প্রথম আইডি নিয়ে ক্যাপশন

আসসালামু আলাইকুম। সবাই কেমন আছেন? আশা করি সকলেই ভালো আছেন। আমিও সৃষ্টিকর্তার দয়ায় ভালো আছি। আজকে আমি আপনাদেরকে আমার প্রথম ফেসবুক আইডির ইতিহাস বলবো।
ঘটনাটা ২০১৪ সালের।
আমার বাড়ির পাশের আঙ্কেল। নাম তার আব্বাস। উনি তখন দশম শ্রেণিতে পড়তো। আর আমি ৫ম শ্রেণিতে। ওনাদের বাড়ির পাশে একটা মাঠ ছিলো। মাঠে প্রতিদিন বিকালে খেলাধুলা করতাম। খেলার পূর্বে প্রতিদিন আব্বাস কাকা অ্যান্ড্রয়েটে ফেসবুক চালাতো। আমি শুধু চেয়ে চেয়ে দেখতাম। একেবারে বোকা ছিলাম যে তা না। কিছু হলেও বুঝতাম। তখন আমাদের ফ্যামিলির কারও অ্যান্ড্রয়েট ফোন ছিলো না। তবে নোকিয়ার একটা ফিচার ফোন ছিলো। ফোনটার দাম পাঁচ হাজার টাকা ছিলো। সেখানে আমি গুগল চালাতাম। পড়াশুনার কাজে ব্যাবহার করতাম। আমি ফেসবুক চালানোর জন্য আব্বাস কাকাকে বলছি আমাকে একটা আইডি খুলে দেন আমি ফেসবুক চালাবো। তিনি বললেন আইডি খুলতে ৫০ টাকা লাগবে। তখন আমার হাতে ৫০ টাকা ছিলো না। ছিলো মাত্র ৩০ টাকা। ওনাকে বললাম আপনাকে ৩০ টাকা দিবো আমাকে আইডি খুলে দেন। তিনি রাজি হলেন না। তখন কি আর করার আমি গোমড়া মূখেই বাড়তে ফিরলাম। আমি কয়েক দিন যাবৎ খেলার মাঠে যায় নি। তখন শুধু বাটন/ফিচার ফোনে চেষ্টা করতাম যে কিভাবে ফেসবুক আইডি খুলতে পারি। এভাবে যেতে যেতে আমি ২০১৫ সালে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে উঠি। অনেক চেষ্টার পরে ফেসবুক আইডি খুলতে সক্ষম হই। তবে আইডির নাম ছিলো “ইলিয়াছ সহকারী অধ্যাপক” কারণ আইডি খোলার সময় নাম পূরণ করার পর পদবীতে সহকারী অধ্যাপক দিয়ে দেই। আইডির নাম পরে অবশ্যই পরিবর্তন করেছি। তারপর
আমি কাকার কাছে গিয়ে বলছি যে কাকা আমি ফেসবুক আইডি খুলছি। কাকা কিছু বলে নাই। একদিন আমি কাকার কাছে গিয়ে বলছি কাকা আপনার টাচ মোবাইলটা আমাকে দিবেন? আপনাকে কিছু টাকা দিবো। তিনি বললেন যে এক ঘন্টা ইউজ করলে ১০ টাকা। আমি তাতেই রাজি হয়ে গেলাম। ওনার কাছ প্রতিদিন ১০ টাকা দিয়ে মোবাইল ভাড়া নিতাম। অনেক সময় প্রতিদিন ৩০/৪০ টাকাও খরচ হয়ে যেত। এভাবে মোবাইল ভাড়ার পিছনে আমার প্রায় ১ হাজার টাকা খরচ হয়ে যায়।
এবার আমি ৭ম শ্রেণিতে উঠলাম তখন আমার ক্লাসমেট (নাম: সাদ্দাম) থেকে ৫০০ টাকা দিয়ে একটা অ্যান্ড্রয়েট মোবাইল কিনে নিয়েছি। প্রথম দিন চালানোর সময় আম্মু হঠাৎ দেখে পেলে পরে বিষয়টা আব্বুর কানে যায়। আব্বু রেগে মেগে বলল যে মোবাইল এখনই ফিরে দিয়ে আস। পরে বিকালে বাজারে গিয়ে ঐ ছেলেটাকে মোবাইল ফেরৎ দিয়েছি। তখন আমার দুঃখ কে বুঝে মনে হয় কলিজা ফেটে যায়। এখনও ঐ ছেলেটাকে দেখলে লজ্জায় মাথা নিচু করে হাটি। তো এভাবে আর কতদিন মোবাইল ভাড়া নিবো। টাকাও শুকিয়ে যাচ্ছে। মোবাইল ভাড়ার ব্যাপারটা একদিন ফাঁস হয়ে যায়। পরে আম্মু আমাকে কড়া হুশিয়ারি দিয়ে দেয়। তখন কি করার বাটন ফোনেই ফেসবু্ুুক চালাই। এভাবে যেতে যেতে ৮ম শ্রেণীতে উঠলাম। তখন আমার নেশা আরো বেড়ে গেল। একদিকে পড়ার চাপ অন্যদিকে মোবাইলের নেশা। এভাবেই কেটে গেল ৮ম শ্রেণি। জেডিসি পরীক্ষা হলো। ৩০ তারিখে রেজাল্ট দিলো। ফলাফল জিপিএ ৪.৬৭। সবাই বলতে লাগলো যে আমার মোবাইল টিপার কারণেই A+ পাইনি। অনেকের অনেক ধরণের বকা শুনতে হয়েছে। পরে আমি নোয়াখালী ইসলামিয়া মাদ্রাসায় ভর্তি হলাম। কয়েক মাস আইডি টা ইউজ করছি পরে ২০১৮ এর শেষের দিকে আইডি টা ডিলেট করে দিয়েছি। পরে দুঃখ হলো আইডিতে আমার ছোটকালের স্মৃতি ছিলো। ওগুলা হারিয়েছি।
এরপরে প্রায় দুই বছর কোন ফেসবুক চালাতাম না। এসএসসি পরীক্ষার পর এই আইডিটি খুলেছি।

<

Related Posts