ক্রিকেটিং মেধার চর্চা আর সমর্থকদের চাওয়া

হাটিহাটি পা পা করে আইসিসি’র পূর্নাঙ্গ সদস্য হিসেবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ২০ বছরের বেশি সময় অতিক্রম করেছে বাংলাদেশ। এই সময়টাকে নিয়ে প্রাপ্তি অপ্রাপ্তির ব্যবচ্ছেদ করলে ভক্ত সমালোচক হিসেবে কিন্তু হতাশ হতে হয়। এমন না যে আমাদের প্রাপ্তি নেই। কিন্তু একজন স্নাতক পড়ুয়া যদি বর্ণমালা চিনতে ভুল করে বারবার, তখন সমস্যাটা শুধু চিন্তার থাকে না, মহামারী হয়ে দাড়ায়!  

২০ বছর একদমই কম কোন সময় নয়। ২০০০ সালে প্রথম টেস্ট খেলার আগেই আমাদের এখানে মোটামুটি মানের একটা ক্রিকেট কালচার ছিল। ক্রিকেটের ঘরোয়া আয়োজন ছিল। সেই আয়োজন গুলোতে সেসময়ের বড়বড় আন্তর্জাতিক ক্রিকেটাররা শুধু আসতেনই না, বাহবা দিতেন আমাদের ঢাকা লিগকে। মোহাম্মদ রফিক, আমিনুল ইসলাম বুলবুল, আকরাম খানদের হাত ধরেই আমাদের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পদার্পণ। কিন্তু হায়, প্রজন্মে থেকে প্রজন্মে সেই কালচারের চর্চাটা যেন কোথায় এসে আটকে গেছে! 

এক প্রজন্মের ক্রিকেট আরেক প্রজন্মের সাথে স্বাভাবিকভাবেই মিলবে না। রফিক, বুলবুলদের ক্রিকেট যেমন বাশার, আশরাফুলদের সময়ের সাথে মিলে না। তেমনি মিলে না মুশফিক, সাকিবদের সময়ের সাথে। সময়ের সাথে ক্রিকেটের বাতাবরণ বদলায়, চ্যালেঞ্জ বদলায়। ইকোনোমিক্যালি প্রগ্রেসিভ ক্রিকেটিং কান্ট্রি হলে সাথে সাথে বাড়ে ফ্যাসিলিটিজ। সেই সাথে প্ল্যায়ারদের মানও বাড়তে থাকে। পাশের দেশে ৯০ দশকের আজহার, শচিনদের সময় থেকে তাই  গাঙ্গুলি পরবর্তী শেহবাগ, যুবরাজদের সময় অনেক এগিয়ে, এরপর ধনির যুগ আর হালের কোহলি ম্যানিয়া। ক্রিকেটে প্রগ্রেসিভ বা ঊর্ধ্বমুখী উৎকর্ষতা বোধকরি একেই বলে। 

আর পরিতাপের বিষয় ওখানেই। ক্রিকেটে আমাদের টাকা পয়সার অভাব নেই এখন। ইকোনোমিক্যালি ভাইব্রান্ট হওয়া সত্ত্বেও আমরা যেন এক চোরাবালিতে আটকে আছি। অনেকেই প্রশাসনিক অনিয়মের ধোঁয়া তুলে। তা অনেকাংশে ঠিক। কিন্তু এই উপমহাদেশের ক্রিকেট খেলা সব দেশেও তা ঠিক। সব দেশেই প্রশাসনিক আসনগুলোতে বসে থাকা মানুষগুলো কোন না কোন অনিয়মে জড়িত থাকে। আর তাদের জন্য প্রভাবিত হয় ক্রিকেট। ভারতেও এই চর্চা আছে। কিন্তু সময়ে সময়ে ওদের খেলোয়াড় উঠে আসা থেমে নেই। খেলোয়াড় উঠে আসা থেমে নেই এমনকি পাকিস্তানেও। 

যোগ্য খেলোয়াড় না আসার পেছনে যে কারনটি বড় বলে মনে করি তা হচ্ছে আমাদের খেলোয়াড়দের ক্রিকেট জ্ঞানের অভাব। আমাদের খেলোয়াড় আছে অনেক, কিন্তু যোগ্য খেলোয়াড় কই? খেলাটা মাঠের হলেও, শক্ত মনস্তত্ত্ব আর ক্রিকেটিং মেধা এর ভিত গড়ে দেয়। এটা কখনই প্রশাসনের লোক আপনাকে শিখিয়ে দিবে না। ঘরোয়া ক্রিকেটে রানের ফোয়ারা তুলে এসে, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তাই খাবি খায় খেলোয়াড়রা। তাহলে কি আমাদের ঘরোয়া ক্রিকেটে অকেজো? অনেকাংশে তাই! তবে বৃহৎ অংশে না! নতুন খেলোয়াড় না পাওয়ার ক্ষেত্রে আপনি ঘরোয়া লিগকে দোষ দিতে পারেন। কিন্তু দশ বারো বছর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলা একজন খেলোয়াড় যখন খেলার পরিস্থিতি বুঝতে পারে না, ক্রিকেট মেধা জলাঞ্জলি দিয়ে হেরে বসে ম্যাচ, তখন আসলে ক্রিকেট বোর্ড আর প্রশাসনের দোষ দিবেন কীভাবে? 

পাশের দেশ তাই স্নাতক, স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করে এখন পিএইচডি নিচ্ছে, আর আমাদের খেলোয়াড়রা স্নাতকে উঠেও ভুল করছে বর্ণমালা চিনতে! বাংলাদেশের ক্রিকেটে তাই খুব বেশি করে দরকার এমন বাঞ্চ অফ প্লেয়ারস যারা খেলাটাকে মেধা দিয়েও খেলবে। 

<

এই আশা হতাশার মাঝেও ক্রিকেটিং ঝলক আমরা প্রায়ই দেখি। ঝলকে পুলক মিললেও সম্মান মেলে না। আর তাই এখনও শুনতে হয়, বাংলাদেশ ছোট দল!  একনিষ্ট ভক্ত সমর্থকদের চাওয়া খুব সিম্পল। আমরা খেলায় ধারাবাহিক সাফল্য চাই আর চাই ক্রিকেটিং মেধার বিচ্চুরন। তারপর তোমরা খেলে হারলেও দুঃখ নেই।

Related Posts

1 Comment

মন্তব্য করুন