কিভাবে একদল ডাকাত আল্লাহর কামেল বান্দা হন।

একদা এক ডাকাত দল ডাকাতি করার উদ্দেশ্যে কোনো এক শহরে গিয়ে উপস্থিত হলো।শহরের লোকজন যাতে তাদের পরিচয় জানতে না পারে এবং কোনো প্রকার ধরা না পরে সে ব্যাপারে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করলেন।কিভাবে বাচা যায়,তারা সেই পরামর্শ করলো।

পরামর্শ অনুযায়ী সিদ্ধান্ত হলো যে,সকলের সতর্কতার সাথে চলবে।তাহলে কি হবে সতর্ক হয়ে চলবে।তাদের আসল পরিচয় গোপন রাখবে।

এবার ডাকাত দলের সর্দার বলল,শুনো তোমরা সকলে দরবেশ সাজিয়া চল।

সঙ্গীরা বলল,ওস্তাদ ! দরবেশ সাজবো আবার কিভাবে? ওস্তাদ বলল,সবাই লম্বা পাঞ্জাবী  পড়ে নাও এবং হাতে এক ছড়া তসবিহ নিয়ে সারাক্ষণ সুবাহানাল্লাহ,সুবাহানাল্লাহ পড়তে থাকো। যেখানে যাইবে সেখানেই সুবহানাল্লাহ পড়বে অর্থাৎ সুবাহানাল্লাহ ছাড়া অন্য কোন বাক্য ভুলেও উচ্চারণ করবে না।

পরামর্শ অনুযায়ী সবাই দরবেশের বেশ ধরল।এরপর শহরের কোন এক স্থানে কি আস্তানা বসলো।এবার দলের সর্দার কে মধ্যখানে বসিয়ে তার  চারপাশে দলের অন্যরা ঘিরে বসল।সরদার নিজের হাতে লম্বা এক তসবিহ নিয়ে বেষ্টনীর মধ্যখানে বসে পড়লেন।আর সুবানাল্লাহ,সুবানাল্লাহ পড়তে আরম্ভ করল। এবার সুবহানাল্লাহ জিকির ছাড়া কারো মুখে অন্য কোন বাক্য নেই।

ঘটনাক্রমে অল্প সময়ের মধ্যেই সমস্ত শহরে এদের সংবাদ ছড়িয়ে পড়ল।আর শহরের লোকেরা বলাবলি করতে লাগল যে,শহরের অমুক জায়গায় এক দরবেশের আগমন ঘটছে।যার মুখে আল্লাহর যিকির ব্যতীত অন্য কোন কথাই উচ্চারণ হয় না।

এদের নাম ছড়িয়ে পড়ার পর শহরের লোকেরা দূর-দূরান্ত হতে এসে  দরবেশের সাথে  মুসাফাহা করে। আপন মাসুদ পূর্ণ হওয়ার জন্য দরবেশের নিকট দোয়ার আবেদন জানাতে লাগলো।এমনিভাবে শহরের সর্বত্র দরবেশের খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ল।

একবার সেই শহরের বাদশাহ নিজেই লোকলস্কর নিয়ে দরবেশের আস্তানায় গিয়ে উপস্থিত হলেন।এরপর অত্যন্ত বিনয়ের সাথে দরবেশের নিকট বললেন হুজুর ! আপনি এই শহরে আগমন করাই আমরা খুবই আনন্দিত এবংনিজেদেরকে  ধন্য মনে করছি।

হুজুর ! আপনার সোহবত নেওয়ার জন্যেই আমি আপনার দরবারে এসেছি।হুজুর ! আপনি আপনার সঙ্গী সাথীদের নিয়ে আমার বাড়িতে আজকে দাওয়াত কবুল করুন।

দস্যু দরবেশ,বাদশাহর দাওয়াত কবুল করলেন এবং যথাসময়ে তার সাঙ্গপাঙ্গদের নিয়ে বাদশার বাড়িতে গিয়ে উপস্থিত হলেন।বাদশাহ দরবেশের উপস্থিতিতে আনন্দিত হলো।

এই দিকে বাদশাহর   একটি ছেলে । ছেলেটির কঠিন রোগে দীর্ঘদিন যাবৎ ভুগতে  ছিল।বাদশা সাধ্যানুযায়ী ছেলেটির চিকিৎসা । কিন্তু কোন কাজ হয়নি।বাদশা ভাবতেছেন কোন চিকিৎসা যখন ছেলেটি ভালো হয়নি,তবে এবার দরবেশকে মহান আল্লাহ পাকের দরবারে আমার ছেলেটির জন্য দোয়া করতে বলব।আর এই দুয়ার উসিলায় হয়তোবা আল্লাহপাক আমার ছেলেকে রোগ হতে মুক্তি দিতে পারেন।

অন্যদিকে দরবেশ এর জন্যে খাওয়া-দাওয়ার  আয়োজন করা হলো।রাজা খুব জাঁকজমকভাবে খাওয়া পরিবেশন করলেন।দরবেশ এবং সাঙ্গ-পাঙ্গদের খাওয়া-দাওয়া শেষ হওয়ার পর বাদশা দরবেশের নিকট আবেদন করলেন।আর বললেন,হুজুর ! আপনিতো আল্লাহপাকের মাহবুব বান্দা।।আপনার মহান আল্লাহ পাকের দরবারে কবুল হবে।

হুজুর ! আমার এই রোগে আক্রান্ত ছেলেটির জন্য  দোয়া করুন।যাতে করে আল্লাহ তাআলা তাকে রোগ হতে মুক্তি দান করেন। আরআমার ওই ছেলেটি ছাড়া অন্য কোন সন্তান-সন্ততি নাই।যাকে দেখে আমি নিজের মনকে সান্তনা দিব।

বাদসাহর এমন  ফরিয়াদ শুনে দরবেশের অন্তর করলে গেল ।এবার দরবেশ তার সঙ্গী সাথীদের নিয়ে আল্লাহ পাকের দরবারে হাত উঠানো।

অত্যন্ত কাকুতি মিনতি সাথে ফরিয়াদ করল,হে আল্লাহ।হে পরওয়ারদেগারব যদিও আমরা সবাই গুনাহগার।কিন্তু তোমার একটু সৃষ্ট বান্দা।আর মানুষেরা ভক্তি করে  আমাদের নিকট দোয়া চাই।তাই আমরা কয়েকজন গুনাহগার বান্দা তোমার নিকট হাত উঠিয়েছি।এই ফরিয়াদ করে তারা কান্না করতে লাগল।কান্না কাটি দেখে মহান আল্লাহ পাকের রহনতের দরজা খুলে দিলেন।দস্যু দলের দোয়া শেষ হতে না হতেই আল্লাহর অশেষ করুণায় বাদশাহর দীর্ঘদিনের অসুস্থ ছেলে সম্পূর্ণরূপে সুস্থ হয়ে গেল।

ডাকাত দল আল্লাহতালার  এমন রহমত দেখে আল্লাহর এবাদত বন্দেগী  করার জন্য মনোস্থির করলেন।এভাবে তারা আল্লাহ পাকের কামেল বান্দা হয়ে গেলেন।

Related Posts

8 Comments

মন্তব্য করুন