গা শিউরে ওঠা ভুতের গল্প। যে ঘটনার কোনো ব্যাখ্যা পাওয়া সম্ভব না।

আসসালামু আলাইকুম প্রিয় পাঠকবৃন্দ। আশা করি সবাই অনেক ভাল আছেন বরাবরের মতো আপনি আপনাদের মাঝে গা শিউরে ওঠা একটি গল্প নিয়ে হাজির হলাম। গল্পটি আমার নিজের সাথে ঘটে যাওয়া। আশা করি সবাই অত্যন্ত মনোযোগ দিয়ে পড়বেন।
তখন ঠিক ডিসেম্বর মাস। শীতের সিজন চলছে। গ্রামে এই শীতের সময় টাই প্রায়ই যাত্রা গানের আসর বসতো। আমি তানিম এবং প্রান্ত এই তিন বন্ধু সিদ্ধান্ত নিলাম যে আমরা যাত্রা দেখতে যাব। আমাদের পাশের গ্রামে তখন যাত্রা চলছে। আর যাত্রাপালা সাধারণত শুরু হতো রাত এগারোটা কিংবা বারোটার দিকে। আমি ওই দিন সন্ধ্যার সময় তানিমকে বলে রাখি যে রাত দশটার সময় আমার বাসার সামনের দোকানটাতে গিয়ে বসবি। আমি ওইখান থেকে তোকে ডেকে নেব। তো রাত্রে খাওয়া দাওয়া শেষে আমি আর প্রান্ত মিলে আমাদের বাসার সামনের ওই দোকানটাতে গেলাম। গিয়ে দেখি তানিম বসে আছে, আমি বললাম কিরে যাবিনা ও ঠিক তেমন কোন কথার উত্তর দিল না শুধুমাত্র ঘাড় নাড়ালো হ্যাঁ। ও বরাবর এমনটা চুপচাপ থাকে না তারপরও আমি কিছু মনে না করে ওকে সাথে নিয়ে হাটা শুরু করি। প্রায় 40 মিনিট হাঁটার পর আমরা পাশের গ্রামের ওই যাত্রাপালা এর কাছে গেলাম। শীতের সময় হওয়ায় আমাদের বেশ কষ্টই হচ্ছিল কিন্তু তারপরেও আমরা বেশ কয়েক ঘন্টা যাত্রা দেখলাম। মাঝরাতের সময় হঠাৎ করেই প্রান্ত বলল চল অনেক হয়েছে আজ আর দেখবো না। তখন আমরা বললাম হ্যা আজকে আর দেখা লাগবে না চল চলে যাই। তারপর আমরা তিনজনে ওইখান থেকে বের হয়ে আসলাম। যেহেতু আমরা রাতের বেলায় যাত্রা দেখতে গিয়েছি তাই আমি আর প্রান্ত এই দুইজন সাথে করে টর্চ লাইট নিয়ে গিয়েছিলাম। টর্চলাইট দুটো খুব একটা বড় ছিল না তবে বেশ টিমটিমে আলোয় রাস্তা বেশ ভাল দেখা যেত। যেহেতু এখন মাঝরাত তাই গ্রামের কোথাও কোন আওয়াজ শোনা যাচ্ছে না, চারদিকে শুধু ঝিঁঝিঁ পোকার শব্দ। মাঝে মাঝে দূর হতে শেয়ালের ডাক শোনা যাচ্ছিল। আমি হঠাৎ করে তানিমকে বললাম কিরে যাত্রা কেমন দেখলি? কেমন লাগলো? ও শুধু একটু ঘাড় নাড়িয়ে বলল যে হ্যাঁ ভালো। তারপর আর কিছুই বলল না। ওরে মন চুপচাপ থাকা দেখে আমাদের কেমন যেন লাগছিল। আসলে ও সবসময়ই অনেক বেশি কথা বলা মানুষ টাইপের। আমরা ভাবছিলাম যেহেতু শীতের সময় তাই ও খুব একটা কথা বলতে পারছে না। আমি আর প্রান্ত টর্চলাইটের টিম টিমে আলো নিয়ে আস্তে আস্তে সামনের দিকে এগোতে থাকলাম। লাইটের আলো অনুসরণ করে আমাদের পিছনে পিছনে তানিম ও হাটছিল। কিছুদূর এগুতেই টর্চলাইটের টিমটিমে আলোয় একটা সাপ দেখতে পেলাম। সাপটা ঠিক রাস্তার মাঝখানে শুয়ে