা মেঘে ঢাকা  চাঁদ টা মেঘ কেটে বেরুতে পারছেনা, তাই বুঝতে পারছিনা ওটা কি?
মাঝে মাঝে নড়াচড়া ও দেখা যায়, মনে হয় ভূত পেরত হবে, নাকি কোন চোর ডাকাত না বাবা যাবনা ভয় করছে।
যদি আমাকে মেরে ফেলে? কিন্তু ভীষণ কৌতূহল হচ্ছে।
পা টিপে টিপে এগুচ্ছি এমন সময় পিছনে হাত ধরে কেউ টান মারলো, আমি চিৎকার দিয়ে উঠি।
সবাই জেগে যায় পিছন ফিরে দেখি আমার সাহেব। বাইরে কেন গুমিয়ে পড়ো। সবাই আমাকে বকে, পড়ে আবার সবাই ঘুমিয়ে পড়ে, কিন্ত আমার মনে সেই কৌতূহল আমি দেখবো ওটা কি, যদি জিন ভুত হয়, ছোট বেলা থেকে ইচ্ছে ওদের সাথে বন্ধুত্ব করার।
আল্লাহর নাম নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি, যখন ছায়াটা পড়ে, বড় দানবের মতো দেখা যায়, দুহাত মেলানো বিশাল ভয় করছে, কাউকে ডাকবো? মনের কোনে প্রশ্ন জাগছে কি করবো, না বাবা কাউকে ডাকলে ওলটো নিজেই বকা খাবো,

দেখি যা হয় হবে ধীরে ধীরে সামনের দিকে যাচ্ছি মনে মনে আল্লাহর নাম জপছি।
অনেকটায় কাছাকাছি গেলাম এতো মিষ্টি একটা ফারফিউমের গন্ধ, চার দিক  যেন মুখরিত হয়ে গেছে, বুঝলাম এটা কোন পরী হবে, আমি তো ছোট বেলা থেকে অনেক গল্প শুনেছি, লাল পরী নীল পরীদের গল্প, পরীরাতো ভালো হয়, আজ বাস্তবে আমার সামনে কি মজাইনা হবে, সকালে যখন সবাইকে বলবো এই পরীর গল্প, তখন সবাই আফসোস করবে।
আরেকটু কাছে গেলাম, না এটা তো পরী নয়, হবে হয়তো পুরুষ ভুত, বাবা পালাই শুনেছি সুন্দরী মেয়েদের কে উড়িয়ে নিয়ে যায় পুরুষ ভুতেরা, পিছু হাটতে শুরু করলাম। কিন্তু মনটা যে বরই অবুঝ কৌতূহলটা যে থেকে যাচ্ছে, না তীরে এসে তরী ডুবালে চলবেনা, যা আছে কপালে আমি আজ দেখবোই।
তখন চোখ বন্ধ করে একদম কাছে চলে এলাম, চেয়ে দেখি টাইটানিক মুডে দাড়িয়ে আছে একটা যুবক, দুহাত মেলে আকাশের দিকে তাকিয়ে  নিঃশ্বাস নিচ্ছে।
রংটা শ্যামলা আবার কালো বলাও চলে, নাকি রাতের আঁধারে এতো কালো লাগছে বুঝতে পারছিনা। কিন্তু তার চেহারাটা মাশাল্লাহ, এতো সুন্দর হতে পারে আমার জানা ছিলোনা। যেন বিধাতার সেরা আশির্বাদ।
কি করে জানবো যখন থেকে পুরুষ মানুষ জিনিস টা বুঝতে শিখেছি তখন থেকেই আমাকে পুরো দখল করে আছে আমার সাহেব, তাইতো অন্য কোন পুরুষ আমার জীবনে আসার সুযোগ পায়নি।
আর ভবিষ্যত এমন ভাবে কোন যুবক কে তাকিয়ে দেখবো সেটাও ভাবিনি। এতো স্মার্ট, ইং করা পেন্টটা এ্যাস কালার  আর শার্ট টা মেরুন কালার হবে হয়তো এতো বুঝা যায়না, তবে অসাধারণ লাগছে, জীবনে এই প্রথম সাহেব ছাড়া কাউকে এতো ভালো লেগেছে।
ভদ্র লোক ফিরেও তাকাচ্ছে না, অজান্তেই চাইছি আমাকে দেখুক ফিরে, কিন্তু না ওনি সেই আকাশের দিকেই তাকিয়ে, মনে হচ্ছে চোখ দিয়ে আকাশ টা গিলে খাচ্ছে।

