ট্রেনের এসি কেবিন এর ভাড়া কত | বাংলাদেশের রেল লাইন টিকিট মূল্য

আসসালামু আলাইকুম। প্রিয় পাঠকবৃন্দ, আশা করি সবাই ভালো আছেন। সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছায় আমিও ভালো আছি। আজকে আপনাদের সামনে উপস্থাপন করার চেষ্টা করব ট্রেনের এসি কেবিন এর ভাড়া কত, বাংলাদেশের রেল লাইন টিকিট মূল্য । আশা করি আপনাদের অনেক ভাল লাগবে।

রেলওয়ে বিশ্বের সবচেয়ে পুরনো বর্তমানে চালু আছে এমন যাতায়াত ব্যবস্থার একটি। রেল বা ট্রেন বলতে এমন একধরণের গাড়িকে বোঝায় যা ইস্পাতের পাতের উপর বিশেষ ধাতব চাকা দ্বারা চলে। প্রাচীনকালেও ট্রেনের ব্যবহারের প্রমাণ রয়েছে। মনে করা হয় প্রায় ৬ষষ্ঠ শতকের দিকে ট্রেন হয়তো ব্যবহার করা হতো। কিন্তু ট্রেন বা রেল চলাচল খুবই বিখ্যাত ও প্রচলিত হয় ১৯ শতাব্দীর দিকে। ট্রেন মূলত বাষ্পীয় ইঞ্জিনের উদ্ভাবনের মাধ্যমে সৃষ্টি হয়। রেল বা ট্রেন শিল্প বিল্পবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। পরবর্তীতে ডিজেল চালিত ও বিদ্যুৎ চালিত রেল চালু হয়। বাংলাদেশে বৃটিশ আমল থেকেই ট্রেনের শুরু হয় যা এখনো সক্রিয় আছে। বাংলাদেশের সকল রেল ও রেলপথের নিয়ন্ত্রক বাংলাদেশ রেলওয়ে।

ট্রেনের এসি কেবিন এর ভাড়া কত বাংলাদেশের রেল লাইন টিকিট মূল্য

বাংলাদেশের কোন কোন বিভাগে রেল/ট্রেন চালু আছে?

বাংলাদেশের বরিশাল বাদে সব বিভাগেই ট্রেন চালু আছে। ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, ময়মনসিংহ, রাজশাহী, রংপুর, সিলেট এই সকল বিভাগেই ট্রেন চালু রয়েছে। ঢাকার কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন হচ্ছে ঢাকার মূল রেলওয়ে স্টেশন। মোট ৫২টি ট্রেন এসকল বিভাগে ও এসকল বিভাগের অধীনস্থ জেলাসমূহতে যাতায়াত করে। মোট সাধারণ ৫২টি ট্রেন ব্যতীত আরও ১৫০ টিরও বেশি ট্রেন রয়েছে যার মধ্যে অনেকগুলোই রয়েছে যা হচ্ছে মেইল ট্রেন বা যা বিভিন্ন মালামাল পরিবহন করে।

বাংলাদেশের কোন কোন জেলায় ট্রেন রয়েছে?

বর্তমানে বাংলাদেশের প্রায় সব জেলাতেই বর্তমানে ট্রন চালু রয়েছে। বাংলাদেশের এক জেলা বা শহর থেকে অন্য জেলা বা শহরে যে ট্রেন যায় সেগুলোকে আন্তঃনগর ট্রেল বলা হয়। আন্তঃনগর ট্রেনের মধ্যে সবচেয়ে বেশি রেল যায় ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, পঞ্চগড়, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, ময়মনসিংহ, সিলেট, কিশোরগঞ্জ, চাঁদপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, সিরাজগঞ্জ, লালমনিরহাট ইত্যাদি জেলায়।

