কীভাবে নেবে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি প্রস্তুতি?

অনেক ছোটো ভাই ইনবক্সে ভার্সিটি এডমিশনের ব্যাপারে দিকনির্দেশনা চেয়েছে। আসলে আমার ভার্সিটিতে চান্স পাওয়াতে নিজের পড়াশোনার অবদান খুব বেশি বলে মনে হচ্ছে না। আল্লাহর অনুগ্রহ না থাকলে আমি ভার্সিটিতে চান্স পেতাম না। যাইহোক, ভার্সিটি এডমিশনের ব্যাপারে তবুও তোমাদের অনুরোধে আমি নিজের কর্ম ও চিন্তার সমন্বয়ে কিছু পরামর্শ দিচ্ছি। ওয়ামা তাওফিকি ইল্লা বিল্লাহ।

আমার দৃষ্টিতে ভার্সিটি এডমিশনের প্রস্তুতির দুইটা দিক আছে। এগুলো হলো:
১. মানসিক বা অদৃশ্যমান প্রস্তুতি।
২. শারীরিক বা দৃশ্যমান প্রস্তুতি।

আজ আমি ভার্সিটি এডমিশনের মানসিক বা অদৃশ্যমান প্রস্তুতি নিয়ে কথা বলবো। মানসিক বা অদৃশ্যমান প্রস্তুতির অনেক বিষয় আছে। এর মধ্যে কয়েকটি হলো:

১. প্রথমেই তোমার লক্ষ্য স্থির করো এবং নিয়তকে বিশুদ্ধ করে নাও। তুমি কেন পড়তে চাও? এই প্রশ্নের সুস্পষ্ট উত্তর তোমার জানা থাকা ভালো। এই প্রশ্নটা হয়তো অনেকের জন্য কঠিন হয়ে যাবে। কারণ, অনেকের জীবন মাঝিহীন নৌকার মতো। তাদের কোনো লক্ষ্য-উদ্দেশ্য নেই। প্রিয় ভাই, তোমাকে মনে রাখতে হবে, তুমি এখন জীবনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার একটা পর্যায়ে আছো। এখানেও যদি লক্ষ্যহীন থাকো, তবে ভার্সিটিতে চান্স পাওয়ার পরও তুমি ধ্বংস হয়ে যেতে পারো। কারণ খরস্রোতা নদীতে মাঝিহীন নৌকা টিকতে পারে না।
এজন্য আগে লক্ষ্য স্থির করো, আর নিয়ত বিশুদ্ধ করো। একজন মুসলিমের উচিত, আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন এবং আল্লাহর দ্বীনের খেদমতের নিয়ত নিয়েই পড়াশোনা করা। আর পড়াশোনার মাধ্যমে দুনিয়াবি হালাল উপার্জনও কিন্তু আল্লাহর সন্তুষ্টির কারণ হতে পারে।

২. তোমার লক্ষ্য অর্জনে এবার সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো আল্লাহর সাহায্য। আল্লাহর সাহায্য ছাড়া তুমি সফল হতে পারবে না। এই বিশ্বাস তোমার হৃদয়ে গেঁথে নিতে হবে। এজন্য আল্লাহর সাহায্য অর্জনের চেষ্টা করতে হবে। এখন কথা হলো, কীভাবে আল্লাহর সাহায্য অর্জন করবে?

৩. আল্লাহর সাহায্য পাওয়ার অন্যতম উপায় হলো সালাত ও দোয়া। নিয়মিত সালাত আদায় করতে হবে এবং দোয়া করতে হবে। বিশেষভাবে দোয়া কবুলের সময়গুলোতে একনিষ্ঠভাবে, ধীরস্থিরভাবে দোয়া করতে হবে। দোয়া কবুলের একটি সময় হলো জুমুআর দিন; এমন আরও সময় আছে, আলেমদের কাছ থেকে জেনে নেবে এগুলো ইনশাআল্লাহ। প্রতি ওয়াক্ত সালাতের পরেও দোয়া করবে।

তাছাড়া, দোয়া করারও একটি সুন্দর পদ্ধতি আছে। সেটা হলো: আল্লাহর প্রশংসা-তাসবিহ দিয়ে দোয়া শুরু করা, এরপর তোমার মনের আশা-আকাঙ্ক্ষা বলা, এরপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দরুদ পাঠ করা, শেষে আবার আল্লাহর প্রশংসার মাধ্যমে দোয়া সমাপ্ত করা। এভাবে দোয়া করতে থাকলে আল্লাহ কবুল করবেন ইনশাআল্লাহ। আর, দোয়া করার ব্যাপারে কৃপণতা করা যাবে না, থেমে যাওয়া চলবে না। অবিরত দোয়া করে যেতে হবে এবং দোয়া কবুল হওয়ার ব্যাপারে দৃঢ় বিশ্বাস রাখতে হবে। মনে রাখতে হবে, দোয়া মুমিনের অস্ত্র।

<

আর অবশ্যই দোয়া করার সময় এভাবে দোয়া করার চেষ্টা করবে যে, হে আল্লাহ! আমার জন্য যদি এটা কল্যাণকর হয়, তবে তা আমাকে দান করুন, তা অর্জন সহজ করে দেন এবং তাতেই আমাকে সন্তুষ্ট রাখুন; আর যদি এটা আমার জন্য অকল্যাণকর হয়, তবে এটা থেকে আমাকে হেফাজত করুন।
এভাবে দোয়া করতে হবে। কেননা, আমরা আসলে জানি না কোন জিনিস আমাদের জন্য কল্যাণকর আর কোনটা অকল্যাণকর। তুমি যা কামনা করছো, যাতে কল্যাণ আছে মনে করছো, এমনও হতে পারে এতে তোমার অকল্যাণ আছে। তাই সকল কল্যাণ-অকল্যাণের মালিকের কাছে কল্যাণ কামনা করো।

আর দোয়া ফলপ্রসু হওয়ার ব্যাপারে আসলে অনেক কথা বলা যায়, এত কথা বলার সুযোগ এখন নেই। দোয়া যে কতটা ফলপ্রসু তা তুমি নিজেই একদিন বুঝতে পারবে ইনশাআল্লাহ।
৪. নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী দান করার চেষ্টা করবে। হাদিসে আছে, দান করলে সামনের বিপদাপদ আল্লাহ দূর করে দেন। তাই যথাসম্ভব দান করবে।
আজ এ পর্যন্তই। সামনে শারীরিক বা দৃশ্যমান প্রস্তুতি নিয়ে লিখবো ইনশাআল্লাহ। সেই পর্যন্ত সাথে থেকো।
ওয়াসসালামু আলাইকুম।

লেখক: তানজিল উর রহমান
শিক্ষার্থী, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ
সেশন: ২০২০-২১
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। 

Related Posts

19 Comments

মন্তব্য করুন