কৃষি ব্যাংক থেকে লোন নেওয়ার উপায়

আসসালামু আলাইকুম। কেমন আছেন সবাই? আশা করি আল্লাহর রহমতে সবাই ভাল আছেন। আমিও আপনাদের দোয়ায় আনেক ভালো আছি। আজকে আমি আপনাদের মাঝে হাজির হয়েছি কৃষি ব্যাংক থেকে লোন নেওয়ার উপায় নিয়ে। তো আজকে আমি আপনাদের সামনে কৃষি ব্যাংক ও এর সুযোগ সুবিধা নিয়ে কথা বলতে যাচ্ছি। তো আর দেরি না করে চলুন শুরু করা যাক।

কৃষি ব্যাংক থেকে লোন নেওয়ার উপায়

কৃষি ব্যাংক থেকে লোন নেওয়ার উপায়

বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক যেকোনো নাগরিককেই লোন বা ঋণ দিয়ে থাকে বিশেষ করে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী এবং কৃষক। বর্তমানে কৃষি ব্যাংক মূলত কৃষি ক্ষেত্রে ও কুটির, মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পখাতে ঋণ নিয়ে থাকে বিশেষ করে নারী উদ্যোক্তদের বেশি সুযোগ সুবিধা প্রদান করা হয়। বর্তমানে তারা ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প খাতে নারী উদ্যোক্তাদের ১০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ও অন্যান্য উদ্যোক্তাদের ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বিনা জামানতে ঋণ দিচ্ছে। বর্তমানে তারা শস্য ঋণ, দুগ্ধ উৎপাদন ও প্রাণী সম্পদ ঋণ , চিংড়ি ও মৎস্য চাষ ঋণ, কৃষিভিত্তিক শিল্প ঋণ, কৃষি ও দারিদ্র বিমোচন ঋণ , সিএমএসএমই ঋণ ইত্যাদি ক্ষেত্রে ঋণ দিয়ে থাকে। প্রথমে আমি কৃষি ব্যাংক যেসব থেকে লোন দেয় তার মধ্যে মূল কয়েকটি সম্পর্কে ও তার সুযোগ সুবিধা সম্পর্কে নিচে বর্ণনা করছি।

১. শস্য ঋণঃ কৃষি ব্যাংকের ঋণ দেওয়ার মূল ক্ষেত্রগুলোর একটি হচ্ছে শস্য ঋণ। তারা শস্য উৎপাদনে সহায়তার জন্য এই ঋণ দিয়ে থাকে৷ মোট বার্ষিক ঋণের বরাদ্দের ৬০ ভাগ এর জন্য নির্ধারিত। আপনি সকল ধরণের ফসলের (মৌসুমী সহ) জন্য ঋণ নিতে পারবেন। জমির মালিক, শেয়ার চাষি কিংবা প্রান্তিক কৃষক সবাই এই ঋণের যোগ্য।

. মৎস্য ঋণঃ মাছ উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষে মূলত এই ঋণ ব্যবস্থার চালু করা হয়। পুকুর খনন, পুনরায় খনন, জলাভূমির উন্নয়ন, মৎস্য হ্যাচারি স্থাপন ও নতুন মৎস্য প্রকল্পের জন্য তারা ঋণ দিয়ে থাকে। মৎস্য ঋণ বিভিন্ন সাব-সেক্টরের উপর ভিত্তি করে দেওয়া হয়। যেমনঃ মৎস্য চাষ, চিংড়ি চাষ, মৎস্য ও চিংড়ির হ্যাচারি ইত্যাদি।

. প্রাণীসম্পদ ঋণঃ মূলত ষাঁড়, দুগ্ধজাত গাভী, ছাগল ইত্যাদি ক্র‍য় ও গরু মোটাজাতকরণের জিন্য বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক ঋণ প্রদান করে থাকে। ঋণগ্রহীতারা প্রতিটি বাছুরের জন্য ৫০০০ টাকা করে ৫টি বাছুরের জন্য সর্বোচ্চ ২৫০০০ টাকা নিতে পারবেন।

এখন আমি বলতে যাচ্ছি ঋণ কিভাবে গ্রহণ করবেন অর্থাৎ ঋণ গ্রহণের জন্য আপনার কি কি কাগজ লাগবে, কি কি করতে হবে।

যে কাগজপত্র (ডকুমেন্টস) লাগবেঃ

১. ঋণ গ্রাহকের জাতীয়তা সনদপত্র ( ভোটার আইডি কার্ড/স্মার্ট কার্ড)

২. পাসপোর্ট সাইজের তিন কপি ছবি।

৩. কৃষি কার্ড।

৪. যিনি জামিনদাতা হবেন তার জাতীয়তা সনদপত্র (আইডি কার্ড/স্মার্ট কার্ড) ও পাসপোর্ট সাইজের দুই কপি ছবি।

চার্জ ডকুমেন্টসঃ

১.ডিপি নোট স্ট্যাম্প (সরকারী নির্দেশনা মোতাবেক)

