দিল্লির সুলতান মুহাম্মদ বিন তুঘলক ছিলেন ইতিহাস সৃষ্টিকারী এক আজব শাসক। তার পিতা ছিলেন সুলতান গিয়াসউদ্দিন তুঘলক। সুলতান মুহাম্মদ বিন তুঘলক অদ্ভূত অদ্ভূত সব কর্মকাণ্ড করেছিলেন। সে সব কর্মকাণ্ডের অধিকাংশই ছিলো স্বেচ্ছাচারিতা আর খামখেয়ালিতে ভরা। তাই কেউ স্বেচ্ছাচারিতা আর খামখেয়ালিভাবে অদ্ভূত কর্মকাণ্ড করলে তখন বলা হয় যে, ঐ লোক “তুঘলকি কাণ্ড” করছে। এভাবেই বাংলা ভাষায় “তুঘলকি কাণ্ড” বাগধারাটা তৈরি হয়েছে।
মুহাম্মদ বিন তুঘলককে বলা হয়ে থাকে মধ্যযুগের সর্বাধিক বিদ্বান সুলতান। তিনি বহুভাষাবিদ একজন সুগভীর পণ্ডিত ও বিজ্ঞ সুলতান ছিলেন। সুগভীর পণ্ডিত হওয়া সত্ত্বেও তাঁর অধিকাংশ কর্মকাণ্ডই ছিলো হঠকারিতা, অজ্ঞতা আর বোকামিতে পরিপূর্ণ। তাই যখন কেউ হঠকারিতা, অজ্ঞতা আর বোকামিতে পরিপূর্ণ কোনো স্বেচ্ছাচারী যথেচ্ছ কর্মকাণ্ড করে, তখন তার সেই কর্মকাণ্ডকে বলা হয় তুঘলকি কর্মকাণ্ড।
মুহম্মদ বিন তুঘলকের সমগ্র জীবনটাই অজস্র তুঘলকি স্বেচ্ছাচারী কর্মকাণ্ড দিয়ে ঘেরা। তাঁর পিতা সুলতান গিয়াসউদ্দিন তুঘলক বলতে গেলে পুত্র মুহম্মদ বিন তুঘলকের তুঘলকি কর্মকাণ্ডের শিকার হয়েই মারা গেছেন। যুদ্ধ অভিযানে যাবার সময় যুবক পুত্র মুহম্মদ বিন তুঘলককে রাজ্য শাসনের জন্য সিংহাসনের দায়িত্ব দিয়ে গিয়েছিলেন তিনি। যুদ্ধ জয় করে ফেরার পর যখন তিনি রাজধানী দিল্লির কাছাকাছি এসে পৌঁছলেন, তখনই পুত্র মুহম্মদ বিন তুঘলকের তুঘলকি কর্মকাণ্ডের শিকার হলেন।
পুত্র মুহম্মদ বিন তুঘলক রাজধানী দিল্লির যে জায়গা দিয়ে তার পিতা গিয়াসউদ্দিন তুঘলক ঢুকবেন, সে জায়গায় তোরণের ফাঁদ নির্মাণ করলেন এবং প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হাতি দিয়ে পিতাকে সুনিপুণভাবে হত্যা করার ব্যবস্থা করলেন। মুহম্মদ বিন তুঘলক তাঁর এই তুঘলকি কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে পিতাকে হত্যা করতে বিস্ময়করভাবে সফল হন। কিন্তু তাঁর পরবর্তী জীবন অজস্র অসফলতায় পরিপূর্ণ।
মুহম্মদ বিন তুঘলকের সবচেয়ে বড় তুঘলকি কর্মকাণ্ডের নজির হচ্ছে তাঁর রাজধানী দিল্লি থেকে মহারাষ্ট্রের দৌলতাবাদে স্থানান্তরিত করার হঠকারী সিদ্ধান্ত গ্রহণ। এর পেছনে অনেক কারণ ছিলো। তবে প্রধান কারণ ছিলো দিল্লিতে বারবার মোঙ্গলদের আক্রমণ। এই আক্রমণে তিনি এতটাই বিচলিত ছিলেন যে, রাজ্যের সকল প্রজাকে হুকুম দিয়েছিলেন জরুরি ভিত্তিতে দিল্লি ছেড়ে সাতশো মাইল দূরে মহারাষ্ট্রের দৌলতাবাদে চলে যাওয়ার জন্য।
