গাছে টাকা ধরে! কথাটির তাৎপর্য ও বিশ্লেষণ। যা জানলে আপনার চোখ কপালে উঠে যাবে।

সত্যি সত্যি কি গাছে টাকা ধরে?

ছোটবেলার শোনা কিছু প্রবাদ এর মধ্যে, প্রবাদটি একদম কমন। অনেকেই শুনেছেন আপনারা। আসলেই কি গাছে টাকা ধরে। অবাক হয়ে যাচ্ছেন, অবিশ্বাস করতে শুরু করেছেন। ঘটনা কিন্তু সত্যি। তাহলে আসুন জেনে নিন গাছে কি সত্যি সত্যি টাকা ধরে কিনা। টাকা ধরলেও সেটা কিভাবে ধরে। এবং কোন কোন গাছে টাকা ধরে।

বিষয়টি শুনতে অবাক লাগলেও বর্তমান যুগে এটি একটি চরম বাস্তবতা। আমরা অনেকেই কথাটির শুনেছি, তবে আগে সেটি ছিল কথার কথা। কিন্তু এখন সত্যি সত্যিই গাছে টাকা ধরতে শুরু করেছে। অবাক হবার কিছু নেই এমন অনেক গাছ আছে যে গাছে প্রচুর পাতা জন্মায় এবং সেই পাতাগুলো খুব চড়া দামে বিক্রি হয়। তো কথা তো একি হলো। তাহলে সত্যি সত্যিই গাছে টাকা ধরতে শুরু করেছে। অনেকেই এখন হয়তো ভাবছেন এগুলো একদম ফালতু কথা। তাদেরকে বলব লেখা টি পুরোপুরি পড়ে যাবেন। মাঝে মাঝে আপনি চমকে যেতে পারেন এমন তথ্য এখান থেকে পাবেন। এখন জেনে নেওয়া যাক কিভাবে গাছে টাকা ধরে?

আমরা অনেকেই বাড়িতে গাছ লাগাই। একেক জন একেক ধরনের গাছ লাগাই। প্রাচীনকাল থেকেই গাছ মানুষের চরম বন্ধু। এর উপকারের কথা বর্ণনা করে শেষ করা যাবে না। পৃথিবী ধ্বংস হওয়ার আগ পর্যন্ত প্রকৃত কোন প্রাকৃতিক বন্ধু যদি থেকে থাকে সেটা হচ্ছে গাছ। গাছের ফল আমাদের খাদ্য। গাছের ফুল আমাদের সুবাসিত করে।গাছের কাঠ থেকে আমরা তৈরি করি নানান রকম আসবাবপত্র। এমনকি কিছু কিছু গাছ আমরা ঔষধি হিসেবে ও চীনে থাকি। কিছু কিছু গাছের ছাল বাক্কর এবং শেকর আমাদের ভেষজ চিকিৎসায় দীর্ঘদিন যাবত ব্যবহৃত হয়ে আসছে।

অনেকেই গাছ গাছালি দিয়ে ঔষধ তৈরি করে থাকেন। বর্তমান আধুনিক যুগে মেডিসিন শিল্পে বিভিন্ন ধরনের গাছের ব্যবহার ছাড়া ঔষধ কল্পনাই করা যায় না।গাছ থেকে সংগ্রহীত কার্ড প্রাচীনকাল থেকে আমাদের জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। বিভিন্ন গাছের পাতা আমাদের রান্নায় ব্যবহৃত মসলা হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে সেই কবে থেকে। গাছ নিয়ে হিসাব করলে অনেক কিছুই পাওয়া যায়। তবে কিছু কিছু গাছ আছে সেগুলো তার ফুল এবং ফল এর থেকে তার পাতা দাঁড়ায় বিখ্যাত। এসব গাছের পাতা বর্তমানে বাজারে উচ্চ চাহিদার জায়গাটা ধরে রেখেছে। আপনি শুনলে অবাক হয়ে যাবেন এখন কিছু কিছু গাছের পাতা মোটা অংকের টাকায় বিক্রি হয়। যা শুনলে আপনার চোখ কপালে উঠে যাবে!

