ওয়াইফাই এর চেয়েও ১০০ গুন বেশি শক্তিশালী লাইফাই। বিজ্ঞানীদের নতুন আবিষ্কার।

বিজ্ঞানীদের নতুন নতুন আবিষ্কার আমাদের দৈনিক জনজীবনকে পূর্বের তুলনায় প্রতিনিয়ত আরো ত্বরান্বিত করছে। বিজ্ঞানের এক মহা সাফল্য ইন্টারনেট, যা যোগাযোগ ব্যবস্থাকে নতুন মাত্রায় উন্নিত করেছে। ইন্টারনেট এর জন্য সেলুলার নেটোয়ার্ক এর চেয়ে ব্রডব্যান্ড নেটওয়ার্ক এর জনপ্রিয়তা বেশি। তাই ওয়াই ফাই ব্যাবহারকারীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। ব্যাবহারকারীর সংখ্যা বাড়ার সাথে সাথে বাড়ছে সমস্যার সংখ্যাও। ওয়াই ফাই ব্যবহার করতে গিয়ে ডাটা স্পিড কম, রেঞ্জ এর স্বল্পতা সহ বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিচ্ছে ব্যাবহারকারীদের। তাই বিজ্ঞানীদের নতুন আবিষ্কার “লাই ফাই”।

কথায় আছে প্রয়োজন এর জন্যই মানুষ আবিষ্কার করে। ইন্টারনেট এর চাহিদা অনুযায়ী সংযোগ আর ওয়াইফাই ব্যাবহারকারীদের প্রয়োজন মেটাতেই বিজ্ঞানীদের প্রচেষ্টার এই নতুন ফলাফল লাই ফাই।

লাইফাই সম্পর্কে :

লাইফাই হলো সম্পূর্ণরূপে আলো ব্যাবহার করে ডেটা ট্রান্সমিট ব্যবস্থা। এটি একেবারে ওয়াইফাই এর মতোই কিন্তু এটি ওয়াইফাই এর তুলনায় বেশি নিরাপদ, সাশ্রয়ী ও সহজলভ্য। লাইফাই (Li Fi) এর পূর্ণরূপ হলো লাইট ফাইডেলিটি (Light Fidelity)। লাইফাই হলো একধরনের রে বা সিগনাল। ওয়াইফাই কাজ করে রেডিও ফ্রিকুয়েন্সির মাধ্যমে, কিন্তু লাইফাই কাজ করে আলোক তরঙ্গের উপর ভিত্তি করে।

লাইফাই ওয়াইফাই এর তুলনায় ১০০ গুন বেশি শক্তিসম্পন্ন হবে বলে বিজ্ঞানীরা মনে করেন। লাইফাই কাজ করবে এলইডি বাল্ব এর সাহায্যে। আপনার বাড়িতে যে এলইডি বাল্ব লাগানো আছে সেটিও হাইস্পিড ডেটা ট্রান্সমিট করতে পারবে। আর সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো যে এর জন্য কোন ব্রডব্যান্ড নেটওয়ার্ক বা ওয়াইফাই এর প্রয়োজন হবেনা।

লাইফাই এর সূচনা :

২০১১ সাল থেকে লাইফাই নিয়ে গবেষণা চলছে। এরিজোনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হেরাল্ড হ্যাস সর্বপ্রথম লাইফাই এর ধারণা আমাদের সামনে আনেন। পরবর্তিতে অধ্যাপক হেরাল্ড হ্যাস এবং ড. মোস্তফা আফগান মিলে “পিউর লাইফাই” নামে লাইফাই এর জন্য প্রথম প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। এই প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্য ছিল লাইফাই এর জন্য যন্ত্রপাতি গড়ে তোলা।

একটি বিশেষ ধরনের বাল্ব যা আলোর সাথে সাথে হাইস্পিড ইন্টারনেট কানেকশন প্রদান করতে সক্ষম। ইতিমধ্যে দুইটি প্রতিষ্ঠান বাণিজ্যিকভাবে লাইফাই এর ব্যাবহার করে যাচ্ছে। এই দুইটি প্রতিষ্ঠান হলো এস্তনিয়ার একটি প্রতিষ্ঠান এবং অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এক দল গবেষক। সম্প্রতি তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় লাইফাই কে পাইলট প্রযুক্তি হিসেবে টেস্ট করেছে।

লাইফাই এর কার্যপদ্ধতি :

এলইডি বাল্বগুলি অর্ধপরিবাহী দ্বারা তৈরি হয়, যার কারণে এর মাধ্যমে আলোর উজ্জ্বলতা অতি উচ্চ গতিতে পরিবর্তন করা সম্ভব হয়। একটি এলইডি বাল্ব এ যখন বিদ্যুৎ প্রবাহ প্রয়োগ করা হয় তখন এই এলইডি বাল্ব থেকে আলোর ফোটন বা স্রোত নির্গত হয়। অর্থাৎ বিভিন্ন হারে এই আলোর স্রোতের হার কমিয়ে অথবা বাড়িয়ে একটি সংকেত প্রদান করা যেতে পারে এবং একটি ডিরেক্টর এর মাধ্যমে এই সংকেত গ্রহন করা যেতে পারে,

যে ডিরেক্টর আলোর স্রোতের হার কমা অথবা বেশি হওয়াকে উপাত্ত হিসেবে গ্রহণ করে তা ব্যাখ্যা করতে পারে। যখন এলইডি বাল্বটি বন্ধ থাকে তখন ডিজিটাল ০ এবং যখন এটি চালু থাকে তখন ডিজিটাল ১ প্রেরণ করা হয়। এই তীব্রতা মডুলেশন টি অদৃশ্য এবং রেডিও সিস্টেম এর মতো বিরামহীন। এইভাবে এলইডি বাল্ব এর সাহাজ্যে অতি দ্রুত তথ্য পাঠানো ও গ্রহণ করা সম্ভব হয়।

লাইফাই ব্যাবহার এর সুবিধাসমূহ:

  • ওয়াইফাই রেডিও ফ্রিকুয়েন্সির সাহাজ্যে কাজ করে তাই কিছু সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়। কিন্তু লাইফাই এ তা হয়না।
  • ওয়াইফাই এর রেঞ্জ সাধারণত এক ঘর থেকে আরেক ঘর এতটুকুই। কিন্তু লাইফাই এর রেঞ্জ ১ কিলোমিটার পর্যন্ত।
  • ওয়াইফাই হ্যাক করা সম্ভব হয়, কিন্তু লাইফাই আলোর উপর ভিত্তি করে কাজ করে বলে এটি হ্যাক করা যায় না।
  • লাইফাই ওয়াইফাই থেকে অধিক শক্তিশালী ও নিরাপদ। সুতরাং লাইফাই আমাদের ইন্টারনেট ব্যাবহারে অনেক পরিবর্তন আনতে পারে।

Related Posts

16 Comments

মন্তব্য করুন