এমন কিছু তথ্য, যা জানার পর বিস্ময়ে আপনার মাথা ঘুরে যেতে পারে।

এখন আপনি গ্রাথোরে যে লেখা পড়ছেন তা কি আপনি আসলেই পড়ছেন? নাকি আপনার মস্তিষ্ক একটা অবাস্তব সিমুলেশন তৈরি করে আপনাকে অনুভব করাচ্ছে যে, আপনি এখন এই লেখা পড়ছেন?

আমরা আসলে কি দেখি? প্রকৃত বাস্তবতা ( real reality) না মস্তিষ্কের উপস্থাপিত বাস্তবতা (represented reality), কোনটা?

কি বন্ধু? মাথা কি ঘুরতে শুরু করেছে? আরে থামেন, এখনই ঘুরতে শুরু করলে বাকি লিখাটা পড়বেন কখন? আগে তো পুরোটা পড়ুন!

  • ১৯৮১ সালে, এমানুয়েল ক্যান্ট একটা ধারণা দিয়েছিলেন যে, দুই ধরনের বাস্তবতা (reality) রয়েছে। একটি অদৃশ্য বাস্তবতা (আমরা যা উপলব্ধি করতে পারি না) এবং দ্বিতীয়টি পর্যবেক্ষণযোগ্য বাস্তবতা (আমাদের উপলব্ধির উপর নির্ভরশীল)। সেই থেকে “পরোক্ষ বাস্তবতা” ফিলোসোফির শুরু। পরোক্ষ / অদৃশ্য বাস্তবতা বোঝায় যে আমরা প্রকৃত বাস্তবতা দেখতে পাই না, তবে আমাদের মস্তিষ্ক অপ্রকৃত বাস্তবতার প্রতিনিধিত্বে একটা পরিবেশ সৃষ্টি করে যাকে আমরা বাস্তব বাস্তবতা বলে উপলব্ধি করি।
  • আবার, আপনি যে আকাশটি দেখছেন সেটা কি আপনার মস্তিষ্কের দ্বারা তৈরি একটি সিমুলেশন নাকি বাস্তব?
  • আপনি আপনার মাথার বাইরে বাস্তবতা দেখতে পাচ্ছেন না। আপনি একটি সিমুলেশন দেখেন এবং এখানে আপনার মস্তিষ্কটি একটি সিমুলেটর। এটি এখন আর দর্শন নয়। এটা এখন সত্য। স্নায়ুবিজ্ঞান দ্বারা নিশ্চিত করেছে যে চোখ থেকে প্রাপ্ত তথ্য সম্পূর্ণ চিত্র হিসাবে নয়, ডিজিটাল (টুকরো টুকরো) সিগনাল বিন্যাসে মস্তিষ্কের ভিজ্যুয়াল কর্টেক্সে (Cortex) প্রেরণ করা হয়। আপনারা কেউ কেউ জানেন যে, আলো চোখে প্রবেশ করে, রেটিনার বিপরীত দিকে cone এ আঘাত করে, যা থেকে সিগনাল উত্পন্ন হয়। আমাদের বাম দিকের আলো , রেটিনার ডানদিকের একটি cone এ আঘাত করে। উপরের আলো, আমাদের রেটিনার নীচের cone আঘাত করে। এটি আমাদের রেটিনার উপরের ,র্ধ্বমুখী, বাম থেকে ডান উল্টানো চিত্রের ফলাফল। বহু বছর ধরে, লোকেরা বিশ্বাস করেছিল যে এই চিত্রটি আমরা যা অনুধাবন করেছি তা মস্তিষ্ক কোথাও অজানাভাবে চিত্রটি উল্টে দেযইয়। তাই আমরা বস্তুকে সোজা দেখি। তারপরে নিউরোলজিস্টরা একটি আকর্ষণীয় বিষয় আবিষ্কার করেছিলেন। প্রতিটি cone নিজস্ব স্নায়ু ভিজ্যুয়াল কর্টেক্সের দিকে স্বতন্ত্রভবে পরিচালন করে। শুধু তা-ই নয়, রেটিনার নীচের cone আমাদের ভিজ্যুয়াল কর্টেক্সের শীর্ষের সাথে যুক্ত। রেটিনার ডানদিকে একটি cone ভিজ্যুয়াল কর্টেক্সের বাম দিকের সাথে যুক্ত। চিত্র মস্তিষ্ক দ্বারা উল্টানো হয় না। চোখে কোন চিত্র ও গঠিত হয় না। চিত্রটি বাস্তবে একটি যান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ভিজ্যুয়াল কর্টেক্সে তৈরি হয়। আমরা যে বাস্তবতা দেখি তা আমাদের মাথার বাইরে নয়, চোখের রেটিনায় পরা আলোর ফলে উৎপন্ন সিগনালের দ্বারা মস্তিষ্কের তৈরি একটা সিমুলেশন। এটি আমাদের অবচেতন একটি সৃষ্টি যা আমাদের সচেতন মন উপলব্ধি করে।
    যেমনঘুমের মধ্যে স্বপ্নের সময় আমাদের মস্তিষ্ক স্বয়ংক্রিয় ভাবে অবাস্তব এক পরিবেশের সিমুলেশন তৈরি করে যার কোনো বাস্তবতা নেই (তখন সে ঘুমে)। যাকে ঘুম থেকে ওঠার আগ পর্যন্ত বাস্তব ই মনে হয়।
  • আবারহ্যালুসিনেশান এর সময় কোন ব্যক্তি বাস্তবে যা নেই তা দেখতে/ শুনতে পায় কারন তখন বাহিরের কোন সিমুলেটরের প্রভাব ছাড়াই তার মস্তিষ্ক নিজে নিজে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সিমুলেটেড হয়ে অবাস্তব বস্তুর সিমুলেশন তৈরি করে থাকে। যাকে সে বাস্তব বলেই মেনে নেয়। ফলে ব্যাক্তি বাস্তব (তার কাছে) এবং অবাস্তব (আমাদের কাছে) বস্তুর পার্থক্য করতে পারে না। তাই সে অবাস্তবকেই বাস্তব বলে অনুভব করতে থাকে। আশা করি মাথা ঠিক রেখেই বুঝাতে পেড়েছি!

আজ আর কথা বাড়াবো না। সবাই ভাল থাকুন, সুস্থ থাকুন। আল্লাহ্‌ হাফিজ।

Related Posts

9 Comments

মন্তব্য করুন