এখন জেনে নেওয়া যাক কোন কোন গাছের কি কি পাতায় আমরা প্রচুর দামে এবং চড়া মূল্যে কিনে থাকি। কিংবা সেগুলো কি কি কাজে ব্যবহৃত হয়। আসুন জেনে নেওয়া যাক।

তেজপাতা গাছ:-

আমরা অনেকেই তেজপাতার সাথে পরিচিত। প্রাচীনকাল থেকে এটি আমাদের রান্নার খুব ঐতিহ্যবাহী মসলা হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। তবে এর ব্যবহার শুধু রান্নায় সীমাবদ্ধ নেই। অনেক ভেষজ উদ্ভিদের ঔষধি গুণসম্পন্ন এবং ব্যাপক পরিচিত। বর্তমানে তেজপাতা বাজারে খুব চড়া মূল্যে বিক্রি হচ্ছে। বাজারে যে সকল পাতার কদর আছে তার মধ্যে সর্বপ্রথম আছে তেজপাতা। তেজপাতার এই চাহিদা শুধু যে রান্নায় সীমাবদ্ধ তা নয়। বর্তমানে কিছু কিছু চায়ের নতুন ফ্লেভার এবং অসাধারণ টেস্ট নিয়ে আসতে তেজপাতা ব্যবহার করা হয়। এবং দিন দিন এর ব্যবহার শুধু বেড়েই চলছে।

কাঁঠালের পাতা:-

আমরা প্রত্যেকেই কাঁঠাল গাছের সাথে পরিচিত । কাঁঠাল আমাদের জাতীয় ফল। এই ফল হাজার ও পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ। এই গাছের কাঠ খুবই শক্ত এবং মজবুত।কিন্তু মজার বিষয় হচ্ছে এতদিন এই গাছের কাঠ এবং ফলের কদর থাকলেও। এই গাছের পাতার যে এত মূল্যবান গুণাবলী আছে তা জানা ছিল না। বর্তমানে গ্রামে কিংবা শহরে হাট-বাজারগুলোতে এই গাছের পাতার চাহিদা আকাশচুম্বী। দামটাও অনেক ভালো পাওয়া যায়।আধুনিক যুগের যোগাযোগ মাধ্যমের উন্নতির সাথে আমাদের প্রত্যাহিক জীবনে আনুষঙ্গিক জিনিসগুলো বর্তমানে খুব ভালো দামে বিক্রি হচ্ছে। বিষয়টি খুব আশা জাগায়।বর্তমানে এই গাছের পাতার যে মূল্য তা গাছের মূল্য কেউ ছাড়িয়ে গেছে। আপনার বিশ্বাস না হলে আশে-পাশে একটু খোজ নিয়ে দেখে নিতে পারেন। তাহলেই আপনি এর সত্যতা বুঝতে পারবেন।

নিম গাছের পাতা:-

নিম গাছ একটি ঔষধি গাছ/এই গাছের পাতা বিভিন্ন ঔষধ শিল্পের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান/বর্তমানে ভেষজ চিকিৎসায় এর ব্যবহার সবচেয়ে বেশি/আগে তুলনামূলকভাবে দাম কম ছিল/কিন্তু বর্তমানে এই পাতার দাম অনেক বেড়ে গেছে/চাহিদা বাড়ার সাথে সাথে এই পাতার চাহিদাও বেড়েছে হাজার গুণ/বিভিন্ন চিকিৎসায় এটি সফলভাবে তার কার্যক্ষমতা প্রকাশ করার সফলতা দেখিয়েছে/বর্তমানে এই পাতা চাহিদা একটু হলেও কমেনি/বর্তমানে আধুনিক যুগেও এই পাতার চাহিদা বিশ্বব্যাপী.

সাজনা গাছের পাতা:

নামটি হয়তো অনেকেই শুনেছেন। এই গাছের ফল আমাদের রান্না সবজি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এবং বাজারে বেশ কদর রয়েছে। শহরাঞ্চলে তো এই সবজি খুব ভালো মানের সবজি হিসেবে পরিচিত। তাছাড়া অনেকেই সাজনা খেতে খুব ভালোবাসেন। কিন্তু আপনি জানেন কি এই গাছের পাতাও বিশেষ ঔষধ সম্পন্ন।বর্তমানে বিভিন্ন ধরণের আয়ূর্বেদিক চিকিৎসা ই এর ব্যবহার বহুলাংশে বেড়ে গেছে। এই গাছের পাতা বর্তমানে ঔষধ শিল্পের একটি জনপ্রিয় উপাদান। ইংরেজিতে এর অনেক নাম আছে। তবে আমরা অনেকে একে মরিঙ্গা হিসেবে চিনি। মরিঙ্গা”শব্দটি বৈজ্ঞানিক শব্দ। এই মরিঙ্গা এই সাজিনা গাছের পাতা থেকে তৈরি হয়। এটি একটি দামি ঔষধ। যাদের ব্লাড সার্কুলেশন কমে গেছে, কিংবা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত, এবং ক্যালসিয়ামের ঘাটতি পূরণে এই পাতার কোন বিকল্প নেই। আরো অনেক রকম কঠিন ও জটিল রোগের ঔষধ হিসেবে বর্তমানে এটি বাজারে খুব চাহিদা ফুল অবস্থানে আছে।