২. লেটার অব হাইপোথিকেশন।

৩. বিতরণপত্র

৪. ব্যবস্থাপত্র

৫।শস্য বন্ধকী দলিল

৬। জামিনদাতার প্রদত্ত লেটার অব গ্যারান্টি।

কৃষকের আবেদনের পর মাত্র ১০টাকা জমার মাধ্যমে কৃষি ব্যাংকের যেকোনো শাখায় একটি সঞ্চয়ী হিসাব খোলা যায়। নির্ধারিত মুনাফা ব্যতিত তারা অন্য কোনো প্রকার বাড়তি চার্জ, প্রসেসিং ফি বা মনিটরিং ফি নেওয়া হয়না।

স্থানীয় চেয়ারম্যান, মেম্বার, সরকারি-বেসরকারি স্কুল-কলেজের শিক্ষক বা মাদ্রাসার শিক্ষক কিংবা অন্যান্য গণ্যমান্য ব্যক্তিদের জামিনদার হিসেবে নেওয়া যায়।কৃষি ব্যাংক থেকে লোন নেওয়ার উপায়

কৃষি ব্যাংক লোন ইন্টারেস্ট রেট কত

কৃষি ব্যাংকের প্রতিটি সাব-সেক্টরের ক্ষেত্রেই ঋণের উপর সুদের হার বিভিন্ন হতে পারে। আর এই হার যেকোনো সময় কর্তৃপক্ষের দ্বারা অবস্থা বিবেচনায় পরিবর্তনশীল। যেমন শস্য ঋণের ক্ষেত্রে মুনাফার হার ০৯%। এরকমভাবে প্রতিক্ষেত্রেই মুনাফার হার বিভিন্ন। যদিও কয়েক মাস আগে সুদের হার ৫%-৪% এর মতো করা হয়েছে তাও খাতের উপর নির্ভর করে। সবচেয়ে ভালো হবে নিকটস্থ ব্রাঞ্চে গিয়ে ব্যাংক কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে বিস্তারিতভাবে জেনে নিলে।

কৃষি ব্যাংকের চেক লেখার নিয়ম

কৃষি ব্যাংকের চেক লেখার নিয়ম অন্যসব ব্যাংকের মতোই। আপনি প্রথমে একটি চেকবুক পাবেন। সেখানে আপনি Date, Pay to, The Sum of Taka ও TK লেখা অপশন দেখতে পারবেন। Date এর জায়গায় আপনি একটি তারিখ বসাবেন। যে তারিখ বুঝাবে আপনি যাকে টাকা দিবেন সে কত তারিখের মধ্যে টাকাটি তুলতে পারবেন। এই তারিখটি চেক তৈরির ৩ মাসের মধ্যে হতে হবে। এই তারিখটি ইংরেজিতে হতে হবে ও পরিপূর্ণ হতে হবে।

Pay to তে আপনি যে ব্যক্তি, সংস্থা বা কোম্পানিকে টাকাটি পাঠাতে চান তার নাম বা সংস্থার নাম দিয়ে দিতে হবে। নিজেকে দেওয়ার ক্ষেত্রে Self লিখতে হবে।

The Sum of Taka হচ্ছে আপনি কোনো ব্যক্তি বা সংস্থাকে কি পরিমাণ টাকা পাঠাতে চান। মনে রাখতে হবে এখানে অবশ্যই যে টাকাটি পাঠাতে চান সেটি ইংরেজিতে কথায় লিখতে হবে। একটি উদাহরণ দিয়ে বুঝিয়ে দিচ্ছি। ধরেন আপনি কোনো ব্যক্তিকে ১০০০০ টাকা পাঠাতে চান। সেক্ষেত্রে লিখতে হবে Ten Thousands Only।

TK হচ্ছে আপনি যে টাকার পরিমাণটি ইংরেজি কথায় লিখেছেন সেটি ইংরেজি অংকে লেখা। আপনি কাউকে ১০০০০ টাকা পাঠাতে চাইলে লিখবেন 10000/- এবং সর্বশেষে আপনার সিগনেচারটি দিয়ে দিন। ব্যাস! তাহলে হয়ে গেল।কৃষি ব্যাংক থেকে লোন নেওয়ার উপায়

কৃষি ব্যাংক ফিক্সড ডিপোজিট

আপনি কৃষি ব্যাংকে বিভিন্ন ধরণের এককালীন স্কিম খুলতে পারবেন। তার মধ্যে কয়েকটির বর্ণনা নিচে দিয়ে দিচ্ছিঃ

১. বিকেবি মাসিক মুনাফা প্রকল্প

এক্ষেত্রে আপনাকে প্রথমে একাউন্টে ১ লক্ষ বা তার গুণিতক যেমন ২ লক্ষ, ৩ লক্ষ, ১০ লক্ষ ইত্যাদি। আপনাকে কমপক্ষে ৭ বছরের জন্য টাকা রেখে দিতে হবে। এক্ষেত্রে আপনি মাসিক হিসাবে মুনাফা পাবেন। মুনাফার হার প্রায় ৭% এর মতো। আপনি মাসিক প্রায় ৫৮৩টাকা (প্রতি লাখ) করে মুনাফা পাবেন।