অবশ্য কিছুদিনের মধ্যে তাঁর হুঁশ হয়, তিনি সবাইকে আবার দিল্লি ত্যাগ না করার হুকুম দেন। এই যে সিদ্ধান্তের ঘন ঘন আকস্মিক পরিবর্তন, এটাকেই বলে তুঘলকি কাণ্ড। এছাড়া তিনি এমন স্বর্ণমুদ্রা চালু করেছিলেন যে, সেগুলো ছিলো অনেক ভারী এবং স্বর্ণমুদ্রার যে আর্থিক মূল্যমান, তার চেয়ে স্বর্ণের পরিমাণ সেগুলোতে ছিলো বেশি। তাই যারা এই স্বর্ণমুদ্রা পেলো, তারা আর ফেরৎ দিলো না।
স্বর্ণমুদ্রার মতো মুহম্মদ বিন তুঘলক রৌপ্যমুদ্রাও চালু করেছিলেন। কিন্তু সেই রৌপ্যমুদ্রায় আবার স্বর্ণমুদ্রার ঠিক উল্টো ঘটনা। সেখানে রূপার পরিমাণ এবং মূল্যমান এতো কম ছিলো যে, প্রজারা সেই রূপার মুদ্রা প্রত্যাখ্যান করেছে। এরকম আরও অনেক তুঘলকি কর্মকাণ্ড ছিলো মুহম্মদ বিন তুঘলকের। তবে যতো তুঘলকি কর্মকাণ্ডই থাক না কেনো মুহম্মদ বিন তুঘলকের, তিনি অসাধারণ বিদ্বান ও বিজ্ঞ সুলতান ছিলেন।
বিশেষ করে মধ্যযুগে তাঁর মতো এতো শিক্ষিত আর কোনো সুলতান ছিলেন না। তিনি অনেক ক্ষেত্রে খুব নিষ্ঠুর হলেও প্রজাবৎসল একজন সুলতান ছিলেন। প্রজাদের সুখশান্তি নিশ্চিত করার জন্য তাঁর অনেক উদ্যোগ ছিলো। ইতিহাসে অনেক সুলতান আছেন, যাদের কথা আর মানুষ মনে রাখেনি, কিন্তু মুহম্মদ বিন তুঘলক ঠিকই তার তুঘলকি কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে ইতিহাসের পাতায় চিরস্থায়ী আসন করে নিয়েছেন।
সাইফুল হক : লেখক, সম্পাদক, গবেষক।
তুঘলকি কাণ্ড, সুলতান, মুহম্মদ বিন তুঘলক
Nice post
This is amazing post, sultan somrat, I like it 😍 your watch content amazing. Thanks for sharing the post 😍 this
ভাল
Nice
দারুন
Nice
আমার ইতিহাস নিয়ে লেখা গল্প পড়তে খুব ভাল লাগে এবং আমি এই বিষয়ে আরো অনেক কিছু জানতেও চাই
Hmm
Balo
Nice
thanks
Nice
darun…
Bastob naki??
অসাধারণ
Love This Post
gd
-reat
Ok
well
সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
nice
খুবই সুন্দর একটা পোস্ট। ধন্যবাদ।
Nice
বেশ উপকারী পোস্ট। ধন্যবাদ।
ধন্যবাদ সবাইকে।
ইতিহাস সম্পর্কে পোস্টটা অনেক সুন্দর হয়েছে
nice
Nice
Good
ইতিহাস।
❤️
very informative