তেলা কচুর পাতা:-

কমবেশি আমরা অনেকেই পাতার সাথে পরিচিত। অনেকে এই পাতা বেটে ভর্তা করে কিংবা সবজী রান্না করে খেয়ে থাকেন। এই পাতা ও একটি ঔষধি গুণসম্পন্ন পাতা। বাজারের চাহিদা ও কোন অংশে কম নয়।

পিপুলটি গাছের পাতা:-

আপনারা অনেকেই গাছটি কে চেনেন। খুবই কার্যকরী এবং উপকারী একটি গাছ। এই গাছের ছাল অনেক আগে থেকে মানুষ ব্যবহার করে আসছে। ঔষধ শিল্পে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। বর্তমানে এর পাতার ব্যবহার বেড়ে গিয়েছে। বিশেষ করে যারা যারা স্লিম হতে চান, এমনকি গ্যাস্ট্রিকের সমস্যায় ভুগছেন তারা এই পাতাটি ব্যবহার করে থাকেন। এর অবস্থাও বর্তমানে খুব ভালো অবস্থানে আছে।

গোলপাতা:-

এই পাতাটি অনেক বিখ্যাত একটি পাতা। বিশেষ করে সুন্দরবন এই পাতাটি পাওয়া যায়। সেখানকার স্থানীয় ভাবে এই পাতাটি অনেক জনপ্রিয়। বাজারে পাতাটি খুব চড়া দামে বিক্রি হয়। অনেকে ঘরের ছাউনি হিসেবে এ পাতার ব্যবহার করেন। অপরূপ সৌন্দর্য এবং দেখতে গোল বলে এতে গোলপাতা হিসেবে বলা হয়।স্থানীয়ভাবে এর চাহিদা ও অন্যান্য পাতার চাইতে একটু বেশি।

এখন আপনারা মোটামুটি বেশ কিছু পাতার কথা জেনে গিয়েছেন, আরো অনেক কথা আছে সবগুলো নিয়ে লিখলে অনেক লেখা লেখা হয়ে যাবে। পরে অবশ্য অন্যান্য পাতার বিষয়ে লিখব। আপনারা সেই পাতাগুলো সম্পর্কে জানতে পারবেন। তবে এখানে উল্লেখ্য যে,, উপরের বর্ণনায় যে কাঁঠাল পাতার কথা বলা হয়েছে,এটি বর্তমান সময়ে অনেক জনপ্রিয় ও মূল্যবান অর্থবহ একই উপাদানে পরিণত হয়েছে। বর্তমান যুগে অনেকেই খামার করছেন। বিশেষ করে যারা ছাগলের খামার করেছেন তারাই এই এর সম্পর্কে খুব ভালো বুঝবেন। ছাগলের খুব পছন্দের একটি খাদ্য হলো এই কাঁঠাল পাতা। বর্তমানে বাজারে কাঁঠাল পাতা বিক্রি হয়। খুব চড়া মূল্যে বিক্রি হয়।আপনি জানলে অবাক হয়ে যাবেন একটি গাছের চাইতেও বর্তমানে এই গাছের পাতা বেশি দামে র।এর দাম এবং এর চাহিদার জন্য একে নিয়ে লিখতে বাধ্য হলাম।

পরিশেষে বলা যায় আমাদের দেশের সবকিছুই এখন তার মূল্য পেতে শুরু করেছে। কোন কিছুই আর অবহেলা নয়। কোন কিছুই আর ফেলে দেবার নয়। সবকিছুরই মূল্য আছে। আমাদেরকে জানতে হবে এবং বুঝতে হবে। কোথায় এবং কিভাবে সেগুলোর মূল্যায়ন আমরা করতে পারি। ভাবতে খুব অবাক লাগে যখন দেখি আমাদের দেশের গাছের পাতাও অর্থ বয়ে আনতে পারে। তাহলে কেনো বলা যাবে না, গাছে টাকা ধরে কথাটি তাৎপর্য বহুল। এটিকের অবহেলা আর কোনো সুযোগ নেই।

আমরা বেশি বেশি গাছ লাগাব,এবং গাছের যত্ন নিব কারণ গাছ আমাদের পরম বন্ধু ভবিষ্যতে এই গাছি আমাদের অর্থনৈতিক জীবনে গতি ফিরিয়ে আনবে এমনটাই আশা। সুতরাং একথা এখন বৈজ্ঞানিকভাবেও যুক্তিসঙ্গত এটি এখন কথার কথা নয় সত্যি সত্যিই গাছে টাকা ধরে। যুক্তি দিয়ে সেগুলো কে প্রতিষ্ঠা করা এখন সময়ের দাবি। আসুন বেশি বেশি গাছ লাগাই পরিবেশ এবং অর্থনীতি দুটোকেই বাচাই।

Related Posts

21 Comments

মন্তব্য করুন