আরে বাবা একটু তাকানা এদিকে, আমি দেখতে এতোটাও বাজে না যে চোখ বন্ধ হয়ে যাবে। প্লিজ একটু তাকাও, না তাকাচ্ছে না।
আমি হাটছি এদিক সেদিক আর ফিরে ফিরে দেখছে, না তাও তাকাচ্ছে না, একসময় আমার পা একটা জায়গায় লেগে, পরে গিয়ে ব্যথা পেয়ে ইস করে বসে পড়ি নীচে।
তখন ভদ্র লোক নীচে নেমে এসে বলে ম্যাম ব্যাথা পেয়েছেন?
এতো সুন্দর আওয়াজ, আমি থ মেরে চোখে চোখ রেখে চেয়ে আছি  যেন একজনমে চোখের পলক পড়ছে না।
আমার পা টা টেনে বের করলো, তার হাতের স্পর্শে কি এক অদৃশ্য কারিশমা  যেন নিমেষেই সব ব্যথা উদাও। দারুণ এক ভালোলাগা কাজ করছে সর্বাঙ্গে।
ভদ্র বলল হেলো কিছু বলুন চোখের সামনে আঙুল দিয়ে তুরি মেরে, আমি চমকে উঠি, বললাম না ব্যথা নেই, ভদ্র লোকের বাম হাতে ২ টা আঙুল বেশী।
প্রচন্ড ইচ্ছে করছে ভদ্র লোকের সাথে কথা বলতে, কিন্তু আমাকে যদি বাঁচাল মহিলা ভেবে বসে।
চলে যাবো?  ইস ওনি যদি নিজ থেকে কথা বলতো কত ভালোই না হতো,
কিছুক্ষণ নিরবতার পর ওনি বলে উঠলেন, আপনি কোথায় থেকে এসেছেন?
আমি বললাম, কিশোরগঞ্জ আপনি?
ওনি বলল সিলেট থেকে।
আমার নাম সৈয়দ ওয়েস রেজা আপনার?
আমি সেনু,
ওয়েস: বাহ চমৎকার নাম আপনার দেখতেও বেশ সুন্দরী স্মার্ট।
ওনার মুখে আমার প্রশংসা শুনে বেশ ভালো লাগছে।
সেনু: আপনিও কিন্তু চমৎকার সুদর্শন পুরুষ, আচ্ছা আমরা কি  এক সাথে কথা বলে  কিছুটা সময় কাটাতে পারি?
ওয়েস: কেন নয় নিশ্চয়ই, ভালোই হলো একজন সাথী পেলাম।
দুজনে একসাথে মুখোমুখি বসলাম।
ওয়েস: আপনি কি গান পারেন?
সেনু: না, তবে আমি কবিতা পাড়ি।
ওয়েস: তাহলে শুনান।
সেনু:- ওকে, এটা আমার স্বরচিত,

প্রথম দর্শনেই তোমার প্রেমে পড়ে গেলাম,

এই মন এই প্রেম আজ অজান্তে তোমাকে দিলাম।

            গ্রহণ করবে তুমি  আমায় শ্রদ্ধা ভরে,
হাত বাড়িয়ে দিবে হৃদয় উজার করে।
আজ এই মুহূর্তে ক্ষণিকের পরিচয়ে,
যদি বলি অনেকটাই ভালোবেসে ফেলেছি
নিবে কি বুকে টেনে নিঃসংকোচে নির্ভয়ে।
রাত ফুরোলে দিনের আলোয়
ভুলে  যাবে কি এই আমাকে?
ক্ষণিকের তরে এসে হৃদয় টা কেড়ে নিলে
হৃদয়ের দ্বার আজ উন্মুক্ত করে দিলাম
আমি ভালোবাসি,  ভালোবাসি তোমাকে।

