নামাজের হিসেব : আমার নামাজ কবুল হচ্ছে কিনা জানার উপায়

ইসলাম ধর্মাবলম্বী সকলের উপর দৈনিক ৫ ওয়াক্ত নামাজ পড়া ফরজ। ইসলামের ৫ টি স্তম্ভের একটি হচ্ছে নামাজ। এটির গুরুত্ব ব্যাখ্যা করা তাই বাহুল্য হবে। আজকে নামাজ নিয়ে কিছু প্রশ্ন তুলতে চাই। নামাজ নিয়ে কিছু দ্বিধা-দ্বন্দ্বের কথা উল্লেখপূর্বক কিছু চিন্তার খোরাক জোগানোর চেষ্টা করবো।

এত ভণিতা করে শুরুর লাইনগুলো লেখার কারণ হচ্ছে- এটা আমার প্রথম লেখা। তাই কিছুটা নার্ভাস বটে। এজন্য শুরুটা প্রথাগত দু-লাইন সাধারণ জ্ঞান দিয়ে করলাম। বাকি অংশগুলোতেও চেষ্টা করবো যতটুকু পারা যায় ছোটবেলার রচনা রচনা ভাব রাখা জন্য! শত হলেও প্রথম লেখা বলে কথা!

নামাজ পাঁচ ওয়াক্ত পড়তে হবে- সেটা কোরআনেই স্পষ্ট বলে দেয়া আছে। কিন্তু কিভাবে পড়তে হবে – তা কিন্তু কোরআনে স্পষ্ট বলে দয়া নেই। তার জন্য আমাদের হাদিস অনুসরণ করতে হয়। মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সাঃ) যেভাবে নামাজ পড়তেন এবং যেভাবে শেখাতেন- সেটা অনুসরণ করেই পড়তে হয়। তবে, যেহেতু এটার কোরআনের মত একটিমাত্র লিখিত দলিল নেই এবং বিভিন্নজনের বর্ণনায় নামাজ পড়ার আংশিক ভিন্নতা লক্ষ্য করা গেছে- তাই নামাজের নিয়মের ব্যাপারে কিছুটা রকমফের মাজহাবগুলোতে দেখা যায়। আলেমগণও যেকোন একটি উপায় অনুসরণ করার পরামর্শ দেন। তারপরও, সঠিকভাবে নামাজ আদায়ে অনেকগুলো ধাপ অনুসরণ করতে হয়। সঠিকভাবে নামাজ আদায় না করলে নামাজ কবুল হওয়ার সম্ভাবনাও কমে যায়।

সঠিকভাবে নামাজ আদায়ের ধাপগুলো অনুসরণে প্রথমেই ওজু করতে হয়, তারপর পাক জায়গা দেখে নামাজে দাড়াতে হয়। তার পূর্বে অবশ্য পাক কাপড় পরিধান করা জরুরি। অবশ্য এখানে নামাজের ধাপ বর্ণনা করা প্রধান উদ্দেশ্য নয়! মূখ্য বিষয়টা হচ্ছে, নামাজের ধাপগুলো অনুসরণ করে নামাজ আদায় করলে নামাজ কবুল হওয়ার সম্ভবনা বেশি। নিশ্চিতভাবে কেউই বলতে পারবে না যে, তার নামাজ কবুল হয়েছে কিনা! এখানেই আজকের মূল প্রশ্নটা দাঁড়ায়! নামাজ কবুল হলো কি না বুঝবো কিভাবে?

নামাজের প্রস্তুতি গ্রহণ করে, তাকবীর দিয়ে, সঠিকভাবে আল্লাহ পাকের শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করে, প্রতি রাকাতে সূরা-কেরাত পাঠ করে, তাশাহুদ-দূরুদ পাঠ করে সালাম ফিরিয়েও কেউ শতভাগ নিশ্চয়তা দিতে পারবে না যে, তার নামাজ কবুল হয়েছে। মহান আল্লাহ অন্তর্যামী। তিনি সব খবর রাখেন। কার নামাজ কবুল করবেন, কার করবেন না- সবই তার ইচ্ছা! এখন তার বান্দা হয়ে আমার কি করার আছে? আমি কি আমার নামাজ কবুল হবে কিনা- সেটা নিয়ে উদাসীন থাকবো? “নামাজ পড়ছিতো!” – এরকম বলাটাই যথেষ্ট না। সাথে নামাজ কবুল হচ্ছে কিনা সেটার দিকে খেয়াল রাখাও জরুরি! তবে কি শুধু নামাজ পড়ে চেষ্টাই চালিয়ে যাবো? নামাজ কবুল হলো কিনা – সেটা জানার কি কোনো উপায় নেই? যদি এরকম উপায় থাকে- খুব সুবিধা হতো না? সবাই নামাজ শেষ করেই চেক করতাম! আজকের নামাজ হলো কিনা, পরের ওয়াক্তে কিভাবে নামাজ আদায় করবো- এসব কত কিছুই না হতো!

