গৃহিণীর আয় যখন নিজের মুঠোয়…….

জগত তার নিজ গতিতে এগুচ্ছে। তাল মিলিয়ে সামনে পা ফেলছে মানুষও। স্বভাবতইঃ যে তাল মিলাতে বিফল হচ্ছে, সে পিছিয়ে পড়ছে।
আর এই ত্বরিত গতিটা  ছুঁয়ে দিচ্ছে আমাদেরকেও। আমাদের দেশের প্রত্যন্ত এলাকাগুলো পর্যন্ত।

বিভিন্ন এনজিওতো আছেই বহু কর্মস্হানের সুযোগ হিসেবে। তার সাথে ব্যক্তি উদ্যোগও এগিয়ে চলেছে বিভিন্ন ধারায়।  কিছুদিন আগেও মানুষ লেখাপড়া ছাড়া নিজেকে অন্য রকম কাজে লাগিয়ে আয়ের কথা ভাবতে পারতো না।

সেলাই ফোঁড়াই ব্যাপারটা পোশাক আশাকের মধ্যে সীমাবদ্ধ  থাকলেও বর্তমানে জীবনের নিত্য চাহিদার সাথে টেক্কা দিয়ে প্রয়োজনের উপজীব্য হিসেবে আদরণীয় হয়ে ওঠছে সময়ের সাথে সাথে।
জামা কাপড়ের মত প্রয়োজনীয় এখন জীবন যাত্রার ব্যবহার্য উপাদানগুলিও। রঙিন সুতোয় বোনা  ফুল পাখির কারুকাজ এখন সখের বা সময় কাটানোর উপায় নয়। জীবন ধারনের উপায়ও বটে। ঘরে বসে সংসার কর্মের পাশাপাশি গৃহিণীরা নিজেরাই যোগাড় করছেন কাজ।

বাজারের ব্যস্ত বিতানগুলির সাথে যোগসাজস করে আদায় করছেন অর্ডার।  কিছুটা জোর করেই বাহারী ডিজাইনের সোফার কুশন সেটের দু/ চারটে নমুনা রেখে আসছেন বিতানগুলিতে সোপিস হিসেবে। রাখছেন হাতের কাছের প্রতিদিনের কাজগুলিকে গুছিয়ে তোলবার প্রয়াসের সহজ সহজ পদ্ধতি। যেমন  নিত্য ব্যবহার্য  মশারীকে চটজলদি সাজিয়ে গুছিয়ে রাখার চমৎকার থলে। যা দৃষ্টিনন্দনও বটে। ওয়াল সেটিং  টিভিটাকে সযত্নে ধুলাবালি থেকে নিরাপদ রাখতে সহজ পদ্ধতির কভার।
চা য়ের পটের বাহারী টিকুজি এখন রূপান্তরিত হয়ে হটপটের গায়ে।

এবাড়ি ওবাড়ির গৃহিনীরা আশে পাশে যেতে যেতে দৃষ্টি নিবদ্ধ হওয়ায় আগ্রহভরে কাছে এগিয়ে যান। নাড়াচাড়া করতে করতে প্রয়োজনীয়তাটা অনুভব করেন।  উৎফুল্ল হয়ে নিজের সাথে আপনজনদের জন্য গোটা কয়েক নেবার তাগাদাটাও টের পান কখনও কখনও।

বিতানের মালিকেরা প্রথমে বিস্মিত ও পরে নিজেদের ব্যবসায়িক মনোভাব দিয়ে এর সুদুরপ্রসারতা বুঝে ফেলছেন। ফলশ্রুতিতে সৌখিন উদ্যোক্তারা তাদের আগ্রহকে কর্তব্যে রূপ দিচ্ছেন। আর এই কর্তব্য পালনে একা হাতের অপারগতা কাটিয়ে ওঠতে সন্ধানী হচ্ছেন করিৎকর্মা জনবলের প্রতি।  প্রথমটায় খুঁজে পেতে খানিকটা সময় লাগলেও পরবর্তীতে উৎসাহী কর্মীদের সঙ্কট আর থাকছে না।

এ গল্পটা আমাদের দেশের এক ছোট্ট এলাকার।  যেখান থেকে এই রকম সৃষ্টিশীলতা ছড়িয়ে পড়েছে ছোট শহর থেকে বড় বড় শহরে। উদ্ভব হয়েছে এর অনুকরণে আরও নানান আইডিয়া।
স্বামীর স্বল্প আয়ের পাশাপাশি গৃহিনীর অভাবনীয় সাফল্যে সম্পুর্ণ ঘুরে দাঁড়িয়েছে পরিবারটি। সন্তানদের উচ্চশিক্ষার দ্বার হয়েছে অবারিত।
একজনের সাফল্যের শিখরে তৈরি হয়েছে আরও কয়েক জোড়া কর্মঠ হাত। ঘুরে দাঁড়াবার আলো পৌঁচেছে সেই অভাবী সংসারগুলোর অন্ধকার ঘরগুলোতেও।
সাফল্য গাঁথা ছড়িয়েছে দিকে দিকে। নিজেদের অপাংতেয় ভাবা মানুষগুলো মনোবল গড়তে শিখেছে। করুণার পাত্র না হয়ে নিজের হাত পায়ের উপর ভরসা করতে শিখেছে।

বর্তমান জনসংখ্যার চাপে প্রতিযোগীতার কঠিন এ  সময়ে এমন প্রাপ্তিটা  অবশ্যই মহাপ্রাপ্তির সারিতেই রাখা যায়।
এতো গেল শুধু একটি মাত্র দিক। এমনি আরও অনেক নিত্য নতুন অথচ কার্যকরী বিষয় নিয়ে সৃজনশীলতার আবির্ভাব ঘটছে একের পর এক। আর অবাক হয়ে তখনি মানুষ এর আব্শ্যকতাটাও অনুভব করছে বিনা বাক্যব্যয়ে।
এবং মানতে বাধ্য হচ্ছে, এমনভাবে উপস্হাপন করো নিজেকে, যাতে কাজকে খুঁজতে না হয় , কাজই তোমাকে খুজে বের করে।

Related Posts

7 Comments

মন্তব্য করুন