ফিফার প্রথম তালিকাভুক্ত নারী রেফারিদের কথা

বাংলাদেশের নারী ফুটবলের জন্য এ এক মাইলফলক। আন্তর্জাতিক নারী ফুটবলে বাংলাদেশের জন্য এটা এক গৌরবময় অধ্যায়। আর এ গৌরবময় অধ্যায়ের সফল রচনাকারী দুজন হলেন জয়া চাকমা, সালমা ইসলাম মণি। সমাজের মানুষের কটুকথা, ভ্রুকুটি ও বিভিন্ন সামাজিক প্রতিকূলতা অতিক্রম করে তারা ছিনিয়ে এনেছেন কাঙ্খিত গৌরব। আজ তারা ফিফার তালিকাভূক্ত রেফারি। এখন থেকে তারা আন্তর্জাতিক ফুটবল ম্যাচগুলো পরিচালনা করতে পারবেন ফিফার রেফারি হয়ে। যে স্বপ্ন মনের মধ্যে এতদিন লালন পালন করে আসছিলেন তার সফল বাস্তবায়নটা সেরে নিলেন কঠিন অধ্যাবসায় ও সাধনার মাধ্যমে। কিন্তু সহজ ছিলনা এ কাজ। সমাজের মানুষের ছি ছি ধ্বনি আর বাঁকা চোখের দৃষ্টি সব সময়ই সঙ্গী ছিল তাদের। শুধু নিজেরাই নয় নারী হয়ে হাফপ্যান্ট পড়ে ফুটবল অনুশীলন, পুরুষ খেলোয়ারদের সাথে অনুশীলন, মাঠে মাঠে দৌড়ে বেড়ানো এসবের ব্যবস্থা করে দেওয়ার জন্য তাদের পরিবারের বাবা-মা ভাইবোনদেরও সইতে হয়েছে অনেক যন্ত্রণা। সমাজের অনেকেই তাদের পরিবারকে নানাভাবে হেয় করতো, বাড়ি এসে কটু কথা বলতো কিংবা রাস্তায় দেখলে আকারে ইঙ্গিতে বাজে মন্তব্য করতো। তবে এসব সয়ে গেছে তাদের। আজ জয়া সালমার সাফল্যে তাদের সব দুঃখ, রাগ, ক্ষোভ মাটি হয়ে গেছে। এমনকি আচরণের পরিবর্তন হয়েছে নিন্দুকেরও। যারা এক সময় তাদের দেখে হাসি তামাশা করতো তারাই এখন তাদের বাহবা দিচ্ছেন। প্রশংসায় ভাসাচ্ছেন তাদের পরিবারকে। কারণ আজ যে তারা দেশ ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক পরিম-লে পা বাড়িয়েছেন। তারা আজ দেশের জন্য বয়ে এনেছেন এমন সম্মান যা আগে কারও দ্বারা হয়নি। তারাই যে নারী রেফারিংয়ের পথ প্রদর্শক। রাঙ্গামাটির মেয়ে জয়া বর্তমানে পড়াশোনা করছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ^বিদ্যালয়ে । পাশাপাশি বিকেএসপির নারী ফুটবল দলের কোচ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। সালমা বর্তমানে বিআইটি স্কুলের ক্রীড়া শিক্ষক হিসেবে চাকরি করছেন। তবে সালমার শুরুটা ছিল অ্যাথলেট দিয়ে। কাবাডি আর হ্যান্ডবলেও তার নাম ডাক ছিলো হাই স্কুলে পড়ার সময়। কিন্তু ফুটবলের প্রতিই বেশি দূর্বল ছিলেন তিনি। নিজের এলাকায় তেমন সুযোগ না থাকায় ফুটবল অনুশীলন চালাতে পারেননি। কিন্তু ফুটবলের জন্য ফিটনেস ঠিক রাখতে কঠোর সাধনা করেছেন তিনি। এক সময় জেলা স্টেডিয়ামে অনুশীলনের অনুমতি পেলেন এবং সেখানে অনুশীলন শুরু করেন। আর এসব কাজে সবচেয়ে বেশি সহযোগিতা করেছেন তার ভাই মো. সফিকুল ইসলাম। তার এ পর্যায়ে আসতে ভাই সফিকুলের অবদান বেশি বলে তিনি জানান। জয়া চাকমা তার এ পর্যায়ে আসতে পরিবারের সকলের সহযোগিতা ও সেক্রিফাইসের কথা স্মরণ করেন। তিনি বলেন শারীরিক যুদ্ধের সঙ্গে এখন একটা মানসিক যুদ্ধেরও অবসান হলো। জয়া সালমা দুজনেরই দেশের বিভিন্ন জাতীয় খেলায় রেফারিংয়ের অভিজ্ঞতা আছে। আছে দেশের বাইরে রেফারিংয়েরও অভিজ্ঞতা। আজ ফিফার সনদ পেয়ে সে সাফল্য আর অভিজ্ঞতার একটা সম্মানজনক অবস্থান তৈরি হলো। তবে নারী রেফারিং নিয়ে কিছু আক্ষেপও আছে দেশের প্রথম ফিফা সনদপ্রাপ্ত রেফারি সালমা ও জয়ার। তারা বলেন পুরুষ রেফারিদের চাইতে নারী রেফারিদের সম্মানি অনেক কম। তাই এখনো আমরা এটাকে পেশা হিসেবে নিতে পারছি না। আমাদের অন্য কাজের সাথে যুক্ত হতে হয়। এ অবস্থার পরিবর্তন জরুরী বলে মনে করেন তারা। তারা আশা করেন তাদের এ প্রাপ্তির মধ্য দিয়ে দেশের নারী ফুটবলে একটা জাগরণ ঘটবে।

<

Related Posts

13 Comments

মন্তব্য করুন