থেমে গেলাম তৎখনাৎ আর কিছু আসছেনা মাথায়। বানিয়ে বানিয়ে কতটুকু বলা যায়।
ওয়েস: বাহ দারুণ তো, এতো সুন্দর কবিতা, নিজেই রচয়িতা নিজেই আবৃত্তি কার, অসাধারণ প্রতিভা আপনার। কত গুলি লিখেছেন?
সেনু: কি যে বলেন, এই লিখার জন্য কত বকা খেতে হয়, ভাই বলে ভন্ডামী, সাহেব বলে নাস্তিক,  ছেলে মেয়ে বলে বর্তমান সমাজে এগুলো অচল, আরো কত কি ছাই পাস লিখা বন্ধ করো, মন খারাপ হয় লিখা বন্ধ করে দেই,
আবার কখনও কখনও লিখি আবল তাবল। লিখেছি শতেক হবে।
ওয়েস: ওয়াও অসাধারণ,  না প্লিজ আপনি লিখা বন্ধ করবেন না, লিখে যান এক দিন দেখবেন অনেক গুণগ্রাহী হবে আপনার।
আপনার লিখা পড়ার অপেক্ষায় থাকবে অনেক, ওদেরকে ঠকাবেন না। আপনাকে একদিন মুল্যায়ন করবে এই সমাজ, তখন আমার কথা মিলিয়ে নিয়েন।
সেনু: কি যে বলেন, এমনও হয় নাকি কখনও? যদি কখনো এমন দিন আসে পৃথিবীতে সবচেয়ে সুখি মানুষ হবো আমি।
আচ্ছা বাদ দেন অনেক গুণগান হয়েছে আমার, এখন আপনার পালা।
ওয়েসঃ আমার তো আর আপনার মতো এতো প্রতিভা নেই, তবে টুকটাক গান করি,যাকে বলে বাতরুম সিঙ্গার।
তবে যদি এতো রাতে হেরে গলায় গান করি ভূত পেত্নীরা চলে আসে তাহলে সামলাতে পারবেন?
সেনু: হা হা হা আপনিতো ভারী মজার লোক, যার কথা বলার স্বর এতো সুন্দর, তার গানের কন্ঠ যে কত মধুর হবে যে বলতে হবেনা, শুরু করুন প্লিজ।

