ছায়া হীন

জেল থেকে সবে মাত্র ছাড়া পেয়েছে ইমদাদুল।মিথ্যা অভিযোগে আজ তার এই শাস্তি।যাই হোক ফাঁসির একদম কাঠ গোড়ায় গিয়েছিল ইমদাদুল। তবে ভাগ্য ভালো বলতে হয়।তার বদলে আসল আসামির ফাঁসি হলে গেল।ওই লোকের নাম ইমদাদুল। জেল থেকে ছাড়া পেয়ে ইমদাদুল যেন কত বছর পর আকাশ মেলে তাকালো।আজ পৃথিবী টা খুব সুন্দর লাগছে।কি সুন্দর রোদ উঠেছে।সবার কাছে রোদের তাপ টা বিরক্ত লাগলেও ইমদাদুল কাছে খারাপ নয়। হটাৎ করে কেমন যেন খুব তৃষ্ণা লাগছে ।মনে হচ্ছে কত দিন ধরে সে পানি খায়নি।একটা চা স্টলে ঢুকলো সে। চা ওয়ালার কাছ থেকে সে পানি চাইল।চা ওয়ালা তাকে পানি দিলেন।এর পর আরেক মগ পানি চাইলেন ।চা ওয়ালা তাকে আবার পানি দিল।আবার চাইলেন ।এবার চা ওয়ালা একটু বিরক্ত হল।কিন্তু কিছু বলল না।৪থ বার পানি চাইতেই চা ওয়ালা কেমন যেন অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে ইমদাদুল এর দিকে।তার চোখে মুখে ভয় এর ছোপ।চোখ দুটো বড় বড় করে তাকিয়ে আছে ইমদাদুল এর দিকে।
কিছু ক্ষণ পর ইমদাদুল বলে উঠলো:
– কি ভাই কি হয়ছে?
– ভাই ভাই আমি আপনাকে আর পানি দিতে পারবো না।আপনি আমার দোকান থেকে বের হন।
– কেন ভাই কি হইছে ।
– কিছু হয় নাই ভাই ভাই আপনি বের হন।
– আচ্ছা ভাই আমি আপনাকে টাকা দিবো কিন্তু ভাই আর এক গ্লাস পানি দেন খুব তৃষ্ণা পেয়েছে।
– ভাই। আপনার টাকা চাই না ভাই।আপনি তাড়াতাড়ি বের হন।
– ভাই আমাকে দেখে আপনি কি ভয় পাচ্ছেন কেন?
– ভাই একটু আগে আমার পাশ দিয়ে আপনার ছায়া বের হয়ে গেছে।
– মানে?
– বিশ্বাস করেন।দেখেন আপনার ছায়া নাই।
– আরে তাই তো এত রোদ তবুও আমার। ছায়া নাই।কি ব্যাপার!,,,,আচ্ছা ভাই আমি যাচ্ছি ,যাচ্ছি।
– হয় আপনি কোন ভুত না হয় জিন টিন হবেন।
ইমদাদুল বেরিয়ে এলো।বুঝতে পারছে না এমন টা কেন হচ্ছে।বয়স তার বেশি না।৩০-৩২ হবে।বলতে গেলে মডার্ন যুগের ছেলেই বলা চলে।
রাস্তার সব মানুষ তার দিয়ে তাকিয়ে আছে।এসব হচ্ছে টা কি?সবার ছায়া আছে।শুধু তার ছায়া নেই।সে রাস্তায় হাঁটছে,হাঁটছে ,হাঁটছে,হাঁটছে।কেমন যেন লাগছে।হাঁটার সময় শরীরের কোন ওজনই যেন টের পাচ্ছে না।