ছিল। আমাদের লাইটের আলো দেখে ওর ঠিক রাস্তার এক কোনে চলে গেল। আমরা এভাবে আস্তে আস্তে এগোতে থাকলাম। কিছুদুর গিয়েই আবার দেখতে পেলাম রাস্তার ঠিক মাঝখানে ডালে একটা সাপ ঝুলছে। এবার দেখে রীতিমত ভয় পেয়ে গেলাম। মনে হচ্ছিল সাপটা যেন ঠিক আমাদের দিকে প্রচন্ড রেগে তাকিয়ে আছে। আমরা কিছুটা ভয় পেয়ে একটু দৌড় দিয়ে সামনে এগিয়ে গেলাম। এতক্ষণে ঘটনাগুলো ঘটছিল অথচ তানিম যেন কিছু মনে করছিল না। এবার আমরা সামনের কিছুদূর এগুনোর পর একটা খালপাড়ে এসে হাজির হলাম। হঠাৎ করেই লাইটের টিমটিমে আলোয় দেখতে পেলাম যে খালপাড় থেকে শত শত সাপ আমাদের দিকে এগিয়ে আসছে, মনে হচ্ছিল যেন আমাদেরকে তাড়া করবে। এবার এমন দৃশ্য দেখে আমরা আর নিজেদের কন্ট্রোল করতে পারলাম না। নিজেরা নিজেদের মতো যেদিকে খুশি দৌড় দিতে লাগলাম। প্রান্ত তখনও আমার সাথেই ছিল। আমরা মাঠ ঘাট বন জঙ্গল পার হয়ে ঠিক কোথায় যে যাচ্ছিলাম বুঝে উঠতে পারছিলাম না। এভাবেই দৌড়াতে দৌড়াতে দৌড়াতে ফাঁকা মাঠ দিয়ে ঠিক কোথায় গিয়ে যে জ্ঞান হারালাম তা বলতে পারব না। ঠিক ভোরবেলা যখন আযান হয় তখন জ্ঞান ফিরে দেখতে পাই কর্দমাক্ত অবস্থায় একটা মাঠের ভেতরে পড়ে আছি। কিছুদূর খোঁজাখুঁজির পর প্রান্তকে ঠিক একই অবস্থায় পেলাম। এবার দুজন মিলে তানিমকে খুঁজতে লাগলাম অনেক খোঁজাখুঁজির পরেও কোথাও না পেয়ে হতাশ হয়ে ভয়ে ভয়ে বাড়ির দিকে রওনা দিলাম। ঠিক বুঝে উঠতে পারছিলাম না বাড়িতে গিয়ে কি জবাব দিব যে তানিম কোথায়! বাড়িতে গিয়ে কাউকে কিছু না বলে চুপি চুপি ঠিক হয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম। সকালে উঠে ভাবলাম তানিমের বাসায় গিয়ে ব্যাপারটা জানিয়ে আসি। গিয়ে দেখি তানিম তার মায়ের সাথে খাওয়া-দাওয়া করছে। আমি গিয়ে তানিমকে বললাম কিরে কালকে আসার সময় তোকে আর খুঁজে পাওয়া গেল না কেন! যেন কথাটা শুনে আকাশ থেকে পড়ল। তামিমের মা জবাব দিল কোথায় যাবে ওর তো গতকাল সন্ধ্যা থেকেই জ্বর সারারাত আমার সাথে ছিল। এ কথাটা শুনে আমি ঠিক এতটাই অবাক হলাম যে কি বলব বুঝে উঠতে পারছিলাম না। তখন তেমন কিছু না বলে ওর বাসা থেকে আমরা ফিরে এলাম আর ঠিক কালকের ঘটনাটা মনে করতে লাগলাম যে আসলে কি হয়েছিল! তানিম যদি আমাদের সাথে নাই যায় তাহলে কে গিয়েছিল? আর কেনই বা এতগুলো সাপ আমাদেরকে তাড়া করেছিল? এই ঘটনার উত্তর আমি আজও খুঁজে পাইনি। আসলেই কিছু কিছু ঘটনার কোন ব্যাখ্যা হয় না। ঘটনাটির যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে তাহলে প্রচুর শেয়ার করবেন। এতক্ষণ ধৈর্য ধরে পড়ার জন্য ধন্যবাদ।

Related Posts

12 Comments

মন্তব্য করুন