ওয়েস: ওকে আপনার সাথে কথায় পারা যাবেনা।
আমি বুঝতে পারছি, গান শুরু করি।
** এই রাত তোমার আমার শুধু দুজনার………………….।
গানের প্রতিটি লাইন, সুর হৃদয় ছুঁয়ে গেলো, এতো সুন্দর কন্ঠ  মনে মনে ভাবছে, তুমি আরে আগে কেন এলেনা? সংসার সীমার গন্ডীর বাহিরে এতো সুখ লুকিয়ে ছিলো, সেটা আজ এখানে না এলে বুঝতেই পারতাম না।
গান শেষ অপলক দৃষ্টিতে চেয়ে আছি, যেনো হারিয়ে গেছি অন্য জগতে, হাত হাত রেখে যেন অনন্তের পথে হাটছি, আজ রাত যেন শেষ না হয়।
হৃদয়ের দ্বার খুলে গেছে অজানা অচেনা এক যুবকের দর্শনে।
সেনু: এতো সুন্দর গান করেন আপনি, ভাষায় প্রকাশের উর্ধ্বে। আচ্ছা জানা হলোনাতো আপনি কি করেন,? কে কে আছে আপনার?
ওয়েস:আমি সিলেট চা বাগানের ম্যানেজার। মাজে মধ্যে গান করি দেশ বিদেশে। ছোট খাটো ব্যবসা ও আছে। বিয়ে করেছিলাম ভালো বেসে,মাকে দেখার কেউ ছিলোনা,
আমার স্ত্রী কে মায়ের কাছে থাকতে বলেছিলাম, সে পি, এস, ডি, করতে চলে যায় জার্মান, ওখানেই সেটেল হয়ে যায়, আমাকে নিতে চেয়েছে অনেকবার, কিন্তু মা কে ছেড়ে, যাওয়া হয়ে উঠেনি, এখন সে অন্য কারো সন্তানের মা, আমি রয়ে গেলাম সিলেটে, এখন মাকেও হারালাম,
দুই ভাই এক বোন।
বড় ভাই আমেরিকা  ভাবী বাচ্ছা সহ ওখানেই সেটেল।
বোন, লন্ডন সেটেল। মা নেই বাবা রিটায়ার্ড করেছেন পুলিশ কমিশনার ছিলেন,  বাবাকে দেখা শুনা করার জন্য পুনরায় বিয়ে করায় চাচারা    ২য় স্ত্রী নিয়ে সিলেটই থাকেন।
ভদ্র মহিলা ভালোই দেখাশুনা করেন বাবার,
আমাদের ও খু্জ খবর ভালোই রাখেন।
এবার আপনার কথা বলুন?
সেনু: এক ছেলে এক মেয়ে নিয়ে সুখি পরিবার। দুজনের মাঝে অনেক কথা হলো বিনিময়। ভিষণ ভালো কাটছে সময়।
ওয়েস: আমাদের পরিচয় হলো কথা বলতে বলতে একটা সম্পর্ক গড়ে ওঠেছে এতক্ষণে মনে হয় আমার।
আচ্ছা বলুনতো কি নাম দেওয়া যায় এই সম্পর্কের?
ক্ষণিকের পরিচয়ে দীর্ঘ দিনের বন্ধু হবো, কেমন হয় তাহলে?
সেনু : কেন নয়, এখন থেকে আমরা ভালো বন্ধু, আমাদের মাঝে কোন চাওয়া পাওয়া থাকবে না, লোভ লালসার স্বীকার হবোনা, একটা পবিত্র সম্পর্ক থাকবে আমাদের মাঝে।
আজকের পর কোন দিন দেখা হবে কিনা জানিনা, সম্পর্ক টিকে থাকবে শুধু বিশ্বাসে, তুমি  আবার বিয়ে করলে মেয়ে হলে আমার ছেলে বউ করে নিয়ে আসবো।
তখন আমাদের আরেকটা পরিচয় হবে বিয়াই, বিয়ান, হা হা কি মজা হবে তাইনা,?
ভীষন হাসলো আর বলল, যদি ২ টাই ছেলে হয় তখন?
তোমার আরেকটা মেয়ে হতে হবে আমার ছেলে হবার সংবাদ পেয়ে।
সেনু: কি যে বলো তখন তো আমি বুড়ি হয়ে যাবো, কখন যে কথায় কথায়, দুজন দুজনকে তুমি বলে ফেললাম বুঝতেই পারিনি। চলো একটা সেলফি হয়ে যাক আজ রাতের আঁধারে সাক্ষী হয়ে থাকবে।
সেলফি নেওয়া হলো, মোবাইল নাম্বার নেওয়া হলো , যেখানেই থাকি মোবাইলে কথা হবে।
জানিনা এই সমাজে একটা মহিলা ও একটা যুবকের সম্পর্ক কে পরক্রিয়া  নাম দেয় কিনা? লোকের কথায় কি আসে যায়?  আমরাতো কোন পাপ করছিনা, বন্ধুত্বের সম্পর্ক পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সম্পর্ক।
ওয়েস: আপনার ফেসবুক আইডি?
সেনু: ও হে এখনি রিকোয়েস্ট পাঠাচ্ছি।
ওয়েস: আচ্ছা মোবাইল টা দিন আমি এখনি দেখছি।
এতো কুয়াশা ছিলো রাস্তা নির্নয় করা কঠিন, মোবাইল টা হাতে নিতেই আরেকটা লঞ্চ এসে ধাক্কা খায় সাথে সাথে  কিনারায় বসে থাকা ওয়েস নামের মানুষ টা মোবাইল টা হাতেই ছিলো পানিতে পড়ে যায় ধপাস করে, আমি চীৎকার দিয়ে হাত বাড়ালাম কিন্তু ছুঁতে পাড়লাম না। আমি কাঁদতে থাকি, আর লোক ডাকতে থাকি, ইন্জিনের শব্দে আমার ডাক কেউ শুনেনি, অনেক দুর চলে গেলো।

