এ্যাসাইনমেন্টে এ কেমন সর্বনাশ!

বলা হয়ে থাকে যে, ‘শিক্ষাই জাতির মেরুদন্ড’ কিন্তু এই মহামূল্যবান বাক্যটি আজ কেমন জানি তার সেই পুরাতন রূপ বদলে ফেলেছে। কি বুঝতে সমস্যা হচ্ছে? বুঝিয়ে বলছি। এই মূল্যবান কথাটি পৃথিবীর সকল দেশের সকল বর্ণের এবং সকল ধর্মের লোক জানে। কিন্তু এখন জানি কেমন সব হয়ে গেছে। আমি সাম্প্রতিক কালের কোভিড-১৯ পরিস্থিতি বিবেচনায় কথাগুলো লিখছি।

সাথে সাথে আমি আমার সকল পাঠকের কাছে প্রশ্ন রেখে যাচ্ছি। আমাদের দেশে প্রথম করোনা ভাইরাস শনাক্ত করা হয় ০৮-০৩-২০২০ সালে। প্রথম শনাক্ত হওয়ার পর আট দিনের মাথায় বাংলাদেশ সরকার দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করে এবং অদ্যাবধি বন্ধ আছে। পরবর্তীতে সকল শিক্ষককে অনলাইনে ক্লাস নেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে এরকম একটি পরিপত্র জারি করা হয়। তারপর শিক্ষকরা সেই আদেশ যথাযথভাবে পালন করতে থাকেন।

অবশেষে আরও একটি ঘোষণা আসে বিশেষকরে মাধ্যমিক শিক্ষকদের জন্য। সেটি হলো শিক্ষার্থীদের এ্যাসাইনমেন্ট প্রদান নিশ্চিত করতে হবে এবং তার সঠিক মূল্যায়নও করতে হবে। তবে মূল্যায়ন হবে কোন নম্বরের ভিত্তিতে নয়। তাহলে কিসের ভিত্তিতে? শাব্দিক মূল্যায়ন (অতি উত্তম, উত্তম, ভাল, অগ্রগতি প্রয়োজন)।

তো প্রথম যখন এ্যাসাইনমেন্ট প্রদান করা হলো তখন কিছু শিক্ষার্থী এবং তাদের অভিভাবকরা অত্যন্ত আগ্রহ এবং গুরুত্বের সাথে সেগুলো কমপ্লিট করে নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানে সম্পূর্ণ স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে জমা দিয়েছিলেন। ওখানে স্পষ্ট করে উল্লেখ করা ছিল যে, কোন ভাবেই শিক্ষার্থীদের চাপে রাখা যাবে না। অর্থাৎ তারা অত্যন্ত আনন্দঘনচিত্তে সেগুলো করবে। শিক্ষা পরিবারের অভিভাবকদের ধন্যবাদ জানাচ্ছি শিক্ষার্থীদের মনোজগতের দিকে দৃষ্টিপাত নিক্ষেপ করার জন্য বিশেষ করে এই কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে।

কিন্তু এখানেই শেষ নয়! কিছুদিন পরে আমি জানতে পারলাম যে অধিকাংশ শিক্ষার্থীরা তাদের এ্যাসাইনমেন্টের উত্তর ইউটিউব অথবা অন্য কোন সোস্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে কপি করে জমা দিচ্ছে। কি সর্বনাশ! উত্তর কিভাবে ইউটিউবে মিলছে? কে বা কারা এই উত্তর তৈরী করে ছেড়ে দিচ্ছে? এই প্রশ্নের উত্তর আজও আমার জানা নাই। জানা নাই বলতে কেন দিচ্ছে আর দিয়েও লাভ কি? লাভ আছে। কি সেটা? ইউটিউবের ভিউ বাড়ানো। অর্থাৎ ইনকাম। যেখানে এত সস্তায় এত সুন্দর উত্তর পাওয়া যায় সেখানে শিক্ষার্থীরা কেনই বা তাদের মগজ এর শক্তি ব্যয় করবে তা আমার বোধগম্য নয়।

বর্তমানে অর্থাৎ ২০২১ সালে আবারও এ্যাসাইনমেন্ট প্রদান করা হয়েছে এবং সেই একই কাজ চলছে। অর্থাৎ কাট, কপি আর পেস্ট। তবে বর্তমান এ্যাসাইনমেন্ট এর নির্দেশনাতে বলা আছে যে, ইউটিউব থেকে দেখে দেখে লেখা উত্তর গ্রহনযোগ্য নয়। কিন্তু আমাদের সেই উদারপন্থী এবং শিক্ষার্থী-বন্ধুবৎসল ইউটিউবাররা এতটাই অগ্রগামী যে, এ্যাসাইনমেন্ট দিতে দেরি তো উত্তর দিতে কোনো দেরি নাই।

তাহলে আমাদের বর্তমান শিক্ষার্থীদের সৃজনশীলতা কোথায় যাচ্ছে? এর জন্য কে/কারা দায়ী? শিক্ষার্থীরা নাকি সেই সকল শিক্ষার্থীদরদী ইউটিউবাররা? প্রশ্ন থেকে যায়। জানিনা এর উত্তর কোথায়। সৃষ্টিকর্তা সকলকে সুবুদ্ধি দান করুন। ই্উটিউবে আমিও দেখলাম, যে যেমন পারছে সে তেমন করে তার পান্ডিত্য ফলানোর চেষ্টা করছে।

আমি বলি কি, এসব বন্ধ করে অর্থাৎ উত্তর না দিয়ে শুধুমাত্র লেখার বা উপস্থাপনের কৌশল বলেন তাহলে শিক্ষার্থীরা তাদের সৃজনশীলতাকে আরও বেশি করে কাজে লাগাতে পারবে বলে আমার বিশ্বাস এবং আগামীর একজন সৃযোগ্য বিশ্বনাগরিক হতে পারবে এই প্রত্যাশায় আমি আমার লেখা এখানেই শেষ করলাম। ভুল-ত্রুটি মার্জনীয়।

সকলকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।

grathor.com হোক আপনার বিশ্বস্ত অনলাইন আস্তানা।

Related Posts