জ্বলন্ত আমাজনকে থামাতে দ্রুত পদক্ষেপ নিন

পৃথিবীর ফুসফুস নামে পরিচিতি পৃথিবীর সবচেয়ে বৃহৎ রেইন ফরেস্ট আমাজন বেশ কিছুদিন যাবত জ¦লছে। দিন দিন বেড়েই চলছে আগুনের ভয়াবহতা। আক্রান্ত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। যা সারা বিশে^র জলবায়ু পরিবর্তনে মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে বলে আশংকা প্রকাশ করছেন বিশেষজ্ঞরা। লক্ষ লক্ষ মাইল দূরে হলেও এ দাবানলের ঘটনায় উদ্বিগ্ন হওয়ার অবকাশ আছে বাংলাদেশেরও । কারণ জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে পৃথিবীর যেসব দেশ বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় তার মধ্যে বাংলাদেশও আছে।
নদীবিধৌত আমাজন অঞ্জলের বিস্তৃতি প্রায় ৭০ লক্ষ বর্গকিলোমিটার। তবে ৫৫ লক্ষ বর্গকিলোমিটার হলো আদ্র জলবায়ুবেষ্টিত। এই বিশাল আয়তনের এই বনকে বলা হয় পৃথিবীর ফুসফুস। কারণ সারা পৃথিবীতে যে পরিমাণ অক্সিজেন প্রয়োজন হয় তার ২০ শতাংশের যোগানদাতা এই আমাজন বন। বিজ্ঞানীরা বলছেন এই আমাজন বনটি এতটাই বিশাল যে এর ভিতরের অনেক জায়গা আছে যেখানে এখন পর্যন্ত কারো যাওয়া হয়নি। এখন পর্যন্ত কারো পা পড়েনি। দেখা হয়নি এর ভিতরের উদ্ভিদকূল ও প্রাণিকূলের কিছুই। এ আমাজন বনের ভিতর দিয়ে ফিতার মতো যে নদী বয়ে গেছে যা পৃথিবীর সবচেয়ে বড় নদী বলে বিবেচিত হচ্ছে। এই নদীতে রয়েছে ৩ হাজারেরও বেশি প্রজাতির মাছ ও অন্যান্য জ¦লজ উদ্ভিদ। আমাজনের অবস্থান হিসেবে এ বনের ৬০ ভাগ অঞ্চল রয়েছে ব্রাজিলে এবং পেরুতে ১৩ ভাগ। বাকি অংশ কলম্বিয়া, ভেনিজুয়েলা,ইকুয়েডর, বলিভিয়ার অঞ্চলসমূহে পরেছে। এ বনে কমবেশি ৪০০ আদিবাসি পরিবার বসবাস করে। তাদের সাথে বর্তমান পৃথিবী তথা মোবাইল, ইন্টারনেট কিংবা তথ্য প্রুযুক্তির কোনো রকম যোগসাজেশ নেই। তারা জানে না প্রযুক্তি কী? বহুকাল ধরে বহু পর্যটক,গবেষক, বিজ্ঞানী এ আশ্চর্য বনভূমিতে গিয়েছেন এবং তারা প্রতিবারই নতুন নতুন কিছুর সন্ধান নিয়ে এসেছেন। তারা এসে এটা স্বীকার করেছেন যে আমাজন বনে এমন সব জায়গা আছে যা পৃথিবীর কোনো মানুষ দেখেনি এবং আদৌ দেখতে পারবে কিনা তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে।
পৃথিবীর হৃৎপিন্ড খ্যাত এই বনে প্রতিবছরের জুলাই থেকে অক্টোবরে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। আগুনে পুড়ে যায় হাজার হাজার উদ্ভিদ। তবে এবার মাত্রা ছাড়িয়েছে সর্বকালের। সব মিলিয়ে এ বছরই ৭৪ হাজার বার অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটেছে এ বনে। এখনো জ¦লছে দাউ দাউ করে। ব্রাজিল সরকার মাঝে মাঝে বিমান থেকে পানি ছুড়ে আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করলেও তা কোনো কাজে আসছে না। বিশ^ নেতৃবৃন্দ আগুন নিয়ন্ত্রণের জন্য ব্রাজিল সরকারকে চাপ দিচ্ছে। ফ্রান্সতো একরকম হুংকার দিয়েই রেখেছে আগুন থামাতে কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে ইউরোপীয় ইউনিয়নে সম্পাদিত চুক্তি বাতিল হতে পারে। এ অবস্থায় ব্রাজিল সরকারকে সইতে হচ্ছে আরো একটি চাপ। খোদ ব্রাজিলেরই কিছু কিছু মানুষ বিশ^াস করতে চাইছে যে বিশাল এ বনে আগুন ইচ্ছা করে লাগানো হতে পারে। তাদের ধারণা শিল্পকারখানার জন্য উপযুক্ত জায়গার ব্যবস্থা করতে এ আগুন লাগানো হতে পারে। তবে যে কারণেই আগুন লাগুক বাস্তবতা হচ্ছে এ অবস্থা চলতে থাকলে পৃথিবীর আবহাওয়ায় চরম নেতিবাচক প্রভাব পরবে। যার প্রভাব পরবে আমাদের প্রিয় মাতৃভূমিতেও। তাই জলবায়ু পরিবর্তনের হুমকি মোকাবিলায় এ বৃহৎ অক্সিজেন সরবরাহকারী বনকে রক্ষা করতে বিশ^নেতৃবৃন্দের যৌথ শক্তিশালী ভূমিকা গ্রহণ করা জরুরি।

Related Posts

14 Comments

মন্তব্য করুন