নকল সার্টিফিকেট চেনার উপায়

আজকাল আমাদের দেশে সবকিছুতেই নকলের ছড়াছড়ি। নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিষ থেকে শুরু করে শিক্ষা,চিকিৎসা সবকিছুতেই চলছে নকল জিনিষের রমরমা বানিজ্য। প্রযুক্তির এই যুগে কোনটা আসল আর কোনটা নকল সার্টিফিকেট চেনার উপায় নেই আর। হাজারো নকল জিনিয়ের ভিড়ে কিভাবে আসল জিনিষ চেনা বড় দায়। তাই নকল জিনিষ চিনতে আমাদের আমাদের প্রতিটি জিনিষের উপর ধারনা থাকতে হয়। সব জিনিষের উপর ধারনা না থাকলে আমাদের প্রতি পদে পদে ঠকতে হয়। বর্তমানে প্রায়ই সময় বলতে শোনা যায় লেখাপড়া না করেও অসৎ উপায়ে অনেকেই নকল সার্টিফিকেট দিয়ে চাকরি করছে,আবার অনেকে পুলিশের হাতে ধরা পরে জেলে গেছে।

অনেকে আবার কেউ মূল সার্টিফিকেট হারিয়ে যাওয়ায় জোট জামেলায় না গিয়ে প্রযুক্তির সহায়তায় বিভিন্ন চোরা কারবারের মাধ্যমে নকল সার্টিফিকেট তৈরি করে থাকে। সেই নকল সার্টিফিকেট দিয়ে তারা চাকরি খোজার চেষ্টাও করেন। অনেক মানুষ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে নকল সার্টিফিকেট দিয়ে চাকরি করছে এ রকম অহরহ খবর পত্রিকায়,মিডিয়ায় উঠে আসে। আবার বহু প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষ জানতে পারেনা যে, তাদের প্রতিষ্ঠানে বহু কর্মরত কর্মকর্তা বা কর্মচারি নকল সার্টিফিকেট দিয়ে চাকরি করছে। প্রিয় পাঠক,আজকে আমি জানাবো কিভাবে আপনারা নকল সার্টিফিকেট খুব সহজেই চিনতে পারবেন। কোনটা আসল  আর কোনটা নকল সার্টিফিকেট ,তা চেনার কয়েকটি উপায় রয়েছে, তা আমি আপনাদের মাঝে শেয়ার করবো। চলুন তাহলে নকল সার্টিফিকেট চেনার উপায় সমূহ জেনে নেওয়া যাক।

কিভাবে নিজে আসল না নকল সার্টিফিকেট যাচাই করবেন,নকল সার্টিফিকেট চেনার উপায়

১. প্রথমে সার্টিফিকেটটি হাতে নিয়ে আলোর সামনে ধরে রাখুন।

২. তারপরে সার্টিফিকেটের ঠিক মাঝখানে আলো বরাবর তাকিয়ে দেখুন।
৩.  যদি সার্টিফিকেটের মাঝখানে জলচাপ একটি শাপলা ফুল দেখতে পাবেন। নকল হলে শাপলা ফুলটি ঝাপসা দেখা যাবে অথবা থাকবেনা।
৪. আসল সার্টিফিকেটের একপাশে আড়াআড়িভাবে একটি নিরাপত্তা সুতা থাকবে,না থাকরে বুঝতে হবে সার্টিফিকেটটি নকল।
৫.সেই নিরাপত্তা সুতায় ভালো করে তাকালে লক্ষ্য করবেন,আপনার “শিক্ষা বোর্ড” লেখাটি স্পষ্টভাবেই লেখা রয়েছে।
৬. আসল সার্টিফিকেটে নিরাপত্তা সুতা ও শিক্ষা বোর্ড লেখাটি অবশ্যই থাকেবে। কিন্তু এই দুইটি চিহ্ন না থাকলে নিশ্চিত হতে পারেন সার্টিফিকেটটি ভূয়া বা নকল।

      বিশ্ববিদ্যালয় ও ভর্তি পরীক্ষা

আশাকরি আপনি এখন নিজে নিজেই আসল না নকল সার্টিফিকেট চিনতে পারবেন। কিন্তু দুঃখজনক হলেও এটা সত্যি য়ে আজকাল উন্নত প্রযুক্তির ফলে মানুষ হুবহু নকল সার্টিফিকেট আসল সার্টিফিকেটের মতন বানাতে পারে। অনেকে প্রযুক্তি ব্যবহার করে সার্টিফিকেটে শাপলা ফুলের জলছাপ এবং নিরাপত্তা সুতাও দিতে পারে কিন্তু সেই সুতার ভিতরে শিক্ষা বোর্ড লেখাটি সহজে লিখতে পারেনা। তবুও যদি আপনি নিজে যাচাই করতে না পারেন তাহলে বিকল্প পদ্ধতি অনুসরন করতে পারেন। তা হলো সরাসরি বোর্ড কতৃক যাচাইকরন।

