“চোখের যত্নে খুঁটিনাটি”
শরীরের অন্যান্য অঙ্গগুলোর মতোই চোখকে আমাদের সমান যত্ন নেওয়া ও গুরুত্ব দেওয়া উচিত। কিন্তু, দুর্ভাগ্যবশত অনেকেই তা এড়িয়ে চলে। ফলস্বরুপ, তাদেরকে চোখের বিভিন্ন জটিল সমস্যায় ভুগতে হয়। দৈনন্দিন চোখের যত্নের অভ্যাস গড়ে তুললে চোখের বিভিন্ন সমস্যা দূর করার পাশাপাশি চোখকে ভালো রাখা যাবে। তাই সকলেরই জানা উচিত কীভাবে সঠিক উপায়ে চোখের যত্ন নেওয়া যায়। এই আর্টিকেলে আমি সেই উপায়গুলো উপস্থাপন করার চেষ্টা করেছি। আশা করি আপনাদের ভালো ছাড়া ক্ষতি হবে না।
- চোখকে বিরতি দিন-
অনেক কাজ করার পর আমরা যখন ক্লান্ত হয়ে পড়ি, স্বভাবতই বিশ্রাম নেই। তেমনি আমাদের দেহের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হিসেবে চোখেরও বিশ্রামের দরকার হয়। অনেকেই টিভি দেখা, কম্পিউটারে গেমস খেলা কিংবা কাজ করা, ল্যাপটপ, ফোন ব্যবহার ইত্যাদি ইলেকট্রনিক ডিভাইসের সাথে দীর্ঘক্ষণ সময় কাটায়। এসব ইলেকট্রনিক ডিভাইসের উজ্জ্বল আলো চোখের ক্ষতি করে। এসব ডিভাইস থেকে আগত আলোক রেখাগুলো সত্যিকার অর্থে ক্ষতিকর। এগুলো চোখের ক্ষতিই না শুধু , দেহের অন্যান্য অঙ্গেরও ব্যাপকহারে ক্ষতি সাধন করে, বিশেষ করে আমাদের মস্তিষ্কের। যারা এই ক্ষতিগুলোর সম্মুখীন হয়েছেন তারা ভালোভাবেই টের পেয়েছে এগুলোর ভয়াবহতা। তাই, এগুলোর অন্যতম একটি সমাধান হচ্ছে চোখকে বিরতি দেয়া। কিন্তু কীভাবে?
- প্রকৃতির সাথে একান্তে সময় কাটানোর চেষ্টা করুন।
- বন্ধুদের সাথে ঘুরতে যান। তবে ফোন সাইলেন্ট রেখে।
- চোখ বন্ধ করে নিয়মতি মেডিটেশন করুন।
- চোখ প্রশান্ত করে এমন জিনিস সংগ্রহ করার চেষ্টা করুন। (মানুষভেদে ভিন্ন হয়)
- ২০-২০-২০ রুলস অনুসরণ করুন। (এ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে শেষের দিকে)
- ভালো ঘুম, ভালো চোখ-
কাজের ফাঁকে ক্লান্ত হয়ে গেলে হয়তোবা হাত-পা ছেঁড়ে বসে বিশ্রাম নেওয়ার চেষ্টা করুন, মস্তিষ্ক থেকে হয়তোবা কিছুক্ষণের জন্য চিন্তাগুলো বের করে দেওয়ার চেষ্টা করুন। চোখ লেগে যাবে যাবে করে, ঘুমের দেশে চলে যাবেন যাবেন করে হঠাৎ করে আবার কাজে ফিরে গেলেন। এমন ঘটনা সচরাচরই ঘটে আসছে। বিশেষ করে অফিসগামী লোকদের ক্ষেত্রে বা ভোর সকালে প্রাইভেট-কোচিং কিংবা ক্লাশ থাকা ছাত্র-ছাত্রীদের ক্ষেত্রে। সারাদিনের জার্নি শেষে অন্যান্য অঙ্গগুলোর মতোই আমাদের চোখের এক বৃহৎ ক্লান্তি চলে আসে। সেক্ষেত্রে ঘুম কার্যকরী উপায় হিসেবে কাজ করে।