অন্য কারো কোন ক্ষতি হয়নি। আমি আর   ওয়াসের কোন খুঁজ  পাইনি।
এদিকে ভোর হয়ে এলো আমি বসে বসে কাঁদছি,
এমন একজন বন্ধু হয়ে জীবনে এসেছিলো, তাকে ক্ষণিকের জন্য পেয়ে হারিয়ে ফেললাম।
সবাই উঠে গেছে বরিশাল ঘাটে পৌঁছে গেছি, ডাকছে নামতে হবে রুমে এলাম, কিছুই ভালো লাগছেনা, ভ্রমণের আনন্দটাই যেন মাটি হয়ে গেলো।
লঞ্চ থেকে নেমে আবার গাড়িতে এতো সুন্দর চারপাশটা ধান খ্যাত , ছোট, বড় নদী,   কোথাও  যেন শুনেছিলাম,
** ধান, নদী, খাল
তিনে মিলে বরিশাল ★
সত্যি অসাধারন, রাস্তা ঘাট পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন, চার পাশের পকৃতি এতো সুন্দর  মনটা ভালো নেই তাই উপলব্ধি করতে পারছিনা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য কে।
ভাবীদের বাসায় এলাম * বনলতা * নাম ওদের বাড়ীর। ২ তলায় উঠলাম বেশ পরিপাটি, অনেক প্রকার খাবার ডাইনিংয়ে, চেঞ্জ করে হাত পা ধৌত করে খেতে বসলাম।
প্রতিটা রান্নাই অসাধারণ,পায়েস টা এতো টেস্ট কি বলবো মুখে লেগেই থাকে।

আর বড় বড় পাতলা সিরায় পন্জের মতো মিস্টি গুলোই সেই রকম। তার পর রেস্ট নিলাম, ভাবনায় শুধু ওয়েস একমিনিটের জন্য ও ভুলতে পারছিনা।
দুপুরে আবার অনেক প্রকার খাবার, ভাবীর মা এতো কর্মট সারাক্ষণ কাজ করেই যাচ্ছে, ভাবীও বেশ কর্মট,ওখান কার সবাইকে দেখছি বেশ কর্মট, মানুষ ও ভালো, কেন যে মানুষ বরিশাইল্লা খেতার গাট্টি বলে,
সেটাই বুঝিনা।
অনেক জায়গায় ঘুরাঘুরি  করলাম,  দূর্গা সাগর দেখতে  গেলাম,  দেখলাম
দুর্গা সাগরের একটা কাহিনী শুনলাম,
সত্য মিথ্যা জানিনা, ওখানে খনন করার পর পানি উঠেনা
দূর্গা রানী যখন মাঝখানে গেলো তখন পানি উঠে তলিয়ে যায় রানী মারা যায়, সেই থেকে এর নাম দুর্গা সাগর।
সবচেয়ে বড় মসজিদ বাগে জামে আমান, নাকি জামে আমান মসজিদ।  এতোটা মনে নেই, তবে দারুণ  সুন্দর, আরো অনেক গুলো দর্শনীয় জায়গা দেখলাম ঘুড়ে।
ভালোই লাগছে তার পরেও মনটা পড়ে আছে, লঞ্চের সেই করুন মুহূর্ত টার দিকে।
৩ দিন থেকে চলে এলাম, লঞ্চে  উঠলাম অনেক খুঁজি ওয়েস কে  পাইনি,  সময়টা যেন ফুরাচ্ছে না, সবাই লুডু খেলছে, আমার প্রিয় খেলা লুডু মন বসছে না, তাও বসলাম লুডু আমার মারাত্মক নেশা না করতে পারিনা।
আমি আর ছোট ভাইটা এক পক্ষ ভাবী আর ভাগ্নীটা আরেক পক্ষ। ওরা বার বার হেরে যায় পরে রাগে ভাবী লুডু ছিড়ে ফেলে খেলা শেষ , পৌঁছে গেলাম ঢাকায়।
কয়েক দিন থেকে চলে আসি কিশোরগঞ্জ, কাউকে কিছু বলতে পারিনি, মনে মনে কষ্ট পেতাম। এইভাবে কেটে গেলো দশ বছর।

