সৃষ্টি জগতে যত প্রকার জ্ঞান আছে তার মধ্যে সর্বোত্তম জ্ঞান হলো নিজেকে চেনা। যে একবার সঠিক ভাবে নিজেকে চিনতে পারে, তার জন্য জগতের আর কোনো জ্ঞান বাকী থাকেনা। সুফি দরবেশ ইমাম হাসান বসরী বলেছেন, “মান আরাফা নাফশাহু, ফাকদ আরাফা রব্বাহু” – যার অর্থঃ “যে নিজেকে জেনেছে, সে প্রভুকে জেনেছে”।
প্রখ্যাত সাধক লালন সাইজি তার লালন গীতিসমগ্র– তে একই কথা একটু ভিন্নভাবে বলেছেন, “আত্মতত্ব যে জেনেছে, দিব্যজ্ঞানী সেই হয়েছে। কু বৃক্ষে সু ফল পেয়েছে”। আমরা জানি সাইজির গানগুলো বেশীরভাগই আত্মতত্বমূলক। নিজেকে চিনতে চাইলে এই গানগুলো নিয়ে রিসার্চ করা উচিত। ভাবা উচিত এগুলোর অর্থ নিয়ে।
সাধক কালাশা ফকীর তার কালাশা গীতিসমগ্র – তে বলেছেন, “আমি করি আমার আমার, আমি বা কার, করো বিচার”। অর্থাৎ আমি নামের যে সত্বাকে ঘিরে আমাদের এত আয়োজন, সেই আমি কে? আমি কে তা আগে জানতে হবে। Know thyself, অর্থাৎ নিজেকে জানো। গ্রীক দার্শনিক সক্রেটিস যথার্থই বলেছেন! কেননা, নিজেকে জানলেই অপরকে জানা হয়ে যায়। সকলকে জানা যায়। জীবাত্মা আর পরমাত্মা একাত্ম হয়ে মিশে যায়। যে অবস্থাকে সুফিবাদের (Sufism) ভাষায় বলা হয় ফানা ফিল্লাহ। অর্থাৎ পরস্পর পরস্পরে মিশে একাকার হয়ে যাওয়া। যেমন, পানি এবং চিনি মিশে শরবত হয়ে যায়। যেখানে কারোও আলাদা কোনও অস্তিত্ব থাকে না। সুতরাং আত্মতত্ব জ্ঞান লাভের কোনো বিকল্প নেই। আর আত্মতত্ব জ্ঞান লাভের জন্য গুরুর শরণাপন্ন হওয়ারও কোনো বিকল্প নেই।
জগত সংসারের নিয়ম অনুসারে মাতা পিতা একটি সন্তানকে দেহ দিয়ে জন্ম দেন। ফলে সে জগত সংসারে এসে এসে পৃথিবীর আলো বাতাসে নিজের অস্তিত্বকে অনুভব করতে পারে। কিন্তু তার প্রকৃত জন্ম তো হয় তখনই, যখন সে একজন সদগুরুর চরণে নিজেকে সমর্পন করে। গুরুর চরণে ভক্তি দিয়ে সে পুণরায় জন্মলাভ করে। এ এক আধ্যাত্মিক জন্ম। শিশুর কাছে পৃথিবী যেমন নতুন লাগে, তেমনি একজন শিষ্য গুরুর কাছে গিয়ে যেন আধ্যাত্মিক জগতে পুণরায় জন্ম নেয়। আধ্যাত্মিক জগতে সে শিশু হয়ে জন্ম নেয়। শিশু হয়েই সে শিষ্যত্ব পায়। এ ব্যাপারে পাগল জালাল তার জালাল গীতিসমগ্র – তে বলেছেন,” স্রষ্টাকে বিশ্বাস করো, গুরুকে হৃদয়ে ধরো, সে বিনে আর ভবপাড়ে গতি কিছু নাই”। অতএব, নিজকে জানতে হলে, আপন সত্বাকে চিনতে হলে, আত্মতত্ব জেনে গুরুর সহায়তাকে আশ্রয় করে ভবনদীতে তরী ভাসাতে হবে। তবেই পাড়ি মিলবে বলে আশা করা যায়।
পরিশেষে কোনও এক সূফী সাধকের ভাষায় বলতে চাই, “যা কিছু আছে এই বিশ্ব ভ্রহ্মান্ডে, তার সবই বিরাজে মানব কাণ্ডে!” অর্থাৎ মহাবিশ্বে যা কিছুর অস্তিত্ব আছে, তার সব কিছুরই প্রতিচ্ছবি মানব দেহে বিরাজ করে। শুধু দেখা ও উপলব্ধি করার মত অন্তর্চক্ষু ও মন থাকা চাই।
ধন্যবাদান্তে আমি … …
খুব ভাল একটা পোস্ট
অনেক অনেক ধন্যবাদ, আপু।
hum thik bolechen
Yeah, know thyself
nice
good
❤️