  1. ___________________________________
    আমাদের মুসলিম দের মধ্যে আমরা বিশ্বাস করি যে এই পৃথিবীতে শুধু জিব জগতই নেই।তার সাথে জ্বীন নামের এক প্রকার কিছু বাস করে ,যারা আল্লাহ র সৃষ্টি ।
    মফিজ হুজুর।বয়স্ ৬০ পার। একটা মক্তবে কাজ করেন।কিন্তু এই মক্তবে শুধু যে মানুষের ছেলে মেয়ে রাই পড়ে তাই না।তার সাথে পরে জ্বিনের ছেলে মেয়েরাও।এদের মধ্যে একজন ছিল ইফ্রান নামের একটা ছেলে।দীর্ঘ ১২ বছর ধরে মফিজ হুজুরের কাছে তালিম নিচ্ছে ইফরান।একদিন ইফরান এসে মফিজ কে বলল
    – আসসালামুআলাইকুম।
    – ওয়ালাইকুমুস সালাম।
    – কি ব্যাপার ইফরান ?
    – হুজুর আমার তালিম নেওয়া তো আজকেই শেষ।আব্বা বলেছে যে আজ থেকে আমিই আপনার গোলামী করব।
    – ও হ্যা।আসো আজ শেষ দিনের মত তুমকে পাঠ শিখাই।
    ———————————————————–
    মফিজ হুজুরের কাছে আজ শেষ তালিম নিল ইফরান।আজ থেকে মফিজ হুজুরের দাস।ভালই দিন কাল যাচ্ছিল মফিজ হুজুরের।তার মক্তবটা আধাপাকা ইটের।এই মক্তব টা ইফরানকে দিয়ে একটু পাকা করে নিতে হবে।জ্বীনদের আবার সব ক্ষমতা থাকে।ভাবছে নিজের থাকার ঘরটাও একটু সারিয়ে নিবে মফিজ।মফিজ এবং ইমদাদুল একই গ্রামের বাসিন্দা।একদিন রাতে মফিজের সাথে দেখা হল ইমদাদুল এর।
    – আরে ইমাদ(ইমদাদুল)না।
    – হ চাচা আমি ইমাদ।
    – টা বাবা শুনছিলাম তুমি নাকি জেলে গেছিলা টা ছাড়া পাইলা কবে?
    – সে চাচা অনেক কাহিনী।কিন্তু আপনার কাছে যে বিষয় আসছিলাম,,
    – কি বিষয়।
    – না আসলে চাচা আপনার হতে থাকা টর্চ টা আমার দিকে মারেন তো দেখেন ত কিছু বুঝতে পারেন কি না?
    – কই তেমন কিছু ত নজরে আসে না।
    – ভাল কইরা একটু দেখেন,দেখতে পাবেন আমার ছায়া নাই।
    – কি কইবার চাও?কই দেহি?
    মফিজ হুজুরের চোখ ছানা বড়া ।বাস্তবেই ইমদাদুল ছায়া নাই।
    কিন্তু এইডা হইলো কেমনে?(মফিজ)।
    – জানিনা চাচা কি হইতে যে কি হইয়া গেল।
    ইমদাদুল সব ঘটনা মফিজ কে খুলে বলল।মফিজ বলল যে চিন্তার কোন কারণ নাই।দেখা যাক শেষে কি হয়।
    গ্রামে ইমদাদুল যা ঘর বাড়ি ছিল তার সবই গ্রামের মরল নিলামে তুলেছে অনেক আগেই।তাই মফিজ হুজুর হল যে ইমদাদুল যেন তার মক্তবে থেকে যায়।তাই হল।
    ওই রাতে ইফরান ও মফিজ হুজুর কথা বলছে:
    – হুজুর ,আপনি যে ছেলে টিকে মক্তবে আশ্রয় দিয়েছিলেন কই তাকে তো দেখলাম না।
    – কি বল।আমি তো একটু আগেই দেখলাম।চলতো দেখি।
    মফিজ আর ইফরান খুঁজলো পেল না।নাহ কোত্থাও নেই।নেই তো নেই।
    পরের দিন সকালে মফিজ গেল চায়ের দোকানে।
    – কীরে সিদ্দিক আজকের খবরের কাগজ এসেছে।
    – না চাচা।কালকের টা আছে।এই নেন।
    খবরের প্রথম পাতাটা দেখতেই থমকে গেল মফিজ।ফাঁসি সম্পন্ন হোয়েছে হিংস্র খুনি ইমদাদুল এর।
    হ্যা এই সেই ইমদাদুল।জার কথা আপনি এত ক্ষণ শুনে আসছেন।সেই ইমদাদুল।আসল আসামিও ধরা পড়েনি।কিন্তু সেই ছায়া।

Related Posts