পরিণতি : একটি সত্য ঘটনা

আব্বাসীয় খিলাফতের শ্রেষ্ঠ শাসক ছিলেন বাগদাদের খলিফা হারুন অর রশিদ।

তার সময়ের একটা ঘটনা উল্লেখ করছি।

৮০২ সালে রোমান সাম্রাজ্যের কোষাধ্যক্ষ নাইসিফোরাস সম্রাজ্ঞী আইরিনকে হটিয়ে রোমান সাম্রাজ্য দখল করেন৷ ক্ষমতা হাতে নিয়েই নাইসিফোরাস রোমান সাম্রাজ্যকে অদ্বিতীয় সাম্রাজ্য হিসেবে পরিণত করতে পদক্ষেপ নেয়া শুরু করেন৷ তার মধ্যে প্রথম পদক্ষেপ ছিল বাগদাদের সাথে চুক্তি বাতিল করে কর প্রদান বন্ধ করা। ক্ষমতা দখলের পরের বছরই তিনি এক দুঃসাহস দেখান৷ হারুন অর রশিদের কাছে এক রাজকীয় পত্রে নাইসিফোরাস দম্ভোক্তি করেন এভাবে, রোমান শাসক নাইসিফোরাসের পক্ষ হতে আরব শাসক হারুন অর রশিদের প্রতি,

“আমার পূর্বতন সম্রাজ্ঞী আইরিন আপনাকে অনর্থক মর্যাদা দিয়ে বছরের পর বছর রাষ্ট্রের মূল্যবান অর্থ আপনাকে দান করে গিয়েছেন। এটা ছিল তার নারীসুলভ দুর্বলতা মাত্র। তাই আপনি এই পত্র পাওয়া মাত্রই আপনাকে দেয়া অর্থ তার দ্বিগুণ হিসেবে ফিরিয়ে দিবেন। তা না হলে তরবারি আপনার ও আমার মধ্যে ফয়সালা করবে”

নাইসিফোরাসের এমন ঔদ্ধত্য আর অপমানজনক বাক্যে খলিফা অত্যন্ত ক্রোধান্বিত হন। ঐতিহাসিকতরা তার এমন অভিব্যক্তি ফুটিয়ে তুলেছেন এভাবে যে, এ সময় খলিফা এতটাই রাগান্বিত হন যে ভয়ে তার মুখের দিকে কেউ তাকাতেও সাহস করেনি। তার ক্রোধের পরিমাণ বুঝতে পেরে সভাসদগণ ভয়ে ছত্রভঙ্গ হয়ে যান। নাইসিফোরাসের চিঠির অপর পৃষ্ঠায় খলিফা জবাবে লিখেন,

” হারুন অর রশিদের পক্ষ থেকে রোমানদের কুকুর নাইসিফোরাসের প্রতি, আমি তোমার পত্র পাঠ করেছি। এর উত্তর চোখে দেখবে, কানে শুনতে হবে না।”

<

এর পরের কাহিনী সবাই জানে। রোমান রাজের চিঠি পাওয়ার দিনই রণসাজের সাথে রোমান সাম্রাজ্য গুড়িয়ে দিতে এক বিশাল বাহিনী নিয়ে রওনা হয়ে যান খলিফা। পথে কোথাও বিরতি না নিয়েই তিনি সরাসরি হেরাক্লিয়ায় যান এবং সেখানে রোমানদের মোকাবেলা করেন৷ সেখানে ভয়ংকর এক যুদ্ধ সংঘটিত হয়। শেষপর্যন্ত রোমান সম্রাট শোচনীয়ভাবে পরাজিত হয় এবং আগের চেয়ে আরো বেশি কর প্রদানের শর্তে খলিফার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন৷ খলিফা তার অংগীকারের ভিত্তিতে ক্ষমা করে রাজধানীতে প্রত্যাবর্তন করেন। কিন্তু খলিফা রাজধানীতে পৌছার কয়েকদিনের মাথায় নাইসিফোরাস চুক্তি ভঙ্গ করে বিদ্রোহ করে বসেন। এবারো খলিফা নিজে যুদ্ধযাত্রা করেন। যুদ্ধে আবারো নাইসিফোরাস পরাজিত হন এবং ৪০ হাজার রোমান সৈনিক নিহত হয়৷ এ সময় গুরুতর আঘাতপ্রাপ্ত রোমান সম্রাট আবারো ক্ষমা প্রার্থনা করলে হারুন অর রশিদ অতিরিক্ত কর প্রদানের শর্তে ফের তাকে ক্ষমা করে রাজধানীতে ফিরে যান। ৮০৬ সালে আবার নাইসিফোরাস চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করে আব্বাসী সীমান্তে লুটতরাজ চালাতে থাকেন। খলিফা ট্রান্সওক্সিয়ানার বিদ্রোহ দমনে ব্যস্ত ছিলেন বলে রোমান সম্রাট আরো বেশি হিংস্র হয়ে উঠেন। এবার খলিফা প্রায় দেড় লক্ষ সৈন্য নিয়ে নাইসিফোরাসকে আক্রমণ করেন এবং যথারীতি বিজয়ী হোন৷ কিন্তু এ সময় হারুন অর রশিদ বিরাট ভুল করে বসেন৷ নাইসিফোরাস আবার ক্ষমা প্রার্থনা করলে তিনি তাকে ঐ আগের শর্তে আবারো ক্ষমা করে দেন। ঐতিহাসিকরা তার এই ভূমিকার কঠোর সমালোচনা করেছেন। বারবার ক্ষমা না করে তিনি বরং রোমান সাম্রাজ্য দখল করতে পারতেন।

ক্ষমা মহৎ গুণ। ভুলের ক্ষমা হয়। কিন্তু অপরাধের ক্ষমা থাকতে নেই। অপরাধীকে ক্ষমা করলে পরাধ প্রবণতা বাড়ে। নেপোলিয়ন বোনাপার্ট বলেছেন,”শত্রু পরে গেলে হেসো না,”তবে তাকে তুলতেও যেও না।”

Related Posts

9 Comments

মন্তব্য করুন