কোন মাসে কোন সবজি চাষ করতে হয়

আসসালামু আলাইকুম। কেমন আছেন সবাই? আশা করি আল্লাহর রহমতে সবাই ভাল আছেন। আজকে আমি আপনাদের সামনে বলতে যাচ্ছি কোন মাসে কোন সবজি চাষ করতে হয় । তো আর দেরি না করে চলুন শুরু করা যাক।

আমাদের দেশের কৃষি মৌসুম ৩ টি । বিভিন্ন ফসলের উৎপাদন এর উপর ভিত্তি করে কৃষি মৌসুম কে তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যেমনঃ খরিফ-১, খরিফ-২ এবং রবি মৌসুম ।

খরিফ-১ : চৈত্র মাস থেকে আষাঢ় মাস পর্যন্ত সময়কে খরিফ-১ এর অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এ সময় তাপমাত্রা বেশি থাকে। এ সময়কে গ্রীষ্মকালও বলা হয়।

খরিফ-২ : শ্রাবণ মাস থেকে আশ্বিন মাস পর্যন্ত সময়কে খরিফ-২ এর অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এ সময় বাতাসের আর্দ্রতা বেশি থাকে এবং প্রচুর ঝড় বৃষ্টি হয়। এ সময়কে বর্ষাকালও বলা হয়।

রবি মৌসুম : আশ্বিন মাস থেকে ফাগুন মাস পর্যন্ত সময়কে রবি এর অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এ সময়ে তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা কম থাকে এবং বৃষ্টিপাত কম হয়। শীতকালীন মৌসুমকে রবি এর অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

কোন মাসে কোন সবজি চাষ করতে হয়

বৈশাখ মাস: বৈশাখ মাসে লালশাক, গিমা কলমি ,ডাঁটা,পাটশাক, বেগুন, মরিচ, আদা, হলুদ,ঢেড়স বীজ বপনের উত্তম সময় হিসেবে ধরা হয়। এ সময়ে গ্রীষ্মকালীন টমেটোর চারাও রোপণ করা যায়। মিষ্টিকুমড়া ,করলা ,ধুন্দুল , ঝিঙ্গা, চিচিঙ্গা, চালকুমড়া, কুমড়া জাতীয় সবজির পোকামাকড় দমন ও সেচ প্রদান করার সীজন হলো এই বৈশাখ মাসেই । খরিফ-১ মৌসুমের সকল বীজ বপন এবং চারা রোপণ করতে পারবেন এই সময়টিতে। খরিফ-২ এর বেড প্রস্তুত এবং চারা তৈরি করতে পারবেন এই মাসে । এ সময় আমাদের পুইশাক, লালশাক,ডাঁটা,বরবটি খাওয়ার উপযোগী হয়ে যায়।

জৈষ্ঠ মাস : এই মাসে খরিফ-২ এর সবজির চারা রোপণ এবং সার প্রয়োগ করতে হয় । নাবী কুমড়া জাতীয় ফসলের মাচা তৈরি এবং সার প্রয়োগ করা হয়। ঝিঙ্গা, চিচিঙ্গা, ধুন্দুল, পটল এবং কাঁকরোল এই মাসেই সংগ্রহ করা হয়। এ সময়ে চারদিকে শুধু পাকা ফলের মিষ্টি গন্ধ পাওয়া যায়।

আষাঢ় মাস : আষাঢ় মাসে গ্রীষ্মকালীন বেগুন, টমেটো, কাঁচা মরিচের পরিচর্যা করা হয়। এই মাসে শিমের বীজ বপন করা হয়।
কুমড়া জাতীয় সবজির কীটপতঙ্গ ও রোগবালাই দমন করা হয় । খরিফ-২ সবজির চারা রোপন ও পরিচর্যা করা হয়। এ মাসে বেড়া দেয়া ফল গাছে সুষম সার দিতে হয় ।

শ্রাবণ মাস : আগাম রবি মৌসুমের সবজিগুলো যেমনঃ বাঁধাকপি ফুলকপি, লাউ, বেগুনের বীজতলা প্রস্তুত, বীজ বপন আরম্ভ করা যেতে পারে। খরিফ-২ মৌসুমের সবজিগুলো উঠানো যেতে পারে। এই মাসেই সবজিগুলোর পোকামাকড় ধ্বংস করতে হবে। শিম, লাল শাক পালং শাকের বীজ বপন করা যাবে। যেসব ফল রোপন করা হয়েছে তার পরিচর্যা করতে হবে।

ভাদ্র মাস :

আগাম রবি মৌসুমের সবজিগুলো যেমনঃ বাঁধাকপি, ফুলকপি, ওলকপি ,টমেটো ,বেগুন ,কুমড়া ,লাউ কদুর জমি প্রস্তুত, চারা রোপণ , জমিতে সার দেওয়া ইত্যাদি করতে হবে। পূর্বে লাগানো ফলের চারার যত্ন ও পরিচর্যা করতে হবে। ফলের চারার খুঁটি দিয়ে এবং বেড়া দিয়ে চারা গাছ সংরক্ষণ করতে হবে । ফল সংগ্রহের পরে গাছের অঙ্গ ছাঁটাই করতে হবে।

