কিশোর অপরাধ একটি সামাজিক ব্যাধি

 

কিশোর অপরাধ একটি সামাজিক ব্যাধি

বর্তমান সময়ে আমাদের দেশে কিশোর অপরাধ একটি সামাজিক ব্যাধিতে পরিনত হয়েছে সমাজের সকল স্থরেই রয়েছে এর উপস্থিতি । তবে স্থান,কাল, প্রকৃতি ও মাত্রাগত দিক থেকে তা ভিন্ন ভিন্ন রুপ নেয় । কৈশোরকাল মানব জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। তাই আমাদের উচিত হবে এসময়টা আমাদের ছেলে,মেয়্‌দের পযাপ্ত সময় দিয়ে তাদের সাথে বন্ধু সুলভ আচরণের মাধ্যমে মিশে তাদের সাবিক বিষয়ের খোজ-খবর রাখা।

আমাদের দেশে কিশোর অপরাধ  বলতে কিশোর বয়সে অবাঞ্ছিত ও সমাজ বিরোধী আচরণ সম্পাদন করাকেই বলা হয় কিশোর অপরাধ। বা অপ্রাপ্ত বয়স্ক ছেলেমেয়ে কর্তৃক সংঘটিত দেশীয় আইন, সামাজিক রীতিনীতি ও মূল্যবোধের পরিপন্থী কর্মকা-কেই কিশোর অপরাধ বলে।
সুনির্দিষ্ট কিছু কারণ না থাকলেও কিশোরদের অপরাধ মুলক কর্মকান্ডে জড়িয়ে যাওয়ার পিছনে সঠিক ধর্মীও শিক্ষার অভাব, অর্থনৈতিক প্রভাব, জৈবিক প্রভাব, সামাজিক পরিবেশ, জন্মগতভাবে শারীরিক ও মানসিক ত্রুটি অন্যতম ভুমিকা রাখে ।

কিশোর অপরাধ দমনের ক্ষেত্রে সব সময় পরিবার ও সমাজ সর্বাধিক গুরুত্ব  পালন করে থাকে। পরিবার ও সমাজ থেকে উপযুক্ত শিক্ষা ও সঙ্গ পেলে কিশোর অপরাধ অনেকাংশে কমবে বলে ধারণা করা হয়। পারিবারিক ভাবে নৈতিক শিক্ষার অভাব ও  অসৎ সঙ্গ শিশু-কিশোরদের অপরাধপ্রবণ হতে বিশেষভাবে সাহায্য করে।
পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থা উল্লেখযোগ্যভাবে কিশোর অপরাধের মাত্রাকে প্রভাবিত করে। দরিদ্র ও সম্পদের প্রাচুর্য উভয়ই প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভবে কিশোর অপরাধ সংগঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। দরিদ্রতার কারণে মৌলিক চাহিদা পূরণে ব্যর্থ হয়ে কিশোররা বিভিন্ন প্রকারের অপরাধে লিপ্ত হয়ে থাকে।

সঙ্গদোষ কিশোর অপরাধের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কিশোর-কিশোরীরা এই বয়সে পরিবারের প্রভাবমুক্ত হয়ে স্বাধীনভাবে চলতে চায় এবং পাড়া-প্রতিবেশী, খেলার সাথী সমবয়সীদের সাথে মিলে মিশে একাকার হয়ে যায়। এ ধরনের সম্পর্কের মাধ্যমে শিশু-কিশোররা অত্যন্ত সহজে ও স্বতঃস্ফূর্তভাবে বিভিন্ন বিষয়ে শিক্ষা লাভ করতে পারে, যা পিতা-মাতা, আত্মীয়-স্বজন বা পরিবার-পরিজনের নিকট থেকে তা করতে পারে না।

সামাজিক পরিবেশ পরিবারের ভূমিকার পরই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রভাব শিশু-কিশোরদের জীবনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু বর্তমানে সকল প্রতিষ্ঠানে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষার অন্তর্নিহিত তাৎপর্য কার্যত অনুপস্থিত। এছাড়া শিক্ষার্থীদের জন্য গঠনমূলক চিত্তবিনোদন, খেলাধুলার সুযোগ-সুবিধা ও শিক্ষকদের নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গির অভাবও প্রকট।