হঠাৎ দশ বছর পর ,
বড় আপার দেবর মারা যায়, আপা বলছে চল অষ্টগ্রাম যাই, আপার দেবর আমাকে খুব আদর করতো।
সাহেবকে বললাম চলো যাই, ওনি যাবেনা আমাকেও যেতে দিবেনা, অনেক রিকোয়েস্ট করে রাজি করালাম। ওনি যায়নি আমি আর আপা যাবো।
বাস দিয়ে কুলিয়ার চর গেলাম ওখান থেকে লঞ্চে উঠলাম, বাহাদুরপুর একটা ঘাটে যখন লঞ্চ থামালো, তখন একটা বৃদ্ধ লোক মুখ ভর্তি দাড়ি গোঁফ, শুধু দূটো গানের লাইন গেয়ে যাচ্ছে বার বার, সেই গান সেই সুর তুমি আজ কত দূরে…….. , দৌড়ে গেলাম চেহারাটা চিনতে পারছিনা, কিন্তু সুরটা বলে দিচ্ছে, সে ওয়েস।
আশে পাশের লোকদের জিগ্যেস করি ওনার কথা ওরা বলে, এখান এক দরিদ্র লোক ওনাকে নদীর কিনারায় ক্ষত বিক্ষত অবস্থায় কুড়িয়ে পেয়েছ, নিয়ে  এসে কবিরাজি চিকিৎসা করে সুস্থ করেন, কিন্তু ওনি এই দুই লাইন গান ছাড়া কিছুই বলতে পারেনা। প্রতি দিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত এখানে বসে থাকে আর দুই লাইন গান করে, মানুষ টাকা পয়সা দেয়, তা দিয়ে পেট চলে।
আমার হঠাৎ মনে পড়লো বরিশাল যাওয়ার সময়, আমি লঞ্চে যখন পায়ে ব্যথা পেয়েছিলাম, ওনি আমার পায়ে হাত দিয়েছিলো তখন ওনার বাম হাতে ২ টা আঙুল বেশী ছিলো, চেয়ে দেখি ওনার ও দুইটা আঙুল বেশী, বুঝতে পারলাম ওনি সেই ওয়েছ।
ওনার পিক তুলি,হর্ন দিচ্ছে লঞ্চ ছেড়ে দিবে, ওঠে এলাম, কি করবো নিরুপায় চলে আসতেই হবে,  আর এই জায়গার ঠিকানা লিখে ওনার নাম, আর বাবার বড় ভাই, বোন, ডিটেইলস লিখে ওনার বাড়ী সিলেট, যত টুকু শুনেছিলাম তা দিয়ে  ফেইসবুকে
সব ফ্রেন্ডদের ম্যানসন করে  একটা পোস্ট দিলাম লঞ্চে বসে।
তিন দিন থাকার পর চলে আসি, আসার সময় ঐখানে যাই, তখন, লোকটা বলে আপা ওনাকে এসে নিয়ে গেছে, বড় গাড়ি দিয়ে ওনার আত্মীয় স্বজন রা, আর এই নাম্বারটা দিয়ে গেছে, আর আমাকে অনেক টাকা দিয়েছে আর বলছে যখন যা লাগে আমি যেন এই নাম্বারে কল দিয়ে বলি, আমাকে নিয়ে যেতে চেয়েছিলো আমি যাইনি।
আপনার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করছে পাইনি।
সেনু: ওহ ওখানে নেট ছিলোনা তাই তিন দিন ফেইসবুকে ওপেন করা  হয়নি কারেন্ট  ছিলোনা, মোবাইলে চার্জ ও ছিলোনা, নাম্বার টা লিখে নেই।

বাসায় এসেই ফেইসবুকে ওপেন করি, দেখি কমেন্ট বক্সে অনেক অনেক ধন্যবাদ, ও মেসেঞ্জারে মেসেস রিকোয়েস্ট, একসেপ্ট করি। মোবাইল নাম্বার দেওয়া, কল দিলাম।
বড় ভাই রিসিভ করলো। বলল আপনাকে কি বলে ধন্যবাদ দিবো বুঝতে পারছিনা, আমি দেশে এসে অনেক খুঁজি , পেপারে দেই কোন খোঁজ পাইনি, বাবা ওর শুকে মারা যায়। আপনার পোস্ট পেয়ে এসে নিয়ে যাই,
এখন ওকে বিদেশে চিকিৎসার জন্য  নিয়ে যাবো।
মাঝে মাঝে খু্ঁজ নেই, এখন বিদেশেই আছে আগের মতোই এখনও সেরে উঠেনি, ডাক্তার বলেছে সময় লাগবে সেড়ে উঠতে।
জানিনা সেড়ে ওঠে আমাকে খুঁজবে কিনা, যখন সেড়ে উঠবে হয়তো আমি থাকবো না। ভালো যেন থাকে এই কামনা আমার।
জীবনের এই ভ্রমন আজও হৃদয়ে গাথা আছে এটা ছিলো আমার জীবনের মর্মান্তিক হৃদয় ছোঁয়া  ঐতিহাসিক ভ্রমণ।

নাহার সুলতানা ময়না

নগুয়া প্রথম মোড়

কিশোরগঞ্জ ২৩০০

০১৭১২৩০৪৬৫৯

Related Posts

30 Comments

মন্তব্য করুন