পলাশী যুদ্ধের বিশ্বাসঘাতকদের পরিণাম কি হয়েছিল?

১৭৫৭ সালের ২৩ জুন পলাশীর যুদ্ধে স্বাধীন বাংলার নবাব সিরাজউদ্দৌলা ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কাছে পরাজিত হন। ফলে ২০০ বছরের জন্য বাংলা স্বাধীনতা হারায়। পলাশীর রক্তাক্ত ইতিহাস: পরাধীনতার ইতিহাস, মুক্তিসংগ্রামীদের পরাজয়ের ইতিহাস, ষড়যন্ত্র ও বিশ্বাসঘাতকতার ইতিহাস, ট্রাজেডি ও বেদনাময় এক শোক স্মৃতির ইতিহাস।

পলাশী যুদ্ধ যেদিন সংঘটিত হয় সেদিনটি ছিল বৃহস্পতিবার। ঐদিন মুর্শিদাবাদ থেকে ১৫ ক্রোশ দক্ষিণে ভাগিরথী নদীর তীরে পলাশীর আম্রকাননে বাংলা বিহার ও উড়িষ্যা সহ পুরো উপমহাদেশে স্বাধীনতার কবর রচিত হয়েছিল।

পলাশীর যুদ্ধে নবাব সিরাজউদ্দৌলার পরাজয়ের মাধ্যমে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদী শক্তি দীর্ঘ ১৯০ বছর এদেশে শাসন করার সুযোগ পায়। সে সময় তারা কোটি কোটি টাকার অর্থ সম্পদ পাচার করে। বাংলাদেশ থেকে লুটকৃত পুঁজির সাহায্যে ইংল্যান্ডে শিল্প বিপ্লব হয়।

পলাশীর যুদ্ধে বেশকিছু লোকের বিশ্বাসঘাতকতার কারণে নবাব সিরাজউদ্দৌলার পরাজয় হয়েছিল। সেই বিশ্বাসঘাতকদের পরিণাম পরবর্তীতে কি হয়েছিল তা কি আমরা জানি? এখন জানবো বিশ্বাসঘাতকদের পরিণাম সম্পর্কে।

মীর জাফর: বিশ্বাসঘাতকদের সরদার মীর জাফর পবিত্র কুরআন শরীফ মাথায় রেখে নবাবের সামনে তার পাশে থাকবেন বলে অঙ্গীকার করার পরপরই বেঈমানি করেছিল। তার জামাতা মীর কাসেম তাকে ক্ষমতাচ্যুত করেন। পরবর্তীতে তিনি দুরারোগ্য কুষ্ঠ রোগে আক্রান্ত হয়ে ৭৪ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন।

জগৎ শেঠ, মহারাজা স্বরূপচাঁদ: মীর কাসেম তাদের হত্যা করে। জগৎ শেঠকে দুর্গের চূড়া থেকে গঙ্গায় নিক্ষেপ করা হয়।

রায় দুর্লভ: যুদ্ধের পর তিনি কারাগারে নিক্ষিপ্ত হন এবং সেখানেই মৃত্যুবরণ করেন।

উমিচাঁদ:  যুদ্ধের পর রবার্ট ক্লাইভ কর্তৃক প্রতারিত হয়ে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন এবং উন্মাদ অবস্থায় রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে ঘুরে তার মৃত্যু ঘটে।

রাজা রাজবল্লভ: পদ্মায় ডুবে মর্মান্তিকভাবে মৃত্যুবরণ করেন।

ইয়ার লতিফ খান: ইয়ার লতিফ যুদ্ধের পর হঠাৎ করে নিরুদ্দেশ হয়ে যান। ধারণা করা হয় তাকে গোপনে হত্যা (গুম) করা হয়েছিল।

মহারাজা নন্দকুমার: তহবিল তছরুপ ও অন্যান্য অভিযোগের বিচারে নন্দকুমারের ফাঁসিকাষ্ঠে মৃত্যু হয়েছিল।

রবার্ট ক্লাইভ: পলাশী ষড়যন্ত্রে নেতৃত্ব দিয়ে রবার্ট ক্লাইভ কোটি টাকার মালিক হন। ইংরেজরা তাকে ‘পলাশী হিরো’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন। এ রবার্ট ক্লাইভ দেশে ফিরে গিয়ে একদিন বিনা কারণে বাথরুমে ঢুকে নিজের গলায় ক্ষুর চালিয়ে আত্মহত্যা করে।

মিরন: মীর জাফরের বড় ছেলে মিরন অসংখ্য কুকর্মের নায়ক। ইংরেজদের নির্দেশে মিরনকে হত্যা করে মেজর ওয়ালেস। আর ইংরেজরা বলে বেড়ায় যে বজ্রাঘাত মৃত্যু ঘটেছে মিরনের।

ঘষেটি বেগম: মিরনের নির্দেশে নৌকা ডুবিয়ে হত্যা করা হয় ঘষেটি বেগমকে।

মুহম্মদী বেগ: নবাব সিরাজউদ্দৌলার হত্যাকারী। মৃত্যুর সময় তার কাছ থেকে দুই রাকাত সালাত আদায় করার অনুমতি চেয়েছিলেন নবাব। কিন্তু সেই দাবি প্রত্যাখ্যান করে কুখ্যাত মুহম্মদী বেগ। পরবর্তী পর্যায়ে মুহম্মদী বেগ মাথা গড়বড় অবস্থায় বিনা কারণে কূপে ঝাঁপ দিয়ে মৃত্যুবরণ করে।

ওয়াটসন: ওয়াটসনের ক্রমাগত স্বাস্থ্যহানি হলে কোনো ওষুধেই ফল না পেয়ে কলকাতাতেই মৃত্যুমুখে পতিত হন।

প্রতারণা, বিশ্বাসঘাতকতা, হঠকারিতা ইত্যাদির পরিণত যে ভালো হয় না তা পলাশীর মীর জাফরদের পরিণতি থেকে স্পষ্ট বোঝা যায়।

তথ্যসূত্র: কারেন্ট ওয়ার্ল্ড, জুন – ২০১৯।

Related Posts

13 Comments

  1. আসসালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহু
    আপনার একটা সাসক্রাইব আর একটা লাইক আমার জন্য অনুপ্রেরণা
    Please support me🙂

    Youtube Channel: https://www.youtube.com/channel/UCcrbrQxUzsavUjfXMgrsM6Q

    Facebook page:
    https://www.facebook.com/107324621876693/posts/113049517970870/?app=fbl

মন্তব্য করুন