গরু মোটাতাজাকরণ ব্যবসা আয় ব্যয়, গুরুত্ব, সম্ভাবনা ও সমস্যা কি কি ?

গরু মোটাতাজাকরণ ব্যবসা আয় ব্যয়, গুরুত্ব, সম্ভাবনা ও সমস্যা কি কি ? শুরুতে জেনে নেওয়া যাক “গরু মোটাতাজাকরন” ব্যবসা কাকে বলে । সাধারনত গরুর মাংস বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বিশেষ ব্যবস্থাপনায় ও পুষ্টিসমৃদ্ধ সুষম খাবার সরবরাহের মাধ্যমে গরুকে মোটাতাজা করে বাজারজাত করাকেই “গরু মোটাতাজাকরন” ব্যবসা বলা হয়ে থাকে । সাধারনত ২-২.৫ বছর বয়সের ষাঁড় গরু ৩-৪ মাসের জন্য লালন পালন করে মোটাতাজা করার জন্য উপযুক্ত।

সঠিক গরু নির্বাচন,বাসস্থান গঠন,রোগ প্রতিরোধ ও চিকিতসা,পুষ্টিকর খাবার সরবরাহ ও বাজারজাতকরন এই পাঁচটি কাজ সুষ্ঠভাবে করা গেলে স্বাস্থ্যস্মমত গো মাংস উৎপাদনে গরু মোটাতাজাকরন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন ও প্রসংশনীয় ভূমিকা পালন করতে সক্ষম হবে।

গরু মোটাতাজাকরণ ব্যবসা আয় ব্যয়, গুরুত্ব ও সম্ভাবনাঃ

দিনে দিনে জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে প্রানীজ আমিষের চাহিদা পূরনে গরুর মাংসের প্রয়োজনীয়তা বাড়ছেই।বাংলাদেশের মানুষের জনপ্রতি মাংসের দৈনিক চাহিদা ১২০ গ্রাম । যদিও বর্তমানে আমাদের মাংসের চাহিদার চেয়ে উৎপাদন বেশি বলে দাবি করে প্রানীসম্পদ অধিদপ্তর তাও বাজারে গরুর মাংসের দাম খেয়াল করলে বুঝা যায় আমাদের আরো বেশি উৎপাদন করা দরকার বাজারে দাম সাধারন মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে রাখার জন্য। কারন যখন চাহিদার চেয়ে মাংসের যোগান কম হবে তখন স্বাভাবিক ভাবেই দাম বেড়ে যাবে ।

এছাড়া প্রতি বছর কোরবানির ঈদে প্রায় ৪০-৫০ লক্ষ গবাদিপশুর দরকার হয় তার মধ্যে প্রায় ৭০ % চাহিদা পূরন করে গরু । ২০১৫ সালের আগেও আমাদের কোরবানির সময় পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের উপর নির্ভর করতে হতো গরুর চাহিদা পূরনের জন্য কিন্তু এখন আমরা স্বয়ংসম্পূর্ন ।

২০১৫ সালে সরকারের ভারত থেকে গরু আমদানি নিষিদ্ধ ও নিয়ন্ত্রিত হওয়ার ফলে এখন আর আগের মত হিউজ পরিমান গরু বা গরু মহিষের মাংস আমদানি হয়না এর ফলে বাংলাদেশের খামারীরা বাজারে নায্য মূল্য পাচ্ছে এবং সেই সাথে প্রতিদিন নতুন নতুন খামাড় গড়ে উঠছে দেশের বিভিন্ন আনাচে কানাচে।

এতে একদিকে যেমন দেশের গ্রামীন অর্থনিতির চাকা ঘুরছে অন্যদিকে বিভিন্ন শ্রেনির মানুষের নতুন নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে। মাংস উৎপাদন থেকে শুরু করে ভোক্তা পর্যায়ে পৌছাতে প্রায় ১০-১২ জনের কর্মসংস্থান হয়ে থাকে বিভিন্ন স্তরে ।

বর্তমানে বিভিন্ন গ্রাজুয়েট  যুবকরা পড়াশোনা শেষ করে উদ্যোক্তা হচ্ছে এবং খামারমুখী হচ্ছে । এছাড়া প্রবাসী ভাইরা যারা কয়েক বছর বিদেশে ওয়ার্কার ভিসায় কাজ করে বাংলাদেশে ৫-১০ লক্ষ টাকা নিয়ে আসে তাদের জন্য গরু মোটাতাজাকরন ব্যবসা হতে পারে ভালো সফল উদ্যোক্তা হওয়ার সুযোগ।

বাংলাদেশ কৃষি প্রধান দেশ এবং এই দেশে আবাদী জমি কে ঘাস চাষের উপযুক্ত করে কেউ যদি সঠিক বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে এই ব্যবসা শুরু করে তাহলে অবশ্যই অনেক ভালো করা সম্ভব বলে আমি মনে করি।

গরু মোটাতাজাকরন ব্যবসার ফলে যে ফার্ম থেকে গোবর পাওয়া যাবে তা জৈব সার হিসেবে কৃষি জমিতে ব্যবহার করেও রাসায়ানিক সার ব্যবহারের খরচ কমাতে পারি ।

চামড়া রপ্তানির সাথে এই গরু মোটাতাজাকরন ব্যবসার সম্পর্ক আছে আমরা দেশে বেশি গরু উৎপাদন করতে পারলে বেশি পরিমানে গরুর চামড়া রপ্তানি করতে পারব।

সুতরাং দেশের গো মাংসের চাহিদা পূরনে এবং নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির দ্বারা বেকারত্ব দূরীকরনে গবাদিপশু বা গরু মোটাতাজাকরনের বিকল্প নাই ।

এখন জেনে নেওয়া যাক এই ব্যবসার সমস্যা বা চ্যালেঞ্জ গুলো কি কি?

১.সঠিক বিজনেস পরিকল্পনার অভাব

২. সঠিক ফার্ম পরিচালনার জন্য বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে গরু মোটাতাজাকরনের জ্ঞানের অভাব

৩.মূলধনের অভাব

৪.ব্যাংক লোন সহজলভ্য না হওয়া

৫. গো খাদ্যের অধিক দাম

৬. বাজার এনালাইসিস না করা

৭. দক্ষ লোকবলের অভাব

এই বিষয়ে বিভিন্ন সমস্যা বা চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে পারলে আপনি শরু করতে পারেন গরু মোটাতাজাকরন ব্যবসা (গরু মোটাতাজাকরণ ব্যবসা আয় ব্যয়)।

পরবর্তীতে আমি জানানোর চেষ্টা করবো কিভাবে গরু নির্বাচন করবেন এবং কিভাবে খাবার ব্যবস্থাপনা করবেন সেসব বিষয়ে।

লেখাটি শেষ পর্যন্ত পড়ার জন্য ধন্যবাদ। এমন সব দারুন দারুন পোস্ট পেতে Grathor এর Facebook Group এর সাথেই থাকুন।

লেখকঃ কৃষিবিদ রাসেল আহমেদ

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়,ময়মনসিংহ

Related Posts

13 Comments

মন্তব্য করুন