ক্যাসিনোর ঘটনায় বিব্রত ও ক্ষুব্ধ সাবেক খেলোয়াড়রা

সম্প্রতি বিভিন্ন ক্লাবগুলোতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে ক্যাসিনো বা জুয়ার আসরের যে নোংরা চিত্র উঠে এসেছে তাতে চরমভাবে বিব্রত ও ক্ষুব্ধ দেশের ক্রীড়াঙ্গনের সাবেক তারকা খেলোয়াড়রা। পাশাপাশি এ ঘটনায় জড়িত ব্যক্তি সে যেই পর্যায়েরই হোক না কেন তাকে আইনের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন তারা। সাবেক খেলোয়াড়রা অভিযোগ করে বলেন ক্লাবগুলো হওয়া উচিত ছিল শুধুমাত্র খেলোয়াড়দের স্থান। কিন্তু সেখানে রাজনৈতিক দলগুলোর হস্তক্ষেপ ও অবৈধ ক্যাসিনোর জমজমাট আড্ডা এবং কোটি কোটি টাকার লেনদেন ক্লাবগুলোকে কলংকিত করেছে। এ ব্যাপারে নন্দিত ফুটবলার শেখ মো. আসলাম বলেন, ‘ক্রীড়াঙ্গনের গৌরব আজ ধুলোই ধুসরিত। প্রথম যেদিন শুনলাম ও টিভিতে দেখলাম অবাক হয়ে গেলাম। যেসব ক্লাব সুনাম কুড়িয়ে ক্রীড়াঙ্গনে গৌরবময় জায়গা করে নিয়েছিল তাদের এত অধঃপতন। আমি অন্য ক্লাবের কথা বলব না। মোহামেডানের নামটি বিশেষভাবে উল্লেখ করতে হয়। তারাতো শিরোপা ছাড়া কিছুই বুঝত না। ভেবেছিলাম ফান্ডের কারণে ঘুরে দাঁড়াতে পারছে না। এখন দেখছি ক্যাসিনোর মতো অবৈধ কাজে জড়িয়ে ধ্বংসের মুখে ক্লাবটি।’ জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক তারকা খেলোয়াড় ও অধিনায়ক আশরাফ উদ্দিন আহমেদ চুন্নু বলেছেন, ‘আমাদের সাফল্যময় ক্লাবগুলো আজ ধ্বংসের মুখোমুখি। মোহামেডান, ভিক্টোরিয়া , ওয়ান্ডারার্স ক্লাব ছিল আমাদের অহংকার। এটা ঠিক ক্লাবের খারাপ সময় যেতেই পারে। তাই বলে ঘৃণিত কাজের সঙ্গে কর্মকর্তারা জড়িয়ে যাবেন তা ভাবতেই পারছি না।’ জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক ছাইদ হাসান কানন বলেন ‘পত্রিকায় দেখলাম এবং পড়লাম কর্মকর্তারা বলছেন, রাজনৈতিক চাপে পড়ে ক্লাবগুলো ক্যাসিনো খুলতে বাধ্য হয়েছে। আমি কখনো তা বিশ^াস করব না। এমন ঘটনা ঘটলে তারা পুলিশের সহযোগিতা চাইল না কেন? কর্মকর্তারা অবশ্যই এসব অনৈতিক কাজের সঙ্গে জড়িত । তাদের অনুমতি বা সহযোগিতা ছাড়া কোনোভাবেই ক্যাসিনো সম্ভব নয়। কোটি কোটি টাকা আয় হয়। এত টাকা যায় কোথায়? কর্মকর্তারা আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়ে যাচ্ছেন।’ ক্যাসিনো বিষয়ে সাবেক তারকা ফুটবলার আবদুল গাফফার বলেন ‘আমি মোহামেডান ও আবাহনী দুই দলেই খেলেছি। কিন্তু আমি ভাগ্যবান, যে ক্লাবের অধিনায়ক বঙ্গবন্ধু ছিলেন সেই ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের জার্সি পরে আমি মাঠে নেমেছি। এখন নাকি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিকরাই ক্লাবের দায়িত্বে আছেন। তারা দায়িত্বে থাকতে ওয়ান্ডারার্সে ঘৃণিত কাজ হয় কীভাবে? পত্রিকায় দেখলাম মতিঝিল ক্লাবপাড়ায় গডফাদারের তালিকায় একটি ক্লাবের সদস্য সচিবের মান। আমি এসব গডফাদারদের আইনসঙ্গত বিচার দাবি করছি।’
উল্লেখ গত কয়েকদিন ধরে দেশের আলোচিত ঘটনা হলো ঐতিহ্যবাহী ক্লাবগুলোতে অবৈধ ক্যাসিনোর জমজমাট ব্যবসা ও রাতভর অনৈতিক ও অসামাজিক কাজের বিষয়টি। পুলিশের অভিযানে ইতিমধ্যেই এর সাথে জড়িত রাজনৈতিক নেতা, ব্যবসায়ী ও সমাজের বিভিন্ন স্তরের ব্যক্তিদের গ্রেফতার করে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। জিজ্ঞাসাবাদে তারা নতুন নতুন তথ্য দিচ্ছেন এবং সেই অনুযায়ী পুলিশ অগ্রসর হচ্ছে। জানা গেছে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে অপরাধীরা এসব ক্যাসিনো ব্যবসার সাথে জড়িত এমন সব ব্যক্তির নাম প্রকাশ করছেন যারা সমাজে সুপ্রতিষ্ঠিত এবং সুধীজন বলে বিবেচিত। এ তালিকায় সরকার ও প্রশাসনের বেশ কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির নামও চলে এসেছে যাদের নাম শুনে পুলিশও বিব্রত বোধ করছে। তবে সরকারের এ অভিযানকে স্বাগত জানিয়েছেন দেশের সর্বস্তরের মানুষ। তারা বলছেন অপরাধী যেই হোক তাদের শাস্তির বিধান করতে হবে। তারা প্রত্যাশা করছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দলমত নির্বিশেষ এই অভিযান পরিচালনা করবেন এবং প্রকৃত অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন।

Related Posts