নোকিয়ার ব্যাবসায়িক জনপ্রিয়তা ফেরাতে আরও 23 কোটি ডলার বিনিয়োগ

নতুন প্রজন্মের কথা বাদ দিলে নোকিয়ার কথা শুনেন নাই এমন লোক খুঁজে পাওয়া দুরূহ। ফিনল্যান্ডের এই কোম্পানিটি প্রায় দীর্ঘ 150 বছরেরও বেশি সময় ধরে মোবাইল ফোনের জগতে রাজত্ব করে আসছিল। ওই সময় এই মোবাইল ফোনের ব্র্যান্ড সারাবিশ্বে সকলের মুখে মুখে প্রচলিত ছিল। 

নোকিয়া একসময় মোবাইল ফোনকে বিপ্লবের নেতৃত্ব দিয়েছিল খুবই কম সময়ের মধ্যেই। একটি সফল ব্রান্ড যা কাগজের কারখানা থেকে global-communications ভূমিকা রেখেছিল। মোবাইল ফোনের বিপ্লবকে নেতৃত্ব দেওয়া এই ব্রান্ড তখনকার ফোন বাজারের প্রায় 40 শতাংশেরও বেশি দখলে রেখেছিল। 

নিত্য নতুন মডেল ও বিভিন্ন নানারকম সুবিধা সংবলিত গেজেটের বাজার প্রায় 70% দখল করা বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান সকল রকম জল্পনা কল্পনা ভেঙে মাইক্রোসফট এর কাছে স্মার্টফোন বিক্রি করে দিল। এখন নিশ্চয়ই আপনার মনে প্রশ্ন আসে তারা কেন এতটা বিফল হল। কেনই বা প্রতিষ্ঠান সবচেয়ে বড় বিভাগ স্মার্টফোন বিভাগ মাইক্রোসফট এর কাছে বিক্রি করে দিতে হলো। 

নোকিয়ার বিফল হওয়ার কতগুলো সম্ভাবনাময় কারণ আপনাদের মাঝে তুলে ধরব। যদিও টপিকটি আসলে এই ভূমিকায় পড়ে না কিন্তু তারপরও নোকিয়ার কথা যেহেতু উঠছে তাদের সম্পর্কে একটু না বললে আপনি বুঝতেই পারবেন না কেন তাদেরকে আরো জনপ্রিয় করতে 23 কোটি ডলার বিনিয়োগ দেয়া হচ্ছে। 

প্রধান নিবার্হী নিয়োগ এবং ভুল সিদ্ধান্ত নির্বাচন

নোকিয়ার পতন এর অন্যতম কারণ হলো ভুল নির্বাহী নির্বাচন। অর্থাৎ তারা এমনই একজন কে প্রধান নির্বাহী হিসেবে নির্বাচন করেছিলেন যে কিনা নোকিয়ার সম্যক সুবিধাগুলি বুঝতে এবং ধরতে পারতেছেন না। 

একটি প্রতিষ্ঠান প্রধানের সমসাময়িক প্রযুক্তি এবং জনপ্রিয় টেকনোলজি সম্পর্কে গভীর ধারণা থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই নতুন প্রজন্মকে গ্রহণ করে নেয়ার জন্য। কিন্তু নকিয়ার প্রধান নিবার্হী এমন কিছু বড় বড় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছিলেন যা যার পরিশেষে নোকিয়া ব্যর্থতা।

<

শুধুমাত্র হার্ডওয়ার এর ওপর গুরুত্ব দেয়া

আপনারা যারা নোকিয়া ফোন ব্যবহার করেছিলেন তাঁরা নিশ্চয়ই এই ফোনের কর্মদক্ষতা গুলি খুব ভালোভাবেই দেখেছিলেন। কারণ তারা তারা ফোনগুলোতে হার্ডওয়ার এর উপর খুবই গুরুত্ব দিতেন যেটা ইতিবাচক। কিন্তু এটাও মনে রাখতে হবে হার্ডওয়ার পাশাপাশি সফটওয়্যার কেউ সমান গুরুত্ব দিয়ে দেখতে হবে। নোকিয়া তখন তাদের ফোনে জাভা অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহার করত। 

কিন্তু তৎপরবর্তী সময়ে যখন অ্যান্ড্রয়েড চলে আসলো তখন নোকিয়া বুঝতে পারল না যে অ্যান্ড্রয়েড এর জনপ্রিয়তা দিন দিন তাদের জাভা অপারেটিং সিস্টেম থেকে বেড়ে যাচ্ছে। অনেক নোকিয়া প্রেমী প্রথমাবস্থায় অ্যান্ড্রয়েড এবং আইওএস অপারেটিং সিস্টেমকে অস্বীকৃতি জানালেও পরবর্তীতে তারা আবার অ্যান্ড্রয়েড ও আইওএস এর দ্বার প্রান্ত হয়। 