মূল কয়েকটি ট্রেনের মধ্যে রয়েছে সুবর্ণ এক্সপ্রেস (চট্টগ্রাম-ঢাকা-চট্টগ্রাম), একতা এক্সপ্রেস (ঢাকা-পঞ্চগড়-ঢাকা), পারাবত এক্সপ্রেস (ঢাকা-সিলেট-ঢাকা), উপকূল এক্সপ্রেস (নোয়াখালী – ঢাকা – নোয়াখালী), মহানগর এক্সপ্রেস (চট্টগ্রাম – ঢাকা – চট্টগ্রাম), উদয়ন এক্সপ্রেস (চট্টগ্রাম – সিলেট – চট্টগ্রাম), উপবন এক্সপ্রেস (ঢাকা – সিলেট – ঢাকা), ধূমকেতু এক্সপ্রেস (ঢাকা – রাজশাহী – ঢাকা), রংপুর এক্সপ্রেস (ঢাকা – রংপুর – ঢাকা) ইত্যাদি।

<

এছাড়াও বর্তমানে বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক কিছু রেলপথ চালু রয়েছে। বর্তমানে বেনাপোল, কলকাতা, শিলাদহ ও শিলিগুড়িতে বাংলাদেশ দিয়ে সরাসরি রেলে করে যাওয়া সম্ভব।

ট্রেনে কি রকম কেবিন থাকে

ট্রেনে কি রকম কেবিন থাকে?

একটি ট্রেন অনেক বড়। এবং একটি ট্রেনে বিভিন্ন ধরণের ও বিভিন্ন শ্রেণির সিট ভাগ করা রয়েছে। বাংলাদেশের ট্রেনসমূহে মোট আট ধরণের সিট থাকে। এগুলো হলোঃ শোভন, শোভন চেয়ার, স্নিগ্ধা, ফার্স্ট ক্লাস চেয়ার, ফার্স্ট বার্থ, ফার্স্ট ক্লাস সিট, এসি বার্থ ও এসি সিট। এছাড়াও কমিউটার, দ্বিতীয় শ্রেণির সাধারণ, দ্বিতীয় শ্রেণির মেইল ইত্যাদি। উল্লেখ্যযোগ্য যে সকল ট্রেনে সব ধরণের সিট বা কেবিন পাওয়া যায়। বিভিন্ন ট্রেনে বিভিন্ন ধরণের সিট থাকে। নিম্নে কয়েকটি সিট ধরণের সু্যোগ সুবিধা বলা হলো।

শোভনঃ এই সিটগুলো নন এসি। বেশিরভাগ ট্রেনের সবচেয়ে নিম্ন মানের ও কম দামি সিট এটি। দেশের সকল মেইল ট্রেন ও কিছু সংখ্যক আন্তঃনগর ট্রেনে শোভন সিট রয়েছে। এই সিট মোটেও আরামদায়ক নয়।

শোভন চেয়ারঃ দেশের প্রায় সকল আন্তঃনগর ট্রেনে শোভন চেয়ার রয়েছে। এটি একটি দ্বিতীয় শ্রেণির নন এসি সিট। এর ভাড়া শোভনের চেয়ে বেশি৷ তাছাড়া শোভন চেয়ারের সিট শোভনের তুলনায় অনেক আরামদায়ক।

স্নিগ্ধাঃ এর আরেক নাম এসি চেয়ার। দেশের পেয়ায় সব জনপ্রিয় গন্তব্যের রুটে স্নিগ্ধা সিট থাকে। সিট শোভনের চেয়ে অনেক আরামদায়ক ও সম্পূর্ণ কোচ এসি করা।

ফার্স্ট ক্লাস চেয়ারঃ সাধারণত নন এসি চেয়ার। সিট স্নিগ্ধার চেয়ে আরামদায়ক। এই সিটও সব আন্তঃনগরে থাকে না।

ফার্স্ট ক্লাস সিটঃ নন এসি কেবিন। দিনের বেলায় এগুলো সিট হিসেবে ব্যবহার করা হয়। ঘুমানো যায় না বসে যেতে হবে।

ফার্স্ট ক্লাস বার্থঃ ফার্স্ট ক্লাস সিটই রাতের বেলায় ফার্স্ট ক্লাস বার্থ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। আর এতে স্বাভাবিকভাবেই ঘুমিয়ে যেতে পারবেন।

এসি বার্থঃ এগুলো হলো এয়ার কন্ডিশন্ড (এসি) করা কেবিন। এখানে আপনি ঘুমাতে পারবেন। শুধু রাতেই আপনি এই কেবিন পাবেন। এই কেবিনে ফার্স্ট ক্লাস বার্থের সব সুবিধা পাবেন এসি সহ।

এসি সিটঃ এসি বার্থই দিনের বেলায় এসি সিট হিসেবে ব্যবহৃত হয়। নাম থেকেই বোঝা যাচ্ছে এসি করা। এসি বার্থের সব সুবিধাই রয়েছে কিন্তু এতে ঘুমানোর কোনো ব্যবস্থা নেই।

ট্রেনের এসি কেবিন ও সাধারণ কেবিনের দাম কত

ট্রেনের এসি কেবিন ও সাধারণ কেবিনের দাম কত?