কম ঘুম এর কারনে আপনি বা্র্সট ব্লড ভেসেলে ভুগতে পারেন এবং আপনার চোখ বিশ্রামহীন, খিটখিটে, অবসাদ হয়ে যেতে পারে। এমনকি আপনার চোখ শুষ্ক কিংবা জলশূন্য হয়ে যেতে পারে। এগুলো আপনার চোখের ক্লান্তি বাড়িয়ে দেবে, স্বাচ্ছন্দ্যে থাকাটা আপনার জন্য কঠিন হয়ে পড়বে। কারন চোখ মানবদেহের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি অঙ্গ। তাই, চোখের প্রাত্যহিক কেয়ার তালিকায় রাতে একটি ভালো ও আরামদায়ক ঘুম রাখুন। ভালো ঘুমের জন্য-
- ঘুমুতে যাওয়ার অনেকক্ষণ আগেই ডিনার শেষ করুন।
- আশপাশ উষ্ণ রাখুন, লাইট অফ রাখুন।
- চোখের মেক-আপ পরিষ্কার করুন।
- আশপাশের পরিবেশ পরিষ্কার রাখুন-
একটি অপরিষ্কার কিংবা ময়লা-আবর্জনাযুক্ত পরিবেশ আমাদের স্বাস্থ্য ও মানসিকতা উভয়ের জন্য ক্ষতিকর। স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে সেটি বেশি বোধহয় চোখের উপরেই প্রভাব ফেলে। আমাদের অন্যান্য অঙ্গ আমরা সহজেই ঢেকে রাখতে পারি, কিন্তু চোখের ক্ষেত্রে সেটা একটু কষ্টকর হয়ে পড়ে কারন সবাই সাংগ্লাস কিংবা চশমার সাথে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেনা কিংবা সবসময় পড়তে ইচ্ছে হয় না। যদিওবা আমাদের চোখের রক্ষক হিসেবে কর্নিয়া নামক একটি লেয়ার রয়েছে, সেটি খুবই ছোট। সেক্ষেত্রে আমাদের চোখকে বিভিন্ন জীবাণু থেকে রক্ষার জন্য আশপাশের পরিবেশ পরিষ্কার রাখাটা অত্যন্ত জরুরি। তাই জন্য,
- বাসা-বাড়ি কিংবা ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার করার সময় চোখে সেফটি গ্লাস ব্যবহার করা।
- একটি পরিষ্কার ও স্বাস্থ্যসম্মত জীবনধারা পরিচালনা করা।
- ঘনঘন ব্যবহৃত জায়গাসমূহ পরিষ্কার ও জীবাণুমুক্ত রাখা।
- ব্যবহৃত গামছা বা তোয়ালে নিয়মতি পরিষ্কার ও পরিবর্তন করা।
- চোখ স্পর্শ করার আগে হাত পরিষ্কার করুন-
শুধু চোখ নয়, স্বাস্থ্যসম্মত একটি জীবন গঠনে আমাদের দেহের সকল অঙ্গাণুর ক্ষেত্রে হাত পরিষ্কার করা অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। চোখের ক্ষেত্রে বিশেষ করে যারা চোখের লেন্স ব্যবহার করে, তাদের জন্য ঘনঘন হাত পরিষ্কার কতটা গুরুত্বপূর্ণ? আপনি কি আমাকে বলবেন? যখন আপনি চোখ স্পর্শ করবেন কিংবা চোখে লেন্স লাগাবেন বা চোখ থেকে লেন্স তুলে ফেলবেন, সেক্ষেত্রে আগে আপনার হাত ভালো করে হ্যান্ড ওয়াশ কিংবা ভালো সাবান দিয়ে ধুয়ে নেওয়ার চেষ্টা করুন।
