জেলা শহরে কয়েকটি ব্যবসার কৌশল ও আইডিয়া

আপনি যদি স্বনির্ভর হতে চান অথবা একজন উদ্যোক্তা হতে চান তাহলে আপনাকে ব্যবসা সম্পর্কে কিছু মৌলিক ধারনা থাকতে হবে।  জেলা শহরে কয়েকটি ব্যবসার কৌশল ও আইডিয়া নিচে আলোচনা করা হল।

মৌলিক ধারনাগুলো নিম্নরুপঃ

  • আপনার মূলধন বা পুঁজি কেমন।
  • আপনার এলাকায় কোন পন্যের মার্কেট বেশি।
  • কোন পন্যের চাহিদা ক্রেতাকে বেশি প্রভাবিত করে।
  • আপনার পুঁজি অনুযায়ী ব্যবসার ধরন নির্বাচন।
  • কোন ধরনের পন্য নিয়ে আপনি ব্যবসা করতে বেশি আগ্রহী।
  • যে পন্য নিয়ে ব্যবসা করতে চাচ্ছেন তার গুনগত মান কেমন হতে পারে।
  • আপনার ব্যবসায় প্রসারের ভবিষ্যত লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন ।
  • কোন ধরনের কাস্টমারের সাথে আপনার পরিচিতি বেশি।
  • বাজার বিশ্লেষন করার ক্ষমতা।
  • ঝুঁকি গ্রহনের ক্ষমতা।
  • অধিক ধৌর্যশীল হতে হবে।
  • আপনার ভাললাগা ও কাস্টমারের চাহিদার সমন্বয়ে ব্যবসা শুরু করুন।

