কুমিরের মায়া কান্না

কেউ যদি সত্যি না কেদে শুধু চোখের জল ফেলে তবে তাকে মায়াকান্না বলে। কুমির নাকি সেই মায়া কান্না কাদে। সত্যিকার দুঃখ ছাড়াও কুমির কাদে। অনেকেই বিশ্বাস করে কুমির যখন কোন মানুষ বা অন্য কোন প্রানিকে খায় তখন নাকি কুমিরের চোখ থেকে পানি পরে। কুমির হয়ত ভাবে আহারে বেচারা প্রাণীটি মারা যাচ্ছে । ভাবখানি এমঅন হয় যে প্রানিটির শোকে সে কাতর। কুমির তাকে নিজেই মেরে চোখ থেকে পানি ফেলে বলে আহারে বেচারা মারা যাচ্ছে । তাই হইত কুমিরের এই কান্নাকে মায়াকান্না বলে। আমদের অনেকেই এমন লোক দেখানো কান্না কাদতে পারে। আসলে কি কুমির কাদতে পারে? বিশ্বাস কর বা নাই কর , এ কথা সত্যি যে কুমির যখন কোন প্রাণী খায় তখন তার চোখ দিয়া পানি পরে। এটা তার কান্নার জন্য না। খাওয়ার সময় কুমিরের চোখে বুদবুদের সৃষ্টি হয়। চোখের সাইনাসের মধ্যে দিয়ে এ সময় বাতাস চাপ দেই। ফলে তার চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পরতে থাকে। যাকে কান্না বলে ভুল হবে । আসলে কিন্তু কুমির কাদে না। কুমিরের প্রত্যেক চোয়ালে আছে ২৪ টি দাত। কোন দাত পরে গেলে আবার নতুন দাত ওঠে। একবার কাউকে কামরে ধরলে আর রক্ষে নেই। কুমিরের মত আর কোন প্রাণী এত জোরে কামরাতে পারে না। তাই বলে ভেব না ওদের চোয়াল খুব শক্ত। যে কোন মানুষ চোয়াল দুটোকে চেপে ধরলে তা আর খুলতে পারে না। এমনকি চোয়াল দুটোকে কোন রশি বা রাবার দ্বারা আটকালে তা আর খুলতে পারে না। কুমির না খেয়েও অনেক দিন বাচতে পারে। বড় কুমিরের ওজন ১২০০ কেজি পজন্ত হতে পারে। কিন্তু কুমির এত বর প্রাণী হলেও এদের ডিম রাজহাঁসের মত। একটা মা কুমির ২০ থেকে ৮০ টা দিম পারে। ডিমে টা দেয়ার সময় মা কুমির কিছুই খায় না। ডিম পারার পর প্রায় ৩ মাস মা কুমির সেগুলোকে চোখে চোখে রাখে। কখনো কখনো কোন কুমির নিজের ডিম নিজেই খেয়ে ফেলে। কুমির ভাল সুনতে পায়। কুমিরের বাচ্চারা ডিম থেকে বের হবার আগেই ডিমের ভেতরে ডাকাডাকি শুরু করে দেয়।

কুমিরের চামড়াকে সবচেয়ে মসরিন বলে বিবেচোনা করা হয়। এ জন্যই বোধ হয় কুমিরের চামরা দিয়ে তৈরি একটা ছোট ব্যাগ এর দাম ১৫ হাজার ডলার। কুমিরের চামড়া এত মোট যে তীর দিয়েও তা ভেদ করা যাবে না। কিন্তু কুমিরের পেটের চামড়া অনেক নরম আর মসরিন।

কুমির খুব ভাল সাঁতরাতে পারে। লেজের সাহায্যে এরা খুব দ্রুত সাতরাতে পারে। পানির মধ্যে এরা ২-৩ ঘণ্টা ডুবে থাকতে পারে। বছরে এরা সাধারণত ৫০ বার খায়। কুমির সাধারণত নদির মহনায় বেশি থাকে। সুন্দরবনের নদিতে অনেক কুমির আছে। কুমির ৮০ বছর পজন্ত বাচে। কুমির এক বিপন্ন প্রাণী। অনেক দেশেই কুমির পোশা হচ্ছে। আমাদের উচিত এদের না মারা।

কুমিরের চামড়া অনেক কাজে লাগলেও এদের মারার ফলে এদের সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে। এই রকম করে এদের মারতে থাকলে এমন এক দিন আসবে যে তখন আর কোন কুমির খুজে পাওয়া যাবে না। এরা একদম বিলুপ্ত হয়ে যাবে। তাই আমাদের এদের বাঁচানো উচিত। যাতে এই অদ্ভুত প্রাণী পরিবেসের সুন্দর্জ বারাতে পারে।

এদের বাচাতে , এদের চামড়া দিয়ে তৈরি জিনিস কেনা বাদ দিতে হবে। আর অন্যায়ভাবে এদের মারা উচিত নয়। আর যাতে কেউ এদের মারতে না পারে সেদিকে আমাদের সকলকে লক্ষ্য রাখতে হবে। পাশাপাশি নদি দুষন থেকে দূরে থাকতে হবে। যাতে এরা সুন্দরভাবে বাচতে পারে।

Related Posts

10 Comments

মন্তব্য করুন