তেলের দাম বৃদ্ধির কারণ ও এর ভবিষ্যৎ

বর্তমান বাজারে তেলের দাম বৃদ্ধি একটি আলোচিত ঘটনা। বিগত নভেম্বর মাস থেকে তেলের দাম ক্রমাগত বেড়েই চলছে। রমজান মাস থেকে আমরা দেখতে পাচ্ছি তেলের দাম সহ অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের দামও ক্রমাগত বেড়েই চলছে এবং ক্রমেই তা সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে।

শুধু ভোজ্যতেল নয় জ্বালানি তেলের দামও বেড়ে গেছে,সেই সাথে বেড়েছে গাড়িভাড়াও। ক্রমবর্ধমান এই বাজারদরের কারণে মধ্যবিত্ত মানুষের জীবনযাপনে নেমে এসেছে অস্থিতিশীলতা।

আগে আমরা এক কেজি সয়াবিন তেল ৮০ টাকা দিয়ে কিনতাম কিন্তু ক্রমাগত তেলের দাম বৃদ্ধিতে সেই তেল এখন ২০০ টাকা লিটার দিয়ে কিনতে হয়। তেলের দাম নজিরবিহীনভাবে বাড়ার পিছনের কারণ কি? নিশ্চয়ই এর পিছনে কারণ রয়েছে।
শুধু বাংলাদেশ নয়, সারাবিশ্বেই তেলের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে।

আমরা জানি তেল উৎপাদনে শীর্ষ ১০ টি দেশের মধ্যে একটি হলো রাশিয়া এবং আরেকটি ইউক্রেন। এই দুইটি দেশ সারাবিশ্বেই তেল রপ্তানি করে থাকে। কিন্তু রাশিয়া এবং ইউক্রেনের মধ্যে চলমান যুদ্ধাবস্থার জন্য দুটি দেশই তেল রপ্তানি করা ১০০% বন্ধ করে দিয়েছে।

এছাড়া যুক্তরাষ্ট্র, ব্রাজিল, চীন প্রভৃতি দেশ তেল রপ্তানি করে থাকলেও তাদের নিজেদেরও ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। তেল রপ্তানিকারক শীর্ষ আরেকটি দেশ আর্জেন্টিনাও ইতিমধ্যে তেল রপ্তানি করা বন্ধ করার ঘোষণা দিয়েছে। রপ্তানি কম হওয়ায় বাংলাদেশ সহ বিশ্বের অন্যান্য তেল আমদানিকারক দেশের উপরও তেল আমদানিতে ঘাটতি দেখা যাচ্ছে।

বাংলাদেশ বিশ্বের তৃতীয় শীর্ষ সয়াবিন তেল আমদানিকারক দেশ। বাংলাদেশে যে পরিমাণ তেল উৎপাদন করা হয়, তা দিয়ে দেশের মোট জনগোষ্ঠীর ১০% চাহিদা মেটানো সম্ভব। বাকি ৯০% বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয় অর্থাৎ মোট চাহিদার সিংহভাগই বাইরে থেকে আমদানি করতে হয়।

<

কিন্তু বর্তমানে রাশিয়া এবং ইউক্রেনের মধ্যে চলমান যুদ্ধাবস্থার কারণে বিশ্বের শীর্ষ তেল রপ্তানিকারক দেশগুলো তেল রপ্তানি করা বন্ধ করে দিয়েছে যা বাংলাদেশের জন্য বিরাট হুমকির কারণ হয়ে দাড়িয়েছে।

এমতাবস্থায় বাংলাদেশ যদি তেলের দেশীয় উৎপাদন না বাড়ায় বা সয়াবীন তেল বাদে সরিষা, তিশি এসব তেলের প্রতি অধিক আগ্রহী না হয়, তাহলে ভবিষ্যতে তেলের দাম ক্রমাগত বাড়তেই এবং টাকা দিয়েও তেল কিনতে না পারা যেতে পারে। ইতিমধ্যে ফ্রান্স সয়াবিন তেলের উপর নির্ভরশীলতা কমাতে অলিভ ওয়েল ব্যবহারের উপর নজর দিয়েছে।

যদি রাশিয়া এবং ইউক্রেনের মধ্যে ক্রমাগত যুদ্ধাবস্থার অবসান না ঘটে এবং বাংলাদেশ যদি দেশীয় তেল উৎপাদন বৃদ্ধিতে নজর না দেয় তাহলে একসময় মানুষের হাতে টাকা থাকবে কিন্তু তেল কিনতে পারা যাবে না।

বাংলাদেশ সরকারের উচিত চলমান পরিস্থিতির বিষয়টি বিবেচনা করে দেশীয় তেল উৎপাদন বৃদ্ধির উপর নজর দেওয়া এবং কৃষকদের এ ব্যাপারে উৎসাহিত করা।

Related Posts

8 Comments

মন্তব্য করুন