জেলা শহরে কয়েকটি ব্যবসার কৌশল ও আইডিয়া

  1. পোষা পাঁখি বা কবুতরের ব্যবসাঃআপনি যদি সৌখিন ও মননশীল মানসিকতা সম্পন্ন হয়ে থাকেন তাহলে এই ব্যবসা আপনার জন্য যথেষ্ট উপযোগী হবে।কেননা আপনার সৌখিনতার সাথে সাথে এই ব্যবসার প্রসার ঘটবে। পোষা পাঁখি বা কবুতর ছোট বাচ্চা ছাড়াও অনেক মেয়েদেরও পছন্দের । তাই মনের মাধুরী মেশানো একটি ব্যবসা হতে পারে এটি। আপনার বাড়ির ছাদের কার্নিশে অথবা টিনের চালাঘরের নিচে আপনি স্বল্প পরিসরে কবুতর পালন করতে পারেন। আবার আপনি বানিজ্যিক ভাবে একটি ঘরে একাধিক খাঁচায় বিভিন্ন প্রজাতির পাঁখি পালন করে ব্যবসায় লাভবান হতে পারেন।তবে এ ক্ষেত্রে অভিজ্ঞদের পরামর্শ নিয়ে আপনি এগুতে পারেন। এখানে উল্লেখ্য যে পাঁখিদের প্রজননের জন্য উপযোগি ব্যবস্থা করে দিতে হবে । বিভিন্ন প্রজাতির পাঁখিদের খাবার বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। তাই আপনাকে পাঁখিদের খাবারের দিকেও লক্ষ্য রাখতে হবে। এবং প্রয়োজনীয় ঔষুধ সরবরাহ করতে হবে।বর্তমান অনলাইনের যুগে আপনি খুব সহজেই এসব পাঁখি বিভিন্ন অনলাইন প্লাটফর্মে ক্রয় বিক্রয় করতে পারবেন।এ ক্ষেত্রে আপনাকে খেয়াল রাখতে হবে কিছু বিদেশী পাঁখি আছে যেগুলোর বাজার মূল্য ও চাহিদা অনেক বেশি আবার খাবারের পরিমানও কম লাগে । দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধগতির বাজারে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
  2. কফি শপ বা চায়ের দোকানঃ আপনি যদি বেকার বসে থাকেন অথবা আপনার পুঁজি যদি কম হয় তাহলে আপনি কফি বা চায়ের দোকান করতে পারেন। এ ক্ষেত্রে আপনাকে অবশ্যয় জনবহুল এলাকা নির্বাচন করতে হবে। এবং আপনার দোকানটি ছোট হলেও সমস্যা নেই। আপনি ডেকোরেশন ভালভাবে করে নিবেন। এবং সৃজনশীল ডিজাইনের নমন্বয় ঘটাবেন যেন কাস্টমার দেখে আকৃষ্ট হয়। এবং আপনার ভাবনাকে স্বাগত জানায়। ঝামেলা এড়াতে আপনি রেডিমেড ইলেকট্রিক মিক্সিং মেশিন ক্রয় করতে পারেন। এতে আপনার সময় বাঁচবে অনেক বেশি সার্ভ করতে পারবেন আবার জনবলও কম লাগবে।
  3. অনলাইন শপঃ আপনার যদি অনলাইনে অভিজ্ঞতা থাকে তাহলে আপনি বিভিন্ন পন্য নিয়ে অনলাইনে ব্যবসা করতে পারেন। এতে আপনার আলাদা দোকানের প্রয়োজন হবেনা। আপনার পুঁজিও কম লাগবে। আপনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আপনার নির্দিষ্ট পেইজ থেকে আপনার পন্যটিকে বিক্রি করতে পারেন। অবশ্যয় পন্যের গুনগত মান ঠিক রেখে ব্যবসা করতে হবে।কাস্টমার সন্তুষ্ট হলে আপনার ব্যবসার পরিধিও বাড়বে । এতে আপনি লাভবান হতে পারেন।
  4. মৌসুমি ব্যবসাঃ এটি হতে পারে আপনার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ন ব্যবসা। যেমন ধরুন বৈশাখ জৈষ্ঠ মাসে আম ও লিচুর ব্যপক চাহিদা থাকে। এই ব্যবসায় আপনাকে আগে থেকেই আম ও লিচুর বাগান চুক্তিতে কিনে রাখতে হবে। ফরমালিন মুক্ত প্রাকৃতিক মৌসুমি ফল অধিকাংশ লোকেরই প্রিয় খাবার। তাই আপনি এই ব্যবসা করে সাময়ীক লাভবান হতে পারেন। আপনি চাইলে এই ব্যবসাটিও অনলাইনে ঘরে বসে করতে পারেন।
  5. কাঁচামালের ব্যবসাঃ আপনার এলাকায় যে পন্য সহজলভ্য তেমন কিছু পন্য আপনি বাহিরের জেলাগুলোতে পাইকারী দিয়ে এই ব্যবসাটি করতে পারেন। তবে আপনাকে বিভিন্ন জেলার কাঁচামালের চাহিদা সম্পর্কে ধারনা থাকতে হবে। এবং পাইকারী ও খুচরা দাম জানা থাকতে হবে। ট্রান্সপোর্ট খরচ কত হতে পারে? পচনশীল পন্যের স্টক বেশিদিন রাখা যাবেনা এসব বিষয়ে লক্ষ্য রেখে ব্যবসা করতে হবে।
  6. সরিষার তেলের ব্যবসাঃ আপনি দানা সরিষা কিনে তা প্রকৃয়াধীন বা বোতলজাত করে বাজারে বিক্রি করতে পারেন। খাঁটি সরিষার তেলের ব্যপক চাহিদা রয়েছে। আর ঘানিতে ভাঙা সরিষার তেলের তো আরও চাহিদা । তাই আপনি দানা সরিষা সংগ্রহ করে ,বিশেষ করে উত্তরবঙ্গে সরিষার ফলন বেশি হয়। আপনি চাইলে এদিক থেকে সংগ্রহ করে বোতল জাত করে স্থানীয় বা জাতীয় বাজারে বিক্রি করতে পারেন।
  7. নার্সারীর ব্যবসাঃ আপনার বাড়ির আশেপাশে বা পরিত্যক্ত কোন জমি থেকে থাকে তাহলে তা পরিষ্কার করে প্রয়োজনীয় সার ব্যবহার করে মাটিকে আবাদ উপযোগী করে আপনি এখানে বিভিন্ন ফলজ বৃক্ষ ,বিভিন্ন প্রজাতির ফুলের গাছ, ঔষুধি গাছ লাগিয়ে বানিজ্যিক ভাবে প্রসার ঘটাতে পারেন।
  8. মুরগী পালনঃ আপনি চাইলে স্বল্প পরিসরে এবং পর্যায়ক্রমে বানিজ্যিক ভাবে দেশীয় মুরগী পালন করতে পারেন। বর্তমান বাজারে মরগী ও ডিমের চাহিদা ব্যপক । কারন এটি মানবদেহের পর্যাপ্ত আমিষের ঘাটতি পূরন করে থাকে। প্রথম অবস্থায় স্বল্প আকারে বাড়িতেই মুরগী পালন করতে পারেন এবং পরবর্তিতে বানিজ্যিকভাবে খামারে পালন করতে পারেন। তবে এ ক্ষেত্রেও প্রয়োজনীয় মেডিসিন সরবরাহ ও নিবিড় পর্যবেক্ষন করতে হবে।
  9. গাভী পালনঃ বর্তমান সময়ে গাভী পালন একটি জনপ্রীয় ব্যবসা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে এক্ষেত্রে আপনার বাড়ি যদি গ্রামে হয় তাহলে আপনি অধিক সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। আপনার গাভীর খাবারের খরচটা অনেকাংশে কমে আসবে । তবে গাভী পালনে উন্নত জাতের গাভীর প্রজনন খুব ভাল হয় । এর পাশাপাশি আপনি দুগ্ধ খামার করে ও আয় করতে পারেন। আবার চাইলে আপনি শহরেও স্বল্প পরিসরে খামার করে গাভী পালন করতে পারেন। এক্ষেত্রেও আপনাকে সর্বদা পশু ডাক্তারের সরনাপন্ন হতে হবে।সঠিক পরিচর্জার মাধ্যমে আপনি আপনার গাভীকে বাজারজাত করে অধিক মুনাফা অর্জন করতে পারেন। বর্তমানে সার্বিকভাবে গবাদিপশুর চাহিদা ব্যপক । এখান থেকেও আমিষের এক বিশাল চাহিদা পূরন হয়ে থাকে।
  10. কুটির শিল্পের ব্যবসাঃ কুটির শিল্পের ব্যবসা একটি অত্যন্ত পুরনো ও ঐতিহ্যবাহী ব্যবসা হলেও বর্তমান বাজারে এর ব্যবহার বেড়েছে। বর্তমানে পাটের তৈরি বিভিন্ন আসবাব পত্র দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে। পাশাপাশি বেতের বাঁশের তৈরি বিভিন্ন শৌখিন আসবাব পত্র তৈরি করে আর্থিক ভাবে সফল হওয়া যায়।
  11. ফার্মেসী ব্যবসাঃ বর্তমানে ফার্মেসী ব্যবসাও অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি ব্যবসা। এ ক্ষেত্রে আপনাকে অবশ্যই দক্ষ হতে হবে । আবার আপনি প্রশিক্ষনের মাধ্যমেও এই ব্যবসাটি করতে পারেন। তবে এর জন্য আপনাকে অবশ্যই উপযোক্ত জায়গা নির্বাচন করতে হবে। এমন কোন জায়গায় আপনার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানটি হতে হবে যেখানে মানুষের আনাগোনা বেশি। আবার হতে পারে পাশে ক্লিনিক অথবা হাসপাতাল রয়েছে। তবে এখন প্রত্যন্ত অঞ্চলেও অনেক ফার্মেসীতে ঔষুধের পাশাপাশি কিছু প্রাথমিক সেবা দেওয়া হয় যেমনঃ ডায়াবেটিক্স পরীক্ষা, রক্ত গ্রুপ পরীক্ষা,উচ্চ রক্তচাপ পরীক্ষা, শ্বাসকষ্ট জনিত সমস্যায় প্রাথমিক ভাবে গ্যস দেওয়া এছাড়াও বিভিন্ন ধরনের প্রাথমিক ট্রিট্মেন্ট দেওয়া হয়।