আশ্বিন মাস : আগাম রবি মৌসুম সবজির চারা আবাদ,চারার যত্ন, সেচ এবং সার প্রয়োগ করতে হবে। নাবী রবি মৌসুমের বীজ বপন করতে হবে। শিম , লাউ , বরবটি মাচা প্রস্তুত করা এবং এগুলোর পরিচর্যা করা। রসুন ও পেঁয়াজের বীজ বপন করার সীজন । আলু লাগানোর সময় ।

কার্তিক মাস : আলুর কেইল বাঁধা ও আগাম রবি মৌসুমের সবজী যত্ন নিতে হবে । নাবী রবি মৌসুমের সবজিগুলোর চারা উৎপাদন করতে হবে। এ সময়ে মরিচের চারা রোপন করা যায়। ক্যাপসিকাম মরিচ চাষের জন্য এই সময়টি উপযুক্ত সময়। এ সময়ে আনারস চাষ করা যেতে পারে।

অগ্রহায়ণ মাস : মিষ্টি আলুর লতা আবাদ করার সীজন। পেঁয়াজ , রসুন আবাদ করার সীজন। অন্যান্য রবি ফসল যেমনঃ বাঁধাকপি, ফুলকপি, ওলকপি, টমেটো ইত্যাদি সবজি সংগ্রহ করা যাবে । এ সময়ে মিষ্টি আলু , পেঁয়াজ, রসুন মরিচসহ অনেক সবজী প্রাথমিক বৃদ্ধি পর্যায়। এক্ষেত্রে ভালোভাবে যত্ন নিলে ভালো ফলাফল পাওয়া যাবে।

পোষ মাস : নাবী রবি সবজিগুলোর নিয়মিত পরিচর্যা করতে হবে। ফল গাছের কীটপতঙ্গ ও রোগজীবাণু ধ্বংস করার পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। এসময়ে বেরো ধান রোপণ করতে পারবেন । এ সময়ে আলুর চারার উচ্চতা যদি ১০ থেকে ১৫ সেন্টিমিটার হয় তাহলে ইউরিয়া সার উপরি প্রয়োগ করতে হবে ।

সারির মাঝ বরাবর সার দিয়ে মাটি কুপিয়ে সারির মাঝের মাটি গাছের গোড়ায় তুলে দিতে হবে। প্রায় ১০ দিন পর পর এরকমভাবে গাছের গোড়ায় মাটি তুলে দিলে গাছ হেলে পড়বে না। এরূপ কাজ না করলে আলুর ফলন কমে যেতে পারে।

মাঘ মাস :

আলু, পেঁয়াজ, রসুন-এর গোড়ায় মাটি দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। টমেটো গাছের পরিচর্যা করতে হবে। মটর, ছোলা, মসুর, মুগ ,তিসি পাকার সীজন এই চৈত্র মাসেই। এ সময়ে কিন্তু আলু ফসলে নাবি ধসা রোগ দেখা দিতে পারে । তাই এক্ষেত্রে যারা আলু চাষ করছেন তাদের সঠিক নিয়মে পরিচর্যা করতে হবে।

ফাল্গুন মাস : ঢেঁড়স ,ডাটা শাক, লালশাক এর বীজ বোনার সময়। মিষ্টি আলু এই সময়ে সংগ্রহ করা হয়। রবি মৌসুমের সবজির বীজ সংগ্রহ করা হয়। জমির অন্যান্য ফসলের পরিচর্যা করা হয়। এই সীজনে আমের মুকুল আসে । এ কারণে আমের বোঁটার রোগ এবং পোকার আক্রমণ প্রতিরোধ ব্যবস্থা নিতে হবে ।

চৈত্র মাস : চৈত্র মাসে গ্রীষ্মকালীন টমেটো ,বেগুন ,মরিচ এর আবাদ করা হয় । যে সব সবজির চারা প্রস্তুত হয়েছে ,সেগুলো মূল জমিতে আবাদ করা হয় । এসময়ের নাবি রবি মৌসুমের সবজি উঠানো হয়।

মাটিতে পানির ঘাটতি হলে ফলের গুটি ঝরে যায়। এসময় বৃষ্টিপাত কম হয় তাই মাটির রসের পরিমাণ কমে আসে এ অবস্থা গাছের গোড়া নিয়মিত পানি দিতে হবে। যাদের বাড়িতে বাঁশঝাড় আছে তারা বাঁশঝাড়ের গোড়ায় মাটি ও সার প্রয়োগ করতে পারেন ।

তো আজকের জন্য এতটুকুই (কোন মাসে কোন সবজি চাষ করতে হয়)। পোস্টটি কেমন লাগলো দয়া করে কমেন্টে জানাবেন, যদি ভাল লেগে থাকে তাহলে অবশ্যয় শেয়ার করবেন, পোস্টটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ। এমন সব দারুন দারুন পোস্ট পেতে Grathor এর সাথেই থাকুন এবং গ্রাথোর ফেসবুক পেইজ ও ফেসবুক গ্রুপ এ যুক্ত থাকুন, আল্লাহ হাফেজ।

Related Posts

10 Comments

মন্তব্য করুন