ফণীর আঘাতে ক্ষতিগ্রস্থ মানুষ এখনো খোলা আকাশের নিচে !

ফণীর হানায় বিধ্বস্ত ঘর-বাড়ি, ফসলের ক্ষতিতে দিশাহারা কৃষক
ঘূর্ণিঝড় ফণীর তান্ডবের পর কেটে গেছে তিন-চার দিন । কিন্তু এখনো বিভিন্ন স্থানে গৃহহারা অগণিত পরিবার খোলা আকাশের নিচে মানবেতর অবস্থায় রয়েছে । একইসঙ্গে তারা আতঙ্কে রয়েছে, কখন ঝেপে আসে বৃষ্টি । দুইয়ে মিলে কঠিন পরিস্থিতির মুখে তারা । তাদের অনেকেই আকুতি জানাচ্ছেন, ‘আপাতত মাথার ওপর কিছু দিন অন্তত তাঁবু দিয়ে বাঁচান । দুর্গতরা সবাই জরুরিভিত্তিতে তাঁবুর জন্য আবেদন জানিয়ে চললেও এখন পর্যন্ত তা পৌঁছেনি । একই সঙ্গে পৌঁছেনি কোনো ত্রাণসামগ্রীও । খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কিছু এলাকায় সরকারিভাবে চাল বিতরণ করা হলেও তা ছিল চাহিদার তুলনায় খুবই কম । সরকারি হিসেবে ঘূর্ণিঝড় ফণীর আঘাতে নোয়াখালী সদর, সুবর্ণচর ও কোওম্পানীগঞ্জ উপজেলায় এক হাজার ২২টি কাঁচা ঘর বিধ্বস্ত হয়েছে । এতে এক হাজারের অধিক পরিবার গৃহহারা হয়ে পড়েছে আকস্মিক ঝড়ে । অনেক এলাকায় কোনো ত্রাণসামগ্রী পৌঁছেনি এখনো । কোথাও কোথাও ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরির কাজ চলছে । এ অবস্থায় পরিবারগুলো খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবন যাপন করছে । প্রচন্ড রোদে ছানিহীন ভিটায় পড়ে রয়েছেন তারা । অনেকে আবার আত্নীয়-স্বজনের বারিতেও অস্থায়ীভাবে ঠাই নিয়েছেন । বৃষ্টি নামলে তাঁরা কোথায় যাবেন, কীভাবে থাকবেন-সে চিন্তায় অস্থির হয়ে পড়েছেন তারা ।

রোববার বিকালে সুবর্ণচএ উপজেলার চরওয়াপদা ইউনিয়নে ক্ষতিগ্রস্ত ১৩৫টি পরিবারের মাঝে সরকারিভাবে ২০ কেজি করে চাল ও সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরীর পক্ষ থেকে নগদ এক হাজার টাকা করে বিতরণ করা হয় । একরামুল করিম চৌধুরী, জেলা প্রশাসক তন্ময় দাস, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আরিফুল ইসলাম সরদার দুর্গত এলাকা পরিদর্শন করেন । এ সময় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে শুকনো খাবার ও নগদ অর্থ দেওয়া হয় । এ সময় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মনির আহমদ জানান, গৃহহারা পরিবারগুলোর কারও এখন আর ঘর তৈরি করার সামর্থ্য নেই । তাই সরকারিভাবে তাদের ঘর তৈরি করে না দেওয়া পর্যন্ত তাবুর ব্যবস্থা করা না হলে বৃষ্টির সময় তাদের কোন উপায় থাকবে না ।

সুবর্ণচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু ওয়াদুদ গৃহহারা পরিবারগুলোকে খোলা আকাশের নিচে বাস করার কথা স্বীকার করে তাদের জন্য দ্রুত তাবুর ব্যবস্থা করার বিষয়ে উর্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করা হয়েছে বলে জানান । উল্লেখ্য, গত শনিবার ভোরে চরওয়াপদা ও চরজব্বার ইউনিয়নে প্রচন্ড ঝড়ে গাছপালা ও শতাধিক কাচা ঘর-বারি বিধ্বস্ত হয় । এ সময় ঘরচাপা পড়ে চারওয়াপদা ইউনিয়নের চরআমিনুল হক গ্রামের আব্দুর রহমানের ছেলে মোঃ ইসমাইল (২) নিহত হন । এ ছাড়া সদর উপজেলা ধর্মপুর ও নোয়াখালী ইউনিয়নে ইসলাম সরদার জানান, ঝড়ে বিভিন্ন স্থানে ৬ শতাধিক বারিঘর বিধ্বস্ত হয় ।

নেত্রকোনায় বাধ ভেঙে হাওরে পানিঃ নেত্রকোনায় পাহাড়ি ঢলে নেত্রকোনার বারহাট্রা উপজেলার চিরাং ইউনিয়নের গুমাই নদীর পানি বৃধি পেয়ে গত পরশু সকাল থেকে সিংরা বেড়িবাঁধ ভেঙে উপজেলার ৫টি হাওরে পানি প্রবেশ করেছে । এতে করে প্রায় ৪শ হেক্টরের মতো বোরো ফসল তলিয়ে গেছে বারহাট্রার পুটিজানা থেকে লামাবাড়ি প্রর্যন্ত সাড়ে ৩ কিঃ মিঃ ফসলরক্ষা বাঁধের দুটি অংশ ভেঙ্গে যায় । এতে করে সিংহা, কইমুড়ি, গুংগিয়াজুরী, দিঘা ও গড়া বিলের বোরো ধান হুমকির মুখে পড়েছে ।

বাগেরহাটে খাবার পায়নি দুর্গতরা ঃ বাগেরহাট জেলায় ২৩৪টি ঘুর্ণীঝড় আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নেওয়া ১ লক্ষাধিক লোকের ভাগ্যে জোতেনি সরকারের দেওয়া শুকনা খাবার ও সহায়তা । ঘুর্ণীঝড় ফণী আঘত হানার আগের দিন থেকে জেলার ৯টি উপজেলার মধ্যে বঙ্গোপসাগর উপকুলবর্তী মোংলা, শরণখোলা রামপাল ও মোরেলগঞ্জ উপজেলার আশ্রয়কেন্দ্রগুলোছিল নারী-শিশুসহ সাধারণ মানুষে ভর্তি । জেলা ও উপজেলা প্রশাসন লোকজনকে আশ্রয় কেন্দ্রে আনতে তৎপর থাকলেও বলতে গেলে তাদের জন্য শুকনা খাবার ও সুপেয় পানির তেমন কোনো ব্যবস্থাই করেনি । ফলে তাদের না খেয়েই থাকতে হয়েছে ।

<

Related Posts