                                            নীরবতা+নিয়ে+উক্তি

তো ব্যবসা করলে অসংখ্য ব্যবসা রয়েছে। তবে মনোবল ,দক্ষতা ও ধৌর্য থাকলে যেকোন ব্যবসার দ্বারাই লাভবান হওয়া সম্ভব। মানুষের মনের ইচ্ছাশক্তিই মানুষকে বড় করে তোলে । আর একটি গুরুত্বপূর্ন বিষয় হচ্ছে পানিতে না নামলে আপনি যেমন সাঁতার শিখতে পারবেন না, ঠিক তেমনি যে কোন একটি ব্যবসা শুরু না করা পর্যন্তু আপনি দক্ষতা বা অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারবেন না। তো আজ এ পর্যন্তুই ,আশা করি এই কনটেন্ট থেকে যদি আপনাদের একটুও উপকার হয় তাহলে আমার লেখাটির স্বার্থকতা ফুটে উঠবে। পরিশেষে বেকারত্ব ও পরাধীনতার শেকল থেকে আমার মত আপনারা যারা স্বাধীনচেতা মানুষ আছেন তাদের সার্বিক সফলতা কামনা করে আজ এখানেই ইতি টানছি। এমন সব দারুন দারুন পোস্ট পেতে Grathor এর সাথেই থাকুন এবং গ্রাথোর ফেসবুক পেইজ ও ফেসবুক গ্রুপ এ যুক্ত থাকুন, আল্লাহ হাফেজ।

(হিমেল)

Related Posts

14 Comments

মন্তব্য করুন