অন্যথায়, আপনার হাতের জীবাণু এবং ব্যাকটেরিয়া আপনার চোখে ইনফেকশন তৈরি করতে অনেক বৃহৎ ভূমিকা পালন করবে। চমৎকার নয় কি ব্যাপারটা? শুধুই কি ইনফেকশন? নাহ! আরও অন্যান্য রোগ হতে পারে আপনার চোখে। তাই, ঘন ঘন হাত পরিষ্কার আপনার হাতের ব্যাকটেরিয়া ও অন্যান্য জীবাণু ধ্বংস করবে। তাই,
- ঘন ঘন হাত পরিষ্কার করুন।
- চোখ স্পর্শ করার আগে হাত ধুয়া আবশ্যিক করে ফেলার চেষ্টা করুন।
- হাত ধুয়ার ক্ষেত্রে ভালো মানের হ্যান্ড ওয়াশ কিংবা সাবান ব্যবহার করুন।
- হাত শূকানোর জন্য পরিষ্কার তোয়ালে কিংবা টিস্যু ব্যবহার করুন ।
- ধূমপান থেকে বিরত থাকুন-
ধূমপান ক্ষতিকর, এই ব্যাপারটা ছোট থেকেই শুনে এসেছি। এমনকি যারা ধূমপান করে, তাদের থেকেও! তখন শুধু জানতাম এইটা ক্ষতিকর, ভালো না, চিহ ইত্যাদি। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে কীভাবে, কোথায় এবং কেন ক্ষতিকর এইগুলো জানতাম না। কারণ, ধূমপান করার ফলে কারো তাৎক্ষণিক ক্ষতি দেখিনি। তবে বড় হয়ে ছোটবেলার অনেক কাকা, মামা, নানার মৃত্যুর কারন বের করতে গিয়ে অনেকাংশে ধূমপানকেই দেখতে পেয়েছি। অন্যান্য অঙ্গের কথা বাদ দিয়ে, ধূমপানের ফলে চোখের কীভাবে ক্ষতি হয় তা বলি!
ধূমপান রক্তের ভেসেলকে অকেজো করে দেয়, যা কি-না চোখের নার্ভে রক্ত এবং নিউট্রিয়েন্টস সরবরাহ করে। ধূমপান চোখের ছানির উন্নতির সুযোগ বৃদ্ধি করে দেয়। এছাড়াও ধূমপানের ফলে উৎপন্ন ধোঁয়া চোখের ক্ষতি করে। বিশেষ করে যাদের চোখে ইনফেকশন আছে তাদের জন্য ধূমপান খুবই ভয়ানক। তাই,
- ধূমপান করে এমন ব্যক্তি থেকে দূরে থাকুন।
- আর আপনি ধূমপানে জড়িত থাকলে সেটি ত্যাগ করার চেষ্টা করুন। হয়তোবা অনেক কঠিন হবে, কিন্তু আপনি চেষ্টা করতে পারেন। সেক্ষেত্রে বিভিন্ন ট্রিক্স ফলো করতে পারেন।
- চোখকে অধিক মাত্রার উজ্জ্বল আলো থেকে দূরে রাখুন-
সূর্য্যের আলোর অতিভেগুনি রশ্মি চোখে cornea sunburn or photokeratitis হওয়ার ঝুঁকি বৃদ্ধি করে দেয়। তাছাড়া অতিরিক্ত উজ্জ্বল আলো চোখে বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। সূর্য্যের অধিক কিংবা অতিরিক্ত আলো বা সেটার মতো অন্যান্য উজ্জ্বল আলো “সোলার রেটিনোপ্যাথি” রোগের উদ্ভব ঘটাতে পারে। নীল আলোও ঠিক একইভাবে ক্ষতিকর।
তাই,
- চোখের জন্য সঠিক সংগ্রহ করুন এবং ব্যবহার করুন।
- ব্লু লাইট এড়িয়ে চলার চেষ্টা করুন, বিশেষ করে রাতে।
- কম উজ্জ্বলতার ইলেকট্রনিক লাইট ব্যবহার করার চেষ্টা করুন, বিশেষ করে রাতে।