                                                                                    
বর্তমান তথ্যপ্রযুক্তির যুগে রেডিও, টেলিভিশন, ইন্টারনেট, পত্রিকা, ম্যাগাজিন ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম যেমন মোবাইল, ফেসবুক, টুইটার, ব্লগ, ইউটিউবের ন্যায় গণমাধ্যমগুলো শিশু-কিশোরদের দারুণভাবে প্রভাবিত করে। তাই উক্ত গণমাধ্যমগুলো ব্যবহারের ক্ষেত্রে অভিভাবকরা যথেষ্ট সচেতন না হলে কোমলমতি শিশু-কিশোররা অপরাধে লিপ্ত হতে পারে। বিশেষ করে কুরুচিপূর্ণ যৌন আবেগে ভরপুর ম্যাগাজিন ও পত্রিকা কিশোর-কিশোরীদের মন-মানসিকতার ওপর বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে।
যেসব কারণে সমাজে এই কিশোর অপরাধের  সৃষ্টি হয় সেগুলো নিদিষ্ট করে , যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করলে সমাজ থেকে কিশোর অপরাধ প্রতিকার করা সম্ভব।

এক্ষেত্রে ইসলাম সর্বজন স্বীকৃত প্রতিরোধমূলক ও সংশোধনমূলক ব্যবস্থা প্রয়োগের মাধ্যমে তা প্রতিকার করেছে। প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থায় ইসলাম বিভিন্ন সামাজিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে শিক্ষা প্রশিক্ষণের উদ্যোগ নিয়েছে। আর সংশোধনমূলক ব্যবস্থায় নিয়েছে বাস্তবসম্মত নানা পদক্ষেপ।
জন্মের পর শিশু পারিবারিক পরিবেশ মাতা-পিতার সংস্পর্শে আসে। শিশুর সামাজিক জীবনের ভিত্তি পরিবারেই রচিত হয়। তাই তাদের আচরণ ও ব্যক্তিত্ব গঠনে পরিবার গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে। এ জন্যই ইসলাম শৈশবকাল থেকে ঈমানের শিক্ষা, ইবাদতের অনুশীলন, ইসলামের যথার্থ জ্ঞানার্জন ও নৈতিকতা উন্নয়নের দায়িত্ব ন্যস্ত করেছে পরিবারের উপরে। যাতে করে আগামীদিনের ভবিষ্যৎ শিশু-কিশোররা অপরাধমুক্ত থাকতে পারে। কিশোর-কিশোরীর আচরণ ও ব্যক্তিত্বের উন্নয়নে পরিবার সর্বাধিক অনুকূল পরিবেশ জোগায়। বিশেষ করে এক্ষেত্রে পিতা-মাতার ভূমিকা অপরিসীম।

পরিশেষে বলা যায়,সমাজ থেকে কিশোর অপরাধ প্রতিরোধ করতে হলে কেবলমাত্র শিশু সমাজকে উন্নত করলেই চলবে না, বরং সমগ্র সমাজের উন্নয়ন করতে হবে। সমাজের নৈতিক আদর্শ, পারস্পরিক আচরণ, কর্তব্যপরায়ণতা, সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। তাহলেই আমাদের দেশ থেকে কিশোর অপরাধ নামে ব্যাধিটাকে দূর করা সম্ভব ।

12.00

Normal
0

false
false
false

EN-US
X-NONE
AR-SA

MicrosoftInternetExplorer4

/* Style Definitions */
table.MsoNormalTable
{mso-style-name:”Table Normal”;
mso-tstyle-rowband-size:0;
mso-tstyle-colband-size:0;
mso-style-noshow:yes;
mso-style-priority:99;
mso-style-qformat:yes;
mso-style-parent:””;
mso-padding-alt:0in 5.4pt 0in 5.4pt;
mso-para-margin:0in;
mso-para-margin-bottom:.0001pt;
mso-pagination:widow-orphan;
font-size:11.0pt;
font-family:”Calibri”,”sans-serif”;
mso-ascii-font-family:Calibri;
mso-ascii-theme-font:minor-latin;
mso-fareast-font-family:”Times New Roman”;
mso-fareast-theme-font:minor-fareast;
mso-hansi-font-family:Calibri;
mso-hansi-theme-font:minor-latin;
mso-bidi-font-family:Arial;
mso-bidi-theme-font:minor-bidi;}

Related Posts

7 Comments

মন্তব্য করুন