ছাত্রজীবনে ইনকাম শুরু করার ৭টি মাধ্যম

ছাত্রজীবন থেকে অর্থ উপার্জন করা খুবই দরকারী এবং বাস্তব জীবনে অনেক কাজে লাগে। আপনি যদি আর্থিক সংকটে না থাকেন তাহলেও ছাত্রজীবন থেকেই অর্থ উপার্জন করা উচিৎ। কারণ এর ফলে আপনার মধ্যে বেশ কিছু গুন অর্জিত হবে যা পরবর্তীতে চাকরী জীবনে আপনার কাজে লাগবে।

আর তা ছাড়াও বর্তমানে চাকরির বাজারে হাহাকার চলছে, তাই ছাত্রজীবন থেকেই যদি একটু একটূ করে টাকা সঞ্চয় করতে থাকি তাহলে পড়ালেখা শেষে চাকরি না পেলেও অন্ততঃ অন্য কিছু করতে পারবো। তাই আজ আপনাদের টাকা ইনকামের বেশ কিছু মাধ্যম বলতে যাচ্ছি,যেগুলোর মধ্যে আপনি ভাল পারেন সেটার উপর ফোকাস করে এখন থেকেই অর্থ উপার্জন শুরু করে দিন।

১. টিউশনি: দেশের বেশিরভাগ ছাত্রেরই উপার্জনের প্রধান মাধ্যম হতে পারে টিউশনি। একজন অভিজ্ঞ টিচার খুব সহজেই টিউশনি পেতে পারেন, কিন্তু যারা অনভিজ্ঞ ও নতুন, তাদের টিউশনি পাওয়া টা একটু কঠিন। তাই যারা নতুন তাদের উচিৎ প্রথমে নিচের ক্লাসের স্টুডেন্ট দের পড়ানো শুরু করে আস্তে আস্তে উপরের ক্লাসের স্টুডেন্ট পড়ানো।

ভার্সিটি পড়ুয়া একজন ছাত্র একটা টিউশনি করিয়ে কমপক্ষে তিন হাজার টাকা প্রতি মাসে ইনকাম করতে পারবে। অনেক ক্ষেত্রে ৫ থেকে ১০ হাজার টাকাও পাওয়া যায়। আর যদি ৩-৪ টা টিউশনি করানো যায় তাহলে মাসে কমপক্ষে ১৫ থেকে ২৫ হাজার টাকা ইনকাম করা সম্ভব, যা দিয়ে নিজে চলার পাশাপাশি বেশ কিছু টাকা সঞ্চয় ও করতে পারবেন।

২. ফ্রিল্যান্সিং: বর্তমানের ছাত্ররা সবচেয়ে বেশী আগ্রহী ফ্রিল্যান্সিং করে উপার্জনে। ফ্রিল্যান্সিং হল অনলাইনে কাজের মাধ্যম, যেখানে বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন কোম্পানীর লোকেরা তাদের কিছু নির্দিষ্ট কাজ অনলাইনের মাধ্যমে লোক ভাড়া করে করিয়ে থাকে।

এখন বিজ্ঞান-প্রযুক্তির যুগে ফ্রিল্যান্সিং এর চাহিদা অনেক বেশী। স্টুডেন্টরা চাইলে যে কোনো সময় যে কোনো স্থানে বসে ফ্রিল্যান্সিং করতে পারবে, শুধু দরকার ওই কাজে তাদের পারদর্শীতা এবং তার সাথে একটি কম্পিউটার বা ল্যাপটপ। তবে এখন অনেক কাজ স্মার্টফোনেও করা যায়।

<

সবচেয়ে বেশী পরিচিত কয়েকটি ফ্রিল্যান্সিং সাইট হচ্ছে- fiverr, upwork, freelancer dot com, 99 design, truelancer ইত্যাদি। এসব সাইটে আপনি পছন্দ মত ক্যাটাগরি যেমন গ্রাফিক্স ডিজাইন, ওয়েব ডেভেলপমেন্ট, অ্যাপ ডেভেলপমেন্ট, টাইপিং, ডাটা এন্ট্রি, ট্র্যান্সলেটিং সহ আরো অনেক ধরনের ক্যাটাগরিতে কাজ করতে পারবেন।

৩. ফটোগ্রাফি: আমরা অনেকেই শখের বশে ফটোগ্রাফি করে থাকি। কিন্তু এই ফটোগ্রাফির মাধ্যমেই যদি আমরা অর্থ উপার্জন করতে পারি তাহলে কেমন হয়? হ্যা এটা সত্যি সম্ভব। বর্তমানে ফটোগ্রাফি হচ্ছে অন্যতম জনপ্রিয় ইনকামের মাধ্যম। যদিও আমাদের দেশে অনেকেই এ ব্যাপারে জানেন না।