- নিয়মিত ব্যায়াম করুন-
নিয়মিত ব্যায়াম বিভিন্ন কঠিন রোগ যেমন- ডায়বেটিস দূরীকরণ সহ চোখের ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ একটি টিপস হিসেবে কাজ করে।
নিয়মিত ব্যায়াম! প্রতিদিন না পারলে সপ্তাহে ৩০ মিনিট করে অন্তত ৩ দিন- যেটা আপনাকে চোখের বিভিন্ন ক্ষতিকর রোগ যেমন “Glaucoma” এবং “Macular Degeneration” রোধ করতে সহায়তা করবে।
এছাড়াও ব্যায়াম রক্ত চলাচল উন্নতি করে যা চোখে অক্সিজেন লেভেল এবং টক্সিন দূরীকরণের উন্নতি করে।
নিয়মিত ব্যায়াম উচ্চ রক্ত চাপ, উচ্চ কোলেস্টেরল, ডায়াবেটিস ইত্যাদি চোখের সমস্যা সম্পর্কিত রোগ দূরীকরণে সহয়তা করে।
- নিয়মিত ব্যায়াম করার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
- ব্যায়াম এর অভ্যাস না থাকলে হাটা দিয়ে শুরু করতে পারেন।
- ব্যায়ামের ক্ষেত্রে সকালকে গুরুত্ব দিন।
- ২০-২০-২০ রুলস অনুসরণ করা-
২০-২০-২০ এই রুলসটি ডাক্তার কর্তৃক প্রস্তাবিত। বিশেষ করে চোখের ক্ষেত্রে।
- কম্পিউটার বা ল্যাপটপে একটানা কাজ করলে বা কোনো কাজ কিংবা পড়াশোনায় একটানা মনোযোগ দিলে প্রতি ২০ মিনিট পর পর ২০ ফিট (৬.১ মিটার) দূরবর্তী কোনো স্থানে ২০ সেকেন্ডের জন্য তাকানোর চেষ্টা।
এক্সট্রা টিপস
- ইলেট্রনিক ডিভাইস (মোবাইল, কম্পিউটার, ল্যাপটপ) ব্যবহারে সতর্কতা অবলম্বন ।
- খাবারের তালিকায় চোখের জন্য উপকারী খাবার রাখুন
- পরিমিত পানি পান করুন।
- চোখের জন্য ক্ষতিকর প্রসাধনী ব্যবহারের সতর্কতা অবলম্বন করুন
- বিভিন্ন কাজে সেফটি গ্লাস ব্যবহার করুন
- দিনশেষে চোখের সামগ্রী পরিহার করুন।
- নিয়মতি ব্যায়াম করুন।
- ইলেকট্রনিক ডিভাইসের ক্ষেত্রে ব্রাইটনেস লেভেল দেখুন আপনার চোখের সাথে যায় কি-না।
- চোখের ডাক্তার দেখান
- ভিটামিন ই, জিংক, সিযুক্ত খাবার গ্রহণ করুন।
- প্রচুর পরিমাণে সবজি বিশেষ করে গাজর খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
- ড্রপ ব্যবহারের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবল্বন করুন।
- উজ্জ্বল আলোর দিকে সরাসরি তাকাবেন না।
কথা হবে পরবর্তী আর্টিকেলে ইন-শা-আল্লাহ! সেই অবধি ভালো থাকুন এবং আশেপাশের মানুষকে ভালো রাখুন। আর অবশ্যই অবশ্যই আপনার আর আপনার পরিবারের চোখের যত্ন নিতে ভুলবেন না। আল্লাহ-হাফিয।
Thanks
ধন্যবাদ
Outstanding post
ow
nice
tnx for this
good post
helpful
Ok
❤️
nice post
Thanks