চীনা মোবাইল বাজারের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি

চীনারা তাদের অসাধারণ দক্ষতা প্রয়োগ করার মাধ্যমে যেকোনো নতুন টেকনোলজির আগাগোড়া সম্পূর্ণ তাদের মতো করে তৈরি করে দিবে খুবই কম খরচে। গবেষণা করে দেখা গিয়েছে যে চিনা ব্রান্ড তাদের মোবাইল ফোন তৈরি গতি অপ্রত্যাশিত ভাবে শুরু করে দিয়েছে। 

তাছাড়াও তারা তাদের মত করে নিজস্ব ডিজাইন দিয়ে উন্নত ফ্লাগশিপ মোবাইল তৈরি করতে সক্ষম ওকে মোবাইল থেকে আরও দক্ষ ভাবে ব্যবহার করা যায়।

নতুন আইডিয়া এবং উদ্ভাবনের

নোকিয়া কখনোই সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে পারে নি। কারণ তারা তাদের সর্বশেষ প্রযুক্তি এবং গবেষণা নতুন এবং উন্নত ফোন নিয়ে আসার চেষ্টা করেনি। তারা আবার আগের জায়গায় ফিরে যেতে চেষ্টা করেছিল যেটা একটি মারাত্মক ভুল। 

সময়ের চাহিদা তো অবশ্যই বুঝ উঠতে ব্যর্থ হয়েছিল তারা। এর সাথে আন্তর্জাতিক বাজারে অন্যান্য ব্র্যান্ডের মোবাইল গুলো হানা দেওয়ার কারণে নকিয়া বাজার ধরতে ব্যর্থ হয়েছিল বলে মনে করা হচ্ছে।

ধারণক্ষমতা এবং কার্যকরী দিক থেকে দৈনন্দিন জীবনের অংশ না হয়ে ওঠা

গুগোল এবং অ্যাপলের আইফোন গুলোতে দৈনন্দিন প্রায় সকল ধরনের কাজকর্ম সেরে ওঠার একটি যন্ত্র হয়ে উঠেছে। এই যুগে একটি মোবাইল ফোন না থাকা মানে আপনি দুনিয়া থেকে আরও অনেকদূর পিছিয়ে পড়লেন। মূলত অ্যান্ড্রয়েড এবং অ্যাপল ফোন নির্মাতারা ডেভলপার এবং গ্রাহকদের একটি পূর্ণ সম্প্রদায় তৈরি করে সক্ষম হয়। 

তারা সবসময় গ্রাহকদের খুশি করার আপ্রাণ চেষ্টা করছে বিভিন্ন রকম অ্যাপস এবং অফার এর মাধ্যমে। 

কিন্তু নোকিয়ার ধরন সম্পুর্ন উল্টো ছিল। কারণ তারাও প্রতিটি সময় নিজের সব প্রতিযোগিতায় থাকার চেষ্টা করছে বা বলা চলে এই দুর্ভেদ্য প্রতিযোগিতার বাইরে থাকার চেষ্টা করে চলেছে। তাই অনেকেই মনে করেন এই বাইরে থাকার চেষ্টা নোকিয়া কে ধরে রেখেছে জনগণের আগ্রহ থেকে।

এসব কারণ গুলি মূলত নোকিয়ার পিছিয়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ হিসেবে বিবেচনা করা যায়।

চলুন এবার মুল টপিকে ফিরে যাওয়া যাক।

23 কোটি ডলার বিনিয়োগ করছে নোকিয়ার নির্মাণ প্রতিষ্ঠান এইচ এম ডি গ্লোবাল। এইচ এম ডি গ্লোবাল এর প্রধান নির্বাহী চেয়ারম্যান বলেন শিল্পের আধুনিকতার সঙ্গে একই গতিতে চলা আমাদের অনন্য ব্যবসায়ীক মডেল বিশ্ব দরবারে অংশীদারিত্বের সাথে বিনিয়োগের মাধ্যমে আমাদের যাত্রা ত্বরান্বিত করে। 

এই বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠানটি মূলত নোকিয়াকে বিনিয়োগ করার মাধ্যমে মূলত চারটি ক্ষেত্রে অবদান রাখবে। 

  • প্রথম অবদান হল নকিয়া 5g ফোন নির্মাণে গতি ত্বরান্বিত করা। 
  • দ্বিতীয় যে অবদান সেটি হল করোনা বাস্তবতায় ডিজিটাল ফাস্ট অফারিং কে গতি বাড়ানো। 
  • তৃতীয়টি অবদানটি হল গুরুত্বপূর্ণ এবং উন্নয়নমুখী সকল বাজারে নকিয়ার উপস্থিতি বাড়ানো। 
  • এবং সর্বশেষ চতুর্থ যে অবদানটি সেটি হলো নকিয়ার শুধু হার্ডওয়ার ভিত্বিক চিন্তা ভাবনা থেকে বের হয় সার্বিকভাবে এটি একটি গ্রহণযোগ্য সেবা যন্ত্র হিসেবে গ্রাহককে সুযোগ করে দেওয়া।

Related Posts