কেবিনের মূল সম্পূর্ণভাবেই নির্ভর করে দূরত্বের উপর। আর সাধারণ কেবিনের চেয়ে এসি কেবিনের মূল্য অবশ্যই বেশি। আমরা ফার্স্ট ক্লাস বার্থ বা প্রথম শ্রেণির কেবিনকে সাধারণ কেবিন হিসেবে ধরতে পারি। বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় রুটের একটি হচ্ছে ঢাকা-চট্টগ্রাম। তো আমরা ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে ফার্স্ট ক্লাস বার্থ ও এসি কেবিন বা এসি বার্থের তুলনা করব। তো প্রথম শ্রেনির কেবিন বা ফার্স্ট ক্লাস বার্থের ক্ষেত্রে ভাড়া হলো ৬৮৫ টাকা ও এসি কেবিনের ভাড়া হলো ১১৭৯ টাকা। তো দামের পার্থক্য তো দেখতেই পাচ্ছেন।

ট্রেনের ভাড়া কত?

ট্রেনের ভাড়া আপনি কোন রুটে বা কত দূরে যাচ্ছেন তার উপর নির্ভর করেন। তাছাড়া প্রতি সিটেরই ভাড়া ভিন্ন। তো এবারও আগেরবারের মতো ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটের ভাড়া পর্যালোচনা করতে যাচ্ছি। ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে সবচেয়ে সস্তা সিট হচ্ছে ২য় শ্রেণির সাধারণ (বেশিরভাগ ট্রেনে নেই) যা হলো মাত্র ৯০ টাকা। তারপর সবচেয়ে কম দামি রয়েছে ২য় শ্রেণির মেইল যা হলো ১১৫ টাকা। এরপর রয়েছে কমিউটার ও সুলভ।

এ দুটির টিকিট মূল যথাক্রমে ১৪৫ ও ১৭৫ টাকা। এরপর রয়েছে শোভন ও শোভন চেয়ার যার মূল্য যথাক্রমে ২৮৫ ও ৩৪৫ টাকা। তারপর রয়েছে প্রথমে শ্রেণির চেয়ার যার মূল্য ৪৬০ টাকা। এরপর রয়েছে স্নিগ্ধা ও ১ম শ্রেণির কেবিন যার মূল্য যথাক্রমে ৬৫৬ টাকা ও ৬৮৫ টাকা। এরপর ঢাকা-চট্রগ্রাম রুটের দ্বিতীয় সবচেয়ে দামি সিটের মূল্য হলো ৭৮৮ টাকা। এবং ঢাকা-চট্রগ্রাম রুটের সবচেয়ে দামি ও বিলাসবহুল সিটের মূল্য হলো ১১৭৯ টাকা। দেখতেই পাচ্ছেন সিটের মূল্যে কত তফাত। ৯০ টাকা থেকে শুরু করে ১১৭৯ টাকা পর্যন্ত দামের সিট রয়েছে। দামের সাথে সাথে মানেও অনেক পার্থক্য রয়েছে।

তো এই ছিল (ট্রেনের এসি কেবিন এর ভাড়া কত | বাংলাদেশের রেল লাইন টিকিট মূল্য) আজকের পোস্ট। পোস্টটি কেমন লাগলো দয়া করে কমেন্টে জানাবেন, যদি ভাল লেগে থাকে তাহলে অবশ্যয় শেয়ার করবেন, পোস্টটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ। এমন সব দারুন দারুন পোস্ট পেতে Grathor এর সাথেই থাকুন এবং গ্রাথোর ফেসবুক পেইজ ও ফেসবুক গ্রুপ এ যুক্ত থাকুন, আল্লাহ হাফেজ।

Related Posts

4 Comments

মন্তব্য করুন