ছোটবেলায় আমি যখন নামাজে যেতাম, তখন থেকেই এই প্রশ্নটা মাথায় ঘুরতো! আমি তো আজ নামাজ পড়লাম- কবুল হবে তো? আজকে কি একটু তাড়াহুড়ো করে ফেললাম? এরজন্য যদি নামাজ না হয়! পরের ওয়াক্তে অনেক সময় নিয়ে পড়বো। এসব ভাবনা আমার মাথায় ঘুরতো। এসব বিষয়ে মাথায় প্রশ্নটাই আসতো। কিন্তু সঠিক কোনো উত্তর আসে নি প্রথম দিকে। তারপর একসময় বিষয়টা বোঝা শুরু করি। ধীরে ধীরে পুরো বিষয়টা পরিষ্কার হয়। তারপর একটা তত্ত্ব দাঁড় করাই। এই একটা পদ্ধতি নিয়ে ভাবলে আমরা যে কেউ খুব সহজেই বুঝতে পারবো নামাজ কবুল হচ্ছে কিনা! নিজেকে নিজে একইভাবে প্রশ্ন করে একটু চিন্তা করলেই বেরিয়ে আসবে আমার নামাজ কবুল আদৌ হচ্ছে কিনা। আল্লাহ আপনার নামাজকে ইবাদত হিসেবে গ্রহণ করছেন কিনা! খুব সহজ এবং সুন্দর একটা সমীকরণ। এই নামাজের হিসেবই আপনাকে বলে দিবে কতটা সঠিকভাবে আপনি ধর্ম অনুসরণ করে নামাজ পড়তে পেরেছেন!

<

মহান আল্লাহ বান্দাকে দৈনিক ৫ বার তাকে সালাতের মাধ্যমে স্মরণ করার নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা হয় ৫ ওয়াক্ত সালাত আদায়ের মাধ্যমে। আল্লাহই এই নামাজ কবুল হওয়া নিয়ে কথা বলেছেন কোরআনে। তিনি ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছেন বান্দার জন্য। আল্লাহ্ কোরআনে স্পষ্ট করেই বলে দিয়েছেন, “নিশ্চয়ই সালাত অন্যায় ও অশ্লীল কাজ থেকে বিরত রাখে” (সূরাঃ আনকাবূত, আয়াত:৪৫)। কোরআনের এ আয়াতটা নিয়ে যদি আমরা ভাবি তবে দেখতে পাবো যে, স্বয়ং আল্লাহ বলছেন, নামাজ পাপ কাজ থেকে দূরে রাখে।

কথাটা ভিন্ন দিক থেকে দেখলে বোঝা যায় যে, একজন নামাজী পাপ কাজ থেকে স্বাভাবিকভাবেই দূরে থাকবেন। যদি একজন মানুষ পাপ কাজ থেকে বিরত থাকতে না পারে, তবে সে আসলে নামাজী নয়। বিষয়টা যদি আমরা সমীকরণের মতো মিলিয়ে নেই, যেহেতু নামাজ পাপ কাজ থেকে দূরে রাখে, আপনার নামাজ যদি কবুল হয়, আপনি নিজেও ধীরে ধীরে সকল পাপ কাজ থেকে দূরে সরতে থাকবেন। আপনার অসৎ কাজ করা ধীরে ধীরে কমে যাবে। আর যদি আপনার নামাজ কবুল না হয়, তবে আপনি নিজেকে পাপ কাজ থেকে বিরত রাখতে পারবেন না।

পরিশেষে বলা যায়, আপনি নিজেকে প্রশ্ন করলেই বুঝে যাবেন আপনার নামাজ কবুল হচ্ছে কিনা। আপনি যদি আগের চেয়ে অসৎ কাজ থেকে দূরে থাকতে পারেন- তবেই আপনি নিশ্চিত হবেন আপনার নামাজ কবুল হচ্ছে। যার ঘোষণা স্বয়ং আল্লাহই দিয়ে রেখেছেন!

Related Posts