যেভাবে বোর্ড থেকে যাচাই করবেন

অনেকে কিভাবে বোর্ড থেকে সার্টিফিকেট যাচাই করতে হয় সে বিষয়ে জানেন না। সেজন্য নানা প্রতারনায় শিকার হয়ে থাকেন। তো আপনারা কিভাবে বোর্ড থেকে যাচাই করবেন তা আমি আপনাদের জানাবো। প্রথমে আপনি যে বোর্ড থেকে পাশ করেছেন সেই বোর্ডের ওয়েবসাইটে গিয়ে প্রবেশ করতে হবে। প্রবেশ করার পর সেখান থেকে সার্টিফিকেট যাচাই ফরম সংগ্রহ করে নিতে হবে। সে ফরমটি সঠিকভাবে পূরন করে তা বোর্ডে আবেদন করতে হবে। আবেদন করার সময় খেয়ল রাখবেন আবেদন ফরমটি যাতে ভুল করে পূরন না হয়। আপনি বেশি সময় নিয়ে আস্তে ধীরে সঠিকভাবে পূরন করে নিবেন। ভূল করলে কিন্তু আপনার সার্টিফিকেট যাচাই করা সম্ভব হবে না।
তবে আবেদন করার সময় একটি ব্যাংক ড্রাপট সংযুক্ত করে নিতে হবে। ব্যাংক ড্রাপটটির মূল্য খুব একটা বেশি নয়। প্রতি সার্টিফিকেটের জন্য ব্যাংক ড্রাপট ফি ৫০ টাকা করে নেয়া হয়। সার্টিফিকেটের সাথে ৫০ টাকার ব্যাংক ড্রাপট সংযুক্ত করলেই তা যাচাই করে দেয় পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বোর্ড কতৃপক্ষ। এজন্য খুব একটা ঝামেলা পোহাতে হয়না। আপনি যদি সঠিক তথ্য দিয়ে আবেদন করেন তাহলে বেশি সময় লাগে না ৩-৫ দিনের মধ্যে আপনার সার্টিফিকেট তারা যাচাইয়ের কাজ সম্পন্ন করে দেবে।
তবে আবেদন করার পূর্বে আপনার সার্টিফিকেটের মূল সদনপত্রের ফটোকপি ও রেজিস্টেশনের কপি অবশ্যই প্রথম শ্রেনীর কর্মকর্তা কতৃক সত্যাযিত করে নিতে হবে।
আবেদন ফরমের সঙ্গে মূল সার্টিফিকেট এবং ওই সার্টিফিকেটের সত্যায়িত  চার কপি ফটোকপি  জমা দিতে হয়। ব্যাংক ড্রাফট বাবদ খরচ সহ ওই ৪ কপি সার্টিফিকেট সত্যায়িত করতে আপনার সর্বোচ্চ ১০০ টাকা খরচ পড়বে। বেশ! ১০০ টাকার ভিতরে আপনি খুব সহজে সার্টিফিকেট যাচাই করতে পারবেন।

মূল সার্টিফিকেট হারিয়ে গেলেও  ফিরে পাবেন যেভাবে

সার্টিফিকেট আপনার জীবনে মহা মূল্যবান একটি সম্পদ। আপনি বছরের পর বছর অক্লান্ত পরিশ্রম করে হাজারো কষ্টে এটি অর্জন করেছেন। সেই মহামূল্যবান সম্পদতি যদি হারিয়ে যায় বা চুরি হয়ে যায় তাহরে মনে হয় মাথার উপড় বজ্রপাত পড়লো। অনেকে আবার নকল সার্টিফিকেট তৈরি করে নেন। এটি মারাত্মক ভুল কাজ। আপনারা কখনো এই কাজ করতে যাবেন না। তবে চিন্তার কনো কারন নেই,আপনার মহামূল্যবান সম্পদ আপনি যে কনো উপায়ে ফিরে পাবেন। যারা এ ধরনের সমস্যা ভুগছেন তাদের জন্য এই লেখাটি। চলুন জেনে নিই হাড়িয়ে যাওয়া সার্টিফিকেট কিভাবে ফিরে পাবেন।