যাদের একটি মোটামুটি মানের ক্যামেরা আছে বা যারা শখের বশে প্রকৃতির বিভিন্ন ছবি তুলে থাকেন, তারা চাইলেই বিভিন্ন ওয়েবসাইটে যেমন- shutterstock, alamy, 500px, smugmug pro ইত্যাদিতে আপনাদের ফটো গুলো বিক্রি করতে পারবেন। তা ছাড়া এখন স্মার্টফোনের ক্যামেরাগুলো ও অনেক ভাল মানের হয়ে থাকে। তবে শুধু ভাল ক্যামেরা থাকলেই হবে না, ফটোগ্রাফি সম্পর্কে আপনার ন্যূনতম জ্ঞান থাকতে হবে। একটি ভাল মানের ছবি আপনি অনেক ভাল প্রাইজে বিক্রি করতে পারবেন।

৪. আর্টিকেল লিখা: হ্যা আর্টিকেল লিখেও ইনকাম করা যায়। আপনার যদি আর্টিকেল লিখার মত ধৈর্য্য এবং চিন্তাশক্তি থাকে তাহলে অবসর সময়ে। আর্টিকেল লিখে প্রচুর টাকা আয় করতে পারবেন। কিন্তু এক্ষেত্রে অবশ্যই আপনার নিজের লিখতে হবে, অন্যের লিখা কপি করা আইনত দন্ডনীয়। বাংলাদেশে আর্টিকেল লিখে ইনকাম করার জন্য বেশ কিছু ওয়েবসাইট রয়েছে। তার মধ্যে grathor অন্যতম। আপনি এখন গ্রাথোর সাইটেই এই আর্টিকেলটি পড়ছেন। এখানে আপনি আর্টিকেল লিখে উপার্জন করতে চাইলে রেজিস্ট্রেশন করে নিতে পারেন। রেজিষ্ট্রেশন করার লিংক পেতে এখানে ক্লিক করুন

৫. অ্যাডসেন্স: এটি হল গুগলের একটি এডভারটাইজমেন্ট আর্নিং সিস্টেম। অ্যাডসেন্স এ একাউন্ট খুলে আপনি আপনার কোনো ওয়েবসাইট বা অ্যাপ এ বিজ্ঞাপন দেখিয়ে অর্থ উপার্জন করতে পারবেন। চাইলে আপনি ইউটিউব চ্যানেল খুলেও এখান থেকে ইনকাম করতে পারবেন। বর্তমান প্রজন্মের তরুনদের কাছে এটি একটি জনপ্রিয় আর্নিং মাধ্যম।

৬. ডিজাইনিং ও ক্র্যাফটিং:  বিভিন্ন ডিজাইনিং ও ক্র্যাফট বা হস্তশিল্পের মাধ্যমে ইনকাম করা যায়। আপনার মধ্যে যদি সৃজনশীলতা থাকে তাহলে সেটা কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন প্রোডাক্ট ডিজাইন করে,প্রেজেন্টেশনের স্লাইড বা এসাইনমেন্ট ডিজাইন করে, ঘর সাজিয়ে বা বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সবকিছু সাজিয়ে অর্থ উপার্জন করতে পারেন। আবার আপনি চাইলে নিজে নিজে বিভিন্ন হস্তশিল্প বা কারুকার্য করে সেগুলো অন্যদের কাছে বিক্রি করতে পারবেন। এ কাজে বিশেষ করে মেয়েরা পারদর্শী, তবে এখন ছেলেরাও এসব কাজে সমানভাবে এগিয়ে চলছে।

৭. ব্লগিং: দেশে বেশ কিছু ব্লগার রয়েছে যারা ব্লগিং করেই ইনকাম করছেন। আপনিও চাইলে ব্লগিনগ করতে পারেন, এজন্য আপনাকে একটি নিজস্ব ওয়েবসাইট খুলতে হবে। তারপর কিছু আর্টিকেল, নিউজ বা যে কোনো বিষয়ে লিখালিখি করতে হবে। এতে আপনার ব্লগিং সাইটে বিজ্ঞাপন দেখিয়ে ইনকাম করতে পারবেন। আপনি চাইলে আপনার ওয়েবসাইটের রিচ বাড়িয়ে সেটাঅ বিক্রি করতে পারবেন। যেই ওয়েবসাইটের রিচ অনেক বেশী, সেটা তত ভাল দামে বিক্রি করা সম্ভব।

আপনি যদি স্টুডেন্ট হয়ে থাকেন এবং ছোটখাটো কাজ করে ইনকাম করতে চান, তাহলে উপরের ৭ টি মাধ্যম থেকে যে কোনো একটি মাধ্যমের উপর ফোকাস্করে ইনকামের চেষ্টা করতে থাকুন। আমি গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি, আপনার এই চেষ্টা একসময় আপনারই কাজে লাগবে। আশা করি আপনাদের কিছুটা হলেও কাজে লাগবে। সবাই ভাল থাকবেন।

Related Posts