২. বিকেবি ডাবল প্রফিট স্কিম

এর জন্য আপনাকে একটি এককালীন টাকা আপনার একাউন্টে জমা করতে হবে। এই জমার এমাউন্ট ১০০০০ বা তার গুণিতক যেমন ২০ হাজার, ৩০ হাজার, ১ লক্ষ, ১০ লক্ষ হতে হবে। এক্ষেত্রে আপনি ৭% মুনাফা পাবেন। আপনাকে আপনার টাকাটি ১২ বছরের জন্য রাখতে হবে।

৩. বিকেবি মিলিয়নিয়ার স্কিম

এটি একটি মাসিক ভিত্তিক স্কিম। প্রতিমাসে আপনাকে একটি নির্দিষ্ট এমাউন্ট রাখতে হবে। সেই এমাউন্টটি হতে হবে ২৫৮৩০, ১৪৬০০, ৯৭৭০, ৬০৯০ এর মধ্যে একটি। এর জন্য আপনি যথাক্রমে ৬%, ৬.২৫%, ৬.৫০% ও ৭% মুনাফা পাবেন। এবং স্কিম পূরণ হওয়ার জন্য যথাক্রমে ৩ বছর, ৫ বছর, ৭ বছর ও ১০ বছর দরকার। আপনি মেয়াদান্তে প্রদেয় হিসেবে ১০ লক্ষ টাকা পাবেন।

বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক কি সরকারি

সহজ উত্তর হ্যাঁ। এটি একটি শতভাগ রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বিশেষায়িত ব্যাংক। এটি ১৯৭৩ সালের ৩১শে মার্চ তৈরি করা হয়। এটি বর্তমানে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বিশেষায়িত ব্যাংক।

কৃষি ব্যাংক হেল্পলাইন নাম্বার

বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের হেল্পলাইন ও তথ্য সেবা কেন্দ্র নাম্বার ১৬১২৯। তাছাড়া কোন প্রকার অভিযোগ থাকলে নিম্নোক্ত ফোন নাম্বার ও ইমেইল এড্রেসে যোগাযোগ করুনঃ ০১৬২৯-৮২১১৭৭ (মোবাইল) ০২২২৩৩৮০০৩৬ (টেলিফোন) [email protected] (ইমেইল) এবং ওয়েবসাইট: krishibank.org.bd

কৃষি ব্যাংক এফডিআর

কৃষি ব্যাংক তার গ্রাহকদের এফডিআর স্কিমও দয়ে থাকে। এটি একটি এককালীন জমা। জমার এমাউমট যেকোনো পরিমাণ বা যেকোনো হতে পারে। এখানে আপনি জমা রাখার সময়ের উপর ভিত্তি করে তিন মাধ্যমে টাকা রাখতে পারেন। এগুলো হলো ৩ মাস থেকে ৬ মাসের মধ্যে, ৬ মাস থেকে ১ বছরের মধ্যে, ১ বছর থেকে ৩ বছরের মধ্যে। এর জন্য আপনি মুনাফা/সুদ পাবেন যথাক্রমে ৫.৭৫%, ৫.৮৫% ও ৬%। এর নির্দিষ্ট কোনো মেয়াদান্ত প্রদেয় নেই। সেই এমাউন্টটি আপনি কত টাকা রাখতেছেন তার উপর নির্ভর করে।

বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক প্রধান কার্যালয় ঠিকানা

বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় ৮৩-৮৫, মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকা, ঢাকা, বাংলাদেশ।

ওভারওল কৃষি ব্যাংক একটি যথেষ্ট ভালো ব্যাংক। এর ঋণের উপর স্যদের হার অন্যান্য ব্যাংকের চেয়ে তুলনামূলক কম। তাছাড়া আপনি যদি ছোটখাটো থেকে মাঝারি আকারের কোনো ব্যবসা খুলতে চান কিংবা কৃষিকাজে যদি আপনার আগ্রহ থাকে এবং তা আপনি বাণিজ্যিকভাবে করতে চান তাহলে কৃষি ব্যাংকের কোনো তুলনা নেই।

তো আজকের জন্য এতটুকুই (কৃষি ব্যাংক থেকে লোন নেওয়ার উপায়)। পোস্টটি কেমন লাগলো দয়া করে কমেন্টে জানাবেন, যদি ভাল লেগে থাকে তাহলে অবশ্যয় শেয়ার করবেন, পোস্টটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ। এমন সব দারুন দারুন পোস্ট পেতে Grathor এর সাথেই থাকুন এবং গ্রাথোর ফেসবুক পেইজ ও ফেসবুক গ্রুপ এ যুক্ত থাকুন, আল্লাহ হাফেজ।

Related Posts

3 Comments

মন্তব্য করুন