থানায় জিডি

হারিয়ে যাওয়া অথবা চুরি হওয়া সার্টিফিকেট ফিরে পাওয়ার প্রধান উপায় হল থানায় জিডি করা। আপনার সার্টিফিকেটটি যেখান থেকে হারিয়ে গেছে তার আশেপামে নিকটবর্তী থানায় গিয়ে জিডি করে রাখুন। থানায় জিডি করতে হলে জিডির জন্য কিছু সঠিক তথ্য দিতে হবে। জিডি করতে কনো ভুল তথ্য দিবেন না আপনার যতটুকু মনে আছে ততটুকু দিবেন। বেশি কিছু দেয়ার দরকার নেই। জিডি করা শেষ হলে আপনাকে একটি জিডি কপি দেয়া হবে সেটি যত্ন সহকারে সংগ্রহ করে রাখুন পরে বিভিন্ন সময় কাজে লাগবে। প্রয়োজনে কয়েকটি জিডি কপি ফটোকপি করে রাখুন।

পত্রিকায় বিজ্ঞাপন

জিডি করা শেষ হয়ে গেলে এবার আপনার কাজ হচ্ছে যে কনো একটি পত্রিকায় বা মিডিয়ায় বিজ্ঞাপন দেয়া। জিডি ফটোকপি নিয়ে জনপ্রিয় একটি দৈনিক পত্রিকার এজেন্সির কাছে যান। সেখানে দায়িত্বরত কর্মকর্তার সাথে সরাসরি কথা বলুন যে,আপনি তাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে চান। তারপরে তাদের কাছে জিডিও কপিসহ প্রয়োজনীয় তথ্য জমা দিন। যে তথ্যগুলো জমা দিতে হয় তা হচ্ছে -জিডি নম্বর,পাশের সাল,বোর্ডের নাম,সার্টিফিকেটে উল্লেখিত পরীক্ষার নাম,যার সার্টিফিকেট হারিয়েছে তার নাম,কোথায়,কিভাবে হারিয়েছেন তার বিস্তারিত বর্ননা। তারা আপনার দেয়া তথ্য হুবহু পত্রিকায় প্রকাশ করবে। বিজ্ঞাপনটি প্রকাশ করার পর পত্রিকা হতে সেই অংশটি কেটে সংগ্রহ করে রাখুন।

শিক্ষাবোর্ডে আবেদন

আপনার সার্টিফিকেট যদি হারিয়ে যায় তাহলে সরাসরি শিক্ষা বোর্ডের মাধ্যমে আবেদন করতে পারবেন। শিক্ষাবোর্ডের ওয়েবসাইটে গিয়ে অবেদন ফরম পূরন করে সোনালী ব্যাংকে ফি জমা দিতে হবে। তারপর আপনার শিক্ষা বোর্ডের তথ্যকেন্দ্রে গিয়ে সকল প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিয়ে আবেদন ফরম সংগ্রহ করে নিতে হবে। শিক্ষা বোর্ডের “তথ্য সংগ্রহ কেন্দ্র” থেকে ফরম সংগ্রহ করার পর সেটি সঠিকভাবে পূরন করতে হবে। তারপর আবেদনপত্রের সাথে সোনালী ব্যাংকের জমা রশিদ,জিডির কপি,পত্রিকা বিজ্ঞাপনের কপি জমা দিতে হবে।
তবে সার্টিফিকেট যদি কনো কনো কারনে ছিঁড়ে যায় বা নষ্ট হয়ে যায় সেক্ষেত্রে জিডি এবং পত্রিকার বিজ্ঞাপন দেয়ার দরকার নেই। শিক্ষাবোর্ডে জমা দেওয়ার পরে আবেদনপত্রটি চূড়ান্তভাবে গৃহীত হয়ে গেলে বোর্ড আপনাকে দ্বি-নকল সার্টিফিকেট প্রদান করবে।

পরিশেষে এটাই বলবো,সার্টিফিকেট নামক এই মহামূল্যবান সম্পদটি অবশ্যই যত্ন সহকারে রাখবেন। এটি সারাজীবনের অমূল্য সম্পদ। আশা করি,নকল সার্টিফিকেট চেনার উপায় এবং হারিয়ে যাওয়া সার্টিফিকেট ফিরে পাওয়ার উপায়গুলো জেনে গেছেন। যদি এই বিষয়ে কনো কিছু জানার থাকে তাহলে আমাদেরকে কমেন্ট করে জানান। পোস্টটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ। এমন সব দারুন দারুন পোস্ট পেতে Grathor এর সাথেই থাকুন এবং গ্রাথোর ফেসবুক পেইজ ও ফেসবুক গ্রুপ এ যুক্ত থাকুন, আল্লাহ হাফেজ।

Related Posts

2 Comments

মন্তব্য করুন